Logo
শিরোনাম

সংসার চলে না মধ্যবিত্তের

প্রকাশিত:রবিবার ১৩ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

পণ্য কিনছেন ফুটপাথে ৫০ হাজার টাকার বেতনের চাকরিতেও সংসার চলে না ষ নিম্নবিত্তরা অনেকেই শুধু শাক দিয়ে ভাত খান, কেউ ফার্মের মুরগির গিলা-কলিজা, পা-চামড়া খেয়ে আমিষের চাহিদা মেটান 

মনির হোসেন পেশায় বেসরকারি চাকুরে। বেতন সর্বসাকল্যে পান ৪০ হাজার। এর ভেতর তিন বেডের বাসাভাড়া, গ্যাস, মোবাইল, ইন্টারনেট, ইলেকট্রনিক বিলসহ ২৫ হাজার চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে ৫ জনের একটি পরিবারের ৩০ দিনের খাদ্য, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, সাংসারিক অন্যান্য খরচ, নিয়মিত হাতখরচ, প্রতিদিনের যাতায়াত ভাড়া মেটাতে মাস শেষে ধারদেনা করে চলতে হয়। করোনার সময় গ্রামের জমি বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন। এখন চাকরি করে নিয়মিত বেতন পেলেও প্রতিটি পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। সামাজিক কারণে নিজে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে পারেন না। স্ত্রীকে বোরকা পড়িয়ে শনিরআখড়ায় ধনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে টিসিবির ট্রাকের সামনের লাইনে দ্বার করিয়েছিলেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর পণ্য না পেয়ে ফেরত এসেছেন। মফিজুর রহমান দুঃখ করে বললেন, মন্ত্রীরা দাবি করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তিনগুণ বেড়েছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে। টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীদের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখলেই বোঝা যায়, মানুষের ক্রমক্ষমতা বেড়েছে না কমেছে। ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে সংসার চালাতে পারছি না; যারা আমার চেয়ে কম বেতনে চাকরি করেন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সংসার চালান তারা কি অবস্থায় আছেন?

রাজধানীর গুলশানের ভাটারা এলাকায় রিকশার মিস্ত্রী মো. হারুন জানালেন, প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ দিন পর কমদামের তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছ ক্রয় করেন। ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকা প্রতিদিন আয় করেন। স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে ২ হাজার টাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানান, তারা প্রতিদিনই শাক দিয়ে ভাত খান। বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় মাসে এক থেকে দুই দিন সবজি রান্না করেন। তিনি বলেন, পণ্যমূল্যের কারণে কুলিয়ে উঠতে না পেরে, ছেলেকে লেখাপড়া বন্ধ করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।

মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া মফিজুর রহমান ও গুলশানের রিকশার মিস্ত্রি হারুন যেন দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের প্রতিচ্ছবি। কোনো কোনো পরিবারের কর্তা আমিষের চাহিদা মেটাতে রাতে ফার্মের মুরগির গিলা-কলিজা, চামড়া ক্রয় করেন ফুটপাথ থেকে। গতকার ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের দেড় বছর বয়সি অজন্তার মা-বাবা সবসময় ওকে ডিম, শাক-সবজি ও ফলমূল এ ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে চায়। কিন্তু প্রায়ই আর্থিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয় না। করোনাভাইরাস মহামারি অনেক পরিবারকেই দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে; আবার পণ্যের মূল্য বেড়েছে, যার ফলে শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি শিশুদের এ পুষ্টি সংকট মোকাবিলায় পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে তুলতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহŸান জানিয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারের পাশে কুতুবখালি ফুটপাথে বা ভ্যান গাড়িতে করে শাক-সবজি ও মাছ বিক্রি করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতাদের দোকান ভাড়া, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ কম থাকায় বাজারের থেকে কিছুটা কম দামে পণ্য বিক্রি করেন। আগে এসব ফুটপাথের দোকানে নিম্নশ্রেণির মানুষদের বেশি দেখা যেত। এখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তদেরও এসব বাজারগুলোতে দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেল পাইকারি মাছ ও কাঁচাবাজারের পাশাপাশি কুতুবখালি বাজারের পূর্ব মাথায় ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি ও মাছ। মাত্র কয়েকশ’ মিটারের দূরত্বে এখানে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। ফুটপাথে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছে ক্ষুদ্র বিক্রেতারা। এছাড়াও মহিলারা পেঁয়াজ, আদা, আধাপচা বেগুন, শাক, রসুনের ভাগা সাজিয়ে বসেছে। যা প্রতি ভাগা বিক্রি করা হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। বিক্রেতারা জানালেন, আগে রিকশাওয়ালা, মুটে কুলিরা এখন থেকে পণ্য ক্রয় করতেন। এখন নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের অনেকেই পণ্য কিনছেন। এখানে বাজার করতে আসা আনোয়ার আলি বলেন, বাজারে সব কিছুরই তো এখন দাম বেশি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। শাক-সবজি ও মাছ অন্য বাজারের থেকে এখানে দাম কিছুটা কম। পণ্যের মান একটু খারাপ হলেও এখান থেকেই নিয়মিত বাজার করি। এক নারী ক্রেতা বলেন, জিনিসপত্রের যে হারে দাম বাড়ছে আমাদের মতো মানুষদের দিন পার করা কষ্টকর হয়ে গেছে। যেখানে দুই পয়সা কমে পাই, সেখান থেকে বাজার করি। সামনে রমজান মাস। আল্লাহ জানেন, পণ্যমূল্যের কি অবস্থা হবে।

রাজধানীর মিরহাজিরবাগ এলাকার ফুটপাথেও সকালে এ ধরনের বাজার বসতে দেখা যায়। সেখানেও বড় বাজারগুলো থেকে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি ও মাছ। যাত্রাবাড়ির ফারুক সড়কের মূল কাঁচাবাজারে একটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। শালগমের (ওল কপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে মিরহাজিরবাগ ফুটপাথে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শিম কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউ প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পালংশাক হচ্ছে ১০ টাকায় আঁটি, দুই আঁটি একসঙ্গে নিলে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সংসার আর চলছেই না। যে বেতনে চাকরি করেন তাতে ১৫ দিনের বাজার খরচ হয় না। শহীদুল্লাহ নামের একজন জানালেন, বাসভাড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। বেতন বাড়েনি, আয় বাড়েনি; অথচ খরচ বেড়েছে। রমজান মাসে এভাবে পণ্যমূল্য বাড়লে ইফতার চিহারির ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

মূলত নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেই না। কয়েকদিন পর পবিত্র রমজান শুরু হবে। তার আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যে যেন আগুন লেগেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রধানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কয়েকজন মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য এবং লাগাম ছাড়া কথাবার্তায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য কমাচ্ছে না। বরং প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের দুর্বলতা বুঝতে পেরেই ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।

জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ এখন নিঃসন্দেহে অনেক সমস্যায় পড়ে গেছে। তাদের আয় বাড়েনি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ঠিকই বাড়ছে। আয়বৈষম্য বেড়ে গেছে। সরকারের উচিত মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানো। সরকারের হিসাব বলছে, আমাদের গড় আয় নাকি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষ তাদের আয় বাড়ছে বলে তো আমরা দেখছি না। তাই সরকারের উচিত সবধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা। তা না হলে সরকারের সব বড় বড় অর্জন মøান হয়ে যাবে।

টিসিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে খোলা পাম অয়েল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, দারুচিনি, ধনিয়ার দাম বেড়েছে। সংস্থাটি তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে খোলা পাম অয়েলের দাম দশমিক ৩২ শতাংশ, মসুর ডালে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ছোলায় ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, আলুতে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজে ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, দেশি রসুনে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, আমদানি করা রসুনে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, দেশি শুকনা মরিচের ৬ দশমিক শ‚ন্য ৬ শতাংশ, আমদানি করা শুকনা মরিচে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ, আমদানি করা হলুদে ৩ দশমিক শ‚ন্য ৩ শতাংশ, দেশি আদার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, দারুচিনির ২ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ধনিয়ার ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।

