কুমিল্লা ব্যুরো ঃ
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক. ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি, জাতীয় চার নেতার খুনি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর এই সদস্যদের খুনি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে। এই খুনির কবর জাতীয় সংসদের ওই পবিত্র আঙ্গিনায় থাকতে পারে না। বাংলার মানুষ তথাকথিত কবর সেখান থেকে সরিয়ে দিবে। আমি জাতীয় সংসদেও বলেছি তার লাশ সেখানে নেই। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তার কবর আছে বা তার লাশ সেখানেই কবর দেয়া হয়েছে তাহলে কোন কথাই বলবো না। তাদের কথা মেনে নেব। কিসের না কিসের লাশ, নাকি অন্য কিছু রেখে জিয়ার কবর বলে চালাচ্ছে। আর যারা ওই জিয়ার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরাতো আর মানুষ ফেরত দিতে পারবো না তারা যেন খেয়ে পরে বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে কুমিল্লার টাউনহল মাঠে মায়ের কান্না নামক একটি সংগঠনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠা এ এসব কথা বলেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ১৯৭৭ সালে গুম, হত্যা ও বিচার বহিঃভুতভাবে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা মুক্তযোদ্ধা ও বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত নিহতদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নিহতের স্বজনরা গুম খুন ও ফাঁসির বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ও মায়ের কান্না সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, আজকের বিদেশি প্রভুদের মদদে যারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন তাদের বলছি, বাংলার জনগণ, যারা আমরা পাক বাহিনীকে পরাজিত করে এই ডিসেম্বর মাসে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলাম তারা এখনও জীবিত আছি। যারা বিদেশি প্রভুদের ইঙ্গিতে চলছে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের দলের রাজনৈতিক কবর এই বাংলার মাটিতেই হবেই হবে।
মন্ত্রী বলেন, আবার দেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য তারা ১০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে। পারে নাই, ওই খুনিরা পারেনাই, তারা পারবেও না। শুনেছেন কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের, বিমানবাহিনীর সদস্যদের বেচে বেচে হত্যা করা হয়েছিল। গুমও করা হয়েছিল। তাদের লাশও পাওয়া যায়নাই। কে কোথায় আছে সেই খবরও নেই। এই গুমের রাজনীতি শুরু করেছিল খুনি জিয়া। জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে আর খালেদা জিয়া তারেক জিয়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। সেদিন আমাদের নেত্রী বেঁচে গেলেও আমাদের আরেক নেত্রী আইবি রহমান বাঁচতে পারেননি।
মন্ত্রী মোজাম্মেল হক আরও বলেন, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের সময় যারা ভেটু দিয়েছিল। নগদ পয়সায় বঙ্গবন্ধু ৭৪ সালে চাল এবং গম কিনেছিল আমেরিকার কাছ থেকে সেই চাল এবং গম বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় নাই। কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করেছিল। তারা আবার হুমকি দিচ্ছে তারা সরকারের পতন ঘটাবে।
এটা ১৯৭৫ নয় এটা ২০২২ সাল। সেই কথা ভুলে যান। সেই চিন্তা আর করবেন না। তারা বলে ১০ তারিখে শেখ হাসিনা সরকার থাকবে না। তাহলে কে দেশ চালাবে? আমরা বুঝি কাদের মদদে এগুলা চলে। তাদের লোভ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তারা ক্ষমতায় এসেছে। ভেবেছে বার বার একই পথে এসে পাড় পেয়ে যাবে। কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ এজাহার খান এমপি, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ বীররিক্রম, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান, কর্পোরাল লরেন্স ডি রোজারি।
বিদ্রোহ দমনের নামে ১৯৭৭ সালের ২অক্টোবর খুনি জিয়ার ষড়যন্ত্রমুলক সাময়ক অভ্যুত্থানের বিভীষিকাময় হত্যাকান্ডের শিকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন, কান্না জড়িত কন্ঠে বক্তব্য রাখেন কর্পোরাল মোবারক আলীর মেয়ে মমতাজ বেগম, সার্জেন্ট সাইদুর রহমান মিয়ার ছেলে কামরুজ্জামান মিয়া লেলিন, সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নূরে আলম, সার্জেন্ট আফাজউদ্দিন ভূইয়ার ছেলে মাসুদুল আলম, সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, সার্জেন্ট মোফরাকুল আলমের মেয়ে রিমনা বেগমসহ অনেকে।
নিহতের পরিবাররা বলেন- ষড়যন্ত্রকারী খুনি জিয়া সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের নির্মমভাবে ফাসিঁ- কারাদন্ড ও চাকুরিচ্যুত করায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ৭দফা দাবী তুলে ধরেন। ৭দফার মধ্যে অন্যতম হলো অন্যায়ভাবে ফাসিঁ,কারাদন্ড ও চাকুরিচ্যুত করার অপরাধে খুনি জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার ও জাতীয় সংসদেরমত পবিত্র জায়গায় থেকে খুনি জিয়ার তথাকথিত কবর অপসারণ করা।