রহমতে আলম,নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পূরনুর (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।
★২৭. অনাদিরূপে এক আল্লাহ তা’আলাই ছিলেন। অন্য কিছু বলিতে আর কিছুই ছিল না। আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই নাই। এই শূন্যতার সমাপ্তি ঘটাইতে ইচ্ছা করিলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। যেমন, ওলীকুল শিরোমণি শায়েখ আকবর (রঃ) কর্তৃক এলহাম প্রাপ্ত এবং পূর্বাপর ওলী ও সূফী তথা আধ্যাত্মিকতায় ধন্য মহানগণ কর্তৃক গৃহীত আল্লাহ তাআলার একটি বাণীতে উলেখ আছে- “আঁমার সত্তা (জানিবার কেহ না থাকায়) অজানা ছিল; আঁমার ইচ্ছা হইল (আঁমার গুণাবলীর মাধ্যমে আঁমাকে প্রকাশ করা)-আঁমাকে জানান। সেমতে আঁমি সৃষ্টি করি জগত।”
[তথ্য সূত্র:তাফসীরে রুহুল মাআনী, পৃষ্ঠা: ১৪-২১;বুখারী শরীফ,৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ)]
* এই বাণীর মর্ম কোরআনের একটি আয়াত দ্বারাও সমর্থিত। আল্লাহ তাআলা বলিয়াছেন-“জিন এবং মানুষ এই দুইটি জাতিকে আঁমি একমাত্র আঁমার এবাদত বা গোলামী করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিয়াছি।”
[সূত্র: আল কোরআন,সূরা যারিয়াত, আয়াত নং ৫৬,সূরা নং: ৫১]
✌আল্লাহ তায়ালার এই ইচ্ছার বাস্তবায়নে জগত সৃষ্টির শুভ প্রারম্ভেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করিলেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর সৃষ্টির মূল নূরকে। এই নূরকেই পরিভাষায় বলা হইয়া থাকে “হাকীকতে মুহাম্মদিয়া”।এই নূর বা হাকীকতে মুহাম্মদীয়া বলিতে কাহারও মতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর পবিত্র রূহ বা আত্মা উদ্দেশ্য। আর কাহারও মতে অন্য কোন বাস্তব বস্তুবিশেষ উদ্দেশ্য। অথবা ঐ পবিত্র রূহ বা আত্মারই বাহন,কিন্তু পদার্থীয় দেহ নহে, বরং হয়ত এক বিশেষ জ্যোতির্বিম্ব, যাহার প্রতিবিম্বের বিকাশ ছিল হযরত মুহাম্মদ(ﷺ)-এঁর নশ্বর দেহ।
[তথ্য সূত্র:যোরকানী,১-৩৭; বোখারী শরীফ,৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা: ২, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
✌উপরোল্লিখিত আল্লাহ প্রদত্ত এলহামী বাণী ও তাহার সমর্থনে আয়াতের মর্ম ইহাই ছিল যে, “আল্লাহকে জানিবে, আল্লাহর গোলামী করিবে এই উদ্দেশেই সৃষ্ট জগতের সৃষ্টি।” সুতরাং সাধারণ নিয়ম মতেই আল্লাহ তাআলা তাঁহার প্রথম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-কে ঐ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের যোগ্যতায় সকলের ঊর্ধ্বে শীর্ষস্থানের অধিকারীরূপে সৃষ্টি করিয়াছেন। বোখারী শরীফের এক হাদীস আছে, নবী (ﷺ)-ফরমাইয়াছেন- “আল্লাহকে ভয় করায় এবং আল্লাহকে জানায় আঁমি তোমাদের তথা নিখিল সৃষ্টির সকলের ঊর্ধ্বে।” আল্লাহকে যে যত বেশী ভয় করিবে,সে তাঁহার তত বেশী গোলামী করিবে।
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
