Logo
শিরোনাম

গরমে বাড়ছে নিউমোনিয়ার প্রকোপ

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ |

Image

তীব্র তাপপ্রবাহে বেশি অসুস্থ হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। রাজধানী ঢাকার শিশু হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। আউটডোরে গত কয়েকদিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে তিন থেকে চারশ। জ্বর-সর্দি ও ডায়রিয়া নিয়ে বেশি শিশু আসছে হাসপাতালটিতে। তবে ভর্তি হচ্ছে বেশি নিউমোনিয়া নিয়ে। নিউমোনিয়ার প্রকোপ সাধারণত শীতে বাড়লেও এবার গরমের কারণেও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, গরমের তীব্রতা বাড়ার আগে দৈনিক ৭শ থেকে ৮শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসতো। তবে এই মুহূর্তে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অ্যাজমা, সাধারণ ঠান্ডা সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১১শ থেকে ১৩শ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি ৮৭ জন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান গেটে ঢুকতেই হাতের বাম দিকে থাকা ভবনে টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ স্বজনরা। ভবনের টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচুর ভিড়। এখান থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের জন্য টিকিট কেটে জরুরি বিভাগ কিংবা আউটডোরে দেখাতে অপেক্ষা করছেন। অনেকে আবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য টাকা পরিশোধ করে টেস্টের জন্য বসে আছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো ওয়ার্ডই রোগীতে পূর্ণ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর সিটে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ৯ মাস বয়সী তাহমিদা আক্তার। তার দেখভাল করছেন মা। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন চাচা জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমরা ভোলা থেকে এসেছি। একমাস ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছে তাহমিদা। প্রথমে অসুস্থ হলে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কিছুদিন পর সুস্থতা অনুভব করলে বাসায় চলে আসে। এর কিছুদিন পর আবারও সমস্যা দেখা দেয়। এরপর শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে ছয়দিনের মতো ভর্তি আছে।

ঠান্ডা-জ্বর নিয়ে হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫ নম্বর সিটে চিকিৎসা নিচ্ছে দুই বছর চার মাস বয়সী হুমাইরা। ঢাকায় মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা তারা। পাশে বসা মা সাবিনা আক্তার। তিনি বলেন, মেয়ের হঠাৎ করে জ্বর-সর্দি কাশি শুরু হয়। এরপর পাতলা পায়খানা হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক শিশু। এদের মধ্যে পাঁচ ধরনের সমস্যা নিয়ে বেশি আসছে রোগীরা। যেমন সর্দি-জ্বর, শরীরে র্যাশ ওঠা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা। এসব রোগীর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। শয্যা সংকটের কারণে বেশির ভাগ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফারহানা আহমেদ বলেন, তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন শিশু ও বৃদ্ধরা। এসময়ে শিশুদের জ্বর, ঠান্ডা-কাশি, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, গরমে হওয়া বিভিন্ন চর্মরোগ, নিউমোনিয়া আমরা বেশি পাচ্ছি। গত কিছুদিনের দাবদাহে সমস্যাটা আরও বেশি বেড়েছে।

গরমে শিশুদের প্রচুর ঘাম হয়। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় দ্রুত। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও থাকে কম। যে কোনো কিছু মুখে দেয়, সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে খায় না, বাইরের বিভিন্ন খাবারে তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। এসব কারণে বাচ্চারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এছাড়া ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশি তো হচ্ছেই।

তিনি বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মানতে হবে। যেমন ফুটানো পানি পান করা, একদম ঠান্ডা পানি না পান করে হালকা ঠান্ডা পানি মিশিয়ে খাওয়া, বাইরে যাওয়ার সময় পানির বোতল নিয়ে যাওয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ানো। বাইরে থেকে এসে ঘাম মুছে দেওয়া। প্রতিদিন নরমাল পানি দিয়ে গোসল করানো। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির পাশাপাশি বাচ্চাদের মৌসুমি ফলের রস খাওয়ানো উচিত।

শিশু হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গরম এলে আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। ভর্তিও হচ্ছে অনেক বেশি রোগী। এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে আমরা রোগীদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।

নিউমোনিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে আমরা ৭-৮ দিন চিকিৎসা দেই। বর্তমানে পাঁচদিনের মধ্যে তাদের অবস্থা উন্নতির দিকে গেলে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। এতে পরিবারের জন্যও ভালো এবং অন্য নতুন রোগীও ভর্তি হতে পারে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় গড়ে শতাধিক রোগী আমাদের ভর্তি করানোর প্রয়োজন হচ্ছে। তাদের জন্য আসন খালি করতে অন্য একশজনকে ছাড়তে হয়। আমাদের একটা ওয়ার্ডের কাজ চলছিল। সেখানে ২৬টি সিট আছে। সেগুলো আজ থেকে চালু হলে আরও ২৬ জন রোগী ভর্তি হতে পারবে।

তিনি বলেন, আমরা ইমার্জেন্সি অবস্থার জন্য একটা ইমার্জেন্সি ফাইটার্স নামে দল গঠন করেছি। তারা জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা দেবে। এছাড়া রিজার্ভ চিকিৎসকও রাখা হয়েছে। এক মাসের শিশুদের ক্ষেত্রে যেন কোনো লাইন না থাকে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এই গরমে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

পরিচালক বলেন, ১৯ জনের মতো নিউমোনিয়া রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় (২২ এপ্রিল) ভর্তি হয়েছে। এখন ৮৭ জন নিউমোনিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি। আমরা এবছর বেশি নিউমোনিয়া রোগীর চিকিৎসা করছি। জানুয়ারি মাসে ৫১৪ জনের মতো, ফেব্রুয়ারিতে ৫৫৫, মার্চে ৫৩৩ আর চলতি মাসে এখন পর্যন্ত তিনশজনের মতো নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এটি পাঁচশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সে তুলনায় আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি কম। এ মাসে মাত্র পাঁচজন ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এই মুহূর্তে ডায়রিয়া রোগী তেমন ভর্তি হচ্ছে না। যারা আসছেন তাদের আউটডোরে চিকিৎসা দিচ্ছি। গতকাল ৫৩ জন রোগী আউটডোরে ডায়রিয়া সমস্যা নিয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে থেকে মাত্র একজনকে ভর্তি করা হয়েছে।

নিউমোনিয়া সাধারণত ঠান্ডাজনিত সমস্যা। এখন গরমের সময়ে নিউমোনিয়ার সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২২ সালের পর থেকে নিউমোনিয়া রোগী আমাদের এখানে বাড়ছে। তবে এটা পুরো বাংলাদেশের চিত্র নাও হতে পারে। এত বেশি নিউমোনিয়া রোগী আসার পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে আমাদের হাসপাতালে নিউমোনিয়ার জন্য একটি তলা ডেডিকেটেড করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৩৩টি বিছানা আছে। এর মধ্যে ১৬টি সাধারণ বিছানা, বাকিগুলো রেসপিরিটরি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। আর তিনটি কেবিন আছে।

তিনি বলেন, সাধারণত ঠান্ডায় নিউমোনিয়া হলেও গরমেও নিউমোনিয়া বাড়ছে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যায় যেসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের নিউমোনিয়া হয়ে যায়। এছাড়া গরমে শিশুরা ঘামে। আর বাবা-মা যদি সেটায় নজর না দেয় ঘাম শরীরে শুকিয়ে যাবে। এতে শরীরের ভেতর ঠান্ডা হয়ে আসে। তখন রক্ত চলাচল কম হয়। এসময় ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে।

পরিচালক আরও বলেন, গরমে অনেক শিশুর আইসক্রিম, বরফের মতো ঠান্ডা খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এতে গলা ঠান্ডা হয়ে যায়, পরে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বা আভাইরাস আক্রমণ করে। সেখান থেকে ফুসফুসে যায়। এতেও নিউমোনিয়া হতে পারে শিশুদের।

 


আরও খবর



জারি হতে পারে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

প্রকাশিত:বুধবার ০১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ |

Image

গাজায় একের পর এক যুদ্ধাপরাধ ও মানবিকতাবিরোধী অপরাধের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে নেদার‌ল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি। সম্ভাব্য সেই পরোয়ানা এড়াতে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে বলেও এনবিসিকে বলেছেন ওই সরকারি কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে এনবিসির সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, সত্যিই চলতি সপ্তাহে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ত ও অন্যান্য ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হচ্ছে কিনা।

জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এক মুখপাত্র বলেছেন, আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে একটি মুক্ত ও অবাধ তদন্ত পরিচালনা করছি। এই কাজের সুবিধার্থে যে কোনো পদক্ষেপ আমাদের নিতে হতে পারে; কিন্তু যেহেতু এটি তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ প্রসঙ্গে এখনই বিস্তারিত কিছু বলার সুযোগ নেই।

২০১৪ সালে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ২০১৭ সালে তার তদন্ত শুরু করেছিল আইসিসি। পরে করেনা মহামারির কারণে তদন্তে বাধা পড়ে। মহামারির ধাক্কা কেটে যাওয়ার পরও তা আর শুরু হয়নি।

কিন্তু গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলা ও তার জেরে গাজায় অভিযান শুরুর পর সেই তদন্ত ফের পুনরুজ্জীবিত করে আইসিসি। গত ডিসেম্বরে গাজা-ইসরায়েল সীমান্ত ঘুরে গেছেন আইসিসির শীর্ষ প্রসিকিউটর করিম খান। সেই সফরে পুরনো সেই তদন্ত ফের শুরুর তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, এবারের তদন্ত হবে গতিশীল, কঠোর এবং পুরোপুরি সাক্ষ্যপ্রমাণ নির্ভর।

ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের কোনোটিই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দেয় না। আইসিসি যদি সত্যিই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রে নেতানিয়াহু কিংবা ইয়োয়াভ গ্যালান্তের গ্রেপ্তার হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

তবে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয়। তাই পরোয়ানা জারি হলে ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সফর বন্ধ করতে হবে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ত ও আইডিএফের সামরিক কর্মকর্তাদের। কারণ পরোয়ানা বাতিল হওয়ার আগ পর্যন্ত সেসব দেশে গেলে গ্রেপ্তার হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে তাদের।

সূত্র : এনবিসি


আরও খবর



ঢাকার বাতাসে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিত:বুধবার ০১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ |

Image

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে শহরটির বাতাসের মানের কিছুটা উন্নতি হয়। তবে কয়েক দিনের তীব্র গরমের মধ্যে ঢাকার বাতাসের মান আবারও দূষণের দিকে যাচ্ছে। বাতাসে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

বুধবার (০১ মে) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটের দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ৯৬ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৭তম অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। আজ ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য মাঝারি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৯০ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নেপালের কাঠমান্ডু ; ১৭১ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি, ১৬৫ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ইন্দোনেয়ার মেদান , ১৬১ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে পাকিস্তানের করাচি শহর। এ ছাড়া ১৬০ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে ভারতের কলকাতা।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে অস্বাস্থ্যকর বায়ু বলে মনে করা হয়।

২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে; যেমন: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।

বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।


আরও খবর



উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত হোঁচট খাচ্ছে তৃণমূলে

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ |

Image

সদরুল আইন, প্রধান প্রতিবেদক:

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে সেগুলোর মাঠে বাস্তবায়ন একেবারেই কম। 

বিশেষ করে মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ যে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিল সেটি বাস্তবায়নের প্রবণতা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। 

প্রথম পর্বে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আজ শেষ দিন ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে যে, একমাত্র নাটোরের সিংড়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোন স্বজনই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। 

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে ২৫ জনের মতো। এর মধ্যে ১৫ জন আছেন প্রথম পর্বে। বাকিরা অন্য পর্বে থাকবেন। আওয়ামী লীগের এই ১৫ জনের মধ্যে একমাত্র রুবেল ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। 

বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূচকগুলো বলছে, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করার ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দিচ্ছেন এবং নানা রকম টালবাহানা করে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইল ধরবাড়ি উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন তার খালাতো ভাই হারুনুর রশীদ হীরা। 

এখন বলা হচ্ছে যে, হিরা রাজনীতিতে ড. রাজ্জাকের চেয়ে প্রবীণ এবং তিনি ভাইয়ের পরিচয়ের রাজনীতি করেন না।

আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাদারীপুর-১ আসনের এমপি শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান সদর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। তিনিও শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। 

নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলমের ছেলে সাইফুল আলম বিপু প্রার্থী হয়েছেন সেনবাগ উপজেলায়। সেখানেও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না বলেই স্থানীয় এলাকার লোকজনের সূত্রে জানা গেছে। 

নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে প্রার্থী হয়েছেন এবং তিনি সুবর্ণচর উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে একরামুল করিম চৌধুরী বলে দিয়েছিলেন যে, ছেলে সাবালক হলে কি করার আছে? তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি ও হাতিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী ও এমপির স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস প্রথম ধাপে ৮ মে নির্বাচনে উপজেলা প্রার্থী হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

নরসিংদী-২ আসনের এমপি আনোয়ার আশরাফ খানের শ্যালক মোঃ সফিকুল হক নরসিংদীর পলাশ উপজেলার প্রার্থী হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনিও নির্বাচন থেকে সরে যাবেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান হতে প্রার্থি হয়েছেন প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান দূর্জয়।তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ সাধারন সম্পাদক।

এভাবে দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন উপজেলায় যারা স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে নানারকম টালবাহানা করছেন। 

আওয়ামী লীগ থেকে আরেকটি বড় নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে যেন একক প্রার্থী ঘোষণা না করা হয়। মন্ত্রী- এমপিরা যেন তাদের নিজস্ব প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন না দেন। কিন্তু সেটিও এখন হচ্ছে না। 

বরং অনেকেই বলছেন যে, এই ধরণের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট নেতারাও প্রার্থী দিচ্ছেন এবং কোথাও কোথাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হচ্ছে। 

বরিশাল-১ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর আগৈলঝাড়া এবং গৌরনদীর আসনে ভোট হবে তৃতীয় ধাপে। এখানে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। 

ফলে সেখানে কোন ভোটের আমেজ দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী এবং এমপিদের প্রভাবের কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকে নির্বাচিত হচ্ছেন।

কুমিল্লা সদর, চট্টগ্রামের রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়া এই  ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে এখানে বিনা ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে। 

কোথাও কোথাও একক প্রার্থী দেওয়ার ফলে অন্য প্রার্থীরাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। সব কিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তা মাঠে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে।

 এখন দেখার বিষয় আওয়ামী লীগ এই নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে।


আরও খবর



পাল্টা হামলার আশঙ্কা, উচ্চ সতর্কতায় ইরান

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ |

Image

ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বহুদিনের বৈরিতা থাকলেও এবারই প্রথমবারের সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালালো দেশটি।

এমন অবস্থায় ইসরায়েল এবার ইরানে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। আর সম্ভাব্য সেই হামলার আশঙ্কায় উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইরান। রোববার (১৪ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটির দোরসা জব্বারী তেহরান থেকে জানিয়েছেন, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং সীমিত হবে বলে ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন এবং আজ আমরা বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিযান দেখেছি।

তিনি বলেছেন, আমি মনে করি- ইরানের কাছ থেকে দেশটির সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়াটিই আমরা দেখেছি। এটি অবশ্যই পূর্ণ-মাত্রার কোনও আক্রমণ নয়। এবং অবশ্যই ইরান ঠিক কী করতে সক্ষম তার একটি প্রদর্শনও এটি। এগুলো এমন দৃশ্য যা আমরা আগে কখনও দেখিনি - ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির মতে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তবে ইরানের এই দাবি অবশ্যই ইসরায়েল অস্বীকার করেছে।

আল জাজিরার দোরসা জব্বারী বলছেন, এখন এই হামলা-পাল্টা হামলার পরবর্তী পর্ব শুরু হবে। (ইরানের হামলার জবাবে) ইসরায়েলের জবাবও তাই হবে। এবং সেই কারণে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং ইসরায়েলকে (পাল্টা হামলার বিষয়ে) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেশটির একজন কমান্ডার বলেছেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের হামলার জবাব কঠোরভাবে দেওয়া হবে।

তবে আপাতত ইসরায়েল ঠিক কী করবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে ইরানিরা... বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ না করে তারা এই দ্বন্দ্বকে বজায় রাখতে সক্ষম হবে কিনা সেটিও বোঝার চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে ইরানের সর্বশেষ এই হামলা ইসরায়েলের জন্য নতুন পরীক্ষা হয়ে সামনে এসেছে বলেও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে জাতিসংঘে দেওয়া এক চিঠিতে ইরান বলেছে, তারা আর উত্তেজনা চাইছে না।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভেনেসা ফ্রেজিয়ারকে দেওয়া এক চিঠিতে তেহরান জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের ওপর তার হামলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষার একটি আইনি এবং ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ।

এছাড়া গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইরায়েলের প্রাণঘাতী বিমান হামলার নিন্দা করতে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার নিন্দাও করেছে জাতিসংঘে অবস্থিত ইরানি মিশন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে ইরান জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের নিহিত উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের এই ধারাবাহিক অবস্থান এটিই পুনর্ব্যক্ত করে যে, দেশটি এই অঞ্চলে উত্তেজনা বা সংঘাত চায় না।


আরও খবর



হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে খামারের শত শত মুরগি

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ |

Image

বছর ১৭ আগে মুরগির খামার শুরুর পর ভালোই চলছিল বরিশালের আমানতগঞ্জের সেলিনা হোসেনের। কিন্তু ব্যবসায় বিপত্তি শুরু হয় করোনা মহামারীকালে। এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ান। সম্প্রতি বয়ে চলা তাপপ্রবাহ ও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে তার প্রায় ৭০০ মুরগি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বামীহারা এ খামারি। 

সেলিনা হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস আমার এ মুরগির খামার। করোনার সময় একবার বড় লোকসান হয়। অনেক মুরগি মারা গিয়েছিল তখন। অনেক কষ্টে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। ৮০০ ব্রয়লার মুরগি তুলেছিলাম। কিন্তু এবার সব শেষ। বিদ্যুৎ যায় আসে। যে গরম পড়ছে তাতে ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। টিনে পানি দিতে হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে আরো বেশি স্ট্রোক বেড়েছে। ওষুধ খাইয়েছি, তবু মুরগিগুলোকে রক্ষা করা যায়নি। আবার মুরগি ওঠানোর ক্ষমতা আমার নেই।

সেলিনার মতো অন্য খামারিদের একই হাল। অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি খামারেই দেখা দিয়েছে মড়ক। প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শত শত মুরগি। অনেক খামারি লোকসান গুনে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাদের কাছে কেউ যাচ্ছে না বলে অভিযোগ খামারিদের। 

খামারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার পর থেকে পোলট্রি খাতে দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পোলট্রিখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার গুটিয়ে নেন বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রায় ৪০ শতাংশ খামারি। এছাড়া খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার অতিরিক্ত দামের পাশাপাশি এখন পোল্ট্রি খাতের অন্যতম নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে জলবায়ু পরিবর্তন। গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহে খামারগুলোয় ব্যাপক হারে ব্রয়লার মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ডিম উৎপাদনও। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারিরা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও ব্যাহত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পাঁচদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাড়াচ্ছে, আবহাওয়ার পরিভাষায় যাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকালও চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বাগেরহাট ও কুষ্টিয়ায়ও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। এ তাপপ্রবাহ আরো বেড়ে সামনে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো বেশি শঙ্কায় রয়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

বরিশালে গত কয়েক দিনে ৬১৭টি খামারে প্রায় পাঁচ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পোলট্রি মুরগির খামার মালিকদের সংগঠনের নেতা কালাম শিকদার। তিনি জানান, জেলায় ১ হাজার ৬০৮টি মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির ৬১৭টি, লেয়ার ৫৩৫টি ও সোনালি মুরগির ৪৫৬টি। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে পোলট্রি খামারে দেখা দিয়েছে হিটস্ট্রোক। তাপপ্রবাহ থেকে মুরগি বাঁচাতে অনেক খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও কাজে আসছে না। ফলে পোলট্রি খামারে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

তীব্র গরমে খামারে মড়ক লাগলেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু সুফিয়ান বলেন, গরমের সময় খামারে বারবার পানি স্প্রে ও টিনের চালে ছালার চট ভিজিয়ে রাখার পরামর্শসহ একাধিক গাইডলাইন দেয়া হয়েছে বিভাগের প্রত্যেক মাঠ কর্মকর্তাকে। তারা খামারিদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে গরমে মুরগির মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের অবহিত করা হয়নি এখনো। 

চট্টগ্রামের খামারিরা জানিয়েছেন, ওষুধ ও পানি স্প্রের মাধ্যমে হিটস্ট্রোক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও প্রতিনিয়ত ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে। আবার লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটনের খামারে দেড় কেজির বেশি মুরগি ছিল প্রায় চার হাজার। কিন্তু গত দুদিনের গরমে প্রায় এক হাজার মুরগি মারা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট মুরগি মারা যায় কম। কিন্তু এক কেজি ওজনের বেশি মুরগি প্রচুর মারা যাচ্ছে। আমার বড় মুরগির খামারে গত দুদিনে ২৫ শতাংশই মারা গেছে। আশপাশের সবার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। যত ভালো খামার ব্যবস্থাপনাই থাকুক এ গরমে মুরগি মারা যাবেই। তবে এ বছর মৃত্যুটা বেশি। 

একই কথা জানান রাউজান উপজেলার অর্ণব পোলট্রি ফার্মের স্বাত্বাধিকারী দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে আমার খামারের বেশকিছু মুরগি মারা গেছে। আরো কিছু মুরগির অবস্থা সংকটাপন্ন। লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমে গেছে। স্যালইন, ভিটামিন সি খাওয়ানোর পাশাপাশি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্প্রে করে খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অন্যদিকে গরমের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিও তোলা যাচ্ছে না। এ কারণে পানিরও সংকট আছে। এভাবে গরম পড়তে থাকলে খামার রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে না। কম দামে তখন বিক্রি করে দিতে হতে পারে।

চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় চার হাজার ব্রয়লার ও পাঁচ শতাধিক লেয়ার মুরগির খামার আছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মুরগি খামারের উপপরিচালক মো. আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক বেসরকারি পর্যায়ের খামারে গরমের কারণে মুরগি মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে সরকারি খামারগুলোয় এখন কোনো মুরগি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। খামারগুলোয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

যশোরে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বোচ্চ। আগের দিন ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে ১০ হাজারের মতো মুরগি মারা গেছে। শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার খামারি সানজিদা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। আমার খামারে ৭০০ মুরগি ছিল। এখন আছে ২৫০টি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরে মুরগি খামার রয়েছে ১ হাজার ৫৩৪টি। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার জানান, তার অধীনে ২৪৯টি ব্রয়লার ও ২৫টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। কয়েক দিন ধরে যশোরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এতে মুরগির হিটস্ট্রোক বেড়ে গেছে। খাওয়া কমে গেছে। তবে কী পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার হিসাব নেই।

তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় রংপুরের খামারিরাও দুশ্চিন্তায় আছেন। লোডশেডিং তাদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলায় লেয়ার মুরগির খামার আছে দেড় শতাধিক এবং ব্রয়লার চার শতাধিক। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গরমে সাধারণত ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে সহনীয় ধরা হয়। এর ওপরে গেলে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বলা হয়, যা সব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। হিটস্ট্রোকসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ মুহূর্তে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো বেড়েছে খামারিদের। এ গরম চলতে থাকলে মুরগির মৃত্যু আরো যে কত বাড়বে তা নিয়েই আতঙ্কিত তারা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিছু স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমেনি। আগামী দুদিন তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোয় বেশি গরম পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। এর সঙ্গে নগরায়ন ও গাছপালা কেটে ফেলার কারণে খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া।

পোলট্রি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুরগির বাচ্চার তাপমাত্রা সহ্যক্ষমতা বেশি থাকে। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। এ কারণে বড় আকারের মুরগি হিটস্ট্রোকে বেশি মারা যায়। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, অতিরিক্ত গরমে তুলনামূলক ব্রয়লার মুরগি বেশি মারা যায়। কারণ তাদের সহ্যক্ষমতা কম। গরমে ব্রয়লার মুরগি খাবার কমিয়ে দেয়। সে কারণে তার খাবারে এনার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। টিনের চালে পানি বা ভেজা বস্তা দিতে হবে যেন শেড ঠাণ্ডা থাকে।


আরও খবর