গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার সামান্য কমলেও রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ
৫ পেয়েছে। কিন্তু উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীও যদি একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, এরপরও প্রায় ৭ লাখ আসন খালি
থাকবে বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। তবে মানসম্পন্ন কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে,
বিশেষ করে রাজধানীর নামীদামি কলেজের ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতায়
অবতীর্ণ হতে হবে শিক্ষার্থীদের। জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরও তাদের পছন্দের
কলেজে ভর্তির সুযোগ নেই।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, দেশে উচ্চমাধ্যমিক স্তর আছে এমন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। আর এতে ভর্তিযোগ্য আসনসংখ্যা প্রায় ২৫
লাখ। কিন্তু এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখের কিছু বেশি
শিক্ষার্থী। ফলে আসন খালি থাকবে প্রায় ৮ লাখ। এ ছাড়া এসএসসি উত্তীর্ণদের মধ্যে
প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী কলেজেই ভর্তি হয় না।
২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন
শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। আর জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর
নিচে পেয়েছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯১৬ জন। এই দুই ক্যাটাগরির ৯ লাখ ২৪ হাজার ৫১৮ জন
শিক্ষার্থীই ভালো কলেজে ভর্তি হতে চাইবে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, সারা দেশে মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা প্রায় ২০০। এতে আসনসংখ্যা
এক লাখের কাছাকাছি। এসব কলেজেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। তবে সারা দেশের মেধাবী
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে রাজধানীর দিকে। ঢাকায় মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা ২৫ থেকে
৩০টি। এসব কলেজের যাদের স্কুল সংযুক্ত রয়েছে, তারা তাদের
নিজস্ব শিক্ষার্থী ভর্তির পর বাকি আসনে বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। ফলে
রাজধানীর ভালো কলেজে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ নেই। অথচ জিপিএ ৫
পাওয়া প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকবে রাজধানীর
নামীদামি কলেজ।
এদিকে শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু
হওয়ার কথা। কিন্তু এবার করোনার প্রাদুর্ভাব ও বন্যার কারণে পরীক্ষাই শুরু হয়েছে গত
১৫ সেপ্টেম্বর। আর ফল প্রকাশ হয়েছে ২৮ নভেম্বর। ফলে শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই ৫
মাসের সেশনজটের মধ্যে আছে, যা আরও বাড়বে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড থেকে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালা সংক্রান্ত
খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এতে ৮ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন গ্রহণের
প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এবারও জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। শিক্ষার্থীদের
কোনো ধরনের পরীক্ষায় বসতে হবে না। অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসা পছন্দ করতে পারবে
শিক্ষার্থীরা। তাদের আবেদন ফির প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫০ টাকা। কলেজ পছন্দের পর ১৩০
টাকা ফি দিয়ে নিশ্চয়ন করতে হবে। মোট আবেদন খাতে প্রতি শিক্ষার্থীর ২৮০ টাকা খরচ
হবে।
ভর্তির ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ
শ্রেণিতে ভর্তি ফি আগের মতোই ৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া
ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যম ভর্তির জন্য
৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা
হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না।
এ ছাড়া মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি ১ হাজার, পৌর জেলা সদরে ২ হাজার,
ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেওয়া
যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।