রমজানে পণ্যমূল্য যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে লক্ষ্যে ১০ মার্চ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি রমজানের চাহিদা মেটাতে ১ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫২ লিটার সয়াবিন তেল, ১৪ হাজার টন চিনি, ১০ হাজার টন ছোলা এবং ১৯ হাজার ৫০০ টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯১ কোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৬ টাকা। শুধু তাই নয়Ñ ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলা আমদানির ওপর ভ্যাট তুলে নেয়া হয়েছে। তারপরও বাজারে এসব পণ্যের দাম কমছে না। এমনকি ভোজ্যতেল বাজারে ছাড়তে বিষয়ে ঢাকঢোল পিঠিয়ে প্রচারণা চালানো হলেও এখনো বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কট রয়েই গেছে।

গতকাল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এবং একটি স্বার্থবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠী দ্রব্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করার জন্য দেশের ভেতরে-বাইরে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। রমজান মাস সন্নিকটে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত কয়েক বছর করোনা সংক্রমণ থাকার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারসহ আমাদের দেশেও দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। একশ্রেণির মুনাফাখোর, সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে উসকে দিচ্ছে। মানুষের দুঃখ, কষ্ট যাতে বৃদ্ধি পায়, সেজন্য তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। দ্রব্য মূল্যসহ নির্মাণসামগ্রীর মূল্য যাতে বৃদ্ধি পায়, সেজন্য তারা এসব ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোপনে পরামর্শ করছে।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে লোকসানে পড়ে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ৩৪তম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এমন তথ্য জানানো হয়। সভায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, করোনার কারণে আমাদের যে লোকসান হয়েছে, সেটা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি আমাদের থমকে দিয়েছে। বরং এখন পণ্যের দামের কারণে খাবার বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। আমরা আর টিকতে পারছি না।

জানতে চাইলে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতেই পারছে না। এ অবস্থায় জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের শুল্ক কর কমাতে হবে। উচ্চমূল্যের কারণে সমাজের পিছিয়ে পড়া যারা পণ্য কিনতে পারছেন না তাদের সুরক্ষা দিতে হবে।


আরও খবর



হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে খামারের শত শত মুরগি

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

বছর ১৭ আগে মুরগির খামার শুরুর পর ভালোই চলছিল বরিশালের আমানতগঞ্জের সেলিনা হোসেনের। কিন্তু ব্যবসায় বিপত্তি শুরু হয় করোনা মহামারীকালে। এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ান। সম্প্রতি বয়ে চলা তাপপ্রবাহ ও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে তার প্রায় ৭০০ মুরগি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বামীহারা এ খামারি। 

সেলিনা হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস আমার এ মুরগির খামার। করোনার সময় একবার বড় লোকসান হয়। অনেক মুরগি মারা গিয়েছিল তখন। অনেক কষ্টে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। ৮০০ ব্রয়লার মুরগি তুলেছিলাম। কিন্তু এবার সব শেষ। বিদ্যুৎ যায় আসে। যে গরম পড়ছে তাতে ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। টিনে পানি দিতে হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে আরো বেশি স্ট্রোক বেড়েছে। ওষুধ খাইয়েছি, তবু মুরগিগুলোকে রক্ষা করা যায়নি। আবার মুরগি ওঠানোর ক্ষমতা আমার নেই।

সেলিনার মতো অন্য খামারিদের একই হাল। অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি খামারেই দেখা দিয়েছে মড়ক। প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শত শত মুরগি। অনেক খামারি লোকসান গুনে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাদের কাছে কেউ যাচ্ছে না বলে অভিযোগ খামারিদের। 

খামারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার পর থেকে পোলট্রি খাতে দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পোলট্রিখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার গুটিয়ে নেন বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রায় ৪০ শতাংশ খামারি। এছাড়া খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার অতিরিক্ত দামের পাশাপাশি এখন পোল্ট্রি খাতের অন্যতম নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে জলবায়ু পরিবর্তন। গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহে খামারগুলোয় ব্যাপক হারে ব্রয়লার মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ডিম উৎপাদনও। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারিরা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও ব্যাহত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পাঁচদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাড়াচ্ছে, আবহাওয়ার পরিভাষায় যাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকালও চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বাগেরহাট ও কুষ্টিয়ায়ও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। এ তাপপ্রবাহ আরো বেড়ে সামনে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো বেশি শঙ্কায় রয়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

