Logo
শিরোনাম

তুই রাজাকার” কলাম চালু করায় আমি তার পক্ষে কলম ধরেছি

প্রকাশিত:বুধবার ০৫ জুন ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ |

Image

পুলক ঘটক, সিনিয়র সাংবাদিক :

নাঈমুল ইসলাম খান তার পত্রিকার প্রথম পাতায় তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি ছাপিয়েছিলেন। সেটা উল্লেখ করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, খান সাহেব তারেকের লোক, বা তিনি তারেকের সঙ্গে লাইন দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই খোলাচিঠি তিনি কবে ছাপিয়েছিলেন, সেখানে কি লেখা হয়েছিল, কি ভুল আছে তার কোনো উদ্ধৃতি কেউ দিচ্ছে না। ঢালাও মন্তব্য, “তিনি তারেক রহমানকে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন, তারেকের সাথে লাইন দিয়েছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।” এধরনের প্রচারণা অসততা এবং উদ্দেশ্যমূলক। 

আচ্ছা ভাইয়েরা, মিথ্যা কথা কেন বলেন? তিনি কি সেই খোলাচিঠি তারেক রহমান ক্ষমতাধর থাকা অবস্থায় লিখে তার কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন? চিঠিটি তিনি লিখেছিলেন ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনে ক্ষমতায় আসা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে – যখন তারেক রহমান কারাগারে। 

বিচার ও শাস্তি থেকে একরকম রেহাই দিয়ে তারেককে চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠানো সঠিক হয়েছে কিনা, তাকে কারাগারে রেখে বিচার প্রক্রিয়া চালালে পরবর্তী রাজনীতিটা কেমন হতো ইত্যাদি প্রশ্নে মতান্তর থাকতে পারে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এসব নিয়ে অনেক আলোচনা করবেন। তবে এটুকু জেনে রাখুন, তারেককে বিদেশে পাঠানো, নির্বাচন আয়োজন এবং সামরিক বাহিনীর কুক্ষিগত রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিকের ঐ খোলা চিঠির অবদান আছে।  

সাংবাদিকের নিজের কন্ঠ থেকে সুর বেরোয় না, অথচ সবচেয়ে বড় সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদের সুরের সমালোচনা লেখে। নিজেরা বলিং, ব্যটিং, ফিল্ডিং কিছুই না পারলেও দক্ষ ক্রিকেটারের ভুল ধরে। নিজেরা খেলতে না জেনেও দক্ষ খেলোয়ারদের খেলা শেখায়। আর নিজেরা রাজনৈতিক না হয়েও রাজনীতি শেখায় ঝানু রাজনীতিবিদকে। সাংবাদিকতা পেশার চরিত্রটাই এমন। নাঈমুল ইসলাম খান আওয়ামীলীগ বা বিএনপি করেন না। তিনি সাংবাদিক। তিনি তারেক রহমানকে খোলা চিঠি লিখে সাংবাদিকতায় কোনো পাপ করেননি। 


২০০৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক আমাদের সময়ের প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া ঐ খোলা চিঠিতে তারেক রহমানকে নাঈমূল ইসলাম খান যেসব পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো যদি তিনি মানতেন তাহলে জিয়াপুত্র ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হতেন এবং রাজনীতিরও উপকার হতো। 

কারাগার থেকে বেরিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে যাতে চিকিৎসা নেন এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেন, তৎকালীন সময়ে বন্দী এক ‘নষ্ট রাজপুত্রকে’ সেই পরামর্শ দিয়েছেন সাংবাদিক। “জুবায়দা ও জায়মার প্রতি ভালবাসা থেকে দেশের সকল মানুষের প্রতি ভালবাসা” শিখতে পরামর্শ দিয়েছেন। 

তাকে পড়াশোনা করতে বলেছেন এবং ইউরোপ ও আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ কোর্সে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি, এমনকি আটককৃত অবস্থায় তারেক যাদের দ্বারা নিগৃহিত হয়েছেন তাদের প্রতিও, প্রতিহিংসাপরায়ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

বলেছেন, “দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীত সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে ভ্রান্তি ছিল নিশ্চয়ই। ... বাংলাদেশের খেটে খাওয়া পরিশ্রমী কৃষক-মজুর আরো অনেক ভালো জীবন যাপনের অধিকার রাখে। তাদের কথা একটু বেশি করে ভাবুন....” 

