Logo
শিরোনাম

খরতাপে পুড়ছে দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২১ মে ২০২৫ |

Image

দিনভর বৈশাখ তথা ভরা গ্রীষ্মের প্রখর রোদে যেন সূর্য থেকে মাটিতে আগুন ঝলসে পড়ছে। রাতের বেলায়ও গরমে-ঘামে অস্বস্তি। গতকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রার আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণের জনপদ বাগেরহাট জেলার মোংলায় ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সে.। চলতি এপ্রিল মাসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পারদ ৪২ ডিগ্রি সে. অতিক্রমের পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ।

 বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাস উচ্চ তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ছিল দক্ষিণের জনপদ পটুয়াখালী উপজেলার খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। যা উক্ত এলাকায় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। গতকাল রাজধানী ঢাকায়ও তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে দিনের বেলায় ৩৮.৪ এবং রাতেও ২৮.৬ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। অবশ্য গতকাল রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জে হঠাৎ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির সাথে সাময়িক বৃষ্টি স্বস্তি এনে দেয়। এ সময় ঢাকায় ১২, ফরিদপুরে ২৩, চাঁদপুরে ১৪ ও কিশোরগঞ্জে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটাও বৃষ্টিপাত হয়নি। বৈশাখের শুরুতেই সমগ্র দেশে অসহ্য খরতাপের দহনে দুর্বিষহ পড়েছে জনজীবন। আবহাওয়া বিভাগ আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে তাপপ্রবাহ আরো বৃদ্ধি এবং বিস্তারের সতর্কবার্তা (হিট এলার্ট) জারি করেছে। টানা কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টি-খরা ও উচ্চ তাপমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকেই নামছে দ্রুত। নদ-নদী-খাল, পুকুর-জলাশয়-দীঘি, হাওড়-বাওড়সহ ভূ-উপরিভাগের পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে মাঠ-ঘাট-বিল ফেটে চৌচির। তীব্রতর গরম ও খরার কবলে ইরি-বোরো, আম-লিচুর ফলন ব্যাহত হওয়ারর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ফলে বিভিন্ন জায়গায় হিট স্ট্রোক, শরীরে পানিশূন্যতায় এবং সর্দি-কাশি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধিতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দিনের প্রখর রোদের তেজে জরুরি কাজ ছাড়া কেই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।

গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া বিভাগ আরেক দফায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা বা হিট এলার্ট জারি করেছে। এতে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, দেশের উপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৬ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায়ও (তিন দিনে) অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসে অত্যধিক হারে জলীয়বাষ্প থাকার কারণে গরমের তীব্রতায় অস্বস্তি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬, মোংলায় ৪০.৩ ডিগ্রি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়াও দেশের অন্যত্র উল্লেখযোগ্য দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও পাবনায় ৩৯.৮, খুলনায় ৩৯.৫, রাজশাহীতে ৩৯.৩, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ায় ৩৯.২, রাঙ্গামাটিতে ৩৯, বগুড়া, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালীতে ৩৮.৫ ডিগ্রি সে.।

সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। দিনের তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্থানভেদে এখন ২৭ থেকে ২৯ ডিগ্রির ঘরে। তাতে খরতাপ অসহ্য হয়ে উঠেছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্তসহ আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগামীকাল  সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ দেশের কিছু কিছু জায়গায় কমে আসতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এর পরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন গত সোমবার ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গত কিছুদিন ধরে রাজশাহীতে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়া। রাজশাহী অঞ্চলে মাঝারি তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রাও দুএক ডিগ্রি কমতে পারে। তবে এ কয়েক দিনের মধ্যে খুব একটা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আগে তাপপ্রবাহ বাড়ার কারণে রাজশাহী আরও তিন বিভাগে এসব অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এপ্রিল মাসে এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদফতর। তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঈদের পর তাপপ্রবাহের ফলে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষ তাদের কর্মে ফিরতে পারেনি। অনেকটা কর্মহীন দিন পার করছে তারা।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। এদিন দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৩ শতাংশ। তিনি আরো জানান, এপ্রিল মাসব্যাপী মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এ আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভবনা রয়েছে।