বরিশালে গত কয়েক দিনে ৬১৭টি খামারে প্রায় পাঁচ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পোলট্রি মুরগির খামার মালিকদের সংগঠনের নেতা কালাম শিকদার। তিনি জানান, জেলায় ১ হাজার ৬০৮টি মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির ৬১৭টি, লেয়ার ৫৩৫টি ও সোনালি মুরগির ৪৫৬টি। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে পোলট্রি খামারে দেখা দিয়েছে হিটস্ট্রোক। তাপপ্রবাহ থেকে মুরগি বাঁচাতে অনেক খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও কাজে আসছে না। ফলে পোলট্রি খামারে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

তীব্র গরমে খামারে মড়ক লাগলেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু সুফিয়ান বলেন, গরমের সময় খামারে বারবার পানি স্প্রে ও টিনের চালে ছালার চট ভিজিয়ে রাখার পরামর্শসহ একাধিক গাইডলাইন দেয়া হয়েছে বিভাগের প্রত্যেক মাঠ কর্মকর্তাকে। তারা খামারিদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে গরমে মুরগির মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের অবহিত করা হয়নি এখনো। 

চট্টগ্রামের খামারিরা জানিয়েছেন, ওষুধ ও পানি স্প্রের মাধ্যমে হিটস্ট্রোক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও প্রতিনিয়ত ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে। আবার লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটনের খামারে দেড় কেজির বেশি মুরগি ছিল প্রায় চার হাজার। কিন্তু গত দুদিনের গরমে প্রায় এক হাজার মুরগি মারা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট মুরগি মারা যায় কম। কিন্তু এক কেজি ওজনের বেশি মুরগি প্রচুর মারা যাচ্ছে। আমার বড় মুরগির খামারে গত দুদিনে ২৫ শতাংশই মারা গেছে। আশপাশের সবার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। যত ভালো খামার ব্যবস্থাপনাই থাকুক এ গরমে মুরগি মারা যাবেই। তবে এ বছর মৃত্যুটা বেশি। 

একই কথা জানান রাউজান উপজেলার অর্ণব পোলট্রি ফার্মের স্বাত্বাধিকারী দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে আমার খামারের বেশকিছু মুরগি মারা গেছে। আরো কিছু মুরগির অবস্থা সংকটাপন্ন। লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমে গেছে। স্যালইন, ভিটামিন সি খাওয়ানোর পাশাপাশি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্প্রে করে খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অন্যদিকে গরমের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিও তোলা যাচ্ছে না। এ কারণে পানিরও সংকট আছে। এভাবে গরম পড়তে থাকলে খামার রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে না। কম দামে তখন বিক্রি করে দিতে হতে পারে।

চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় চার হাজার ব্রয়লার ও পাঁচ শতাধিক লেয়ার মুরগির খামার আছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মুরগি খামারের উপপরিচালক মো. আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক বেসরকারি পর্যায়ের খামারে গরমের কারণে মুরগি মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে সরকারি খামারগুলোয় এখন কোনো মুরগি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। খামারগুলোয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

যশোরে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বোচ্চ। আগের দিন ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে ১০ হাজারের মতো মুরগি মারা গেছে। শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার খামারি সানজিদা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। আমার খামারে ৭০০ মুরগি ছিল। এখন আছে ২৫০টি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরে মুরগি খামার রয়েছে ১ হাজার ৫৩৪টি। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার জানান, তার অধীনে ২৪৯টি ব্রয়লার ও ২৫টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। কয়েক দিন ধরে যশোরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এতে মুরগির হিটস্ট্রোক বেড়ে গেছে। খাওয়া কমে গেছে। তবে কী পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার হিসাব নেই।

তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় রংপুরের খামারিরাও দুশ্চিন্তায় আছেন। লোডশেডিং তাদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলায় লেয়ার মুরগির খামার আছে দেড় শতাধিক এবং ব্রয়লার চার শতাধিক। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গরমে সাধারণত ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে সহনীয় ধরা হয়। এর ওপরে গেলে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বলা হয়, যা সব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। হিটস্ট্রোকসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ মুহূর্তে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো বেড়েছে খামারিদের। এ গরম চলতে থাকলে মুরগির মৃত্যু আরো যে কত বাড়বে তা নিয়েই আতঙ্কিত তারা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিছু স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমেনি। আগামী দুদিন তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোয় বেশি গরম পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। এর সঙ্গে নগরায়ন ও গাছপালা কেটে ফেলার কারণে খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া।

পোলট্রি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুরগির বাচ্চার তাপমাত্রা সহ্যক্ষমতা বেশি থাকে। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। এ কারণে বড় আকারের মুরগি হিটস্ট্রোকে বেশি মারা যায়। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, অতিরিক্ত গরমে তুলনামূলক ব্রয়লার মুরগি বেশি মারা যায়। কারণ তাদের সহ্যক্ষমতা কম। গরমে ব্রয়লার মুরগি খাবার কমিয়ে দেয়। সে কারণে তার খাবারে এনার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। টিনের চালে পানি বা ভেজা বস্তা দিতে হবে যেন শেড ঠাণ্ডা থাকে।


আরও খবর



ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত:শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন জানিয়েছে, দ্রুতই নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে ইউক্রেনকে।

দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এজন্য প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। তবে এ প্যাকেজে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স ব্যাটারি থাকবে না।

প্রতিটি প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির (পূর্ণাঙ্গ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম) দাম প্রায় এক বিলিয়ন ডলার আর প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় চল্লিশ লাখ ডলার।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান বিমান হামলা মোকাবিলায় প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র জরুরি প্রয়োজন যা এখনই জীবন রক্ষা করতে পারে ও করা উচিত

বিবিসিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজে স্বাক্ষর করেছেন তারই অংশ হিসেবে এই ছয় বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ইউক্রেনকে।

শিগগিরই আরও এক বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়া হবে।

অস্টিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সবচেয়ে বৃহৎ নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং খুব শিগগিরই এগুলো ইউক্রেনকে সরবরাহ করা হবে।

এর মধ্যে আছে বিমান প্রতিরক্ষা যুদ্ধাস্ত্র, কাউন্টার ড্রোন সিস্টেম এবং গোলাবারুদ (তবে প্যাট্রিয়ট নয়)।

এটা এমন নয় যে শুধু প্যাট্রিয়ট তাদের (ইউক্রেনের) দরকার। তাদের অন্য ধরনের সিস্টেম ও ইন্টারসেপ্টর (ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা বা আকাশেই ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়), বলছিলেন অস্টিন। আমি প্যাট্রিয়ট তৈরির বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক করবো

তিনি জানান, আরও ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভকে শিগগিরই দেওয়া হবে এবং এ নিয়ে ইউরোপীয় অন্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

ইউএস জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল চার্লস ব্রাউন বলেছেন, রণাঙ্গনে গোলার যথাযথ ব্যবহারের যে প্রয়োজনীয়তা ইউক্রেনের সেটি মেটাতে পারবে এবারের এই সহায়তা।

তবে এবারের যে সহায়তা প্যাকেজ তার কিছু অংশ ব্যবহার হবে ইউক্রেনের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প তৈরির জন্য যাতে তারা নিজেরাই প্রয়োজনমতো গোলাবারুদ উৎপাদন করতে পারে।

অস্টিন আরও বলেছেন, রাশিয়া ইতোমধ্যেই তাদের গোলাবারুদ ও অন্য অস্ত্রের উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সরবরাহ সহায়তাও পাচ্ছে।


আরও খবর



গরমে নানা অসুখের রোগী বাড়ছে হাসপাতালে

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। একদিকে বৈশাখের অসহনীয় গরমে চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের কড়া রোদের সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে সর্দি-কাশি, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্তদের চাপ বাড়ছে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে। 


