
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষাবিদ :
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ স্রোতের অনুকূলেই গা ভাসায়, সেই স্রোতে
ভাসার বিষয়টিকে মানুষ সত্য বলে মানুক আর নাইবা মানুক, বিশ্বাস করুক
আর নাইবা করুক | অন্তত: সাধারণ মানুষ এটুকু বিশ্বাস
করে স্বস্তি অনুভব করে যে স্রোতের অনুকূলে নিজেকে ভাসিয়ে দিলে নিরাপদ
থাকা যাবে, বাড়তি ঝামেলায় পড়ার মতো বিপত্তি থেকে নিজেকে
রক্ষা করা যাবে | উচ্চভিলাষী মানুষেরা
এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের থেকে একটু ভিন্ন হয় | এই শ্রেণীর মানুষেরা ইচ্ছে করেই স্রোতের
অনুকূলে গা ভাসায়, কারণ এর পিছনে তাদের অনেক ধরণের লোভ কাজ করে | সবচেয়ে অবাক
করার মতো বিষয় হলো তাদের এই সুবিধাবাদী চরিত্র প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়, তাদের লোভগুলো
পূরণ হয় | একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, স্রোতের
অনুকূলে চলা মানুষেরাই প্রায় সব জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করে আছে, স্রোতের
প্রতিকূলে চলা মানুষেরা অনেক জ্ঞানী-গুণী হওয়া সত্ত্বেও ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, অনেক ক্ষেত্রে
বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে | সময় যত এগুচ্ছে, স্রোতের
অনুকূলে চলা মানুষদের সংখ্যা বাড়ছে, প্রতিকূলে চলা মানুষদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে
কমছে |
মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষাগুলোতেও এর প্রমান মিলছে
| মনোবিজ্ঞান
বলছে, স্রোতের অনুকূলে বেশিরভাগ মানুষ থাকে বলে
স্রোতের প্রতিকূলে চলা মানুষেরা একদিন তাদের বিশ্বাস হারিয়ে স্রোতের অনুকূলে
অবস্থান নিচ্ছে | আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এটা আর কি এমন, এমনটা তো হতেই
পারে ! অথচ এটা একধরণের আত্মঘাতী প্রবণতা, যা সমাজ থেকে ক্রমাগত ভিন্ন চিন্তার মানুষের
সংখ্যাকে খেয়ে ফেলছে, চিন্তার বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে, অনেক ক্ষেত্রে
সৃষ্টিশীল চিন্তাধারার উপর আরোপিত চিন্তাধারা প্রভাব বিস্তার করছে | এই ধরণের
সামাজিক পরিবর্তন ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যেখান থেকে
পদলেহনকারী, লোভী, মেধাহীন ও ভীতু প্রজন্ম তৈরী হতে পারে | যা সমাজের
কাঠামোকে নাড়িয়ে দিয়ে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করতে পারে |
একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, একসময় ঈশ্বর
চন্দ্র বিদ্যা সাগর, রাজা রাম মোহন রায়ের মতো মানুষেরা স্রোতের
প্রতিকূলে চলে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিলো | স্রোতের প্রতিকূলে থাকা এই মানুষেরা স্রোতের
অনুকূলে থাকা বিশাল সংখ্যার মানুষেরদের সাথে প্রায় একাই দাঁড়িয়ে লড়েছিল | জয়টা শেষ
পর্যন্ত স্রোতের প্রতিকূলে চলা মানুষদেরই হয়েছিল | স্রোতের অনুকূলে চলা মানুষেরা কালের গর্ভে
হারিয়ে গেছে, স্রোতের প্রতিকূলে চলা মানুষেরা তাদের কর্মের
মাধ্যমে আজও বেঁচে আছেন |
স্রোতের অনুকূলে পঙ্গপালের মতো চলার পরিবর্তে
স্রোতের প্রতিকূলে চলতে শিখুন, তাহলেই দেখবেন পৃথিবীর ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো
আপনার মাধ্যমেই ঘটছে | মনে রাখবেন, সবাই যে পথে চলে সে পথে নেতার জন্ম হয়না, সেখানে সবাই
নেতা হতে গিয়ে কেউ প্রকৃত নেতা হতে পারেনা, সবাই যে পথে চলেনা, সেই পথ যদি
ইতিবাচক হয় , সেই পথ যদি সত্যের হয়, সেই পথ যদি
নিঃস্বার্থ হয়, সেই পথে যদি আপনি ডাক দেন তবে নেলসন
ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিংদের মতো আপনিও ইতিহাসের
কিংবদন্তি নেতা হয়ে উঠতে পারবেন | পতঙ্গরা মোমবাতির আলো দেখে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে
অস্তিত্ব হারায়, আপনি আলোর মধ্যে না ডুবে অন্ধকারে ডুবে
সেখানে একটু একটু করে আলো জ্বালান, তবেই দেখবেন আপনি আপনার
অজান্তেই হয়ে উঠবেন সত্যিকারের একজন আলোকিত মানুষ |