Logo
শিরোনাম

হিজড়া এবং ইন্টারসেক্স বিষয়ক আলাপে ঢুকার আগে একটা জিনিস ক্লিয়ার করি

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ জানুয়ারী 20২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ |

Image

আজহার উদ্দিন অনিক, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :

আমি জানি আপনাদের অনেকেই মনে করেন হিজড়া মানে হার্মাফ্রোডাইট/ইন্টারসেক্স/যাদের মেল/ফিমেল দুইধরণেরই জেনিটালিয়া/বৈশিষ্ট্য আছে।

কিন্তু হিজড়া মানে ইন্টারসেক্স না, হিজড়া বলতে মোটাদাগে বাংলাদেশের একটা কমিউনিটিকে বুঝানো হয়, যার মধ্যে ইন্টারসেক্স এবং ট্রান্স দুই ধরণের মানুষই থাকে। হিজড়া শব্দটা একটা কালচারাল আমব্রেলা টার্ম একটা কম্যুনিটির জন্য, শুধুমাত্র ফিজিকালি ইন্টারসেক্স বুঝায় না এটা দিয়ে।  

তবে তর্কের খাতিরে এই লেখায় আমি আপাতত ধরে নিচ্ছি ইন্টারসেক্স = হিজড়া।

একইসাথে আপাতত তর্কের খাতিরে আমি ধরে নিচ্ছি ট্রান্স বলে কিছু নাই। ( আই রিপিট, আপাতত, যাতে আমরা একটু ঠান্ডা মাথায় ইন্টারসেক্স কী জিনিস সেইটা বুঝতে পারি)

  

ইন্টারসেক্স কী?

  

ইন্টারসেক্স হচ্ছে একটা গ্রুপ অফ কন্ডিশন্স, যেইখানে কমন থিম হচ্ছে এই যে একটা মানুষের ফিজিকালি বাইরের দিকে, অর্থাৎ বডির বাইরের দিকে যেই জেনিটালিয়া (যৌনাঙ্গ) থাকে, বডির ভিতরে, ইন্টার্নালি একই যৌনাংগ থাকে না। অর্থাৎ "ছেলেদের" ক্ষেত্রে যেরকম টেস্টিস আর "মেয়েদের" ক্ষেত্রে ওভারি থাকে, এমনটা হয় না। 

(এইগুলা মেডিকাল টার্ম, আমার ইনভেন্ট করা না)

  

আগে এই কন্ডিশনগুলাকে হার্মাফ্রোডাইট বলা হইত। এখন সাধারণত এই টার্ম ব্যবহার করা হয় না। এই কন্ডিশনগুলাকে বলা হয় ডিজঅর্ডারস অফ সেক্স ডেভেলপমেন্ট (DSDs)

  

এই কন্ডিশনগুলার ক্যাটাগরি ৪টা। (এখানে একটু লম্বা এবং বোরিং আলোচনা আছে, চাইলে সামনে স্কিপ করে যাইতে পারেন একটু)

  

১- 46 XX Intersex - এই কন্ডিশনে একজন ব্যক্তির XX ক্রোমোসম থাকে (নারীদের মত) কিন্তু তাদের বাইরের দিকে জেনিটালিয়ার এপিয়ারেন্স থাকে ছেলেদের মত। হরমোনাল ইম্ব্যালেন্সের কারণে এমন হইতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিদের নরমাল জরায়ু আর ফেলোপিয়ান টিউব থাকে, অর্থাৎ আদতে শারীরিকভাবে তিনি নারী, তার ছেলেদের মত দেখতে জেনিটালিয়া থাকলেও। 

এই কন্ডিশন হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে, এর মধ্যে হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স এবং এরোমাটোজ ডেফিশিয়েন্সি প্রধান। (টার্ম দুইটা মাথায় রাখেন, পরে আমরা ফেরত আসবো এইখানে)

 

২- 46, XY Intersex - এইক্ষেত্রে জাস্ট আগের কেসের উলটো ঘটনা ঘটে। ছেলের ক্রোমোসম থাকলেও শরীরের বাইরের দিকে যেই জেনিটালিয়া থাকে তা থাকে মেয়েদের জেনিটালিয়ার মত দেখতে। শরীরের ভিতরের দিকে টেস্টিস থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে। এইরকম হওয়ার পিছনেও অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স, এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম (এই ডিফেক্টের ১৫০+ ধরণ আছে)। আবারো বলি, টার্মগুলা মাথায় রাখেন, পরে ফেরত আসবো এখানে।

  

৩- True Gonadal Intersex - এদের ওভারিয়ান এবং টেস্টিকুলার টিস্যু দুইটাই থাকে। এই কন্ডিশনটাকে শুধুমাত্র হার্মাফ্রোডাইটের কাছাকাছি বলা যায়, দুই ধরণেরই টিস্যু থাকার কারণে। এই কন্ডিশনের এক্সাক্ট কারণ আমি খুজে পাই নাই।

  

৪- Complex or undetermined intersex - 46 XX বা XY এর বাইরেও কিছু ক্রোমোসম কনফিগারেশন হইতে পারে, যেমন 45 XO, 47 XXY, 47 XXX। এই ধরণের ক্ষেত্রে হয় সেক্স ক্রোমোজম (যেইটা আপনার লিংগ নির্ধারণ করে) সেইটা হয় একটা কম থাকে নাইলে একোটা বেশি থাকে। এই ধরণের কেইসে জেনিটালিয়ার পরিবর্তন না হইলেও হরমোনাল বযালেন্স আর ডেভেলপমেন্টের সমস্যা হয়।

  

বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে আসার আগে বিশ্বে আগে কী হইত মেডিকালি সেই বিষয়ে একটু ব্রিফ করি।

