- দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে ৪০ হাজার কোটি টাকা টিকা কিনতে ব্যয় করছে সরকার। অনেক দেশ আছে, যারা এখনও ১৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টিকা দিয়ে ফেলেছি। ইতোমধ্যে দেশে ৭৫ শতাংশ মানুষ করোনার টিকার আওতায় এসেছে।.. স্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের দুই বছর পূর্ণ হলো মঙ্গলবার। এই সময়ে বেশ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ, বিশেষ করে করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে। এরইমধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। এতে টিকাদানে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে।
করোনার বৈশ্বিক টিকাদান পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’র তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে টিকাদানের ক্ষেত্রে শুধু ভুটান বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার রয়েছে বাংলাদেশের পেছনে।
টিকাদানের এই অগ্রগতি গণটিকাদান কর্মসূচির কারণে সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রথম দিকে তেমন পরিকল্পনা না থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে টিকাদানে গতি বাড়ায় সরকার। এ কারণে এই সফলতা।
সরকার শুরুর দিকে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দেশে টিকাগ্রহণের উপযোগী জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি। ইতোমধ্যে ১২ কোটির বেশি মানুষ করোনা টিকার আওতায় এসেছে।
সরকারের হাতে এখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টিকা রয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা, বাড়তি তিন কোটি টিকা গরিব দেশকে উপহার দেবে।
‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’ ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশের আগে একটি মাত্র দেশ ভুটান, অবশ্য দেশটির জনসংখ্যা বাংলাদেশ থেকে অনেক কম।
ভুটানের ৭৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় এসেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৬৯, শ্রীলঙ্কায় ৬০, পাকিস্তানে ৫৭, মালদ্বীপ ও নেপালে ৭৩, মিয়ানমারে ৪৩ ও আফগানিস্তানে ১২ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম প্রয়োগ হয় ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে প্রয়োগের মাধ্যমে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও গণটিকা শুরু হয় ১০ দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভ্যাক্স প্রয়োগের মাধ্যমে। একপর্যায়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় টিকা পাঠানো বন্ধ রাখে তারা।
এরপর টিকা পেতে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক উদ্যোগেও টিকা আসতে থাকে।
ইতোমধ্যে দেশে ৩০ কোটি টিকা এসে পৌঁছেছে। সরকারের হাতে এখনও পাঁচ কোটির বেশি টিকা মজুত রয়েছে।
দেশে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়। দুই মাস পর ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম। ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজের কার্যক্রম শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
টিকাদানে গতি বাড়িয়ে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে এক দিনে ৭৬ লাখের বেশি টিকা দেয়া হয়েছিল। এরপর বিশেষ গণটিকা চলে।
সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ ৩ কোটি ৪৯ লাখ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। এ সময় প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ মানুষ। বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ১০ লাখ জন। শুধু ২৬ ফেব্রুয়ারিই দেশে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়।
এখন পর্যন্ত এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৬ জনকে। এর মধ্যে ১২-১৭ বছর বয়সীদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ২৭ হাজার ৬১৭।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য দেশের পর টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। শুরুর দিকে টিকা সংকটের কারণে ধীরগতি ছিল। যে কারণে কিছুটা পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
এই অবস্থা সত্যিই অবাক করার মতো। টিকাদান বৃদ্ধির কারণে দেশে করোনা সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে আসছে। এমনকি আক্রান্তদের মধ্যে তেমন জটিলতা দেখা যায়নি। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে ৪০ হাজার কোটি টাকা টিকা কিনতে ব্যয় করছে সরকার। অনেক দেশ আছে, যারা এখনও ১৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টিকা দিয়ে ফেলেছি। ইতোমধ্যে দেশে ৭৫ শতাংশ মানুষ করোনার টিকার আওতায় এসেছে।
‘আমাদের হাতে যে টিকা রয়েছে, টার্গেট জনগোষ্ঠীকে টিকা দিয়ে কিছু টিকা বাড়তি থাকবে। এই টিকা গরিব দেশকে দান করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে সাড়া দিয়েছেন। টিকাদানে অগ্রগতি থাকায় দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে
বিডি টুডেইস