কুমিল্লা ব্যুরো :
যাত্রী সেজে উঠতো গাড়িতে৷ সুযোগ বুঝেই ড্রাইভারকে জিম্মি করে নিয়ে যেতো অটোরিকশা। তারপর আরেকটি গ্রুপ সেই গাড়ি নিয়ে যেতো কুমিল্লার আরেকটি উপজেলায়। সেখানে থাকা আরেকটি গ্রুপ রঙ বদলে বিক্রি করতো চোরাই গাড়ি। কুমিল্লায় এমনই গাড়ি চোর চক্রের ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবী র্যাবের। এসময় একটি কাভার্ড ভ্যান, দুইটি মোটরসাইকেল ও ২৬টি ব্যাটারীচালিত গাড়িসহ অসংখ্য যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করে র্যাব। ১০ বছর গাড়ি চুরি করে ৩ টি গ্রুপে এক গ্রুপ গাড়ি চুরি করে, আরেক গ্রুপ স্থান বদলায়, শেষ গ্রুপ তা বিক্রি করে । সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় র্যাব ১১ কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
এসময় তিনি জানান, শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া এলাকার খলিলের গ্যারেজে একটি চোরাই গাড়ি আছে বলে আমরা তথ্য পাই। পুরো সিন্ডিকেটকে হাতে নাতে গ্রেপ্তারের জন্য গ্যারেজটিকে পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসে র্যাব। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে সিন্ডিকেট এর সদস্যরা কাটার মেশিন দিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান কেটে যন্ত্রপাতি আলাদা করার সময় চক্রের মূলহোতা খলিলসহ আটজন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
এসময় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওড়া গ্রামের মৃত মনোহর আলীর ছেলে কাউসার আলী খলিল (৪৫); একই গ্রামের ওহাব কাজীর ছেলে মোঃ কাইয়ুম (৪২), মোঃ মুক্তার হোসেন মুসারর ছেলে মোঃ সাজিদ হোসেন (২০), বাটপাড়া গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে নাজমুল হোসাইন রবিউল (১৯), হাড়ং গ্রামের মোঃ আলম মিয়ার ছেলে মোঃ আবু কাউসার (৩৫), বদরপুর গ্রামের মোঃ হোসেনের ছেলে মোঃ পিয়াস (৩৩), আড়াইওড়া গ্রামের মৃত দিদার বক্সের ছেলে মোঃ জহির মিয়া (৪০) এবং মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামের মোঃ হান্নান মিয়ার ছেলে মোঃ জামশেদ হোসেন (২১)।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি আলীম সরকার (৪৩) নামের একজন তার যে কাভার্ড ভ্যান হারানোর অভিযোগ দেয় সেটিই কাটছিল তারা।
র্যাবের অধিনায়ক মেজর সাকিব বলেন, এসময় তাদের স্বীকারোক্তিতে গাড়ি চুরির সাথে সম্পৃক্ত আরেকটি সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সদস্যের তথ্য পাই আমরা। তথ্য অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই কুমিল্লার চম্পকনগর, বুড়িচং থানাধীন ভারেল্লা (দক্ষিণ) ও পশ্চিম সিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চক্রের মূলহোতা জাহাঙ্গীরসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২য় অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার নবীয়াবাদ গ্রামের মৃত সামসুল আলমের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীর (৪৫), শিমরা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে হৃদয় হাসান (১৯), বুড়িচং উপজেলার কংশনগর গ্রামের ধনু মিয়া এর ছেলে শুক্কুর আলী (২৩), বুড়িচং উপজেলার পারোয়ারা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে রিপন মিয়া ওরপে আব্দুল আলীম (২৭), চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের মোঃ মোহর আলীর ছেলে মোঃ সাইফুল (৩২), ব্রাহ্মণপাড়ার শাহেরাবাদ গ্রামের মইনুল হোসেনের ছেলে মোঃ আল আমিন (২৪), শাসনগাছা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মনির মিয়া (৩৯), আড়াইওড়া গ্রামের কাজী মঞ্জিলের ছেলে মজিদ (৩০), বুড়িচং থানার পাঝয়ারা গ্রামের ধনু মিয়ার ছেলে মোঃ তাজুল ইসলাম (৩২) এবং বুড়িচং থানার পশ্চিম সিংহ গ্রামের শাহজাহানর ছেলে মোঃ ওমর ফারুক (২৮)।
মেজর সাকিব বলেন, এই চক্রের অন্যান্য পলাতক আসামীরা হলেন, শফিক (৬০), কামাল (৫২), জহিরুল (৩৬), সোহেল (৩০), সেলিম (৩৫), জালাল (৪৫), জামাল (৪৫), মনির (৪০), নজির (৩৬), মোঃ পাবেল আহম্মেদ (৩০)।
তিনটি গ্রুপের কথা উল্লেখ করে র্যাব অধিনায়ক মেজর সাকিব বলেন, একটি গ্রুপ চুরি করে। আরেকটি গ্রুপ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তা নিয়ে যায়। আর অন্য একটি গ্রুপ তা রঙ বদলানো ও বিক্রির কাজ করে। তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতোয়ালি ও বুড়িচং থানায় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।