আগে যদি কোন বাচ্চা ইন্টারসেক্স এইটা ডিটেক্ট করা যাইত, তাহলে ডাক্তাররা এডভাইস করত যে বাইরের দিক থেকে যেই ধরণের জেনিটালিয়া আছে সেই জেনিটালিয়ার সাথে ম্যাচিং জেন্ডারে শিফট করার জন্য নেসেসারি সার্জারি করতে। এইটা করা হইত বাইরে থেকে জেনিটালিয়ার চেহারা দেখে, ক্রোমোসম কনফিগারেশন কী সেইটা দেখে না। (উপরে যেইখানে মেনশন করলাম যে জেনিটালিয়া ছেলের মত হইলেই ক্রোমোসম ছেলেদের এইটা ইন্টারসেক্সদের ক্ষেত্রে ফ্যাক্ট না)। এই সার্জারির ক্ষেত্রে যেকোন এক জেন্ডারের জেনিটালিয়া/টিস্যু অপারেশন করে রিমুভ করা হইত।

   

মেল জেনিটালিয়া রিকন্সট্রাক্ট (অপারেশন করে তৈরী করা) কঠিন দেখে সাধারণত জেনিটালিয়া ক্লিয়ার না হলে ফিমেল জেনিটালিয়া তৈরী করে দেয়ার জণ্য অপারেশন করা হইত, কারণ এইটা সহজ বেশি। 

  

পরে দেখা গেসে জাস্ট ইন্টারসেক্স মানুষদের ক্ষেত্রে ফিজিকাল জেনিটালিয়া দেখতে কেমন সেইটা দেখেই অপারেশন করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় বিষয়টা এমন না। কারণ আগেই বলেছি, এইসব ক্ষেত্রে ক্রোমোসমের ইমব্যালেন্স থাকে, এবং কারো ক্রোমোজোম ছেলের হইলে অর্থাৎ জেনেটিকালি সে ছেলে হইলে, তার জেনিটালিয়া মেয়েদের মত দেখতে হওয়ার কারণে আপনি যতই অপারেশন করে তাকে কমপ্লিটলি মেয়ে বানায়ে দেয়ার চেষ্টা করেন কেন, এইটা পুরোপুরি ঠিকমত কাজ করবে না। সাইকোলজিকাল, নিউরাল, ক্রোমোজোমাল, বিহেভরিয়াল অনেক ইস্যু থেকেই যায় যেইগুলা ইনফ্লুয়েন্স করবে এই মানুষটাকে আসলে কোন জেন্ডার আইডেন্টিটিতে সুইচ করা উচিত।

  

(এই কারণে এখন ইন্টারসেক্স চিলড্রেনদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সাথে সাথে অপারেশন না করে কিছুটা বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সাজেশন দেন, যাতে অন্য ফ্যাক্টরগুলো ক্লিয়ার হয়। কারণ কারো কন্ডিশনই হয়ত এক্সাক্টলি সেম না, এবং একেকজনের ক্ষেত্রে হয়ত একেক ট্রিটমেন্ট বেটার কাজে দিবে।)

  

যাই হোক, এই গেল বাইরের বিশ্বের অবস্থা। অবভিয়াসলি বাংলাদেশ এমন না। বাংলাদেশে হিজড়াদের অধিকার নিশ্চিত করা হইসেই মাত্র ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে। 

  

বাংলাদেশে তাহলে হিজড়াদের (ইন্টারসেক্স) কী হয়?

  

এই আলাপে ঢুকার আগে একটা প্রশ্ন করি, বুকে হাত দিয়ে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেন, গত ১০ বছরে কি আপনি কোন না কোন সময় হিজড়া শব্দটা গালি/মক করার জন্য কখনো ব্যবহার করেছেন?

আপনি সাক্ষাৎ ফেরেশতা হয়ে না থাকলে, আপনার উত্তর হ্যা হওয়ার কথা।

হিজড়া শব্দটা তাইলে একটা গালি কেন? হিজড়ারা বাজেভাবে টাকা চায় রাস্তাঘাটে এই কারণে এইটা একটা গালি?

নাকি এইটা একটা গালি হওয়ার কারণেই হিজড়াদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টাকা চাইতে হয়?

আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় জানি কোন ছেলে বাচ্চা দেখতে একটু মেয়েলি হইলে বা কোন মেয়ে বাচ্চা দেখতে একটু ছেলেদের মত হইলে তাদেরকে কি পরিমাণ রিডিকিউল করা হয়, ঢাকার সবচাইতে এলিট স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়েও। 

আমি এমনও দেখসি একটা ছেলের স্বাস্থ্য একটু বেশি হওয়ার কারণে তার বুকে একটু চর্বি বেশি জমে যাওয়ার কারণে ছেলেরা জোর করে তার বুকে হাত দিয়ে তাকে হ্যারাজ করতেসে বা মজা নিচ্ছে যে ঐ ছেলের বুক তো মেয়েদের মত। 

আপনার কি ধারণা ঢাকার বাইরে বা অন্যন্য ইকোনমিক ক্লাসে এই সিচুয়েশনটা বেটার?

একটা ছেলের চেহারা মেয়েলি হওয়ার জন্যে বা একটা মেয়ের চেহারা একটু ছেলেদের মত হওয়ার জন্য যদি তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়, তাইলে ইন্টারসেক্স বাচ্চাদের কী হাল হয়? 