✌মাওলানা আশরাফ আলী থানভী তাহার সীরাত সস্কলন ‘নশরুত্তীব’ কিতাবে নিজ সংযোজিত টীকায় নূরে মুহাম্মদীকে রূহে মুহাম্মদী সাব্যস্ত করিয়াছেন।
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
✌এই হাকীকতে মুহাম্মদীয়া হইল নিখিল সৃষ্টিজগতের সর্বপ্রথম সৃষ্টি। লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র -সূর্য, ফেরেশতা এবং মানব-দানব সব কিছুই ঐ হাকীকতে মুহাম্মদিয়া বা নূরে মুহাম্মদীর পরে সৃষ্টি হইয়াছে। এই তথ্য সুস্পষ্টরূপে বিশিষ্ট সাহাবী জাবের (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে। জাবের (রাঃ) বলিয়াছেন, আমি একদা আরজ করিলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আঁপনার চরণে উৎসর্গ হউক; সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা কোন জিনিসটি সৃষ্টি করিয়াছেন? রাসূল (ﷺ) বলিলেন, হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর নূর সৃষ্টি করিয়াছেন (যাহা) আল্লাহ (বিশেষ কুদরতে সৃষ্ট) নূর হইতে। অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে আল্লাহ তায়ালার নিয়ন্ত্রণাধীনে চলমান ছিল।ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব-দানব এবং ফেরেশতা কিছুই ছিল না।”
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ; যোরকানী, ১-৪৬]
✌এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই যে, কোন শিল্পী নিজ দক্ষতায় সুন্দর গঠনের একটি জিনিস তৈয়ার করে; তাহা এতই সুন্দর হয় যে, স্বয়ং গঠনকারী শিল্পী তাহারই হাতে গঠিত জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়ে, সে তাহাকে আদর করে, ভালবাসে। শিল্পীর নিজ হাতে গড়া বস্তু তাহার দক্ষতায় এতই সুন্দর ও মনোরম হয় যে, স্বয়ং শিল্পী তাহার ভালবাসায় মুগ্ধ হয়। এমনকি শিল্পী প্রদর্শনী করিয়া তাহার গুণ গরিমারি প্রচার করে। আল্লাহ তাআলাও হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর ক্ষেত্রে তাহাই করিয়াছেন।
✌নবী (ﷺ) নূরী,তাঁর উপর যে হাদীসটি আছে যেমন: জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করি,হে আল্লাহর রাসূল! আঁপনার প্রতি আমার বাবা–মা কুরবান হোক, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর আগে কী সৃষ্টি করেন? নবী (ﷺ) বলেনঃ হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বস্তুর পূর্বে তাঁর নূর দ্বারা তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেন। তারপর সেই নূর নিঁজ ক্ষমতায় আল্লাহর আদেশে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। সেই সময় লউহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান-যমীন, সূর্য-চন্দ্র, জিন, মানুষ কোন কিছুই ছিলনা।” এই হাদীসটি বিংশ শতাব্দীর কথিত শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বাতিল বলে আখ্যা দিয়েছেন।তিনি বলেন সৃষ্টির প্রথম বস্তু হচ্ছে কলম, নবীর নূর নয়। প্রথম সৃষ্টি নবীর নূর বলে যে হাদীস প্রচার করা হয় তা জাল কথা,হাদীস নয়।