এছাড়াও জন্ডিস, হিট স্ট্রোক, সর্দি-জ্বর নিয়েও হাসপাতালে ছুটে আসছেন রোগীরা। তবে বেশি অসুস্থ হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।  তাদের সুরক্ষায় রোদ পরিহারের পাশাপাশি যত্রতত্র পানি, রাস্তার পাশের খোলা জুস-শরবত পান থেকে বিরত থাকা এবং পচা বাসী খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমনকি ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে জনসমাগম বাড়লে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মহাখালির আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বা কলেরা হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫শ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং  মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও  রোগী সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ বেড়েছে।

 

কলেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণত এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দুশ থেকে আড়াইশ  ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা  চারশ ছাড়িয়েছে।গত ১০ দিনে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও গেছে।


রাজধানীর শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের গরমে শুধু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে

দুই শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা হাসপাতালের শিশু বিভাগেও ইতোমধ্যে রোগীতে সব শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 


প্রচণ্ড এ গরমের মধ্যে শিশুদের সুরক্ষায় যথাসম্ভব বাসায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রচণ্ড গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে উল্লেখ করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিনের গরমে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। বর্তমানে আমার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে ১৬ জন। এছাড়া জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার রোগী তো আছেই। অন্যান্য সময়ের তুলনায় আক্রান্তের এ হার আমরা অস্বাভাবিক বলছি।


তিনি বলেন, ঈদ-পরবর্তী সময়ে ফুড পয়জনিং (খাদ্যে বিষক্রিয়া) রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও আমরা বেশি পাচ্ছি। এজন্য অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বাসায় পানি খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যতটুকু সম্ভব পানি ফুটিয়ে, এরপর ফিল্টার করে পান করা নিরাপদ।


প্রচণ্ড গরমের কারণে শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ,  প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সময়ের  বলেন, বেশি গরমের কারণে শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের ঝুঁকিও কোন অংশে কম নয়। তবে গরমের সময় যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে কাজ করেন তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তারা ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) ঝুঁকিতে থাকেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন; ডায়রিয়া আর সর্দি-কাশি তো আছেই। এজন্য একটানা এক ঘণ্টার বেশি রোদে থাকা যাবে না।


তিনি বলেন, গরমে এই সময়ে বাইরে না যাওয়াই ভাল। আর বাইরে গেলে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। সম্ভব হলে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে পান করা উচিত। আরও ভালো হয় যদি দু-একটা ওরস্যালাইন খাওয়া যায়। কারণ, গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ বের হয়ে যায়। যদি গরমের সময় বাইরে বের হতে হয়, তাহলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে এবং একটু ঢিলেঢালা কাপড় পরা ভাল। কারণ, জামা-কাপড় বেশি টাইট হলে শরীর থেকে গরমটা সহজে বের হতে পারে না।


ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গরমের এই সময়ে অনেকে পিপাসা মেটাতে রাস্তাঘাটের লেবুর শরবত, আখের শরবতসহ নানা ধরনের পানীয় পান করেন। অথচ এগুলোতে ব্যবহার হওয়া পানি বিশুদ্ধ কি না, আমরা কেউই জানি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পানি বিশুদ্ধ হয় না। এগুলো খেয়েই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু পানি আর শরবত নয়, এ সময়ে বাইরের সবধরনের খোলা খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। গরমে বের হওয়ার সময় অবশ্যই বাসা থেকে বেশি তাপে ফোটানো ও ফিল্টার করা পানি বোতলে করে নিয়ে বের হতে হবে।


আর গরমের এই সময়ে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে বাড়তি সর্তকতার পরামর্শ এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের।




আরও খবর



রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে ৩৭ বছর আগে দায়ের করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজের রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেও আঘাত করে না।

বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য দুই বিচারপতি হলেন, কাজী রেজা-উল হক ও মো. আশরাফুল কামাল।

১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংযুক্ত করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংবিধানে ২ (ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে।

তখন স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে ওই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ১৫ জন বরেণ্য ব্যক্তি।

২০১১ সালের ৮ জুন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দেন। ওই দিনই অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের সহায়তাকারী) হিসেবে ১৪ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে নিয়োগ দেয়া হয়।

