সদরুল আইন, প্রধান প্রতিবেদক :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগই ইতোমধ্যে ২৯৮ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এবারের নির্বাচন এমনভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে আওয়ামী লীগের জয় নিয়ে কোনরকম সংশয় নেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যেমন জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম তারা নির্বাচনের দ্বিতীয় হওয়ার লড়াই করছে।
কিন্তু কেউই নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবে এমন কোন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ছিলেন, আছেন। তারাই এবার অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর ফলে এবারের নির্বাচন শুরু থেকেই জমে গেছে।
অনেক স্থানেই দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক বেশি আলোচিত এবং আলোকিত।
যে সমস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে তারা কোণঠাসা করে ফেলতে ফেলতে পারেন এমন আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
এ কে আজাদ চৌধুরী:
এ কে আজাদ চৌধুরী একজন বর্ণাঢ্য শিল্পপতি ব্যবসায়ী। তিনি এক সময় বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী একদা আওয়ামী লীগ সভাপতিরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ফরিদপুর-৩ আসনে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। তার বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে শামীম হককে। শামীম হকের চেয়ে জাতীয়ভাবে অনেক বেশি পরিচিত এ কে আজাদ চৌধুরী।
তিনি ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের নেতাই শুধু নন, একটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং একটি দৈনিক পত্রিকার মালিকও বটে। আর এর ফলে নির্বাচনের মাঠে তিনি যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেবেন এটি এখন থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
হাবিবে মিল্লাত:
হাবিবে মিল্লাত সিরাজগঞ্জ থেকে দুই বারের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে এবার তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
তার বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জান্নাত আরা হেনরীকে। হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের জামাতা।
তিনি এলাকাতেও অনেক শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন বলে কোন কোন মহল মনে করে। তবে তার বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী তৎপরতা নানা অভিযোগ রয়েছে।
হাবিবে মিল্লাত একজন শুধু চিকিৎসকই নন, তিনি বিভিন্ন টকশোর কারণে দেশে আলোচিত নাম। দু বারের এমপি থাকার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে তার একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থায় তার নির্বাচনী আসনে জান্নাত আরা হেনরীকে প্রার্থী করা হয়েছে যিনি ২০০৮ এর নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।
এরপর তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হন এবং সেখানে সেখানেও তিনি নানা কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে এবং রাজনৈতিক পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা হেনরী, হাবিবে মিল্লাত এর চেয়ে জাতীয় পর্যায়ে কম আলোচিত হলেও স্থানীয় পর্যায়ে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
এই নির্বাচনী এলাকাতেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন:
ফরিদপুর মানেই কাজী জাফর উল্লাহ এবং মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের লড়াই। গত দুটি নির্বাচনে কাজী জাফর উল্লাহ ফরিদপুর-৪ আসন থেকে মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন।
এবার কাজী জাফর উল্লাহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার হয়েছেন। অনেকে ধারণা করেছিলেন যে, তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন না। তারপরও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সকলকে বিস্মিত করেছেন।
এই আসনে মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সঙ্গে পেরে ওঠা কষ্টকর হবে বলেই অনেকে মনে করছেন।
ইহতেশামুল হক চৌধুরী:
ইহতেশামুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারি। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিএম-এর মহাসচিব হিসেবেও কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি এবার সিলেটের তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিলেটে তার একটা শক্ত ভিত রয়েছে। চিকিৎসক মহলে তার আলাদা অবস্থান রয়েছে। তিনি সিলেট অঞ্চলে নির্বাচন জমিয়ে দিতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
মেজর জেনারেল (অব:) সুবিদ আলী ভূঁইয়া:
মেজর জেনারেল (অব:) সুবিদ আলী ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। কিন্তু এবার তিনি মনোনয়ন পাননি। তার বদলে কুমিল্লা-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুস সবুর। এটি পছন্দ করেনি মেজর জেনারেল (অব:) সুবিদ আলী ভূঁইয়া।
তিনি এখন পাল্টা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচনী এলাকাতে নিঃসন্দেহে সুবিদ আলী ভূঁইয়া আলোচিত নাম। জাতীয়ভাবেও তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব।
এই আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন জমিয়ে ফেলবেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
ইকবাল হোসেন সবুজ:

গাজীপুর-৩ আসনের বর্তমান এমপি দলিয় মনোনয়ন না পেয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থি হয়েছেন।নির্বাচনী এলাকাটির প্রতিটি কোন চষে বেড়ানো জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল বিস্ময়ের।
অনেকেই ধারনা করেছিল তার মনোনয়ন না পাওয়ার কারনে হয়ত বা তার রাজনৈতিক জীবনের চরম উত্থানের ভাটা পড়তে যাচ্ছে।কেউ কেউ ধারনা করেছিল হয়ত বা তার রাজনৈতিক উত্থানে ছন্দনপতন শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু জনদাবির প্রেক্ষিতে আকস্মিকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থি হওয়ার ঘোষণা এবং বুধবার লক্ষাধিক লোকের সমাবেশের মধ্য দিয়ে তিনি মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে যে চমক এনেছেন তা দেখে অনেকেই চমকে গেছেন।
এখানে তার জনপ্রিয়তা এখনো অটুট বলে বলে মনে করছেন অনেকেই এবং নৌকার সাথে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।