  

বাকি আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা জিনিস মেনে নেই সবাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সমাজে হিজড়া (ইন্টারসেক্স) মানুষদের ফাংশন করা কঠিন। 

আপনি তাদেরকে আপনার বাচ্চার সাথে সেম স্কুলে চাইবেন না, আপনি তাদের চাকরি দিতে চাইবেন না, আপনি তাদের সাথে আপনার পরিচিত কারো বিয়ে হোক এইটাও চাইবেন না। সহজ ভাষায় হিজড়ারা ভয়ানকভাবে মার্জিনালাইজড।

  

এইটা আমার আপনার মত সদ্য জন্ম নেয়া কোন ইন্টারসেক্স শিশুর বাবা মাও জানে। এই কারণে অনেকক্ষেত্রে এমন হইত (এখনো হয় কিনা জানি না), বাচ্চা ইন্টারসেক্স (হিজড়া) হলে সেই বাচ্চাকে বড় করতে যেই ঝামেলা হবে সেই ঝামেলার ভয়ে বাবা মা শিশুকে দিয়ে দিতেন হিজড়া কমিউনিটির কাছে। সেখানেই এই শিশুরা বেড়ে উঠে, স্কুল কলেজের বাইরে। 

(হিজড়া কমিউনিটিতে সবার অরিজিন এমন তা না, এইটা একটা উদাহরণ, ইন্টারসেক্স মানুষদের সোশাল স্ট্যান্ডিং বুঝাতে)।

     

যে শিক্ষা পায় নাই, যারে সমাজ মেনে নিবে না, চাকরি দিবে না, তার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টাকা চাওয়া বাদে বেচে থাকার আর কোন উপায় আছে?

  

আমি ধরে নিচ্ছি আমার মত আপনারা সবাইও চান, ইন্টারসেক্স মানুষজন একটা ভাল ফিউচার পাক, তাদের বিরুদ্ধে কোন বৈষম্য না হোক। সেইটা নিশিচত করতে গেলে কী করা লাগবে?

  

১- তাদের সমাজে স্ট্যান্ডিং ইম্প্রুভ করা।

২- তাদের যেসব ফ্যাসিলিটিজ দরকার সেগুলোর ব্যবস্থা করা।

  

এইবার মেইন আলাপে আসি।

  

পুরো ঝামেলাটা শুরু হইসে এক লাইন নিয়েই, শরীফা নামের এক ব্যক্তির শরীর ছেলেদের মত, কিন্তু তার নিজেকে মনে হয় মেয়ে।

  

এইটা নিয়ে আপনাদের যত প্রতিবাদ, যে এইটা শুধু ট্রান্স ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই খাটে, হিজড়ারা (ইন্টারসেক্স) শরীরের দিক থেকে ছেলে/মেয়ে আর মনের দিক থেকে আরেকরকম হইতেই পারে না। 

  

আচ্ছা। ফলো করেন এই জায়গাটা একটু কষ্ট করে। আমি জানি লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাইতেসে, তাও একটু ফোকাস করেন।

  

বাংলাদেশে হেলথকেয়ার কেমন সেইটা তো আপনারা জানেন, রাইট?

ধরে নিচ্ছি জানেন।

  

কোন বাচ্চা ইন্টারসেক্স নাকি ইন্টারসেক্স না, এইটা কিছুক্ষেত্রে জন্মের সময়েই বুঝা যায়, এটেন্ডিং ডাক্তার/স্পেশালিস্ট যদি এটা ধরতে পারে।

সেইটা বেস্ট কেস সিনারিও, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিষয়টা বুঝে যাওয়া।

  

কিন্তু বাস্তবতায় নেমে আসেন। আপনার কি মনে হয় এই ২০+ কোটি মানুষের দেশে প্রত্যেক কোনায় ডাক্তার আছে? প্রত্যেক শিশুর জন্মের সময় প্রেজেন্ট থাকা ডাক্তাররাই এই স্পেসিফিক ফিল্ডে এত এক্সপার্ট যে তারা ধরতে পারে কোন বাচ্চা ইন্টারসেক্স?

অনেক বাচ্চার যে হাসপাতালের বাইরে নরমাল ডেলিভারি হয় বা হইত দেশের অনেক জায়গায়, সেইটার কথাও ভাবেন। সেইক্ষেত্রে কেমনে কেউ ডিটেক্ট করবে বাচ্চার এই ধরণের কোন সমস্যা আছে কিনা?

  

এইগুলা গেল সেসব কেস যেগুলায় ক্লিয়ারলি বুঝা যায় যে একটা বাচ্চা ইন্টারসেক্স। 

কিছুক্ষেত্রে একটা বাচ্চা ইন্টারসেক্স কিনা এইটা বুঝা যাওয়া সম্ভব কিছু টেস্ট করে, ক্রোমোজম এনালাইসিস, হরমোনাল লেভেলস, এন্ডোস্কোপিক টেস্ট, এমআরআই ইত্যাদির মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, এই টেস্টগুলা সস্তা না, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে কোন পরিবারের এত টাকা থাকবেনা এইসব টেস্ট করানোর।

ইন্টারসেক্স বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এমন কেসও থাকে যেইসব ক্ষেত্রে সেই বাচ্চা বয়ঃসন্ধিকালে পৌছানোর আগ পর্যন্ত বুঝা যাবে না তার ইন্টারসেক্স কন্ডিশন, শুধুমাত্র পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধিকালেই ধীরে ধীরে বুঝা যায় যে সেই বাচ্চাটা ইন্টারসেক্স।

  

তাইলে আমরা আপাতত ধরে নিতে পারি যে এমন একটা সিনারিও থাকতেই পারে যে বয়ঃসন্ধিকালে এসে একটা বাচ্চা বুঝা শুরু করতে পারে যে সে হয়ত ছেলে/মেয়ে না, সে হয়ত ইন্টারসেক্স।

  

এখন তাকে যদি ছোটবেলা থেকে তার আউটার জেনিটালিয়ার উপর বেজ করে তাকে এসাইন করা হয় যে সে ছেলে, কিন্তু জেনেটিকালি সে মেয়ে, বয়ঃসন্ধিকালে এসে যখন তার মনে হবে সে মেয়ে, তখন তার কি মনে হবে?

  

তার মনে হবে না যে সে ছেলে, দেখতেও ছেলের মত, কিন্তু মনে মনে সে মেয়ে?

