Logo
শিরোনাম

কয়েকজন সুফি সাধক

প্রকাশিত:রবিবার ১৩ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

ফকিরবিশেষ্যটি শুনলে মানুষের চিন্তার জগতের স্থর অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন চিত্র মনে ফুটে উঠে বাংলার অপামার জনতা তাদের নিত্য নৈমিত্তিক জীবনে বহু কিছিমের ফকিরের দর্শন পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে, এই ফকির নিয়ে লোকমুখে রয়েছে রঙবেরঙের নানা কথা ফকির বলতে আবার দেশের বড় একটা অংশ মনে করে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নেওয়া ভিক্ষুকদের অনেকে অজ্ঞাতসারে এদের ফকির সম্বোধন করলেও, বস্তুতফকিরবিশেষ্যটি অনেক উচ্চস্তরের মানবদের জন্য ব্যবহৃত হয়

এই উপমহাদেশের মানুষ পীর-ফকির, সুফি-দরবেশদের আদিকাল হতে সম্মানের চোখে দেখেন, যথাসাধ্য ভক্তি করেন

ফকিরদের সংজ্ঞা ঠিক কী রকম হলে যথার্থতা লাভ করবে বলা মুশকিল, তবে মনে আসছে কোন এক বিখ্যাত সূফি ব্যক্তির একটি অভিমত, “কোন সাধকের বাম কাঁধের ফেরেশতা যদি টানা ২০ বছর তাঁর আমলনামায় কোন গুনাহ লিখার সুযোগ না পায় তখনই সে ফকির হিসাবে সব্যস্থ হবে।

 মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবি, মনসুর হল্লাজ, শামসে তাব্রিজ, জালালুদ্দীন রুমি, খাজা আজমেরি গোলামুর রহমান বাবা ভাণ্ডারী সহ এই ধরাধামে অজস্র ফকির দরবেশদের আগমন ঘটেছে। এর মধ্যকার কতশত সুফি-দরবেশ-ফকির সম্পর্কে আমাদের জানাশুনা আছে সেটাও একটা ভাববার বিষয়, বা আমরা বিখ্যাত যাদের সম্পর্কে মোটামোটি জ্ঞান রাখি তাঁদের সম্পর্কে আমাদের জানার জ্ঞানের পরিধিটা কতটুকু সেটাও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়

 

শায়খুল ইসলাম মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবি ছিলেন একজন জ্ঞান তাপস ফকির দরবেশ, ক্বলবে প্রভুর সান্নিধ্য পাওয়া ছিলো তাঁর রেয়াজতের অন্যতম বিষয়। তাঁর সাধনার অন্ত ছিলনা, দেশ হতে দেশান্তরি ঘুরে ঘুরে সাধনা করতেন। কিছুদিন মক্কা তো আবার কিছুদিন মদিনায় সাধনা করতেন। সেলজুক সাম্রাজ্যে ছিলেন তাঁর বসবাস, ভিবিন্ন পাহাড় জঙ্গলে নিরবে নিবৃত্তে সাধনা করতেন বিভিন্ন সৃষ্টিতে প্রভুর রহস্য উদ্ঘাটন করে যেতেন। প্রভুর সর্বব্যাপী অস্তিত্ব নিয়ে তিনি সাধনায় মগ্ন থাকতেন। দরবেশদের সাথে মিলিত হলে গভীর অরণ্যে একসাথেহেলেদুলেজিকিরে রত থাকতেন, দীর্ঘ সময় জিকিরে মশগুল থাকার পর আত্মিক তৃপ্তি আসার পর তারা শান্ত হতেন

 আবু উমর হোসাইন বিন মনসুর হল্লাজ ছিলেন এক মহান দরবেশ ফকির। মরমী প্রেমের জীবন্ত কিংবদন্তি, শহীদত্মে পরম সত্তার প্রামাণিক সাক্ষ্যেরূপে যিনি সমুজ্জ্বল। তাঁর দেহের প্রতিটি অনু-পরমানুই যে সাক্ষ্যের জলন্ত প্রমান।আনাল হকথেকে মনসুর হাল্লাজকে নাড়তে পারেননি কেউ। এমনকিআনাল হকএর জন্য তার প্রাণ পর্যন্ত উৎস্বর্গ করতে দ্বিধাবোধ করেন নি