[সূত্র: সিল সিলাতুল আহাদীছ আস স্বহীহা (সহীহ হাদীস সিরিজ), হাদীস: ৪৫৮; গ্রন্থস্বত্ত: নাবী (ﷺ) কি নূরের তৈরী, পৃষ্ঠা: ৩২, প্রণেতা: আবদুর রাকীব (মাদানী), মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ,সউদী আরব]
✌সর্বপ্রথম নাসিরুদ্দীন আলবানীর একটু পরিচয় করিয়ে দেই, তিনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি সউদী বংশের শাসকদের প্রস্তাব করেছেন মহানবীর পবিত্র রওযার সবুজ গম্বুজটি ভেঙ্গে ফেলার।সে বলেছে, ‘এটি আফসোসের বিষয় যে,দীর্ঘদিন হল রাসূলের কবরের উপর একটি গম্বুজ প্রস্তুত হয়েছে…আমার বিশ্বাস সউদী সরকারের একত্ববাদের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তাদের উচিত তা চূর্ণ করে মসজিদে নববীকে তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
[সূত্র: তাহযীরুল মাসাজিদি মিন ইত্তিখাযিল কুবুর মাসাজিদা, আলবানী, পৃষ্ঠা: ৬৮-৬৯; ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন (ইসলামী সেবা দপ্তর, কোম, ইরান)]
✌আমার কথা হচ্ছে,আমরা রাসূল (ﷺ) -কে দেখিনি কিন্তু তাঁর স্মৃতি নিয়ে তাঁকে ভালোবাসি,মনেপ্রানে বিশ্বাস করি। তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসার মারফতে তাঁর দর্শন লাভ করি।রাসূল (ﷺ)-আজ আমাদের মধ্যে প্রকাশ্যে নেই কিন্ত তাঁর রওযা শরীফ আছে আর এটাই আমাদের জন্যে আল্লাহকে পাওয়া ও সারা জাহানের মাখলুকাতকে প্রমান দেওয়ার একটি নিদর্শন।যারা রাসূল (ﷺ)-কে ভালোবাসে তাদের জন্যে রাসূলের রওজার গম্বুজতো দূরের কথা তাঁর ছায়াও একটি যিয়ারতের উৎস। তাহলে যে ব্যক্তি তার নিজের চোখে দেখা এই নিদর্শনটিকে মিটিয়ে ফেলতে চায়,তার কাছে রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর তো অবিশ্বাসযোগ্য হবেই। আর তারা ‘রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছে’ সেটা মানতে রাজি না কিন্তু ‘কলম’ ঠিকই মানতে রাজি আছেন।
👏পাঠকবৃন্দের কাছে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) অসংখ্য নাম সমূহের গুণাবলী থেকে শুধুমাত্র কয়েকটি নামের অর্থ তুলে ধরতে চাই।যেমন,নবীজী(ﷺ)-এঁর এই নামটি ‘সাইয়্যেদ’ অর্থ সর্দার বা প্রধান,নবীজী নিখিল সৃষ্টির প্রধান, নবী ও রাসূলগণের প্রধান। ‘মোকাফফা’ অর্থ সর্বশেষে প্রেরিত। হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) সর্বশেষ পয়গম্বর। ‘সিরাজুম মুনীর’ অর্থ দীপ্ত সূর্য। নবী (ﷺ) দীপ্ত সূর্য অপেক্ষা অধিক ভাস্কর ছিলেন।
[সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৭, হাঃ ১৬৬২, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
🌹নবীকরিম (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক মাখলুকাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্ঠি করা হইয়াছে। যেমন হাদীস শরীফে আছে নবী করীম (ﷺ) বলেন হে জাবের আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম তোমাদের নবীর নূর পয়দা করিয়াছেন।
