
কোভিড
মহামারি শুরুর পর ই-কমার্সের ব্যবসা আর অনলাইনে পণ্য বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল কয়েক
গুণ; কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের পকেটে টান পড়েছে, তার
প্রভাবে অনলাইনে কেনাকাটায়ও ভাটা দেখতে পাচ্ছেন ফ্যাশন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন,
বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়
তুমুল প্রতিযোগিতায় এবারের ঈদবাজারে বিক্রি কিছুটা কমেছে। পোশাক ছাড়াও হস্তশিল্প,
কারুশিল্প, শুকনো খাবার, প্রসাধনী, খেলনাসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হয়
ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অনেকেই ফেসবুকে ভালো সাড়া পেয়ে ওয়েবসাইট ও
বিভিন্ন মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন। বর্তমানে প্রচলিত অনেক
ফ্যাশন ব্র্যান্ডও ফেসবুকে পেজ খুলে ক্রেতা ধরার চেষ্টা করছেন।
এক দশকের
বেশি সময় ধরে ফেসবুকে শাড়ি, থ্রি-পিসসহ মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করে আসছেন ‘কল্পতরু’র
প্রতিষ্ঠাতা আফসানা শর্মী। এবারের ঈদবাজারে ক্রেতার চাহিদা জানতে চাইলে আফসানা শর্মী
বলেন, দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ভারত, পাকিস্তান থেকে আমদানি
করা পোশাক কিংবা দেশে তৈরি পোশাকগুলোর দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত বছরের ৫০০ টাকার
ড্রেস এবার আমাদের ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অনেক বেশি উদ্যোক্তা এই ব্যবসায়
যুক্ত হওয়ায় প্রতিযোগিতাও বেড়ে গেছে। ফলে অন্য সময়ের তুলনায় এবার রোজার ঈদ কেন্দ্র
করে বিক্রি কম হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
আফসানার
মতোই প্রায় সাত বছর ধরে ফেসবুকে শাড়ি, থ্রি-পিস ও পোলো শার্টসহ বিভিন্ন পণ্য
বিক্রি করে আসছেন সাদিয়া ইসলাম। ফেসবুকে তার বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে ১৭ লাখের বেশি
অনুসারী। এই ব্যবসায় বেশ সাফল্য পেয়ে নিউ মার্কেটের পাশে চাঁদনীচকে ১০টি ও
মিরপুর-১ নম্বরে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে চারটি শোরুমও চালু করেছেন তিনি।
এবারের
ঈদবাজারের খবর জানতে চাইলে সাদিয়া ইসলাম বলেন, সর্বোপরি বলতে গেলে এবারের ব্যবসা
মন্দা। গত ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে অর্ধেক। বাজারে জিনিসপত্রের দামের যে ঊর্ধ্বগতি,
তার প্রভাবেই এমন হচ্ছে বলে মনে হয়। তা ছাড়া আমাদের পোশাকগুলো দামও গত বছরের
তুলনায় একটু বেড়েছে। সুতা, কেমিক্যাল, কালার এসব কিছুর দামও কোনো কোনো ক্ষেত্রে
দেড় গুণ বেড়েছে। পোশাকভেদে প্রতি পিসে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে।
উদ্যোক্তাদের
অনেকে অন্যবারের তুলনায় এবার বিক্রি কমার হওয়ার কথা বললেও রোজার মাঝামাঝি সময়ে এসে
বিক্রি বাড়ার কথা জানাচ্ছেন ফেসবুকনির্ভর কয়েক লাখ উদ্যোক্তাকে নিয়ে গঠিত
প্ল্যাটফরম ‘উই অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট’র
প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আকতার নিশা। তিনি বলেন, ক্রেতাসমাগম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।
কিছু কিছু উদ্যোক্তার বিক্রি বেড়েছে। আবার অনেকেই ক্রেতা হারিয়েছেন। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা
কমে গেছে এটাও সত্য। আবার কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে।
সারা
দেশে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা রয়েছে।
ফেসবুক
পেজ ‘এলিমেন্টারি’র আল আমিন জায়ান বলেন, তারা আমদানি
করা পশ্চিমা ফ্যাশনপণ্য বিক্রি করেন। যুক্তরাজ্য, চীন থেকে কিছু পণ্য আসে। কিছু
পণ্য নিজেরা ডিজাইন করেন। শুরু থেকেই অনলাইনেই তারা পণ্য বিক্রি করে আসছেন।
আল আমিন
বলেন, আমাদের কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা আছে। বলতে গেলে শহরের উচ্চবিত্ত শ্রেণির
তরুণ-তরুণীরা আমাদের ক্রেতা। ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, বারিধারা ডিওএইচএস,
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আমাদের পণ্যগুলো বেশি বিক্রি হয়। প্রথম থেকেই এ ধরনের
পণ্যের বাজার বেশ ভালো।
ঈদবাজার
প্রসঙ্গে জায়ান বলেন, আমরা যে ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করি সেটা ঈদকেন্দ্রিক নয়।
বেচাবিক্রির একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। সে কারণে ঈদ নিয়ে আমাদের পৃথক পরিকল্পনা থাকে
না।