
দেশে নারীদের মাত্র ১৭ দশমিক ৪ ভাগ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। এর ফলে শুধু তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিই বৃদ্ধি পাচ্ছে না, অনেক কিশোরী শিক্ষা ও সামাজিক সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
এছাড়া অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে এবং সুগন্ধিযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কারণে নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সংক্রমণের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার রাজধানীর এক হোটেলে নারীর শারীরিক সুরক্ষা ও মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ‘ইনসিওরিং সেইফ মেন্সট্রুয়াল হাইজিন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ওজিএসবি এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড সেনোরা যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে অর্গানাইজেশন অব গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর সভাপতি প্রফেসর ডা. ফারহানা দেওয়ান, দেশের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ওজিএসবি-এর সদস্য এবং স্কয়ার গ্রুপের কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিশদভাবে উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়, ক্যান্টার-এর ২০২৪ সালের হাউসহোল্ড পেনিট্রেশন ডেটা অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ১৭.৪% নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন।
আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে পিরিয়ডের সময় পুরনো কাপড়, তুলা কিংবা রাসায়নিক সুগন্ধিযুক্ত ভ্যাজাইনাল প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারণে ৯৭% নারী তাদের জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময় সার্ভিকাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হন।
এছাড়া, দেশে ৬৮% কিশোরীর প্রথম পিরিয়ড শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়, যা তাদেরকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। একইভাবে, ৪০% স্কুলছাত্রী মাসিকের সময় গড়ে তিনদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, যা তাদের শিক্ষাজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৬০ লাখ নারী কর্মী পিরিয়ডের সময় গড়ে ছয় দিন কাজে অনুপস্থিত থাকেন, যা শুধু তাদের আর্থিক অবস্থার উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং শিল্পখাতের উৎপাদনশীলতাকেও ব্যাহত করে।
সেনোরা গত ৩০ বছর ধরে নারীদের জন্য ১০০% স্টেরিলাইজড, রাসায়নিক ও সুগন্ধিমুক্ত এবং বিভিন্ন মূল্যস্তরের স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করে আসছে, যা সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণির নারীর জন্য নিরাপদ ও সহজলভ্য। কেবল পণ্য বিতরণই নয়, মাসিক স্বাস্থ্যবিধান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুল, গার্মেন্টস কারখানা এবং শহরাঞ্চলে স্বয়ংক্রিয় বিক্রয় যন্ত্র (ভেন্ডিং মেশিন) স্থাপনসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মালিক মোহাম্মদ সাঈদ উল্লেখ করেন যে সেনোরা ও ওজিএসবি-এর যৌথ লক্ষ্য হালো, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৬০% নারীকে নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনা। এই মহৎ উদ্যোগে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা একটি সুস্থ ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।