তারেককে ভুল স্বীকার করার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যে কোন ভুল স্বীকারকে অত্যন্ত অসম্মানজনক ও ক্ষতিকারক বিবেচনা করা হয়। আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে এই ধারণা ভিত্তিহীন ও মারাত্মক বিপর্যয়কর।” 

এ লেখায় অপরাধ কোথায়? ওনার লেখাটি বেশ বড়, যাদের ইচ্ছা হয়, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে লেখাটির সমালোচনা লিখুন; গণতন্ত্রে সমালোচনা ও পাল্টা সমালোচনা আত্মোপলব্ধিতে ও সমাজ-মানস গঠনে ভূমিকা রাখে। 

আমি কেন নাঈমুল ইসলামের পক্ষে লিখছি? তার সঙ্গে নিশ্চয় আমার আন্তরিক সুসম্পর্ক আছে। কিন্তু ভাল সম্পর্ক থাকলেও সবার সম্পর্কে সবসময় লেখি না। আমি তার পক্ষে লিখছি, কারণ তিনি ”রাজাকার পুত্র”। একজন রাজাকার পুত্র পত্রিকার সম্পাদক হয়ে সেখানে “তুই রাজাকার” কলাম চালু করার দুঃসাহসী বীরত্ব প্রদর্শন করায় আজ আমি তার পক্ষে কলম ধরেছি। 

একটি প্রতিকূল সময়ে সাংবাদিকতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নতুন ধারা সৃষ্টির কারিগর হওয়ায় তার কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের দায় আছে। 

 “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নির্ভীক কণ্ঠস্বর” স্লোগানে ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকা আবির্ভাবের সেই সময়টা ভাবুন - ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়া ও এরশাদ হয়ে খালেদা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাবিরোধী রাজনীতির পুরো সময়টা বিবেচনা করুন। তখনকার প্রভাবশালী বাংলা পত্রিকা ইত্তেফাক ও ইনকিলাব। ইনকিলাব ও তার মালিকের অবস্থান সবাই জানেন। আর ইত্তেফাক সেসময় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে না হলেও এই চেতনার পক্ষে বিপ্লবী অবস্থানে ছিল না। পত্রিকাটির মালিকরা প্রায় সবসময় ছিলেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে; তারা মন্ত্রিত্বও নিয়েছেন – ক্ষমতার এ পক্ষে, ও পক্ষে; সব পক্ষেই। তাদের সুবিধাবাদী ক্ষমতারোহন নিয়ে আমাদের কথা নেই, বরং সাথে আছি নীতিতেই আমরাও আছি। 

এরশাদ ও খালেদা সরকারের প্রিষ্ঠপোষকতায় ইনকিলাবের চেয়েও চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও উগ্র অবস্থান থেকে প্রকাশিত হতো বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দল ফ্রিডম পার্টির পত্রিকা দৈনিক মিল্লাত। ঐ পত্রিকায় শেখ হাসিনার নামটাও বিকৃত করে করে লেখা হতো; হিন্দুয়ানী ভাষা থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য ‘জলপ্রপাত’কে লেখা হতো ‘পানিপ্রপাত’। সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের দৈনিক জনতা পত্রিকাও ছিল একই লাইনের।       

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সবসময় সুস্পষ্ট অবস্থানে সবেধন নীলমণি ছিল সংবাদ ও বাংলার বাণী। কিন্তু বুদ্ধিজীবী মহলের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে তার প্রবেশ কতটুকু ছিল? 

তবে বলুন, খালেদার আমলে শানিত কলমে “তুই রাজাকার” কলাম চালু করা কার দালালী ছিল? নাঈমুল ইসলাম কি তখন ক্ষমতাসীন দলের তুষ্টিসাধন করে লাভবান হওয়ার সাংবাদিকতা করেছিলেন? অনেকের মতোই সাংবাদিকতায় ও চরিত্রে আপোষকামিতা তথা বিচ্যুতির রেকর্ড খান সাহেবের নেই, একথা কখনোই বলব না। কিন্তু সেকাল থেকে আজ পর্যন্ত তার কর্মকাণ্ডে তাকে কি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের বুদ্ধিজীবী হিসেবে চেনেন? 

অধিক কথা কি বলব, জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচনের সময় নাঈমুল ইসলাম খানের ভোট কোন পক্ষ প্রত্যাশা করে? ইসলামপন্থী, এরশাদপন্থী, খালেদাপন্থী, ফ্রিডমপার্টিপন্থীরা? নাকি তার ভোটটা আমরা প্রত্যাশা করি? আপনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন হয়ে “রাজাকার পুত্রের” ভোট আপনি পাবেন – এমনটা কেন প্রত্যাশা করেন ভাই? 

আপনিও অন্তরে জানেন নাঈমুল ইসলাম খান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন; তার পিতার রাজনৈতিক অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও। আপনি আরও জানেন, নাঈমুল খান একদম অসাম্প্রদায়িক। আপনি জানেন, তিনি সাম্প্রদায়িক বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ইত্যাদির বিপক্ষের মানুষ। তিনি পরিপূর্ণভাবে আধুনিক চিন্তাচেতনা সম্পন্ন বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। 

ছেলে বয়সে ছাত্রশিবির করেছে, এখনো গোপনে জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে টাচে আছে, বাবা-কাকাও ছিল রাজাকার – এমন মানুষও পরিচয় গোপন করে আপনার-আমার সাথে থাকে – মিথ্যা কথা বলে এবং সুবিধা নেয়। আর যে মানুষটা অকপটে তার সত্য পরিচয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লড়াই করে যাচ্ছে তাকে কোনঠাসা করার জন্য তার পিতার অপরাধ দেখিয়ে দেওয়ার মূল মতলব কি? 

আওয়ামী লীগ করে, কিন্তু সেক্যুলারিজম কি জিনিস বোঝে না – আন্তরিকভাবে সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী; রাজনীতি নিয়ে পুরাই ব্যবসা করে –এমন মানুষকে সালাম দিয়ে চলার চেয়ে অকপটে “রাজাকার পুত্র” হিসেবে নিজেকে স্বীকার করে অনুশোচনা প্রকাশকারী নাঈমুল ইসলাম খানকে সালাম জানানো নৈতিক দায়িত্ব মনে করি। রাজাকারের পরিবারে জন্ম নিলে রাজাকার হওয়াই তার দায়িত্ব, মানুষ হওয়ার অধিকার তার নেই – এমন বিশ্বাস নিয়ে কখনো চলিনি, এমন কথা কখনো বলিনি, ভবিষ্যতেও বলব না। যাদের ভাগে টান পরে তারা এসব বলুক।

গতকাল আমাদের এক রিপোর্টার ভাই একটি দৈনিক পত্রিকায় ডেপুটি এডিটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ফেসবুকে পোস্ট দেখে ওনাকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি। আমাদের বহু সহকর্মী তাকে অভিন্দন জানিয়েছেন। আচ্ছা, ওনাকে অভিনন্দন জানানোর সময় তিনি কোন মতাবলম্বী, কতটা সৎ, কত ইঞ্চি লম্বা – এসব কি আমরা বিবেচনা করেছি? তিনি তার পেশাগত জায়গায় একটি বড় সফলতা অর্জন করেছেন বিধায় আমরা অকুন্ঠে বন্ধু হিসেবে তাকে অভিনন্দিত করেছি। নাঈমুল ইসলাম খান তার পেশাগত জায়গায় যদি কোনও বড় অর্জন করেন, আমরা কি তাকে অভিনন্দন জানাবো না? সাংবাদিকতা পেশাটি কি আমলাদের পদের তুলনায় তুচ্ছ? একজন পত্রিকা সম্পাদক কি সরকারের একজন সচিবের তুলনায় অত্যন্ত নগন্য? তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাকে সচিব পদমর্যাদার একটি দায়িত্বে নিয়োজিত করলে কষ্ট কোথায়? 

বলুন দেখি নাঈমুল ইসলাম খান বড় কোনও বিনিয়োগ হাতে নিয়ে যদি আবার বৃহৎ একটি পত্রিকা বের করার উদ্যোগ নেন, তার কাছে চাকরির জন্য যাবেন না – কে কে আছেন? রাজাকার পুত্রের অধিনে চাকরিতে যাবেন – এটা একটা কথা হল? 

নাঈমুল খান দুর্নীতিবাজ ও অসৎ হলে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন কি কাঙ্খিত? সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত থাকা কি শুধু আমলাদের বিষয়? একজন অসৎ ও দুর্নীতিবাজ সাংবাদিক কি সমাজের অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে না? তার পত্রিকার সম্পাদক হওয়া নিয়ে টেনশন নেই, তাকে অভিনন্দন জানাতেও রাজি আছেন, শুধু তার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস-সেক্রেটারি হওয়া নিয়ে টেনশন – এরকম কেন? অসৎ ও দুর্নীতিবাজ হলে নাঈমুল খানের সম্পাদক থাকা উচিত নয়, তার জেলে থাকা উচিত। সব পেশার জন্য এটাই সত্য হওয়া উচিত। 

 “তুই রাজাকার” কলামের জন্য নাঈম খানের ব্যাপারে বহু মানুষের জ্বলুনি আছে। তারা প্রত্যাশা করে একজন রাজাকার পুত্র তাদের পক্ষে থাকবে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকরা রাজাকারের বিরুদ্ধে তার কলমকে নেবে, কিন্তু ভয়ে থাকবে তার ভাগটা যেন তিনি নিতে না পারেন।  

নাঈমুল খান দক্ষতা ও বাকপটুতা দ্বারা তার অবস্থান অর্জন করেছেন একথা সত্য। জামাত-বিএনপির লোকজনের ভাষায় তিনি, “চাটুকারিতা” করে হাসিনার আস্থা অর্জন করেছেন। আচ্ছা, ঐ পদে কি শেখ হাসিনার সরকারের বিরোধী কাউকে নিয়োগ দেওয়া আশা করেন? অনেকে আছে, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে কোনও অবদান ছাড়াই অনেক বড় বড় পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদেরও সমালোচনা হয়। আবার যে দক্ষতার সাথে সরকারের পারপাস সার্ভ করে তারও সমালোচনা হয়। সরকারের যদি তিনি চাটুকারিতা করে থাকেন এবং যদি তিনি যোগ্য হন, তাহলে তো সরকারের রাজনৈতিক নিয়োগে ভুল নেই। একদিন নয়, দু’দিন নয়, বছরের পর বছর নাঈমুল খান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষের মত প্রকাশ ও জানার অধিকারের পক্ষে কাজ করেছেন। তাতে ভুল-ভ্রান্তি ও বিচ্যুতিও আছে। কিন্তু তার অবদান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে; অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে। এতে আওয়ামীলীগের কতটুকু উপকার বা ক্ষতি হয়েছে তারা বুঝবে।   

আগেও বলেছি, আবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব পদের জন্য সম্ভাব্য যেসব নাম শুরু থেকে আলোচনায় ছিল তারা সবাই দক্ষ, যোগ্য ও উত্তম মানুষ। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত এবং আরও বড় জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। যারা যেখানে কাজ করেন তারা সেখানেই অর্জন প্রত্যাশা করেন এবং লেগে থাকলে প্রাপ্তিও আছে। তাদের কারও নিয়োগে আমার আপত্তি নেই, বরং অর্জনে অভিন্দন জানাবো। 

বিভিন্ন মহল থেকে বিরোধিতার ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে নাঈমুল ইসলাম খানের নিয়োগ কিছুটা ঝুলে গেছে, এ আমি জানি। শেখ হাসিনা কোন সাংবাদিককে অথবা কোন আমলাকে তার প্রেস সচিব নিয়োজিত করবেন, এ সিদ্ধান্ত ও এক্তিয়ার সম্পূর্ণ তাঁর। কিন্তু একজন মানুষকে অহেতুক হেনস্তা করা বা অপদস্ত করা অনুচিত কাজ মনে করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় এক রাজাকার পুত্রের অবদানকে মানুষ যেন শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখে।


আরও খবর

আমাদের মফস্বল সাংবাদিকতা ও কিছু কথা

মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪




ফুলবাড়ী সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যার ১৪ বছরেও পায়নি বিচার

প্রকাশিত:বুধবার ০৮ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ |

Image

উত্তম কুমার মোহন্ত, (কুড়িগ্রাম) 

আজ- ০৭(জানুয়ারি)সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যার-১৪ বছর।২০১১সালে এইদিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর হাজিটারী সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ফেলানীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে।এ হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি কাঙ্খিত বিচার পায়নি তার পরিবার।


পাশ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনিটারী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ফেলানী হত্যার এই দিনটির স্বরণে ফেলানীর কবর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত তার পরিবার।ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম জানান,আজ ১৪ বছরেও সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা ভুলতে পারিনি, আজ ও সেদিনের তার আত্ম চিৎকারে গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায়।আমাদের মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থা সহ নানান জনের কাছে গিয়েছি কিন্তূ এপর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।


২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কুচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে অবস্থিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হলে ০৫ (সেপ্টেম্বর) সেই কোর্টে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১১ (সেপ্টেম্বর)  ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবার আশায় ভারত সরকারকে একটি পত্র দিয়ে জ্ঞাত করেন। ২০১৪ সালে ২২(সেপ্টেম্বর) পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়ে যায়।


পরবর্তীতে ২০১৫ সালের আইন ও সালিশ কেন্দ্র ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চে আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন। ৩১(আগষ্ট) ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ্য রুপি প্রদানের অনুরোধ করেন ,এর জবাবে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম কে দায়ী করে বক্তব্য দেন। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় শুনানি দিন তারিখ পিছিয়ে গিয়ে একেবারে ২০২০ সালে ১৮ (মার্চ)শুনানির দিন ধার্য হয়ে আজ অবধি শেষ হয়নি সেই বিচার কাজ।


ফেলানী হত্যা মামলার তৎকালীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, সাবেক পিপি এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার পাইনি,পেলে মানবাধিকার সুরক্ষার পথ আরও সুগম হতো।


এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৭(সেপ্টেম্বর)ফেলানী হত্যার ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১ম বাদী ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালমা আলী ২য় বাদী হয়ে ভারতের আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়ার) সচিব এবং বিএসএফের মহাপরিচালক কে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ -৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।পরবর্তীতে ২০১৫ সালে  ২১ (জুলাই) আবারও ফেলানীর বাবার জন্য অন্তবর্তী কালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি আবেদন করেন।


এবিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালমা আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মামলাটি ভারতের নয়াদিল্লীর সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁলে আছে।


এদিকে ফেলানী হত্যার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে ৭ (জানুয়ারি) কে ফেলানী দিবস ঘোষণা,হত্যার বিচার,তার পরিবার কে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ঢাকা শহরের উত্তর সিটি কর্পোরেশন বারিধারা পার্ক রোডের নামকরণ ফেলানী স্বরণী রাখার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদ। এতদিন পার হয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি একটিও।

এবিষয়ে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মুঠোফোনে জানান,এবার তারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শুধু স্টিকার লাগাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন,৭ (জানুয়ারি) ফেলানী দিবস পালন সহ সারা বিশ্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে ২০১৫ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে আমরা একটি লিখিত স্বারকলিপি প্রদান করেছিলাম। পরবর্তীতে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের নিকট যে কোন রাষ্ট্রকে এবিষয়ে প্রস্তাব আনতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সে উদ্যোগের অপেক্ষায় আছি।


আরও খবর



বকশীগঞ্জে অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে “রফিক ফাউন্ডেশন”

প্রকাশিত:শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ |

Image

জামালপুর প্রতিনিধি :

জামালপুরের বকশীগঞ্জে প্রতিবছরের ন্যায় অসহায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “রফিক ফাউন্ডেশনের” উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকালে উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের টুপকারচর সর্দারপাড়া এলাকায় ইমামবাগ দরবার শরীফ মাঠে শীতার্ত সহস্রাধিক  মানুষের মাঝে এসব শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়। 

শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রফিক ফাউন্ডেশনের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক-স্পাইন ও অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা.মো. রেজাউল করিম রেজা। ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ইমামবাগ দরবার শরীফের পীর আলহাজ্ব ক্বারী মো.ইদ্রিস আলীর সভাপতিত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াত নেতা মাওলানা এডভোকেট নাজমুল হক সাঈদী,বিএনপি নেতা আবদুল হামিদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আফছার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ, প্রভাষক বজলুর রশীদ,উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সাজ্জাদ হোসাইন, এনায়েতপুর দরবার শরীফের খতিব ও পেশ ইমাম আলহাজ্ব মাওলানা মো.আবদুল আউয়াল,ডাক্তার জয়নাল আবেদীন,এভারেস্ট ফার্মা সিউটিক্যালের ম্যানেজার গোলাম সারোয়ার, কথা সাহিত্যিক সুলতানুল আরেফীন আদিত্য,বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহীন আল আমীন ও জা.বি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমূখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রফিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী ব্যাংক ত্রিশাল শাখা ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন ফুয়াদ।

জানা যায়,মানুষ মানুষের জন্য,মানব সেবাই পরম ধর্ম এই স্লোগান নিয়ে উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া গ্রামে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “রফিক ফাউন্ডেশন” । প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করে আসছে রফিক ফাউন্ডেশন। এরমধ্যে অভাবী, দুর্ঘটনায় কবলিত আহত এবং অসুস্থ মানুষের পাশে দাড়াঁনো,বন্যার্তদের মাঝে ফ্রি চিকিৎসা সেবা,ত্রান সহায়তা, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন,বিনামূল্যে সেলাই মেশিন বিতরন,বেকারত্ব দূরীকরনসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড করে আসছে। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যাংক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ফুয়াদের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকায় একটি মাদ্রাসা, সর্দারপাড়া একটি মাদ্রাাসা ও টুপকারচর একটি মাদ্রাসাসহ একটি মসজিদ পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়াও কোভিড-১৯ কালীন বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও খাবার সরবরাহ, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম, প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ,বিনামূল্যে হেলথ ক্যাম্প ও ওষুধ সরবরাহ, বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসা ও খাবার সরবরাহ এবং রক্তদান কর্মসূচীসহ সামাজিক কর্মকান্ড করে আসছে ফাউন্ডেশনটি।


আরও খবর



বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪.১ শতাংশে নামবে

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ |

Image

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামতে পারে। এই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য সংকটের মুখোমুখি হবে দেশের অর্থনীতি।

আজ শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যে মন্দা, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং ঋণসেবা ব্যয়ের চাপসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণ এই সংকটের জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী ধাক্কা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাকশিল্প। কিন্তু ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয় হ্রাস পাচ্ছে। দেশের মূল্যস্ফীতি ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে এবং টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

এদিকে রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও বেশি সংকটে পড়ছে।

সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ সরকারের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে আছ রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি কার্যকর করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দরমিত গিল বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যাতে অর্থনীতির গতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা যায়। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজস্ব বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে স্বল্পমেয়াদে সংকট মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ প্রয়োজন।


আরও খবর



কানাডায় থাকার আশা ভঙ্গ! ফিরে যেতে হবে

প্রকাশিত:সোমবার ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ |

Image

গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে দিয়ে যদি শুরু করি তাহলে বলা যায় "এ কানাডা এখন তো আর সে কানাডা নেই"

হ্যাঁ, এটাই সত্যি। একটা সময় ছিল মানুষ নানাভাবে কানাডায় এসেছেন। বিশেষ করে বৈধভাবে আসার একটা মাধ্যম ছিল  স্টুডেন্ট ভিসা। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসেছেন সারা বিশ্বের স্টুডেন্টরা। তারমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা স্টুডেন্টের সংখ্যাও কম নয়। 

এই স্টুডেন্টরা আগে যারা এসেছেন তাদের জন্য সমস্ত প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া সহজ ছিল। তারপর পিআরও পেয়ে যেতেন সহজে। তারপর সিটিজেন হয়ে যেতেন নির্দিষ্ট সময়ে। তারপর তাদের বাবা-মা স্পন্সর ভিসায় এসে এখানে নাগরিকত্ব পেয়ে যেতেন। কিন্তু এখন উল্টে গেছে পাশার দান। বলতে পারেন এখন প্রায় সবকিছুর রুলস কঠিন হওয়া বা পাল্টে যাওয়া, CRS পয়েন্টস বেশি হওয়া, PGWP এ কড়াকড়ি সব মিলিয়ে গোন্ডগোল বেঁধে গেছে। এখন আর পিআর পাওয়া সহজ হচ্ছে না। আবার স্টুডেন্টদের বাবা-মায়ের নাগরিকত্ব আবেদনের সুযোগও স্থগিত করা হয়েছে।

এসব অসুবিধার আওতায় পড়েছেন অসংখ্য স্টুডেন্ট। যারা এখানে এসে পড়ালেখা শেষ করেছেন ডিপ্লোমা বা পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টদের কথা বলছি তারা CRS পয়েন্টস মিট না হওয়া ও ওয়ার্ক পারমিট শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর কানাডায় থাকা সম্ভব হচ্ছে না। চলে যেতে হবে বাড়িতে। এমন সংখ্যা অসংখ্য। এ বছরেই দেশে ফিরে যেতে হবে বারো লক্ষ বা তার বেশি স্টুডেন্টকে। আর যারা বর্তমানে পড়াশোনায় চালু আছেন তাদের তো আরো সমস্যা। তাদের তো ওয়ার্ক পারমিট পাওয়াতেই নানা বাঁধা হবে নতুন রুলসে। সবার জন্য ইজি হবে না। 

আমার ফেসবুকের মেইন আইডিতে ফ্রেন্ডলিস্টের একজন ছোট ভাই আছে। ২০২০ সালে সে এসেছিল টরন্টোতে। সে আমাকে মাঝেমাঝে মেসেজ দিত। তার একটা কথা আমার মনে আছে। একদিন আমার এক খাবারের পোস্ট দেখে সে বলেছিল "আপু, আমাকে খাওয়াবেন?" তখন আমি তাকে চিকেন বিরিয়ানি ও অন্যান্য অনেক কিছু রান্না করে দিয়ে এসেছিলাম। তখন সে বলেছিল "আপু, আপনি আমার জন্য যা করেছেন, আমার আপন বোনও সেটা করত না।"

যাই হোক, সেই ছেলে তো পড়া শেষ করে তিন বছরের ওয়ার্ক পারমিটে ছিল। টরন্টোতে একটা ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্টে কাজ করত। তারপর সে অন্টারিও থেকে অন্য প্রভিন্সে মুভ হয়েছিল যদি ভিসা পেতে সুবিধা হয় সেইজন্য। সেখানে গিয়েও সে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছিল। 

অনেক দিন তার খবর জানতাম না। ফেসবুকে তার ছবি দেখে তাকে মেসেজ দিয়ে বললাম, তুমি কি পিআর পেয়েছ? 

