মইনুল ইসলাম মিতুল :দেশে বিপদগ্রস্ত শিশুদের
সাহায্যের জন্য রয়েছে চাইল্ড হেল্পলাইন, যার হটলাইন ফোন নম্বর ১০৯৮। গত এক বছরে মনোসামাজিক
সহায়তা, নির্যাতন-সহিংসতা, ঝুঁকিতে
থাকা শিশুদের তরফ থেকে এই নম্বরে ফোনকল বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট
সূত্রগুলো জানায়, চাইল্ড হেল্পলাইনে সহায়তা চেয়ে অথবা অভিযোগ জানিয়ে কলের সংখ্যা বেড়েছে। এই
নম্বরে যে শুধু শিশুরাই কল করে এমনটা নয়, অনেক অভিভাবকও
শিশুদের হয়ে কল করেন। এখানে ফোনকল করে উপকার পেয়েছে প্রায় সব শিশুই।
সূত্রগুলো
জানায়, চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ নম্বরে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম, সমস্যা ও ঝরে পড়ার বিষয়ে সহায়তা কামনা বা অভিযোগ এসে থাকে। তবে বেশিরভাগ
কল আসে তথ্য অনুসন্ধানের অর্থাৎ সেবাগ্রহীতারা ফোন করে তথ্য সহায়তা বেশি চান। ২০২২
সালে মোট ফোন কলের ৬৫ শতাংশই ছিল তথ্য সহায়তাবিষয়ক।
ইউনিসেফ
বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে আর্থিক সহায়তায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল
প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের (সিএসপিবি) আওতায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ পরিচালিত
হয়। ২০১০ সালে অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে পাইলট
প্রকল্প আকারে এটি চালু হয়। ২০১৬ সাল থেকে পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই
হেল্পলাইনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২৪ ঘণ্টায় পালা করে ফোন ধরেন ২৯ জন কল এজেন্ট।
সিএসপিবির
কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ
দল রয়েছে। স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা, থানা পুলিশ, সমাজকর্মী ও এনজিও প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ ভ্রাম্যমাণ দল। প্রত্যন্ত
এলাকার কোন শিশু ১০৯৮ নম্বর হেল্পলাইনে কল করে সহায়তা চাইলে বা অভিযোগ করলে যত
দ্রুত সম্ভব সাড়া দেয় এই ভ্রাম্যমাণ দল।
অবশ্য, এমন অভিযোগও আছে
যে, ১০৯৮ হট নম্বরে ফোন করা হলেও তাৎক্ষণিক সাড়া অনেক
ক্ষেত্রেই মেলে না। এ ব্যাপারে শিশু সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জনবল সংকটের কারণে চাহিদার তুলনায় তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে ঘাটতি
কিছুটা রয়েছে। আরও রয়েছে যানবাহনের সংকট। রাতে বা যখন-তখন একটি শিশুকে সহায়তা করার
জন্য এই দল সব সময় কাজ করতে পারে না। ৫০ শতাংশ এলাকায় কোনো সমাজকর্মী নেই।
চাইল্ড
হেল্পলাইন ১০৯৮- এর সমন্বয়কারী চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই নম্বরে কল করে
কখনো কাউকে পাওয়া যায়নি- এমন রেকর্ড নেই। প্রতিটি কলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলোআপ করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা বা
সমাজকর্মী ঘটনাস্থলে যান, কাউন্সিলররা ফোনে মনোসামাজিক
সহায়তা দেন। এমনকি প্র্যাংক কল বা মজা করে কল করা শিশুকেও ফোনে সঙ্গ দেওয়া হয়।
কারণ, অনেক শিশু মা-বাবার মনোযোগ পায় না। তারা নিজেদের কথা,
আনন্দ ভাগাভাগি করতে চায়। জনবলের ঘাটতি বিষয়ে তিনি বলেন, জনবল কম থাকলেও কাজে কোনো অবহেলা করা হয় না। অনেকে একই সঙ্গে একাধিক
এলাকার দায়িত্ব পালন করেন।
চাইল্ড
হেল্পলাইন ১০৯৮-এর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে মোট কল এসেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১টি। এর
মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য সহায়তা বিষয়ে কল এসেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৯৩টি। এ ছাড়া
নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার শিশুর বিষয়ে ৮ হাজার ২১টি, শারীরিক
স্বাস্থ্য বিষয়ে ৬ হাজার ৭৫১টি, মনোসামাজিক সহায়তা চেয়ে ৬
হাজার ৬৮টি, স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম, শিখন অক্ষমতা ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া বিষয়ে কল এসেছে ৫ হাজার ৮৫৬টি, বিভিন্ন কারণে ঝুঁকিতে থাকা শিশুর বিষয়ে ৪ হাজার ৫৯০টি, আইনি সহায়তা চেয়ে ১ হাজার ৬২১টি, প্রেমসম্পর্কিত
বিষয়ে ৮৬৪টি, মাদক বিষয়ে ১২৯টি, প্র্যাংক
কল বা মজা করে কল ১২ হাজার ৭৮৮টি এবং অন্যান্য কল এসেছে ১৮ হাজার ২৯০টি।
২০২৩
সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত মোট কল এসেছে ৪৭ হাজার ৯৭৭টি। ২০২১ সালে মোট কল এসেছিল ১
লাখ ৬১ হাজার ৯৪০টি।
অপরাজেয়
বাংলাদেশ নামের এনজিওর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, শিশুদের সহায়তার
জন্য এদেশে প্রথম হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮। এই সেবার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপদগ্রস্ত
শিশুকে সহায়তা দিয়ে তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা ও তা পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যাপক
পরিসরের সমন্বিত কার্যক্রম রাখা। নম্বরটি যেন সবার মুখে মুখে থাকে। কিন্তু সে
আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারেনি ১০৯৮। মনোযোগ ও প্রতিশ্রুতির অভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে
পৌঁছাতে পারেনি এই সেবা। এর অনেক পরে এসে পুলিশের হেল্পলাইন ৯৯৯ আজ জনপ্রিয়। তিনি
বলেন, স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে কল সেন্টার করা
উচিত , যেখান থেকে বিনামূল্যে কল করা যাবে। রাস্তায় বাস করা
শিশুরাও যাতে ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাইতে পারে।