ঈদের পরও স্বস্তি ফিরছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। চালের দাম টানা বাড়ছে, সবজির বাজারেও লেগেছে আগুন। ভরা মৌসুমেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না দাম। মাছ, মুরগি ও ডিমের বাজার কিছুটা সহনীয় হলেও মূল নিত্যপণ্য চাল ও সবজিতে চাপে সাধারণ মানুষ। বাজারে নেই নজরদারি, ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদেরও কিছু করার নেই।
ঈদের পর থেকে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। একাধিক মোকাম ও বাজার ঘুরে জানা গেছে, ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে সবজির বাজারেও বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। তবে স্বস্তির খবর, কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম। মাছের বাজারেও রয়েছে কিছুটা স্থিতিশীলতা।
২৭ জুন রাজধানীর নয়াবাজার, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
দেশজুড়ে চলছে বোরো ধানের মৌসুম। মিল মালিকদের দাবি অনুযায়ী চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই, পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিক মজুরিও বাড়েনি। তারপরও হঠাৎ করেই ঈদের পর থেকে বাড়ছে চালের দাম।
চাল ব্যবসায়ী রাকিব জানান, ‘চালকল মালিকরা নিজ থেকেই দাম বাড়াচ্ছেন। সরবরাহ বা চাহিদার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’ আরেক চাল বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আগে ৬৮ টাকায় কিনতাম যে মিনিকেট চাল, সেটা এখন ৭৬ টাকা। বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করছি।’
বর্তমান খুচরা বাজারে চালের দর (প্রতি কেজি) মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) ৫৮-৬৫ টাকা, জিরাশাইল ৭৪-৮০ টাকা, মিনিকেট ৭৬-৮৪ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৬ টাকা, পোলাও চাল ১১৬-১১৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় কমেছে সরবরাহ, বেড়েছে দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি বেড়েছে অনেক সবজির দাম।
বাজারে সবজির বর্তমান দাম (প্রতি কেজি) বরবটি ৬০-৮০ টাকা, পটল, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা ৫০-৬০ টাকা, কাকরোল ৬০-৭০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা (এক সপ্তাহে ১৫০ টাকা বেড়েছে)।
তবে যাত্রাবাড়ী, চিটাগাং রোড ও আশপাশের বাজারগুলোতে কিছু কিছু সবজি এখনও পাওয়া যাচ্ছে তুলনামূলক কম দামে ৪০-৬০ টাকার মধ্যে।
ঈদের পর হালকা খাবারের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এর প্রভাব পড়েছে মুরগি ও ডিমের বাজারে। দাম কিছুটা কমে এখন আগের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তিকর।
মুরগির বর্তমান দাম (প্রতি কেজি) ব্রয়লার ১৪০-১৫০ টাকা, সোনালি ২২৫-২৩৫ টাকা, লেয়ার ২৩০-২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০-৫৫০ টাকা, হাঁস (প্রতি পিস) ৬০০-৭০০ টাকা। ডিম (ডজন) পাইকারি ১১৮-১২০ টাকা, খুচরা ১২৫-১৩০ টাকা।
ঈদের সময় মাছের চাহিদা কম থাকলেও এখন বাজারে ফিরেছে প্রাণ। রুই, কাতল, পাবদা, তেলাপিয়াসহ চাষের মাছের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকলেও দেশি মাছ এখনো দুষ্প্রাপ্য।
চাষের মাছের মধ্যে রুই-কাতল ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৪০ টাকা, পাঙাশ ২০০-২৫০ টাকা।
দেশি মাছের মধ্যে ইলিশ (১ কেজি) ২ হাজার টাকা, পাবদা ৩৫০-৪০০ টাকা, শিং-টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, দেশি শিং-কৈ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
দেশি পেঁয়াজের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণে (৫০-৬০ টাকা/কেজি)। তবে আদা ও রসুনের দাম বাড়ছে সরবরাহ সংকট ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে।
আদা এক কেজি ১২০-১৮০ টাকা (এক সপ্তাহ আগে ৯০-১৭০ টাকা), রসুন ১১০-১৪০ টাকা (আগে ছিল ৯০-১৪০ টাকা) পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই চাল ও সবজির দাম বাড়ছে। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন।