
রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ সম্বলিত হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ আদেশের ফলে হাতিরঝিল বেগুনবাড়ি প্রকল্পের বাণিজ্যিক স্থাপনা যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় থাকবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার ইমাম হাসান। আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন আইনজীবী ইমাম হাসান।
এর আগে গত ১৯ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২৭ জুন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
গত ২৪ মে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ সহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বর্তমানে পরিচালিত ওয়াটার টাক্সি সার্ভিস চলাচল বন্ধ করতে নির্দেশ দেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৫ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিটি প্রকাশিত হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, প্রতি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনও সম্পদ এ পৃথিবীতে নাই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ করা একান্ত আবশ্যক।
আদালত আরও বলেছে, দ্বিতীয় কোনও পৃথিবী নেই। এ পৃথিবী ব্যতিত আর কোনও গ্রহে পানির কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায় নাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোঁটা পানি এ পৃথিবীর বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয় নাই। অথচ উক্ত খরচের শত ভাগের এক ভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত ব্যবহারযোগ্য রাখতে সক্ষম। হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না। রায়ে রিট মামলাটি একটি চলমান আদেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া যেসব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া হাতিরঝিল ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক প্রচারণা ও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে রায়ে তাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ১ হাজার ৯৭১.৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩০২ একর জমির উপর এ প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত। প্রকল্প এলাকার মোট ১৬ কি.মি. রাস্তায় কোনও বাস অথবা মিনিবাস চলাচলের অনুমতি ছিল না।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫/২০০৯তম সভায় অনুমোদিত লে-আউটে প্রস্তাবিত ওয়াকওয়ে ও রোডওয়ে এলাইনমেন্ট ব্যতিত অন্য কিছু ছিল না। প্রকল্পটি ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টি, বন্যাজনিত পানি ধারণ, বৃষ্টির পানি পয়ঃনিষ্কাশন ও নগরের নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
খালগুলোর জন্য প্রস্তাবিত সুবিশাল লেকটি একটি নিয়ন্ত্রিত ‘হাইড্রোলিক সিস্টেম’ হিসাবে কার্যকর হয়। এতে ওই এলাকার ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পায়, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় ও সৌন্দর্যমন্ডিত পাবলিক স্পেসের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। রমনার পাশাপাশি একটি সুবিশাল নীল জলাধার বেষ্টিত উন্মুক্ত স্থানের অভাব লাঘব হয়। যা বিশ্বের কাছে ঢাকা মহানগরীর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।