[তথ্য সূত্র: শানে মাহবুব (সঃ), পৃষ্ঠা ৩৮,তাবলীগী কুতুবখানা,চক বাজার ঢাকা]
✌কাজেই চাঁদ সূরুজের অস্তিত্ব, রৌশনী সবকিছুই নূর নবী হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) ফয়েজের কারণেই বিদ্যমান।নবী করিম (ﷺ) যদিও কবর শায়িত রহিয়াছেন কিন্তু তাঁহার অস্তিত্ব হইতেই চাঁদ সূরুজ আলোক লাভ করিতেছে। সমগ্র বিশ্বজগতের অস্তিত্ব তাঁহার মাধ্যমে লাভ হইয়াছে ইহা যেমন সত্য তেমন বিশ্বজগতের সচল থাকার মূলেও নবী করিম (ﷺ)-এঁর অস্তিত্ব কাজ করিতেছে। আধ্যাত্মিক সাধনা এবং রিয়াজতের মাধ্যমে যে ব্যক্তি নিজের অন্ত:করনকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করিয়া লয় সেই ব্যক্তি ফেরেশতার বৈশিষ্ঠ অর্জন করে।
[তথ্যসূত্র: শানে মাহবুব (সঃ),পৃষ্ঠা ৭১,তাবলীগী কুতুবখানা, চক বাজার ঢাকা)]
✌ইসলাম মাওলানা মোহাম্মদ কাসেম নানুতবী লিখিত কাছিদায়ে বাহরিয়া গ্রন্থের কয়েকটি কবিতার অর্থ নীচে উলেখ করা যাইতেছে। তিনি লিখিয়াছেন,আঁপনি(রাসূল (ﷺ) যমিনের সকল সৃষ্টির গৌরব। আঁপনি সকল পায়গাম্বারের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য নবী যদি ফুল হন তবে আপনি ফুলের ঘ্রান। অন্যান্য নবী সূর্যের কিরণ হইলে আপনি হইলেন সূর্য। আঁপনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রানস্বরূপ। আঁপনি দৃশ্যমান নূর। বিশ্বজগত আঁপনার উছিলায় সৃষ্টি হইয়াছে। আঁপনার নূরের বদৌলতে অস্তিত্ব হীনতা হইতে সকল কিছু অস্তিত্ব লাভ করিয়াছে। বিশ্বজগতের সকল প্রকার পূর্ণতার সমাবেশ আপনার মধ্যে রহিয়াছে। আঁপনার মতো কামালাত ও বৈশিষ্ট অন্য কাহারো মধ্যে নাই। আঁপনার মর্তবায় অন্য কোন নবী পৌছিতে পারে নাই। মোজেযার অধিকারী নবীগণও আঁপনার তুলনায় নিশপ্রাণ। আঁপনার পূর্ববতী নবীগণ আঁপনার উম্মত হওয়ার আগ্রহ ও আকাঙ্খা ব্যক্ত করিয়াছেন। আঁপনার নূর প্রকাশ না পাইলে আল্লাহ পাক সৃষ্টির কাজে হাত দিতেন না। হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহ পাকের দীদার পাইতে চান অথচ স্বয়ং আল্লাহ পাক আঁপনার সাক্ষাত চাহিয়াছেন। জমিন ও আসমান কখনো এক সমান হইতে পারেনা।
[তথ্য সূত্র: প্রিয় নবী (সঃ) এর আদর্শ জীবন, পৃষ্ঠা ৮৬, তাবলীগী কুতুবখানা, চক বাজার ঢাকা]
✌রাসূলুলাহ (ﷺ) বলিয়াছেন- আঁমি একটি কথা বলিতেছি; ফখর বা গর্ব করা উদ্দেশ্য নহে। ইব্রাহীম (আঃ) খলীলুলাহ (অর্থাৎ তিঁনি আলাহকে দোস্ত বানাইয়া ছিলেন), মুসা (আঃ) সফিউলাহ (অর্থাৎ তিঁনি আল্লাহ কর্তৃক বৈশিষ্ট প্রদত্ত), আর আমি হাবিবুলাহ (অর্থাৎ আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তাঁহার দোস্ত বানাইয়াছেন ভালবাসিয়াছেন)।
[তথ্য সূত্র: মেশকাত শরীফ; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা:৪, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