ভ্যাপসা গরম, আবহাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া সকাল থেকে কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেনা। রিকসা ও ভ্যান এবং ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালকদের যাত্রী হচ্ছে না। এছাড়া গরম আবহাওয়ায় কেউ কাজ না করায় দিন হাজিরায় কর্মজীবী বিপাকে পড়েছে। 


আরও খবর



এদেশে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদ সেলিনা হায়াত আইভী

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ২১ মে ২০২৫ |

Image

জ.ই. মামুন, সিনিয়র সাংবাদিক :

এদেশে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির (Clean image) রাজনীতিবিদ দলমত নির্বিশেষে হাতে গোনা কয়েক জন। তাদের মধ‍্যে সেলিনা হায়াত আইভী অন‍্যতম। তিনি নিজের দলের ভেতরের দানবদের সাথে যেমন লড়াই করেছেন তেমনি কাজ করেছেন সব দল মতের ভালো মানুষদের সাথে নিয়ে। দীর্ঘকাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার পরেও তার সম্পর্কে দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির জোরালো অভিযোগ কখনো শুনিনি। সত‍্যি কথা বলতে এবং সঠিক কাজ করতে তাঁকে কখনো ভয় পেতে দেখিনি। তাঁর গ্রেপ্তারের খবর সুস্থ ধারার রাজনীতির জন‍্য অশণি সংকেত। এই যদি ভালো কাজের পরিণতি হয় তাহলে আগামীতে কেউ ভালো কাজ কেন করবেন! 

মানুষের মঙ্গলের জন‍্য কাজ করা, সততা স্বচ্ছতা এবং দেশপ্রেম বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করা এমন একজন মানুষকে মিথ‍্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ। তবে আগের মতোই নারায়ণগঞ্জের নারী পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ কাল রাত থেকে তাঁর প্রতি যে সমর্থন ও ভালোবাসা দেখিয়েছে তাও অভূতপূর্ব। তাঁর বাড়ির সামনে কাল রাতে যত মানুষ জড়ো হয়েছিলো, টিভি টক শোতে গলা ফাঁটানো অনেক নেতার তথাকথিত অনকে রাজনৈতিক দল টাকা দিয়ে বা বিরিয়ানি খাইয়েও দেশের কোথাও এত লোকের একটা সমাবেশ করতে পারবে না। যে কোনো রাজনীতিবিদ আইভী আপাকে ঈর্ষা করতে পারেন। প্রতিকুল পরিবেশেও তাঁকে পালাতে হয় না, সরকার বা তার দোসরদের সাথে আঁতাত করতে হয় না, তিনি বীরের মতো বাঁচেন, জেলে গেলেও বীরের মতো যান।

সাংবাদিক হিসেবে আমি দীর্ঘদিন ধরে আইভী আপাকে দেখেছি, তাঁর কাজ দেখেছি, নারায়নগঞ্জের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ দেখেছি। সব সময় আমার গভীর শ্রদ্ধা, সমবেদনা ও সহানুভূতি তাঁর জন‍্য। 


আরও খবর



নানা সংকটে জর্জরিত মহাখালী বাস টার্মিনাল

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ২১ মে ২০২৫ |

Image

রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীদের নিয়ে এখান থেকে বাস ছেড়ে যায় এবং ছেড়ে আসে। প্রতিদিন গড়ে আসা-যাওয়া করে এক হাজার দূরপাল্লার বাস, যাতে পরিবহন হয় ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী। অথচ টার্মিনালটিতে যাত্রীসেবা বলতে কিছুই নেই। বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা নামমাত্র। মাত্র তিনটি শৌচাগার, তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। যাত্রীদের জন্য থাকা বিশ্রামাগারটি দখলে নিয়েছে ভবঘুরে ও মাদকসেবীরা।

