
মইনুল ইসলাম মিতুল :রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং টিম গঠন করলেও ক্রেতা এবং
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন সরকারের বাজার মনিটরিং কোনো কাজে আসছে না। তাই চাহিদার
তুলনায় পণ্যের মজুদ বেশি থাকলেও রমজানের আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে।
নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার পর্যবেক্ষণেও এই অভিযোগের
সত্যতা মিলেছে। সরকারি পর্যবেক্ষণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রমাণ মিলেছে।
প্রতি
বছর ঈদকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণের এই তদারকির অভিযোগ শুরু হয়। তবে এ অভিযান
শুধু রমজানেই নয়, পুরো বছরেই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে
থাকবে বলে মনে করেন ক্রেতারা। আর অভিযান পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
রমজান এলে নয়, পুরো বছরই অনিয়ম ও খাদ্যে
ভেজালের বিরুদ্ধে তৎপর থাকেন তারা। রমজানে এসব বিষয় প্রচারে গণমাধ্যম বেশি সক্রিয়
হয় বলে এর প্রচারণাটা বেশি হয়। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ভেজাল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এতে তারা
ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
প্রতি
বছরই রমজানে বিভিন্ন কাঁচাবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, ইফতারির
দোকানে, বিপণিবিতান, মুড়ি ও সেমাই
কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন সংস্থা। তাদের নির্ধারিত নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নানা অভিযোগে
জেল-জরিমানা করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়।
সাধারণত
পুলিশ, র্যাব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং
ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ
অধিদফতর, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ),
শুল্ক গোয়েন্দা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ কয়েকটি সরকারি সংস্থা। তবে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ, বিআরটিএ, বিএসটিআই,
র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথ অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
প্রতি বছরের মতো এবারো রমজান শুরুর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নিরাপদ খাদ্য
কর্তৃপক্ষ ‘পবিত্র
রমজানে
খাদ্যদ্রব্যে নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে গণবিজ্ঞপ্তি’
প্রচার করে। বিজ্ঞপ্তিতে খাদ্যবিরোধী কার্যকলাপের জন্য কী শাস্তি
সেটাও প্রকাশ করা হয়। তবে এ বছর সরকারি ১৪ সংস্থা বাজার মনিটরিং করতে অভিযানে
নামে। অভিযানে জরিমানা ও বিক্রেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-সহ মালামাল বাজেয়াপ্ত
করা হয়। তবে এসব অভিযান শুধু রমজান মাসে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো বছরে দেখতে চান
ক্রেতারা। তারা মনে করেন, বিক্রেতারা শুধু রোজায় না সব সময়
বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা।
রমজানে
অভিযান চালানো ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাপিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, হয়রানির
উদ্দেশ্যে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি, এটা ঠিক নয়।
ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। রমজান এলেই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় এক
শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। দুনিয়ার যত নষ্ট মাল আছে সেগুলো বাজারে ছাড়া হয়। শুধু
রমজানে নয়, আমরা সারা বছরই এসব অনিয়ম ও ভেজালের বিরুদ্ধে
অভিযান চালিয়ে থাকি।
সভায়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট ও মনিটরিং টিম
সদস্যদের আসতে দেরি হয় বলে টিমের কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হয়। তিনি বলেন, ‘বাজার পরিদর্শন করে টিম লিডাররা রিপোর্ট প্রদানে প্রায়শই বিলম্ব
করেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে পরামর্শ বা স্পষ্ট মতামত দেন না। পরিদর্শিত বাজারে
উদ্ভূত সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করলে মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
কিন্তু মনিটরিং টিম এসব করে না। তাই বাজার মনিটরিংয়ের তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়
না।