✌কোরআন মাজীদে উদ্ধৃত হয়েছে “ওয়ামা খালাকনাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব” এই তাফসীরটি হযরত জাবেরের বর্ণনার অনুকুলে। তিনি বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথমে আহমাদ মোস্তফার (ﷺ) রূহ সৃষ্টি করেছেন। সেই রূহ থেকে সৃষ্টি করেছেন আরশ, কুরসি, আকাশ, পৃথিবী এবং সমগ্র সৃষ্টি।
[তথ্য সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩, শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ), সেরহিন্দ প্রকাশন, সন-জুন ১৯৯৯ ইংরেজী]
✌আল্লাহ তায়ালার একটি নাম নূর। নূর শব্দটির রয়েছে বিভিন্নরকম অর্থ। যেমন, নূর বহনকারী, নূরের স্রষ্টা. আকাশ ও পৃথিবীকে নূরের মাধ্যমে আলোকিতকারী, আরেফগণের অন্তরে হেদায়েতে ও রহস্যের আলো প্রজ্জ্বলকারী ইত্যাদী। আল্লাহ পাক মোস্তফা (ﷺ)-কেও নূর নামে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তিনি এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট -আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।” অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, “ওয়া সিরাজাম মুনিরা” অর্থাৎ তিঁনি উজ্জ্বলকারী আলোকবর্তিকা। রাসূল পাক (ﷺ) যে নূর তার কারণ হচ্ছে তিঁনি আল্লাহতায়ালার আহবানকে প্রোজ্জ্বল করেছেন,জ্বালিয়েছেন নবুয়তের নূর এবং সত্য ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে আরেফগণের হৃদয়কে করেছেন আলোকিত।
[তথ্য সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩, শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ), সেরহিন্দ প্রকাশন]
✌রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা আঁমার উপর যখন তাঁর নেয়ামতের বহিঃপ্রকাশ চাইলেন,তখন এরশাদ করলেন,হে মুহাম্মদ (ﷺ) আঁপনি যখন ভূত চতুষ্টয়ের মধ্যে ছিলেন তখন আঁমি আঁপনার নূরকে ডাক দিয়েছিলাম আর আঁপনার উম্মতকেও ডাক দিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিলো, আঁপনার উম্মতের কথা মুসা (আঃ)-কে শোনাবো।
[সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৮৮, সেরহিন্দ প্রকাশন, সন-ডিসেম্বার ১৯৯৯]
✌রমযান মাস, অমাবস্যা-পূর্ব অন্ধকার, রজনী গভীর, লোকালয় হইতে বহু দূরে হেরা পর্বতের উচ্চ শৃঙ্গে নিভৃতি প্রকোষ্ঠে নবীজী (ﷺ) ধ্যানমগ্ন। এমন সময় হঠাৎ মহাসত্যের আগমন হইল। ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) ঐ প্রকোষ্ঠে তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন এবং সালাম করিলেন। ফেরেশতারা নূরের তৈয়ারী; বহন করিয়া আনিয়াছেন আল্লাহ তায়ালার কালাম, তাঁহার নূর; এইসব নূরের আকর্ষণে নবীজী(ﷺ)-এঁর জড় দেহের আবেষ্টনে লুক্কায়িত মহানূরও পৃতিভাত হইয়াছে অসাধারণভাবে।অতএব হেরা গুহায় এখন নূর! নূর! সবই নূর।নবীজী (ﷺ)-এঁর ভিতরে বাহিরে নূরের জৌলুসে নূরই নূর হইয়া গিয়াছে। এই মহা মহূর্তে তাঁহার দেহ-মনের অবস্থা একমাত্র তাঁহারই অনুভব করার কথা। ব্যক্ত বা বর্ণনা করার আয়ত্ত বহির্ভূত। নিভৃত গিরিগহবরের এই অভূতপূর্ব মুহুর্তটি মোস্তফার হৃদয়ে কি রেখাপাত করিয়াছিল তাহা কি কোন মানুষ নির্ণয় করিতে পারে?(স:)!