কিশোরগঞ্জগামী যাত্রী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোনো যোগাযোগ খাতই উন্নত নয়। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবকিছুতেই ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। স্টেশনগুলো অপরিচ্ছন্ন, খাবার হোটেল কিংবা টয়লেটগুলোয় অধিকাংশ সময়ই যাওয়া যায় না। অতিজরুরি না হলে কেউ যেতেও চায় না। আবার যারা যাচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতা কতটা যে বাজে হয়, সেটি বলে প্রকাশ করা যাবে না। বিশেষ করে নারী ও শিশু যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে এক্ষেত্রে।

মহাখালী বাস টার্মিনালটি পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মধ্যে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার বাস চলাচল করলেও টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৪০০ গাড়ির। আর বৃহস্পতিবার, শুক্র ও শনিবার ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত বাস এ টার্মিনালে প্রবেশ করে ও ছেড়ে যায়। ফলে বেশির ভাগ বাসই রাখতে হয় টার্মিনালসংলগ্ন সড়কে। মহাখালী থেকে তেজগাঁওয়ের তিব্বত পর্যন্ত সড়ক ও লিংক রোডগুলোয় এসব বাস রাখায় যানজট সৃষ্টি হয় বনানী পর্যন্ত।

সড়কে গাড়ি রাখা প্রসঙ্গে মহাখালী-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী একটি বাসের চালক জানান, সব গাড়ি টার্মিনালে জায়গা হয় না। তাই গাড়িগুলো কখনো কখনো টার্মিনালের বাইরে রাখতে হয়। তবে রাস্তার ওপরে কোনো গাড়িই বেশিক্ষণ রাখা হয় না। ট্রাফিক পুলিশ সবসময় নজর রাখে। যত্রতত্র গাড়ি থামানো বা যাত্রী ওঠানামারও এখন সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে সামান্য যানজট হয়, তবে সেটি বড় না।

বাস টার্মিনালের যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে ময়লা-আবর্জনা। সেই সঙ্গে ভ্যানগাড়ি ও ভাসমান দোকান বসিয়ে টার্মিনালের আশপাশে অনেকটা জায়গা দখল করে রেখেছে বহিরাগতরা। ব্যস্ত টার্মিনালটির স্যানিটেশন নিয়ে তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকারও অভিযোগ। নিম্নমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ে ভোগান্তি। পরিবহন শ্রমিকদের জন্যও এ টার্মিনালে কোনো বিশ্রামাগার নেই।

এ বিষয়ে কথা হলে পরিবহন কর্মীদের বেশ কয়েকজন তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তারা জানান, যাত্রীরা বাস টার্মিনালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিনিয়ত। এসবসহ নানা সমস্যার বিষয়ে বাস টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশনকে সমাধানের জন্য একাধিকবার তাগাদা দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, মহাখালী টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় রয়েছে দুটি শৌচাগার। একটি নারীদের এবং অন্যটি পুরুষদের ব্যবহারের জন্য। তবে সেগুলো খুবই নোংরা ও দুর্গন্ধময়। তার পাশেই রয়েছে উন্মুক্ত গোসলের জায়গা, যেটি পরিবহন শ্রমিক ও টার্মিনালের কর্মীরা ব্যবহার করেন।

এ নিয়ে ডিএনসিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, মহাখালী টার্মিনালে টয়লেট সংকট নেই। পর্যাপ্ত টয়লেট আছে। সংকট তখনই বলা যাবে যখন দেখা যাবে মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ তো লাইন ধরে নেই। তার মানে সেখানে সংকট নেই। তবে এগুলো অপরিষ্কার, এর সঙ্গে আমিও একমত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সকালে হয়তো একবার পরিষ্কার করে, সারা দিন আর করে না। কিছুক্ষণ পর পর পরিষ্কার করতে গেলে বেশি লোকবল নিয়োগ দিতে হবে, ফলে খরচও বেশি হবে। এজন্য তারা এসব করে না হয়তো।