সে বলল " না আপু। আমার হবে না মনে হচ্ছে। আমার ফিরে যেতে হবে।"

তারপর তার কাছে তো অনেক কিছু  শুনলাম। সে বলল, টরন্টো থেকে অন্য প্রভিন্সে গিয়ে তার সবচেয়ে বড়ো ভুল হয়েছে। ওখানের রেস্টুরেন্ট তাকে কোনো রকম হেল্প করে নি। তারপর সেখানে একটা কার না হলে চলাই যায় না। একটা কার কিনতে হয়েছে। যার জন্য তার খরচ হয়েছে মাসে $600 cad করে। যেটা টরন্টোয় থাকলে তার খরচ হতো না।

আমি জিজ্ঞেস করলাম তার কতো খরচ হয়েছিল সেটা উঠেছে কিনা আর কিছু জমাতে পেরেছে কিনা।

সে বলল, তার পড়ার টিউশন ফি বাবদ খরচ হয়েছে $39 cad. যার অর্ধেক সে আসার আগে ও বাড়ি থেকে শোধ করেছে। আর বাকিটা চাকরি করে দিয়েছে। পড়া+অন্যান্য খরচ সবকিছু  মিলিয়ে সে চাকরি করে ওঠাতে পেরেছে। 

আমি জানতে চাইলাম কিছু কি জমাতে পেরেছ? সে বলল, "জি আপু। $30 cad জমাতে পেরেছি সব খরচের বাইরে। তারমানে ধরেন ২৫ লাখ টাকার মতো হবে। খারাপ কী! আমি তো মনে করি এই অর্থ দিয়ে সে দেশে একটা বিদেশি রেস্টুরেন্ট চালু করতেও পারবে। আরো অনেক স্টুডেন্ট আছে যাদের থাকার সম্ভাবনা নেই, তারা এখন শুধু  ইনকাম করে টাকা জমানোর চেষ্টা করছে। তবে কেউ কেউ হয়তো এতোটা পারছে না। 

সেই ছেলে বলছে, "আপু, কানাডায় এসে অনেক কিছু শিখেছি। এতেই আমি হ্যাপি। দেশে থাকলে তা পারতাম না।" এখন তার ভবিষ্যৎ ভাবনায় অন্য পরিকল্পনা। সে জানাল, সে জার্মানির দিকে মুভ হবে। সেখানে ব্যাচেলর ডিগ্রি করে মাস্টার্সও করবে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা রাখলে জার্মানিতে টিউশন ফি লাগে না বলে সে জানাল।

যাই হোক, এটাই হলো জীবনের মান বোঝার উপযুক্ত পরিকল্পনা। কোনো বাঁধাতেই জীবনকে কোনো এক নির্দিষ্ট আঙ্গিকে আটকে রাখতে হয় না। মুভ অন হতে হয়। যেটা চাওয়া হয় সেটা না পেলে খুশি হয় না মন। তাই বলে হতাশায় যেন মন আচ্ছাদিত না হয় তাই ঐ ছেলের মতো বলতে হবে আমি যা পেয়েছি বা শিখেছি তাতেই আমি খুশি। চেষ্টা তো সবাই করেছে। 

অসংখ্য স্টুডেন্ট এখন মেন্টালি রেডি। ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টের সংখ্যা বেশি। এমনকি আমার বেসমেন্টে থাকা স্টুডেন্টদের সবার হয়তো হচ্ছে না। তাতে তারা মোটেও বিচলিত না। বরং বলেছে, আমরা দেশে ফিরে যাব। পিআর হলেও থাকতাম না। 

তারা রেডি টু গো ব্যাক টু দ্যা কান্ট্রি। আমি বলব, সবাই ব্যাকে না, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো সামনের কিছু জীবনের জন্য আরো ভালো, আরো মসৃণ হবে ইনশাআল্লাহ।


আরও খবর

নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত চাইলেন টিউলিপ

মঙ্গলবার ০৭ জানুয়ারী ২০২৫




মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে ভারতে সাত দিনের শোক

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ |

Image

ভারতে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে এ শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জি পার্থ সারথি এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে বুধবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেশে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সরকারি স্তরে কোনো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হবে না।

এদিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্যের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তার দল কংগ্রেস জানিয়েছে, শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল জানান, শনিবার নয়াদিল্লিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সাধারণ মানুষও তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।


আরও খবর