মনসুর হল্লাজ একটি জিকিরেই মশগুল, যেন এতেই তার সকল প্রাপ্তি, সেই জিকিরে তার সকাল হয় সন্ধ্যা নামে; তা হলো- আনাল হক, আনাল হক, আনাল হক।আনাল হকবলা থেকে সরে না আসার দরুন তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো, জল্লাদ আবু হারিস  তাঁর মুখে ঘুষি মারতেই নাক মুখ দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকলো। তারপর মারা হলো পাঁচশত চাবুক! দেহ নিথর, তাও একটিমাত্র বাক্য উচ্চারিত হয়আনাল হক  এরপর হল্লাজকে ক্রুশে চড়ানো হলো, প্রথমদিন ছিন্ন করা হলো দুই হাত আর দুই পা, এই অবস্থায়ও একটি মাত্র কথা মুখে: ‘আনাল হক’! দ্বিতীয় দিন কাটা হলো তাঁর মাথা। উপস্থিত শিবলি, ওয়াসিতি অন্যান্য সূফি দরবেশরা চিৎকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।আনাল হকধ্বনি ধ্বনিত করে মর্তধাম হতে বিদায় নেন হল্লাজ

শামস উদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মালিকদাদ তাবরিজি। হিজরি ৬৪২ সালের ২৬ জমাদিউস সানি শনিবার সকালে তিনি কুনিয়ায় পৌঁছেন। অভ্যাস অনুযায়ী কুনিয়ায় চিনি ব্যবসায়ীদের সরাইখানায় (হোটেল) উঠে একটি কামরা ভাড়া নেন। তার কামরার দরজায় দুই থেকে তিন দিনার মূল্যের তালা ঝুলিয়ে দিতেন। তালার চাবিটি গায়ের চাদরের কোনায় বেঁধে কাঁধের ওপর ছেড়ে দিতেন। যাতে সাধারণ লোক ধারণা করে, তিনি বড় একজন ব্যবসায়ী। অথচ কামরার ভেতরে পুরনো মাদুর, ভাঙা কলসি খড়ের বালিশ ছাড়া অন্য কিছু থাকত না। সফরকালীন জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনটি পেশা অবলম্বনের কথা তার আত্মজীবনীতে পাওয়া যায়। যেমন পাজামা সেলাই, পরিচয় গোপন রেখে নির্মাণ শিল্পে কুলির কাজ এবং বাচ্চাদের কোরআন মজিদের তালিম দেয়া

রুমির মতো বিশ্বজনীন কবিকে যিনি উদ্দীপিত প্রভাবিত করেছেন সেই সন্ত বা দরবেশ শামসের বাক্যের বাঁকে যে ইশারার ঝিলিক, যে দৃশ্য-সুষমা তা উপলদ্ধি বা ধারণ করার মতো শিষ্য পাওয়াও দুষ্কর। শামস তাবরিজি ছিলেন একজন ইরানি সুফি সাধক। নির্জনতাপ্রিয় এই জ্ঞানতাপস জীর্ণ পোশাকে ঘুরে বেড়াতেন একা। শামস তাবরিজি সম্পর্কে আজো বিশ্ব ইতিহাসে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তেমন পাওয়া যায় না। মূলত, তিনি এমন এক সত্ত্বা যিনি নিজেকে নিজের মধ্য দিয়ে বিকশিত করতে চাননি। তিনি প্রকাশিত হয়েছিলেন তাঁর শিষ্য এবং পরম বন্ধু সুফি সাহিত্যিক, দার্শনিক কবি জালালউদ্দীন রুমীর  মধ্য দিয়ে

 তাব্রিজ তিনি ছিলেন সময়ের সূফিসম্রাট। তিনি ছিলেন নির্জনতা প্রিয় এবং একা। পরিব্রাজক ছিলেন বলে তাকে পারিন্দা বলা হতো। তিনি এক জায়গায় স্থির থাকতেন না। ঘুরতেন নানা স্থানে; পাহাড়, অরণ্য, মরুতে

জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ রুমি হতে শামসে তাব্রিজ  নিরুদ্দেশের পর বিচ্ছেদের বিষাদে ভেঙে পড়েন রুমী। তিনি এই বিচ্ছেদের সাগরে নিমজ্জিত হতে থাকেন এবং অন্তরের চোখ দিয়ে ভালবাসার মহাসমুদ্রে উপনীত হন তিনি।তাবরিজির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর  তিন দশক ধরে রুমি কাব্য, গীতি নৃত্যকে ধর্মীয় চর্চায় আত্তীকরণ করেন।  ঘূর্ণিনৃত্যে পাক খেতে খেতে ধ্যান করতেন, মুখে মুখে কবিতা রচনা করে ফিরতেন। তাঁর এই অসাধারণ দরদী ভালবাসার মাখনে আচ্ছাদিত কাব্যের জন্য তিনি আনন্দ ভালোবাসার কবি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন

মালাকাতে শামসে তাবরেজদিওয়ান- শামস তাবরেজগ্রন্থে তাঁর গুরুকে হারানোর যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করেছেন। গুরু-শিষ্যের মধ্যে পবিত্র আধ্যাত্মিক বন্ধন ভেঙে গেলে একজন প্রেমিক শিষ্য কী যন্ত্রণা ভোগ করেন তার বর্ণনা পাওয়া যায়

রুমির সঙ্গে যখন শামস তাবরিজির পরিচয় হয় তখন তাবরিজির বয়স ষাট, তবে তাবরিজ ছিলেন খুবই শক্তিশালী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ

তাঁকে লোকেপাখিবলে ডাকতেন। মানুষের বিপুল কৌতূহল ছিল তাঁকে নিয়ে। খুবই রহস্যঘেরা ছিল তাঁর জীবন। এর  কারণ, তিনি এক জায়গায় বেশিক্ষণ স্থির থাকতেন না। দ্রুত অন্যত্র চলে যেতেন। মনে হতো তিনি যেন কী খুঁজছেন, কাকে যেন খুঁজছেন। তিনি সবসময় একজন পরম জ্ঞানী শিষ্য খুঁজতেন। তাঁর একজন যোগ্য উত্তরসূরি প্রয়োজন ছিল। শেষ পর্যন্ত রুমির মধ্যে  সেই গুণ খুঁজে পাওয়ার পর বোঝা গেল আসলেই তাবরিজি কি খুঁজছিলেন

বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত হতে জানা যায়, রুমির ব্যক্তিত্ব ছিল সাংঘাতিক আকর্ষণীয়। ধীরে ধীরে তাবরিজির কাছে রুমির অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণে আকর্ষিত হন তাবরিজি

খাজা মইনুদ্দীন চিশতী আজমেরী, খোরাসানে তাঁর জন্ম। ১৫ বছর বয়সের মধ্যে পিতামাতা মারা যান। একদিন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ফল বাগানে কাজ করছিলেন, ক্লান্ত মইনুদ্দিন বসে ছিলেন এমতবস্তায় আসেন এক ব্যক্তি, মইনুদ্দীন তাকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ণ করেন। ব্যক্তিটি ছিলেন বিখ্যাত সূফি দরবেশ শেখ ইবরাহিম খুন্দুসী। তিনি মইনুদ্দিনকে এক টুকরো রুটি খেতে দিলেন, এরপর তাঁর হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি জাগ্রত হলো, হয়ে পড়লেন উদাসীন। সব ধনসম্পদ গরিবদের বিলিয়ে বের হয়ে পড়লেন সাধনার নেশায়

 খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিশতীয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ সুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খিলাফত বা সুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন। তিনি ইরাকের বাগদাদে বড়পীর গাউসুল আযম আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন

লাহোরে তিনি শায়খ দাতা গঞ্জেবক্স লাহোরী এর দরবারে কিছুদিন সাধনা করে আজমীর আসেন। সেখান হিন্দু রাজা, হিন্দু তান্ত্রিক, যোগীরা তাঁকে নানা কৌশলে থামানোর চেষ্টা করেন। তিনি তাঁর ৪০ জন শিষ্য নিয়ে ইসলামের আমলগুলো করতে থাকেন এবং দলবদ্ধ হয়ে ধ্যান জিকিরে মশগুল থাকতেন। দরবেশ খাজা সাহেব তাঁর শিষ্যদের দেখতে হাজার হাজার হিন্দুরা চারপাশ থেকে আসতে থাকে এবং খাজা মইনুদ্দীন চিশতীর রেয়াজত অজ্দ এর তালে তালে তারা মগ্ন মোহিত হয়ে পড়ে। দলে দলে তার হাতে ইসলামের বায়াত গ্রহণ করতে থাকে এবং হিন্দুস্থান ইসলামের শামিয়ানা উড়তে থাকে


