
এম এইচ শিহাব, কলকাতা থেকে :পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের কাছেই বিশ্ববাংলা মোড়। এখানে গড়ে
তোলা হয়েছে রবীন্দ্র তীর্থস্থান। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
ব্যানার্জি এর উদ্বোধন করেন।
বিশ্ববাংলা মোড়ে রবীন্দ্র তীর্থস্থানে গত শনিবার (১৫
এপ্রিল) বিকেলে ঢুঁ মেরেছিলাম। এদিন পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতে পহেলা বৈশাখ পালিত হচ্ছিল।
ইচ্ছে ছিল,
কাছেই নজরুল তীর্থস্থানেও ঘুরে আসব। কিন্তু সময়ের কারণে ওইদিন আর
সেই সুযোগ হয়নি।
কৌতূহলী মনোভাব নিয়েই রবীন্দ্র তীর্থস্থানে প্রবেশ। যদিও
জানার সেই তৃষ্ণা অতৃপ্ত রয়ে গেছে নানা কারণে।
গেটের ভেতর টিকিট কাউন্টার। সেখান থেকে ২০ রুপি দিয়ে প্রবেশ
টিকিট কিনলাম। ঢুকে হাতের ডান দিকে ফটো গ্যালারি ঘর। তীর্থস্থানের নিরাপত্তাকর্মী
সেদিকে যাওয়ার জন্য পথ দেখিয়ে দিলেন। মৃদু সুরে রবীন্দ্রসংগীত বাজছে, তীর্থস্থান জুড়ে।
দুই কক্ষের ঘরটি। প্রথম কক্ষটিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের
ব্যক্তিগত ও পারিবারিকসহ বিভিন্ন ধরনের ছবি এবং তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস শোভা পাচ্ছে।
সেই সঙ্গে আছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহারের কিছু তৈজসপত্র।
একজন নারী নিরাপত্তাকর্মী ভেতরে বসে আছেন। সিসিটিভিতেও সার্বক্ষণিক
মনিটরিং করা হচ্ছে শীততাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষটি। এখানে ছবি তোলা নিষেধ। আমি ছাড়া আরো
দুজন তরুণ-তরুণী একসঙ্গে এসেছেন। তারাও ঘুরে ঘুরে দেখছেন রবীন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক
সেই ছবি এবং জানার চেষ্টা করছেন তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
পাশের কক্ষটিতে শোভা পাচ্ছে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের ছবিসহ
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি,
বিশ্বকবির আঁকা কিছু আলোকচিত্র ও তার হাতে লেখা কয়েকটি কবিতার
বায়োগ্রাফি এবং কবির আরো কিছু ছবি। এখানে ছবি তোলার কোনো বিধিনিষেধ না থাকায়
মোবাইলে দুটো ছবি নিলাম।
রবীন্দ্র ফটোগ্যালারি থেকে বের হয়ে ডান দিকের পথ ধরে সামনে
একটু এগোতেই হাতের বামে লাল শাপলার একটি পুকুর, যার মাঝখানে শোভা পাচ্ছে বিশ্বকবির একটি
বিশাল ভাস্কর্য। এর একটু সামনে এগিয়ে গেলে তীর্থস্থানে ঢোকার দ্বিতীয় প্রবেশপথ।
সেখানে একটি ঘরের সামনে কবির স্মারক বিক্রির সাইনবোর্ড থাকলেও সেটি এখন
ইলেকট্রিশিয়ানদের নিয়ন্ত্রণপক্ষ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
এরপর ধারাবাহিকভাবে রয়েছে বেশ কিছু ডরমেটরি। যেগুলো
তালাবদ্ধ। আর লাল শাপলা পুকুরের পাশে একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। এর পাশে আছে একটি
মিলি সিনেমা হল। কিন্তু সবগুলোই তালাবদ্ধ। দর্শনার্থীও আর চোখে পড়েনি।
স্মারক বিক্রি কক্ষের সামনে কথা হয় ইলেকট্রিশিয়ান আসাদুলের
সঙ্গে (৩৮)। তিনি জানান,
২০১১ সালে এটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে সাড়ে ১১ বছর ধরে এখানে চাকরি
করছেন তিনি। আসাদুল বলেন, উদ্বোধনের সময় কক্ষটি বই বিক্রির
জন্য করা হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আর এখানে রবীন্দ্রনাথের কোনো বই কিনতে
পাওয়া যায় না।
আসাদুল আরো জানান, ডরমেটরিগুলো প্রতিদিন আড়াই লাখ রুপিতে ভাড়া
হয়। বিভিন্ন সংগঠন এগুলো ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করে এবং লোকজন থাকে। অন্য সময় এগুলো
তালাবদ্ধ থাকে। দর্শনার্থী খুব একটা আসে না।
নিজের প্রসঙ্গে আসাদুল জানান, দুই মেয়েসহ চারজনের সংসার।
কাছেই লস্কর আটি গ্রামের পাশের গ্রামে তার বাড়ি। চুক্তিভিত্তিক এই চাকরিতে মাসে ১১
হাজার টাকা মাইনে (বেতন) পান। তা দিয়ে চলে চারজনের সংসার। তার বড় মেয়ে স্কুলে যায়।
বেসরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ভারতের সরকারি স্কুলগুলোতে দুপুরে
শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি স্কুলে
শিক্ষার্থীরা খাবার পায় না।
আসাদুলের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারি স্কুলগুলোর চেয়ে
বেসরকারিতে পড়ালেখার মান ভালো। তাই দুপুরে খাবার না থাকলেও মেয়েকে বেসরকারি স্কুলে
ভর্তি করেছেন। তবে বছর শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশের মতো
সবাই পায়।