ইয়াসফি রহমান : দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় সেঞ্চুরিয়নে শুরু হবে এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ।
বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন, তার অধীনে বাংলাদেশ দল ‘এমন কিছু করবে যা আগে কখনো হয়নি’।
একটা ম্যাচ জিতেই কোচের কথা রাখতে পারে বাংলাদেশ দল।
কারণ প্রায় ২০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ, তারপর এখন পর্যন্ত কোনো ফরম্যাটেই কোনো ম্যাচেই জয় পায়নি বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল।
এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে মুখোমুখি ২২ দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭টি ম্যাচে জিতেছে, একটিতে কোনো ফলাফল আসেনি, বাংলাদেশ চারটিতে জিতেছে, কিন্তু কোনোটিই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ২০১৯ সালে বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন, এরপর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
ডোমিঙ্গো চার বছর দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের কোচ ছিলেন, তবে সেই দক্ষিণ আফ্রিকা আর বর্তমান স্কোয়াডের মধ্যে অনেক পার্থক্য, তখন মনে করা হতো দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে যেকোনো কন্ডিশনে যেকোনো ম্যাচ জেতার ক্ষমতা রাখতো, যেখানে খেলতেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডেল স্টেইন, ফ্যাফ ডু প্লেসির মতো ক্রিকেটাররা। আর এই দক্ষিণ আফ্রিকা এখন একটা পুনর্গঠনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, এখনো অনেক পরীক্ষা দেয়া বাকি আছে এই দলটার।
তাই এটাকে একটা সুযোগ হিসেবেও নিতে চান বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করতে যাওয়া ডমিঙ্গো।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতেও বাংলাদেশের উচিত এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যাচ জেতা।
এসব জায়গায় আত্মবিশ্বাসটা একটা বড় ব্যাপার। ভালো শুরু, ভালো কিছু মোমেন্ট- এসব বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
খেলোয়াড়রাও বলছেন জয়ের কথা
বছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গুইয়ে টেস্ট জয়কে অনুপ্রেরণা মানছেন অনেকেই, এই একটা জয় বাংলাদেশের স্কোয়াডকে বাড়তি প্রেরণা দেবে।
তখন মুমিনুল হকও ম্যাচ জয়ের পর বলেছিলেন, ‘আগে যদি বলতাম নিউজিল্যান্ডে আমরা টেস্ট জিতবো অনেকেই হাসতেন। কিন্তু এখন আর হাসবে না।’
তামিম ইকবাল অবশ্য সরাসরি জয়ের কথা বলেননি, কিন্তু তিনি মনে করেন এখন শুধু ভালো খেলা বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য হতে পারে না।
দেশ ছাড়ার আগে একটি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম বলেন, ‘১০ বছর আগে যদি প্রশ্ন করতেন বলতাম ভালো খেলতে চাই। কিন্তু এখন সেটা কঠিন। এখন আমাদের ম্যাচ জেতা ছাড়া ভালো খেলেছি এটা বলাও কঠিন।
সাকিব আল হাসানও নানা পর্বের নাটকীয়তা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরার আগে ঢাকায় বিমানবন্দরে বলে গেছেন, অন্তত একটা ওয়ানডে জেতা উচিত বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ ২২ বছর ধরে টেস্ট এবং ছোট ফরম্যাট শুরু হওয়ার পর থেকে টি-টোয়েন্টি খেললেও এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যান ও আনুকূল্য সব মিলিয়েই দলটির প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ গত পাঁচ-সাত বছরে বিশ্বের যেকোনো দলকেই হারাতে পারে এবং সেটা করেও দেখিয়েছে বাংলাদেশ, এক্ষেত্রে কন্ডিশন বা উইকেট তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি, এই ২০১৯ সালেও তুলনামূলক বৈরী কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রভিডেন্সে জ্যাক ক্যালিস, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্সের দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের কাছে ৬৭ রানে হেরে গিয়েছিল।
এসব স্মৃতি যেমন বাংলাদেশের এই স্কোয়াডের অনেককেই আশা জোগাবে। একই সাথে এসব জয়ের কোনওটিই যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে নয়, এই তথ্য বাংলাদেশের জন্য খানিকটা অস্বস্তিরও।
দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড, অ্যালবি মর্কেলও আছেন সাকিব-তামিমদের সাথে
সাকিব-তামিমদের মতো সিনিয়র প্লেয়াররা সেই অস্বস্তি কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ক্যারিয়ারের অন্তত একটা জয় চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক।
তবে সেটা কাটিয়ে তুলতে আরেকটি অস্ত্র আছেন শরিফুল ইসলাম, তিনিই এই দলের একমাত্র সদস্য যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ‘কিছু একটা’ জিতেছেন।
২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল, এই দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার শরিফুল ইসলাম এখন বাংলাদেশের নিয়মিত ফাস্ট বোলার হিসেবেই একাদশে খেলেন।
তার কথাতেও সেই স্মৃতিচারণ চলে এসেছে, শেষবার যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলেছিলাম বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। এটা একটা বড় ব্যাপার।
একই সাথে শরিফুল আনন্দিত দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে অ্যালান ডোনাল্ডের সান্নিধ্য পেয়ে, বাংলাদেশের নতুন ফাস্ট বোলিং কোচের সাথে কাজ করা শুরু করেছেন বোলাররা।
শরিফুলের সাথে কথা বলেছেন, ‘কব্জির অবস্থান নিয়ে’।
৯০’র দশকে দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই বিশ্বেরই সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন ছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড।
এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার অ্যালবি এই আসরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পাওয়ার হিটিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেম্বা বাভুমার দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল জয়ের আশা করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এবং ম্যানেজমেন্ট তবে কাজটা ততটাও সহজ হবেনা বলছেন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের মেন্টর নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
এমন কোনো দেশে গিয়ে খেলা সবসময়ই কঠিন। যেখানে কোয়ালিটি পেস বোলাররা আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে থাকবেই। বাংলাদেশের জন্য কঠিনই হবে।’
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে, নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের ম্যাচে শুরুটা ভালো হওয়া খুব দরকার। প্রাথমিক ধাক্কাটা ড্রেসিংরুমে একটা উদ্বেগ ছড়িয়ে দেয়।’
বিশ্লেষক হিসেবে তিনি মনে করেন সাকিব আল হাসানের দলে থাকাটা দলকে সাহায্য করবে।
কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও মনে করেন সাকিবের উপস্থিতি সবসময় তাকে স্বস্তি দেয়, একটা ভারসাম্য তৈরি হয় একাদশে।
তবে কোচের মতে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে দল হিসেবে ভালো খেলা।
যেমন বোলিং ব্যাটিংয়ে প্রভাব দেখিয়েও বাংলাদেশ অনেক ম্যাচ হেরে গেছে বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে, তার ওপর ভিন্ন কন্ডিশনে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ ধরতে খানিকটা সমস্যা হয় এটা স্বীকারও করেছেন অনেক ক্রিকেটার।
তবে নিজেদের মাটিতেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৯টি ক্যাচ মিস করেছে।
এটাকে বড় উদ্বেগ বলছেন ডোমিঙ্গো। তার মতে, ‘এসব ম্যাচে এমন কিছু সুযোগ আসে যা ধরতে পারলে অন্য দরজাগুলোও খুলে যায়।’
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের পরে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ণশক্তির স্কোয়াড থাকছে না। ওয়ানডে সিরিজ খেলেই মূল দলের ৮ থেকে ১০ জন ক্রিকেটার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হবে।
সূত্র : বিবিসি