   

অন্য দিকটাও বলি, ধরেন একজন জেনেটিকালি ছেলে, আর আউটার জেনিটালিয়ার দিক থেকে মেয়ে। বয়ঃসন্ধিকালে এসে যদি সে টের পাওয়া শুরু করে যে তারে ছোটবেলা থেকে মেয়ে বলা হইলেও তার নিজেকে ছেলে মনে হচ্ছে, বা মেয়ে হইলেও তার মাসিক হচ্ছে না, তাইলে সে এইটাকে কীভাবে এক্সপ্রেস করবে?

  

তার মনে হবে না যে সে মেয়ে, দেখতেও মেয়েদের মত, কিন্তু মনে মনে সে ছেলে?

  

উপরে ইন্টারসেক্সের কন্ডিশনগুলা নিয়ে আলোচনার সময় কিছু কন্ডিশনের নাম মনে রাখতে বলসিলাম। সেইগুলা এখন আলোচনায় নিয়ে আসি, ব্রিফলি।

  

জেনেটিকালি মেয়ে কিন্তু ফিজিকালি ছেলের মতঃ 

  

১- কঞ্জেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লেসিয়া (Congenital adrenal hyperplasia)ঃ বেসিকালি জেনেটিকালি ছেলে/মেয়ে হইলেও একটা স্পেসিফিক এনজাইম না থাকার কারণে মেল সেক্স হরমোন এন্ড্রোজেন অনেক বেশি বেড়ে যায়।

ফলে জেনেটিকালি একটা মেয়ের জেনিটালিয়া ছেলেদের মত দেখতে হইতে পারে, আর এই কন্ডিশন অনেক সেভিয়ার না হইলে বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির আগে ডিটেক্ট করা কঠিন।

  

২- মায়ের শরীরে যদি কোন কারণে টেস্টোস্টেরন যায় বা মায়ের শরীরের যদি টেস্টোস্টেরণ তৈরী করে এমন টিউমার থাকে (সাধারণত ওভারিতে হয়), সেইক্ষেত্রেও জেনেটিকালি মেয়ে কিন্তু ফিজিকাল এপিয়ারেন্স ছেলেদের মত এমন হইতে পারে।

  

৩- এরোমাটোজ হচ্ছে এমন এনজাইন যেইটা মেল সেক্স হরমোন কনভার্ট করে এস্ট্রোজেন (ফিমেল সেক্স হরমোন) তৈরী করে। যদি কারো মধ্যে এইটা কম থাকে বা একেবারেই না থাকে, তাহলে সে জেনেটিকালি মেয়ে হইলেও বাইরের দিকে ফিজিকাল এট্রিবিউট তৈরী হবে ছেলেদের মত, কারণ তাদের মেল সেক্স হরমোনই বেশি।  

জেনেটিকালি ছেলে কিন্তু ফিজিকালি মেয়ের মতঃ  

১- টেস্টিস ডেভেলপমেন্টে সমস্যা। যেহেতু টেস্টিস মেল হরমোন তৈরী করে, টেস্টিসের সমস্যা হইলে এমন হইতে পারে যে কেউ জেনেটিকালি ছেলে কিন্তু তার জেনিটালিয়া ছেলেদের মত করে ফর্ম করে নাই। (গonadal dysgenesis)

২- টেস্টোস্টেরন তৈরী করার জন্য দরকারি এনজাইমে ঘাটতি থাকলেও এমন হইতে পারে 

৩- এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিনড্রোম- এইক্ষেত্রে কেউ জেনেটিকালি ছেলে হইলেও, X ক্রোমোজমে একটা ডিফেক্টের কারণে বডি এই ছেলেদের মত এপিয়ারেন্স তৈরী করার যেই হরমোনগুলো থাকে, সেগুলোতে রেস্পন্ডই করতে পারে না। ফলে এমন হইতে পারে যে একটা মানুষ ফিজিকালি বাইরের দিক এবং ভিতরের দিক থেকে প্রায় পুরোপুরিই মেয়ে, জাস্ট জেনেটিকালি সে ছেলে।

       

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ একটা কমন মিসকন্সেপশন হচ্ছে ইন্টারসেক্স মানুষরা বাচ্চা নিতে পারে না। এইটা পুরোপুরি সত্য না। ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের অনেকের পক্ষেই বাচ্চা নেয়া সম্ভব, অর্থাৎ স্পার্ম প্রডিউস করা অথবা প্রেগন্যান্ট হওয়া। সবার ডিজঅর্ডার অফ সেক্স ডেভেলপমেন্ট একই ধরণের বা একই পর্যায়ে না।) 


আরো বেশ কিছু সিনারিও আছে, বাট মূল কথা এইটাই, ইন্টারসেক্স কন্ডিশন সবসময় চাইল্ডবার্থের সময় ডিটেক্ট করা যায় না, আর বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে সেই প্রবাবলিটি কিছু সিনারিওতে আরো কম। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাংলাদেশের কিছুটা কঞ্জারভেটিভ সমাজে, যেখানে এইসব নিয়ে কথাবার্তা বলা ট্যাবু, সেইখানে বাবা-মা যদি জানতেও পারেন যে সন্তানের ইন্টারসেক্স কন্ডিশন আছে, তা সমাজের ভয়ে চেপে যাওয়া স্বাভাবিক, অথবা ইন্টারসেক্স কন্ডিশন যে বাচ্চার আছে এইটাই বুঝতে না পারাটা স্বাভাবিক। 

(কারণ আমাদের জেনারেশনই জানে না ঠিকমত ইন্টারসেক্স কী জিনিস বা ইন্টারসেক্সের সিম্পটম কী কী, তাইলে প্যারেন্টস কীভাবে জানবে?)

তাইলে এই বাচ্চাগুলা কি স্কুলে গিয়ে তাদের বয়ঃসন্ধিকালে গিয়েই বুঝবে না যে সামথিং ইজ নট রাইট?   