ওই রুল জারির প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের ৮ মার্চ এই রুল শুনানির জন্য আদালতে ওঠে। ওই দিন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের আদেশটি প্রত্যাহার করেন আদালত। পরে ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেওয়া হয়। সেই রায় সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।


আরও খবর



রাণীনগরের মাধাইমুড়ি গ্রামে ঐতিহ্যবাহী চরক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ) :

গত বৃহস্পতিবার নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চরক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।  চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে শিবের মাধাইমুড়ী সহ আশপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা শুরু হয়েছিল। প্রতিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আতœীয়-স্বজনে ভরে যায়।  পূজা উদ্যাপন ও মেলা পরিচালনা কমিটি সমন্বয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চরক পূজার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত মেলা শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চড়ক উৎসব এই অঞ্চলের হিন্দুদের বেশ আনন্দ উৎসবের খোড়াক হিসেবে প্রতি বছরই নারা দেয়। লোহার শিক দিয়ে তৈরি বরশী পিঠে ফুটিয়ে প্রায় ৩০ ফুট উচুতে শূন্যে ঘুড়ছে । চারে দিকে আগত উৎসক দর্শনার্থী আর ভক্তদের হাত তালি এবং হৈ-হুল্লর করে উৎসাহ যোগায় চড়ক খেলাকারীদের। শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শিবের মেলা উপজেলার মাথাইমুড়ি গ্রামে গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় মেলার প্রধান আকর্ষন চড়ক খেলা । আর এ খেলার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত করা হয় চার দিনের শিবের মেলা। 

জানা গেছে, শতবর্ষী এ মেলাকে ঘিরে এলাকা ভরপুর হয়ে উঠে আতœীয় স্বজনের কোলাহলে। মেলার শেষ দিনে দুপুরের পর থেকেই দলে দলে আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, মহিলা-পুরুষ মাধাইমুড়ি শিব ও কালী মন্দীর প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টার দিকে শুরু হয় চড়ক খেলার প্রস্ততি পর্ব। ৩০ ফুট উঁচুএকটি শিশু গাছের মাথায় বাঁশ দিয়ে চরকী তৈরি করে তার এক মাথায় নওগাঁর রাণীনগরে চার দিন ব্যাপী চড়ক পূজা সম্পূর্ণপূজারীর পিঠে বরশী ফুটিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। একই বাঁশের অপর মাথায় দড়ি বেঁধে সে দড়ি গাছের নীচের দিকে আর একটি বাঁশ বেঁধে তার মাথায় বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর ৭-৮ জন লোক মিলে নিচের বাঁশ ধরে সজরে ঘোরাতে থাকেন। তার পিঠে ও পায়ে বরশী ফুটিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া লোকটি চড়ক গাছে ঘুরতে ঘুরতে বাতাশা (চিনির তৈরী মিষ্টি) ছিটাতে থাকেন। কথিত আছে, ভক্তরা সে বাতাশা বিভিন্ন মানত ও অসুখ-বিসুখের সুস্থ্যতার আশায় খুটে খুটে খান। 

চড়ক খেলাকারী নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার দুমদুমা গ্রামের ভোলা (৪৫)। তিনি এ বছর এমনিতেই মাধাইমুড়ি গ্রামে চরক গাছে ঘুরতে এসেছেন। তার শিক্ষাগুরু নাটোর জেলার সিংড়া থানার হাতিন্দা গ্রামের বাবুল চন্দ্র সরকার (সন্নাসী) জানান, সখ করে সে আমার কাছ খেকে এ কাজ শিখেছেন। আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন,নাটোর জেলার ভুজনগাছী গ্রামে সুশিল চন্দ্র মহন্ত। তিনার পিছনে সাত বছর ঘুরে আমাকে এ শিক্ষা দেন। 

 মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোরঞ্জন জানান, প্রতি বছরের চেয়ে এই বছর পূর্ণার্থীদের ব্যাপক আগমন ঘটেছে। মেলার পরিবেশ ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভাল থাকায় এবছর যাকজমকপূর্ণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার চড়ক পূজার মধ্য দিয়ে চার দিন ব্যাপী শিবের মাধাইমুড়ী মেলা শেষ হয়।


আরও খবর