জানা গেছে, মহাখালী বাস টার্মিনালটির ইজারা নিয়েছে এসএফ করপোরেশন। এটি পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ। অনেক চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে টার্মিনালে ইজারাদারের হয়ে কাজ করা সবুজ নামের এক তরুণ বলেন, টার্মিনালটি পর্যাপ্ত পরিপাটি করে রাখা হয়। যাত্রী বা পরিবহনসংশ্লিষ্ট কারো কোনো অভিযোগ কখনই আমরা পাইনি।

টার্মিনালে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রেও চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। এ নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের কোনো উদ্যোগ বা নির্দেশনা কাজে আসছে না। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ ও বাস মালিকরা বলছেন, টার্মিনালের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস বৃদ্ধির কারণে রাস্তায় রাখতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা। আবার অনেক দূরপাল্লার চালক টার্মিনালে প্রবেশে গাড়ির লম্বা লাইন থাকলে রাস্তার পাশেই গাড়ি রেখে বিশ্রামে চলে যান বলে অভিযোগ।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাড়ি নিয়ে আমরা বিড়ম্বনায় রয়েছি। টার্মিনালে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ গাড়ি রাখার জায়গা। কিন্তু প্রতিদিন এর দ্বিগুণের বেশি গাড়ি চলাচল করে। আমরা এগুলো রাখব কোথায়? সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অসংখ্যবার বলেছি, আমাদের গাড়ি রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করেন। তারা এখনো করেনি। এতে বাধ্য হয়েই সড়কে গাড়ি রাখতে হচ্ছে। বাইরে গাড়ি রাখলে তো আমাদেরও ক্ষতি, তেলসহ গাড়ির ছোটখাটো যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রায় একই কথা বলেছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বাবুল।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঠামোগত ত্রুটির কারণেই টার্মিনালে যাত্রীদের অধিক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এজন্য কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, বাস টার্মিনাল শুধুই অবকাঠামো নয়। এটিকে অপারেশনও করতে হয়। মানে যাত্রীদের প্রয়োজনে এটিকে বিভিন্নভাবে পরিচালনা করতে হবে। আমাদের দেশের কাঠামোই যাত্রীবান্ধব নয়, পুরো হযবরল অবস্থা।

তিনি আরো বলেন, টার্মিনালে নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম থাকবে, যেখান থেকে গাড়িতে যাত্রীরা উঠবেন এবং সেখানেই এসে বাসগুলো যাত্রী নামাবেন। কিন্তু আমাদের এখানে এমন অবকাঠামো নেই। প্লাটফর্মভিত্তিক এমন অবকাঠামো থাকলে নাগরিক সুবিধা দেয়া খুবই সহজ হয়। যাত্রীদের কোথায় পানি, টয়লেট বা বিশ্রামাগার প্রয়োজন, সেগুলো নজর রাখাও সহজ হয় তখন।


আরও খবর



এক মাস না যেতেই বাড়ল ট্রেজারি বিলের সুদহার

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

সরকারের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোর তরফে অর্থের জোগান বেশি থাকায় মার্চে ট্রেজারি বিলের সুদহার কমেছিল। তবে পরের মাসেই তা আবার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের সুদের হার বেড়েছে ১০১ থেকে ১২৩ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার নির্ধারণ করা হয় ব্যাংকগুলোর কাছে কী পরিমাণে তারল্য রয়েছে, সেটির ওপর ভিত্তি করে। সরকারের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য জোগান বেশি থাকলে সুদের হার কমে। আর চাহিদার তুলনায় তারল্য যোগান কম থাকলে সুদের হার বাড়ে।

এখন ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে থাকায় এবং সরকারের বেশি ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় সুদহার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে, বলছেন ব্যাংকাররা।

সর্বশেষ সোমবারের নিলামে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মার্চে যা ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে সুদহার কমেছে ১২৩ বেসিস পয়েন্ট।

এদিন ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এক মাস আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সে হিসাবে সুদহার কমেছে ১০১ বেসিস পয়েন্ট।

এপ্রিলে এসে ৩৬৪ দিনের টেজারি বিলের সুদের হার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে যা ছিল ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সুদহার কমেছে ১১৫ বেসিস পয়েন্ট।