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ,৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৮৩, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ; ৬৫,চক সারকুলার রোড,ঢাকা- ১২১১ যোরকানী, ১-২০৭] [সংগ্রহকৃত]
♦রহমতে আলম,নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পূরনুর (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[১০ম পর্ব দেখুন]
★২৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ:)-কে বলেছেন,ওহে ঈসা! মহানবী (ﷺ)-এঁর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো।রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-না হলে আঁমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না,বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।”
📚দলিল
*১. আল মোসতাদরেক’ হাকিম: ২/৬৭১ : হাদিস ৪২২৭
*২.আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
*৩. ইমাম ইবনে সাদ : তানাকাতুল কোবরা
*৪.ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী : ‘শিফাউস্ সিকাম ৪৫
*৫. শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী : ফতোওয়ায়ে সিরাজিয়া ১/১৪০
*৬.ইবনে হাজর রচিত ‘আফদালুল কোরা
*৭.আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
*৮. শায়খ ইউসূফ নাবাহানী :
জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ ও ৪/১৬০
*৯. ইবনে কাসীর : কাসাসুল আম্বিয়া : ১/২৯ পৃ:
*১০.ইবনে কাসীর : সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০
*১১. ইবনে কাসীর :মুজিযাতুন্নবী (দরুদ ) : ১/৪৪১
*১২. ইবনে হাজর আসকালানি : লিসানুল মিযান : ৪/৩৫৪,রাবী, ১০৪০।
*১৩.ইবনে হাজর আসকালানী রচিত ‘আফদাল আল-কুরআন’; ১/১৮৯।
ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া; ১/১৮
ইবনে হাজার হাইসামী : শরহে শামায়েল, ১/১৪২।
*১৩. ইমাম যাহাবী : মিজানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯, রাবী নং ৬৩৩৬
*১৪. ইবনে হাজর হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/৪২
*১৫. ইমাম যুরকানী :শরহে মাওয়াহিব : ১/১২/২২০
*১৬. আবু সাদ ইব্রাহীম নিশাপুরী : শরহে মোস্তফা : ১/১৬৫
*১৭. খাসায়েসুল কুবরা : ১/১৪ : হাদিস ২১
*২৮. ইমাম ইবনে হাইয়্যান : ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী : ৩/২৮৭
*২৯. কানযুল উম্মাল- হাদীস ৩২০২২
*৩০.মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
*৩১. মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১/২৯৫, হাদিস : ৩৮৫
*৩২. ইবনে শামী সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩
💟হাদিসের মান পর্যালোচনা💟
*১.ইমাম হাকিম তাঁর ‘মোসতাদরেক’ গ্রন্থে তাঁর তাহকিকে হাদিসটিকে সহিহ্ সাব্যস্থ করেছেন।
আল মোসতাদরেক’ হাকিম: ২/৬৭১ : হাদিস ৪২২৭
*২.ইমাম দায়লামী : হাদিসটির মান সনদের দিক থেকে হাসান।
আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
*৩.আরও অসংখ্য ইমাম, ইমাম হাকিম রহ. এঁর রায়কে গ্রহণ করেছেন।অপরদিকে, কেবলমাত্র ইমাম যাহাবী (রহ:) উক্ত রায়ের বিপরীত বলেছেন।তিনি বিপরীত বলার কারন স্বরুপ বলেন :উক্ত হাদিসের একজন রাবী ‘আমর ইবনূ আউস আল আনসারী’ ‘অপরিচিত’।
একজন রাবী অপরিচিত হওয়াতে একটি হাদিস জাল কোনভাবেই হতে পারে না।উক্ত রাবী ইমাম যাহাবী (রহ:)এর দৃষ্টিতে অপরিচিত।অথচ তাঁর চেয়ে উঁচু স্তরের ইমামগণ উক্ত হাদিসকে সহিহ্ ও উক্ত রাবী (আমর ইবনূ আউস) কে সিকাহ্ বলেছেন।
