সদরুল আইন :এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রায় ৮০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
যারা বাতিল হয়েছে তারাও আপিল করেছেন আর যে ৭০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন তারা এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।
আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকে বিভিন্ন নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বসিয়ে দেওয়া বা একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিলেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে স্ববিরোধিতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান যেমন বলেছেন যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোন অস্তিত্ব নাই, তাদের বিরুদ্ধে দলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেমন বলছেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী যে কেউ হতে পারবে না, এটা দল ঠিক করে দেবে, তেমনটি বলেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং তিনি স্পষ্টতই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
যারাই তার কাছে আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে তারাই উল্টো ধমক খাচ্ছে। কারণ তিনি বারবার বলে দিয়েছেন যে যার খুশি সে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, তারা নিজ যোগ্যতায় জিতে আসবে।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখালে, তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিলে বা পেশিশক্তির প্রয়োগ করে তাকে ঠান্ডা করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই বার্তা প্রশাসনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বলেছে যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন করে সেটি নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে স্বস্তিতে এবং ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছে।
বহু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে আছে এবং অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি একটা বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের বিভিন্ন নেতাদেরকে যারা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তাদেরকে সুস্পষ্ট ভাবে তিনটি বার্তা দিয়েছেন।
কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে না। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় পার্টি ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তাদেরকে স্ব স্ব প্রতীক নিয়ে উন্মুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের নেতাদের বলেছেন, আপনারা ১৫ বছর ক্ষমতায় আছেন, আপনাদের সংগঠন কোথায়? আর শেষ পর্যন্ত করুণা করে হলেও ১৪ দলের শরিকদের কিছু আসন দেওয়া হলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে সম্মত নন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বরং তিনি চান বেশি সংখ্যক প্রার্থী অংশগ্রহণ করুক বেশি ভোটাররা ভোট দিক। এর ফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে এক বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন কাজের জন্য তিরস্কৃত বা বহিষ্কৃত হবেন না।
তাদেরকে প্রচারণা করার ক্ষেত্রে দলের প্রার্থীরা বাধা দেবেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে বসিয়ে দেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। এই সমস্ত কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একটা বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে এবারের নির্বাচনে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কৌশলের একটি অংশই হল স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রার্থী করা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকেন, শক্তপোক্ত করতে পারেন সেটা তিনি মনেপ্রাণে চাইছেন।
তার প্রধান লক্ষ্য হল নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা এবং জনগণের অভিপ্রায়ের যেন প্রতিফলন ঘটে সেটা নিশ্চিত করা। এর ফলে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্রতা সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।