এই সময়েই কি বাচ্চাগুলার মনে হবে না যে হয়ত তাকে এতদিন যেই জেন্ডার হিসেবে বড় করা হইসে, আসলে হয়ত সে সেই জেন্ডারের না?

যেহেতু এই বাচ্চাদের কেউই জেন্ডার স্পেশালিস্ট না, আপনার কোন রোগ হইলে যেমন আমি কোন রোগ এইটা না বুঝলেও কিছু সিম্পটম বা ফিলিংস থেকে বুঝতে পারেন যে সামথিং ইজ রঙ, পিউবার্টি বা আরো পরে যদি একটা মানুষ ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের সিম্পটমস প্রথম টের পাওয়া শুরু করে, তখন তারও মনে হবে সামথিং ইজ রঙ, সে ছেলে/মেয়ের ফিজিকাল এপিয়ারেন্সের ব্যাপারে যা জানে, সেইটার বেসিসে সে ছেলে/মেয়ে হইলেও তার নিজেকে ঐ জেন্ডারের মনে হচ্ছে না।

   

এখন আপনি যদি শিশুদের এই বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা না দেন যে অন্য কোন একটা মানুষ দেখতে ছেলেদের বা মেয়েদের মত হইলেও সে ইন্টারসেক্স হইতে পারে এবং এমন কন্ডিশনের কারণে সে স্কুলে পড়ার মত একটা বয়সে আবিষ্কার করতে পারে যে তার জেনেটিক জেন্ডার হয়ত ডিফারেন্ট (যখন পিউবার্টির হরমোনাল এক্টিভিটির কারণে কিছু সিম্পটম ইন্টেন্স হয়), তাইলে সে কীভাবে বুঝবে যে তার কোন বন্ধু/বান্ধবী যদি এমন কিছুর মধ্য দিয়ে যায়, তাকে মক করা বা তাকে অচ্ছুৎ করে দেয়া উচিত না?

  

বা, ঐ বাচ্চা নিজেও বা কীভাবে বুঝবে যে তার ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের কারণে ঐ বয়সে এসে যে তার এরকম ডিফারেন্ট মনে হচ্ছে নিজেকে, এইটা নরমাল একটা জিনিস এবং সে চাইলে মেডিকাল হেল্প সিক করতে পারে বা বাবা-মাকে জানাতে পারে?

  

আপনি যদি বাচ্চাকে এগুলা নাই বুঝান, আপনি যদি মানুষজনকে এইটা নাই বুঝান, তাইলে আল্টিমেটলি হয় প্যারেন্টস ইগ্নোরেন্ট থেকে গিয়ে বাচ্চার কন্ডিশন ইগ্নোর করে যাবে অথবা, নাহয় বাচ্চা লজ্জার কারণেই কখনো তার এই সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলবে না, নীরবে সাফার করে যাবে। 

এত লম্বা লেখার পিছনে ইন্সেন্টিভ কয়েকটা।

১- এই পয়েন্টটা ক্লিয়ার করা যে ইন্টারসেক্স একটা বাচ্চার ক্ষেত্রে এমন হইতেই পারে যে কিছুটা বড় হওয়ার পরেই সে আবিষ্কার করবে যে তার এই কন্ডিশন আছে (বিভিন্ন সিম্পটমের মাধ্যমে), তখন এইটা খুব ভালভাবেই সম্ভব যে এতদিন ফিজিকালি দেখতে তাকে মেয়ে মনে হইলেও জেনেটিকালি সে ছেলে বা ভাইস ভার্সা।  

২- ইন্টারসেক্স কন্ডিশন ডিটেক্ট করা এত সহজ না, এবং সহজে সবার জন্য এফোর্ডেবল না রিয়েলিস্টিকালি। দেশে এখনো হস্পিটালের বিল দিতে না পারার কারণে বাচ্চা বিক্রি করে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটে। আপনার কি মনে হয় এইসব পরিবার লাখ টাকা খরচ করে এমআরআই বা ক্রোমোজোম এনালাইসিস করাইতে পারবে বাচ্চা ইন্টারসেক্স কিনা এইটা ডিটেক্ট করার জন্য চাইলেই?

      

পোস্টের শুরুতে একটা কথা বলে নিসিলাম, আমরা আপাতত ধরে নিচ্ছি যে ট্রান্স বলে কিছু নাই। সেই এজাম্পশন রেখে আপনি যদি এই পুরো জিনিসটা দেখেন, তাইলে আপনার কাছে এইটা ক্লিয়ার হওয়ার কথা যে ঐ বইয়ে যেই জিনিসটা লেখা, সেইটা দিয়ে যে শুধু ট্রান্সই বুঝাইতে পারে, ইন্টারসেক্স কন্ডিশন বুঝানো সম্ভব না- এইটা একটা ভুল কন্সেপশন। 

  

আপনি যদি চান যে যেই ইন্টারসেক্স মানুষদেরকে ২০১৩ সালে আইন করে স্বীকৃতি দেয়া হইসে তাদের ব্যাপারে এক্সেপ্টেন্স বাড়ুক সমাজে, তাইলে আপনার পাঠ্যবইয়ে তাদের ইঙ্কলুশন মেনে নিতে হবে।

  

আপনাকে এইটাও মেনে নিতে হবে যে জন্ম থেকেই কাউরে হিজড়া হিসেবে আইডেন্টিফাই করা হয় না, এবং অনেক ক্ষেত্রে এই হিজড়া(ইন্টারসেক্স) কমিউনিটির মানুষরা এমন মানুষ যারা হয়ত তাদের ইন্টারসেক্স কন্ডিশন ডায়াগনোজ করার টেস্টের টাকা অথবা যেই সার্জারি দরকার তাদের কোন একটা জেন্ডারে শিফট করানোর জন্য সেইটার টাকা এফোর্ট করতে পারে না দেখেই তারা হিজড়া থেকে গেছে। সেধে সেধে কেউ মার্জিনালাইজড হইতে চায় না।

আপনি যদি চান যে পরের জেনারেশন থেকে ইন্টারসেক্স মানুষেরা মার্জিনালাইজড না হোক, তারা সমান রাইট পাক, তাইলে আপনাকে এইটা নিশ্চিত করা লাগবে যে যেই বয়সে তারা আবিষ্কার করবেন যে তাদের ইন্টারসেক্স কন্ডিশন আছে, (সেইটা শৈশব, কৈশোর বা আরো বড় বয়সেও হইতে পারে, আমরা এস্টাব্লিশ করেছি ইন্টারসেক্স কন্ডিশন সবসময় জন্মের সময় ধরা পড়ে না), সেই বয়সে যাতে তাদের এই আবিষ্কার করা, এবং দরকারি জেন্ডার চেঞ্জের যেই প্রসেস/সার্জারি, এই ট্রান্সফরমেশনের সময় যাতে তাদেরকে রিডিকিউল করা না হয়, তাদেরকে অচ্ছুৎ বানায়ে দেয়া না হয়। যদি তাদের এক্সেপ্টেন্স না থাকে, তাহলে তারা হয় কখনো প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট বা প্রসিডিউর নেয়ার সাহসই পাবেন না, আর নাহয় তাদেরকে সাধারণ সমাজ থেকে দূরে সরে গিয়ে হিজড়া কমিউনিটিতে চলে যাইতে হবে।

(আবারো মনে করাই, এখানে ট্রান্সজেন্ডারদের কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে ইন্টারসেক্স কন্ডিশনে ভোগা ব্যক্তিদের কথা)।

  

এত বিশাল লেখার শেষে এসে যদি কারো আমাকে মাইর দিতে ইচ্ছা না করে, তাইলে আমি আশা করি আপনার হয়ত ইন্টারসেক্স কন্ডিশন, এই কন্ডিশনের কারণে কীভাবে ডায়াগনোসিস বা নেসেসারি ট্রিটমেন্ট/সার্জারি/ট্রান্সফরমেশন কীভাবে ডিলেইড হইতে পারে, কীভাবে দেখতে ছেলে মনে হইলেও জেনেটিকালি একজন নারী বা দেখতে মেয়ের মত হইলেও জেনেটিকালি কেউ ছেলে হইতে পারে সেই বিষয়ে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়বে। 

(ভাংগা রেকর্ডের মত আবার বলি, ট্রান্সজেন্ডারের কথা এখানে হচ্ছে না। যে জেনেটিকালি ফিজিকাল এপিয়ারেন্স থেকে ডিফারেন্ট জেন্ডারের সে তার এই কন্ডিশনটা কিছুটা বড় হয়ে আবিষ্কার করার প্রসেসের কথা বলা হচ্ছে।)

  

আশা করি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হইসে কীভাবে ফিজিকালি ছেলের মত দেখতে মনে হইলেও একজনের অরিজিনালি/জেনেটিকালি মেয়ে হওয়ার বা নিজেকে মেয়ে মনে হুয়ার মত সিনারিও ঘটতে পারে ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের মানুষদের, এবং কেন এই জিনিসটা শিশুদের বুঝানোর মাধ্যমে ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের ব্যক্তি বা শিশুদের সমাজে/স্কুলে এক্সেপ্টেন্স তৈরী করাটা জরুরি। 

যদি এক্সেপ্টেন্স না থাকে, তাইলে সে সমাজে ফাংশন করতে পারবে না।

হয় সে ডায়াগনসিস বা ট্রিটমেন্টের অভাবে সারা জীবন সাফার করে কাটায়ে দিবে,

আর নাইলে বাধ্য হয়ে হিজড়া কমিউনিটিতে যোগ দিয়ে বেসিকালি ভিক্ষাবৃত্তিতে যোগ দিতে বাধ্য হবে পেটের ভাত যোগাইতে।


আরও খবর



নারীর জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি

প্রকাশিত:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ |

Image

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে দ্রুত লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশেষ করে নারীর স্বাস্থ্য জীবন-জীবিকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য

গত কয়েক দশকে উপকূলীয় এলাকায় পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যে উষ্ণায়ন, পরিবেশের বিপন্নতা তার প্রভাব প্রথম এসে পড়ে নারীর ওপর। পানির স্তর নিচে নেমে যায়, নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে যায়, নদী শুকিয়ে যায়, দুই-একটি নলকূপে, যেখানে মিষ্টি পানি ওঠে সেখানেও পানির জন্য হাহাকার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা না হলে কলসি নিয়ে পানির খোঁজে দীর্ঘপথ হাঁটা। জ্বালানির জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে নারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনের ভেতরে যেতে হয়। শুধু খাওয়ার পানিই নয়, সংসারে সব কিছুর জন্য যে পানি, সেই পানি সংগ্রহ করার দায়িত্বও নারীর। তাই সেই বিপর্যয় মোকাবিলায় নারীকে সামনে দাঁড়াতে হয়

পশুর নদী অববাহিকায় সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, অঞ্চলের মানুষ ভূগর্ভস্থ পানি অন্যান্য খাবার থেকে দৈনিক ১৬ গ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ করছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। ২০০৯-১০ সালে খুলনার দাকোপ উপজেলার ১৩-৪৫ বছর বয়সী ৩৪৫ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত নোনাপানি গ্রহণের ফলে নারীদের উচ্চ রক্তচাপ, জরায়ুর প্রদাহ, গর্ভকালীন খিচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশুও জন্ম নিয়েছে

বিষয়ে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসি বেগম বলেন, দীর্ঘদিন অতিরিক্ত নোনাপানি গ্রহণ ব্যবহারের ফলে গর্ভকালীন সময়ে নারীদের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় এর ফলে জরায়ুর প্রদাহ, গর্ভকালীন খিচুনি, গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে পাশাপাশি অপরিণত শিশু জন্মের আশঙ্কাও থাকে এই লোনাপানি ব্যবহারের ফলে

এর সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় নারীদের লোনাপানি গ্রহণ ব্যবহার কমাতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়, নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে যায়, নদী শুকিয়ে যায়। এগুলো রোধ করতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। মানুষের সুস্থতার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন রোধের কোনো বিকল্প নেই

ছাড়া দীর্ঘদিন লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে চুল ত্বকের ক্ষতি হয়। রং কালো হয়ে যায় দ্রুত বার্ধক্য চলে আসে। উপকূলের নারী শিশুদের চিংড়িপোনা ধরার জন্য ভাটার সময় ভোরে দিনের বেলায় প্রায় - ঘণ্টা  লবণাক্ত পানিতে থাকতে হয়। এর ফলে প্রজনন স্বাস্থ্যসহ নারী অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন। লবণাক্ত পানির কারণে নারীরা এখন জরায়ু ক্যানসারের মতো জটিল রোগে ভুগছেন। 

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর যে কয়েক লাখ নারী জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা। নারীদের জরায়ুসংক্রান্ত অসুখের তীব্রতা লবণাক্তপ্রবণ গ্রামগুলোতে বেশি। সে জন্য অল্প বয়সেই এলাকার নারীরা জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। 

জাতিসংঘ জনসংখ্যা কর্মসূচির (ইউএনএফপিএ) প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তঃসত্ত্বা স্তন্যদাত্রী নারী এবং কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। ছাড়া শুধু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে পুরুষের তুলনায় নারীর মৃত্যুঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি। ১৯৯১ সালের বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ে নিহত লাখ ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ছিলেন নারী। ২০০৪ সালের সুনামিতে নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী। ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের পর মায়ানমারের ৮৭ শতাংশ নারী তাদের কাজ হারান। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় আক্রান্তদের (নিহত আহত) ৭৩ শতাংশই ছিলেন নারী


আরও খবর



বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

 বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।

২০২৩ সালে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

এতে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশ কিছু বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, সরকারের নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি, কঠোর ও জীবনের জন্য হুমকি এমন কারাগার পরিস্থিতি।

এছাড়া নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা, রাজনৈতিক ও অন্যান্য বন্দি, সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও অযৌক্তিক গ্রেপ্তার, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইনের ব্যবহার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধি-নিষেধের কথা বলা হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক দায়মুক্তির অসংখ্য তথ্য পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করতে এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশে মানবাধিকারের সমস্যা হিসেবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সংস্থার স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপের কথা বলা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

এছাড়া সংগঠন, অর্থায়ন বা বেসরকারি ও নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলো পরিচালনায় সুযোগ অত্যন্ত সীমিত করে আইন প্রণয়নসহ চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধি-নিষেধ; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন করতে নাগরিকদের অক্ষমতার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধি-নিষেধ, সরকারি খাতে বড় ধরনের দুর্নীতি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর গুরুতর বিধি-নিষেধকেও সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, কুয়ার বা ইন্টারসেক্স (এলজিবিটিকিউআই) ব্যক্তি, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধি-নিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।


আরও খবর



আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের বেশি আমানত কোটিপতিদের

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যত টাকা জমা আছে, তার অর্ধেকের বেশি কোটিপতিদের অর্থ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় মোট আমানতের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি বা ২৪ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা কোটিপতিদের আমানত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব আমানতকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় এক কোটি থেকে শুরু করে দেড়শ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১০০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন এ রকম আমানত হিসাব রয়েছে ছয়টি। এই ছয় হিসাবেই রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি, বেসরকারি ও বিশেষায়িত মিলিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০টি। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন তিনটি, বেসরকারি মালিকানাধীন ৩২টি ও বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাঁচটি। এই ৪০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গত ডিসেম্বর শেষে গ্রাহক বা আমানতকারীর হিসাব ছিল চার লাখ ৩১ হাজার ২২১টি। এসব হিসাবের মধ্যে কোটি টাকার বেশি আমানত জমা আছে, এমন হিসাবের সংখ্যা পাঁচ হাজার ২৮৭। আর পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক কোটি টাকার কম আমানত রেখেছেন এমন আমানতকারীর হিসাব রয়েছে চার লাখ ২৫ হাজার ৯৩৪টি।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যত আমানত ছিল, তার প্রায় ৫৫ শতাংশই রয়েছে মাত্র সোয়া এক শতাংশ আমানতকারীর হিসাবে। আর পৌনে ৯৯ শতাংশ আমানতকারীর হিসাবে ছিল মোট আমানতের সাড়ে ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চার লাখ ২৫ হাজার ৯৩৪ জন আমানতকারী মিলে জমা রেখেছেন ১৯ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। তার বিপরীতে মাত্র পাঁচ হাজার ২৮৭ জন আমানতকারী জমা রেখেছেন ২৪ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, দেশে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। একশ্রেণির মানুষ রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে উঠছেন। তার বিপরীতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তসহ বিপুল জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়ে টান পড়ছে। দেশে বৈষম্য এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটিকে চরম উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাই বৈষম্য কমাতে ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করে আসছেন তারা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে আমানত রয়েছে, তার মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির আমানত যেমন আছে, তেমনি রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতও। ফলে কোটি টাকার বেশি আমানত যেসব হিসাবে রয়েছে, তার সবই ব্যক্তিশ্রেণির আমানত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতও রয়েছে এর মধ্যে।

সরকারি পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে দেশের প্রকট বৈষম্যের তথ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতেই এখন দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ তথ্য বিবিএসের খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ উঠে এসেছে।

একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যের নির্দেশক জিনি সহগ সূচক বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৯৯ পয়েন্টে। কোনো দেশে এ সূচক দশমিক ৫০০ পয়েন্ট পেরোলেই সেই দেশকে উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ উচ্চ বৈষম্যের দেশের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।


আরও খবর



নওগাঁয় নিরাপদ সড়কের দাবীতে চোখে কালো কাপড় বেঁধে সড়কে এক শিক্ষার্থী

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে চলমান এই তীব্র রোদ ও গরমকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছে ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া নামের এক শিক্ষার্থী। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘন্টাব্যাপি শহরের তাজের মোড় ও ব্রীজের মোড় সড়কে চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করে ঐ শিক্ষার্থী। সে নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

এসময় শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার হাতে থাকা পোষ্টারে লিখা ছিল “সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই, দূর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই”। এসময় স্থানীয় পথচারীরা এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

পথচারী জুলফিকার রহমান বলেন, আমরা সড়কে কেউ নিরাপদ নই। বাসা থেকে বের হলে সুস্থ্যভাবে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারবো কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। এক ছোট্ট শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবারই উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।

নিগার সুলতানা ও তানহা খাতুন নামের আরো দুই পথচারী বলেন, তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাচ্চাটির এমন প্রতিবাদ ও দাবী খুবই যোক্তিক। আমরা তার দাবীকে সমর্থন করছি। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবীতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া জানায়, প্রতিদিন টিভি, পত্রিকাতে দেখি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারবো কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে। বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় বাবা-মা। আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছর বয়সী এক শিশু। এখন ভাবুন সেই শিশুটির এখন কি হবে। সারা জীবনের জন্য শিশুটি বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যায় সড়ক দূর্ঘটনায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিলো। এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পত্তি আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়। আমার মেয়েটি এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। যার কারণেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। যার কারণে তাকে পুরো সমর্থন জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরতো তবে, প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মত ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসতো। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই। আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগন, যানবাহন চালক ও মালিকদের একসাথে কাজ করার আহব্বান জানাচ্ছি। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবীতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের মুগ্ধ করেছে। এমন দাবী ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দূর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্বব হতো। তার এমন উদ্যোগ ও দাবীকে সাধুবাদ জানাই।


আরও খবর



সারাদেশে হিট স্ট্রোকে ৫ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

তীব্র থেকে তীব্রতর দাবদাহে পুড়ছে সারাদেশ। অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এই তীব্র দাবদাহে সারাদেশে হিট স্ট্রোকে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদের মধ্যে চট্টগ্রামে ২ জন, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও গাজীপুরে একজন করে মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ভ্যাপসা গরমে হাসফাঁস করছে মানুষ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে শিশুসহ দুজন। গরমের তীব্রতায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে মানুষ ও যানবাহন চলাচল কমে গেছে।

তবে নগরীর হাসপাতালগুলোতে জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হচ্ছে। যাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. মো. শাহেদ উদ্দিন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে ছয় মাস বয়সী এক শিশুসহ ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত বৃদ্ধের নাম ছালেহ আহমদ শাহ (৭০)। ছালেহ আহমদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের উত্তর পরুয়াপাড়া এলাকায়।

ছালেহ আহমদের ছেলে নজরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তাঁর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে আনোয়ারা হলি হেলথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আনোয়ারা হলি হেলথের পরিচালক সাইফুল ইসলাম শামীম বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই ছালেহ আহমদের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।

এদিকে একই জেলার বোয়ালখালী উপজেলায় সাফা নামের ছয় মাস বয়সী এক কন্যা শিশুর মৃত্যু ঘটে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা ২নং ওয়ার্ড আনজিরমারটেক সৈয়দ আলমের নতুন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তার বাবার নাম মো. নিজাম উদ্দীন।

নিহতের বাবা নিজাম উদ্দীন বলেন, ভোরে মায়ের বুকের দুধ পান করার কিছুক্ষণ পর সাফা ঘুমিয়ে যায়। সে সময় ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। সকাল সাতটায় মেয়েকে কোলে নেওয়ার পর তার শরীর ঠান্ডা অনুভব হলে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সাবরিনা আকতার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের ধারণা বিদ্যুৎ না থাকায় সে হিট স্ট্রোকে মারা গেছে।

পাবনা : তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ পাবনার জনজীবন। শনিবার (২০ এপ্রিল) পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাপদাহে পাবনা শহরে সুকুমার দাস (৬০) নামে এক ব্যক্তি হিট স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা শহরের রুপকথা রোডে একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় হিট স্ট্রোক করেন তিনি। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সুকুমার দাস শহরের শালগাড়িয়ার জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ওই ব্যাক্তি হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। পাবনা শহর থেকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাকে। আমরা উনাকে চিকিৎসা চিকিৎসা দিতে পারিনি। নাম-পরিচয় জানার পর আত্মীয়-স্বজন আসছিল। মরদেহ তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা : চু্য়াডাঙ্গায় অব্যাহত রয়েছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপদাহ। টানা চার দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের জনজীবন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও দাবি করছে দপ্তরটি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামে মাঠে কাজ করার সময় হিট স্ট্রোকে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ তা অতি তীব্র তাপদাহে রূপ নিয়েছে। আজ এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে তীব্র তাপদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করছে জেলা প্রশাসন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

গাজীপুর : গাজীপু‌র সিটি করপোরেশনের কোনাবা‌ড়ি‌র জেলখানা রোডে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে। শ‌নিবার (২০ এপ্রিল) বি‌কে‌লে তার মর‌দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতালের ম‌র্গে পা‌ঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম আশরাফ উদ্দিন।

সোহেল রানা গাজীপুর সি‌টি কর‌পো‌রেশ‌নের এনা‌য়েতপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। খবর পেয়ে পু‌লিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার ক‌রে হাসপাতালের ম‌র্গে পাঠায়।


আরও খবর