*৪.বিশ্ববিখ্যাত রিযাল গ্রন্থ ‘তাহযিবুল কামাল ফি আসমাউর রিযাল’ এ বলা হয়েছে, উক্ত রাবী সিকাহ্ বা বিশ্বস্থ।
*৫. ইমাম ইবনে হিব্বান, ইমাম বুখারি, ইমাম আবু নুআইম (রহ:)ও তাঁকে সিকাহ্ বলেছে।
[ইমাম মিযযী : তাহযিবুল কামাল ফি আসমাউর রিযাল; ১৪/১৭৭, রাবী নং : ৪৯১৩]
*৬. তদুপরি,আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) উক্ত রাবীকে সিকাহ্ বা বিশ্বস্থ বলেছেন।
[ইবনু হাজর আসকালানী : তাকরীবুত তাহযীব; ১/৪৩৬]
বুঝা গেল ইমাম যাহাবী (রহ:) এর নিকট উক্ত রাবী অপরিচিত হলেও আর কারো নিকট পরিচিত হবেন না এমন নয়।আর ইমাম যাহাবী (রহ:) উক্ত রাবীকে মিথ্যাবাদী বলেন নি; বলেছেন,অপরিচিত।
✌সুতরাং হাদিসটি নি:সন্দেহে সহিহ্ এর মান রাখে। আর হাদিসটি যেহেতু আমল ও আহকাম সম্পর্কিত নয়, সেহেতু ‘হাসান’ বলে মানতে ও বিশ্বাস করতে সমস্যা নেই।
★৩০. এবার আমি তাবলীগ জামাতের ‘ফাজায়েলে আমল’ গ্রন্থ থেকে একটি প্রমান দিব।সেখানে একটি শিরোনাম দেওয়া হয়েছে কোন ‘আমালে আদাম (আ:)-এঁর তাওবাহ কবূল হলোঃ
“হযরত ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, হুজুরে পাক (ﷺ) বলেন, যখন হযরত আদম (আঃ) হইতে কিছুটা পদস্খলন হইয়া গেল যাহার দরুণ তিনি বেহেশত হইতে দুনিয়াতে প্রেরিত হইলেন,তখন তিঁনি সব সময় কান্নাকাটি ও এস্তেগফার করিতে থাকেন।একদিন তিঁনি আসমানের দিকে মুখ উঠাইয়া আরজ করিলেন হে আল্লাহ! মোহাম্মাদ (ﷺ)-এঁর উছিলায় আঁমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি।ওহী নাজিল হইল, মোহাম্মদ (ﷺ) কে? যাহার উছিলায় তুমি ক্ষমা চাহিতেছ? হযরত আদম (আঃ) বলিলেন- যখন আঁপনি আমাকে সৃষ্টি করেন তখন আমি আরশের উপর লিখিত দেখিয়াছিলাম ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহ’, তখনই আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম মোহাম্মদ(ﷺ) হইতে অধিক মর্যাদাশীল আর কেহই হইবে না,যেহেতু আঁপনি তাহার নাম নিঁজের নামের সঙ্গে রাখিয়াছেন।ওহী হইল হে আদম! তিঁনি আখেরী নবী এবং তিঁনি তোমার আওলাদভূক্ত হইবেন অথচ তিনি না হইলে তোমাকেও পায়দা করতাম না”-।
📚দলিল
মৌ:মোহম্মদ জাকারিয়া,ফাজায়েলে আমল; খণ্ড ‘ফাজায়েলে জিকির’, পৃষ্ঠা ৩১৫ (বাংলা), পরিবেশনায় তাবলিগী কুতুবখানা / ফাউণ্ডেশন।
তাবারানী; সাগীর,২/৮২,২০৭।
★৩১. ইবনে আসাকির (রহ:) উদ্ধৃত করেন হযরত সালমান ফারিসী (রা:)-কে, যিনি বলেন: “হযূর পূর নূর (ﷺ)-এঁর কাছে জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী, ‘(হে রাসূল) আঁপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আঁমি সৃষ্টি করিনি।আঁমি বিশ্বজগতও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আঁপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আঁমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না, যদি আঁপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”
📚দলিল
*১.ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/৫১৭
*২. মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
৩. ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৮২
৪. ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২৮৯
*৫.কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/১০৫
★৩২.তাবেয়ী হযরত কাবুল আহবার (রা) থেকে বর্নিত,(বিশাল বর্ননার পর)…