ট্রেজারি বিল এক ধরনের স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার বিক্রি করে থাকে। মেয়াদ হয় ৯১ থেকে ৩৬৪ দিন পর্যন্ত।


আরও খবর



দেশজুড়ে বইছে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ

প্রকাশিত:শনিবার ১০ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

ঢাকাসহ দেশের ছয় বিভাগ ও পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র, মাঝারি ও মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ। আগামী কয়েকদিন এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, শনিবার (১০ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের দেওয়া ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

রবিবারের (১১ মে) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপামাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

সোমবারের (১১ মে) পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানায়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। চলমান ভাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় থেকে প্রশমিত হতে পারে।

মঙ্গলবার (১২ মে) সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সাজদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বুধবার (১৩ মে) ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুদ্ধ থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।


আরও খবর



জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত বাংলাদেশ

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৫ এপ্রিল 20২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএনইএসসিএপি)-এর ৮১তম অধিবেশনে বাংলাদেশ একটি তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক জয়লাভ করেছে।

আঞ্চলিক সহযোগিতায় ক্রমবর্ধমান নেতৃত্ব প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ইউএনইএসসিএপির অধীনে মর্যাদাবান দুটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেনিং সেন্টার অন আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (এপিসিআইসিটি) এবং এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব ডিজাস্টার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট (এপিডিআইএম)-এর গভর্নিং কাউন্সিলে তিন বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল এবং ইএসসিএপি‘র নির্বাহী সচিব আর্মিদা সালসিয়াহ আলিশাবানা, থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বক্তব্য দেন।

নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৮১তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ভিডিও ভাষণ প্রচার করা হয়। এ ভাষণে তিনি সকল ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানান।

তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তার সঙ্গে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটিডি) সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীল এবং টেকসই নগর উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা’ শীর্ষক অধিবেশনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর আরও জোর দিয়েছে। বিশেষ করে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী টেকসই উন্নয়নের ওপর ডিসকোর্স তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্যহারে প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি, গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং স্মার্ট, সবুজ ও স্থিতিশীল নগরায়ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ইএসসিএপি এবং এর সদস্য দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।

অধিবেশনে শীষ হায়দার চৌধুরী তার বক্তব্যে জাতি ও অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারগুলোর ওপর জোর দেন। তিনি স্থিতিশীল ও টেকসই নগর উন্নয়ন অর্জনের জন্য আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বহুমুখী পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তঃসীমান্ত সমাধানের প্রসার ঘটানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘তিনটি শূন্যের মাধ্যমে টেকসই নগরায়ণকে কেন্দ্র করে একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও এগিয়ে নিয়েছে।

শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, এই উদ্যোগটি নগর উন্নয়নের একটি উদ্ভাবনী মডেলকে প্রচার করে, যা দৃঢ়ভাবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই মডেল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘এ ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস: দ্য নিউ ইকোনমিক্স অব জিরো পোভার্টি, জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট, জিরো নেট কার্বন এমিশনস’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তুলে ধরেছে।

‘তিন শূন্য’ বিষয়ক অধিবেশনের আলোচনায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জনে উন্নত নগর রূপান্তর অভিযাত্রায় প্রাণবন্ত জ্ঞান বিনিময়, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কারিগরি সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

নির্বাচন ও বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনের বাইরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ইউএনইএসসিএপি’র নির্বাহী সচিবের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করে।

বৈঠকে আইসিটি উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা জোরদার করার ওপর আলোচনা করা হয়।

তাৎপর্যপূর্ণ এই দুটি নির্বাচনী বিজয় বাংলাদেশের প্রাগ্রসর নীতি এবং এই অঞ্চলের মধ্যে এর প্রভাবশালী নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান আস্থার প্রতিফলন।

দুটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচনে মূল্যবান সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সকল সদস্য রাষ্ট্র এবং গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ইউএনইএসসিএপি’র নির্বাহী সচিবের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

সূত্র: বাসস


আরও খবর