রাত পোহালেই সপরিবারে দেবী দুর্গার প্রতিমা উঠবে
মণ্ডপে মণ্ডপে। সেই প্রস্তুতিই চলছে বেশ জোরেশোরে। প্রতিমা শিল্পীদের কাজ প্রায়
শেষের পথে। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। তবে ডেকোরেটর কর্মীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
পেরেক-হাতুড়ির খুঁটখাট শব্দ এখন মন্দির ও মণ্ডপ এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দুর্গা মণ্ডপের মতো স্থায়ী
মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে। পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, তাঁতীবাজার ও সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন অস্থায়ী
মণ্ডপগুলোতে চলছে প্রস্তুতি। আর শাঁখারি ও তাঁতীবাজার এলাকায় পূজার সাজসজ্জা ও
প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির দোকানগুলোতে দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দেবীর গহনা, হাতের শাঁখা- পলা, মালা, নূপুর, মুকুট, তীর, ধনুক, চক্র, গদা, খড়গ, ত্রিশূল, অসুরের অস্ত্র, দেবীর শাড়ি, ব্লাউজের কাপড়, মাথার চুল কিনতে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা
থেকে শাঁখারী বাজারে ভিড় করছেন আয়োজকরা। সাজঘর, পোশাক ঘর, নাগ ভাণ্ডার, পদ্মভাণ্ডার, লক্ষ্মীভাণ্ডারসহ বিভিন্ন দোকানে থরে থরে সাজানো
আছে এসব জিনিস। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে দোকানদারদের।
বোধনের মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হচ্ছে হিন্দু
ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী ওই দিন
সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) অনুষ্ঠিত হবে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হবে
বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার
আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। ভক্তের
প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাগরিত হবে বিশ্ব থেকে অশুভকে বিদায় দেয়ার পণ।
ভক্তরা মনে করেন, শারদীয় এই উৎসবের মাধ্যমে কন্যাস্থানীয় দেবী
সপরিবারে পিতৃগৃহে আগমন করেন। দেবীর ১০ হাত। দেবীকে আমরা দেখি যুদ্ধের সাজে।
যুদ্ধের সময় দেবীর ডানদিকের পাঁচটি বাহুতে উপর থেকে নিচে থাকে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ণ বাণ ও শক্তি নামক অস্ত্র। বাম দিকের পাঁচটি
বাহুতে নিচ থেকে উপরে খেটক (ঢাল), ধনুক, নাগপাশ, আঙ্কুশ, ঘণ্টা। অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করে দুষ্টের দমন আর
শিষ্টের পালন করেন। দেবী যখন মমতাময়ী মায়ের রূপ নেন তখন তার হাতে থাকে কল্যাণের
প্রতীক পদ্ম, শঙ্খসহ দশটি অস্ত্র। দেবীর
গায়ের রং অতসী ফুলের মতো উজ্জ্বল। পূর্ণিমার চাঁদের মতো তার মুখ। তিনি ত্রিনয়না।
মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। সিংহ তার বাহন। দেবীর ডানে ধনদাত্রী লক্ষ্মী, পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীর বামপাশে বিদ্যাদায়িনী
সরস্বতী এবং তার পাশে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিক।