দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও দীর্ঘদিন বৈঠক বা কর্মসূচি না থাকায় মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ১৪-দলীয় জোট। তা ছাড়া টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলটির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানেও দাঁড়াতে পারেনি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও এর মিত্ররা। ফলে মাঠ অনুকূলে থাকলেও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এই দলটির সামনে রয়েছে বেশ কটি চ্যলেঞ্জ। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঠিক রেখে বিরোধী দলগুলকে নির্বাচনমুখী করা, চলতি বছরের মধ্যে দলের জেলা-উপজেলা ও জাতীয় সম্মেলনের মধ্যেমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র চাঙা করার মাধ্যমে জোটসঙ্গী দলগুলোকেও প্রস্তুত করার মতো চ্যালেঞ্জ থাকছে।
দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী প্রচারের মূল ইস্যু নির্ধারণ করার কাজ শুরু করছে ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখছে। যার মধ্যে রয়েছে একটি নির্বাচনী ইশতেহার। গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে চমক জাগিয়েছিল দলটি। এবারও নির্বাচনের মূল প্রতিপাদ্য কী থাকবে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে টিম গঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনাও রয়েছে দলের নীতিনির্ধারকের।
এদিকে ১৪-দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলছেন, ১৪ দলকে নিষ্ক্রিয় ভাবার কোনো কারণ নেই। করোনা পরিস্থিতির জন্য সবকিছুই সীমিত পরিসরে চলেছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ১৪ দলকে আরো সক্রিয় করার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখাও আওয়ামী লীগের জন্য চ্যলেঞ্জ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের আরো উন্নয়ন করা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট।
দলের একজন শীর্ষ নেতাও বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কোনো কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে এবং মার্কিন প্রশাসনের কাছে নেতিবাচক তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছি। আওয়ামী লীগ কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গেও সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিষয়ে অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এই অস্বস্তিও বাংলাদেশ দূর করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক নেতা ভারত সফর করেছেন। সামনে আরো সফর হবে। রাজনৈতিক সংলাপের পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও সম্পর্কের অস্বস্তিগুলো কাটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
আবার বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করাও আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এরই মধ্যে বিএনপিসহ অন্যরা নিবার্চনকালীন সরকার না হলে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা নিয়েছে। তা ছাড়া দ্বাদশ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের একটি প্রত্যাশা এবং চাওয়া-পাওয়া আছে। আর এটিকে সামনে রেখেই বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করার একটি পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের।
এ ছাড়া চলতি বছরেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হতে পারে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দলের ভেতরে অন্তঃকলহ বিরোধ এবং বিভক্তিগুলো কাটিয়ে তুলতে চায়। আর এ কারণেই নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সম্পন্ন করতে চায়। নতুন নেতৃত্বের হাতে আওয়ামী লীগ দায়িত্ব দিতে চায়। আর সে লক্ষ্যে এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আমাদের চেষ্টা রয়েছে। এসব বিষয়ে আলাপণ্ডআলোচনা চলছে। তবে নির্বাচন সংবিধানের আলোকে যথাসময় অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই গণতন্ত্র রক্ষার্থে সবায় নির্বাচনে আসুক। কারণ গণতন্ত্র রক্ষা করতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিএনপি হয়তো এখন এসব কথা বলেছে, তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এরাও নির্বাচনে আসবে।