সৈয়দ আহম্মদ উল্লাহ(কেবলাকাবা) সৈয়দ মাইজভাণ্ডারী।সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী। বাবা ভাণ্ডারী নামে যিনি সর্বাধিক খ্যাত। বাংলাদেশে বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম হতে ২৪ মাইল উত্তরে মাইজভাণ্ডার নামে ছোট্ট গ্রাম, এই গ্রামের ভৌগলিক অবস্থান যে কোন ভাবুক প্রাণের চোখে ধরা পড়ে। তার নৈসর্গিক শোভা, সারাটি দেহ শ্যামল শোভায় ঝলমল, তার পাশে ছোট প্রবাহিণী কুল কুল রবে বয়ে চলেছে, অফুরন্ত ঘন বনানীর কাজলকালো ছায়া তাকে বেষ্টন করে আছে গভীর মায়ায়। সেই ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট গ্রামে গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারীর জন্ম

শিশুকাল হতে তিনি ছিলেন খুব অল্পভাষী। মাত্র বৎসর বয়সে শেষ রাতে ঘরের বারান্দায় আলো দেখে মাতা ঘুম থেকে উঠে বাইরে চেয়ে দেখে তাঁর ছোট্ট শিশু সালাত আদায় করছেন এবং তাঁর আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়ে গিয়েছে। যুবক বয়সে বহদ্দার পাড়া চৌধুরি বাড়িতে জায়গীর থেকে তৎকালীন চট্টগ্রাম মোহছেনিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। যাদের ঘরে জায়গীর তাদের দেওয়া রাতের খাবার সাহরি হিসেবে গ্রহণ করতেন শেষ রাতে। সারারাত বহদ্দার বাড়ি জামে মসজিদে ইবাদতে মশগুল থাকতেন, এবং গৃহকর্তা জানতে পেরে কী করেন তা দেখতে গেলে; দেখতে পান সাদা পোশাকধারী অনেক ব্যক্তি তার পেছনে এক্তেদা করছেন। তিনি ছিলেন মূলতছায়েমুদ্দাহারকিয়ামুল লাইলতথা সারাবছর রোজা পালনকারী সারারাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারী সাধু পুরুষ। এই ঘটনা বহদ্দরবাড়ি জানাজানি হয়ে গেলে তিনি অল্পদিনের মধ্যে সেখান থেকে প্রস্থান করেন

 তিনি তাঁর মিতামহ/মুর্শিদের প্রতি এতোটা প্রেমাসক্ত ছিলেন যে, পরীক্ষাকক্ষ হতে কাগজ কলম ছুড়ে ফেলে একেবারে চলে আসেন। এবং সর্বদা নিজ মুর্শিদের পানে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। দিন দিন অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নেয়; রোদ, বৃষ্টি বা রাত, দিন সর্বদা মুর্শিদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে ছেয়ে থাকে। ঘরে বন্ধি করে রাখলে এমন অবস্থা হয় সকলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে

 এরপর আসে গভীর অরণ্যে সাধনা কাল। একেক সময় একেক স্থানের গভীর জঙ্গলে গিয়ে ধ্যানে মগ্ন থাকেন। চট্টগ্রামের পূর্ব পার্বত্য পাহাড়, দেয়াঙ্গের পাহাড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়, রাঙ্গুনিয়া পাহাড়, খিরাম পাহাড়, উত্তরা পাহাড় সহ চট্টগ্রামের প্রায় সব পাহাড়েই তিনি প্রভুর ধ্যান সাধনায় মগ্ন থাকতেন। তাঁর ভ্রাতাগণ তাঁকে খুজে আনতেন সুযোগ বুঝে তিনি আবার চলে যেতেন। তিনি পড়ে ছিলেন নিরবতার মোহর, দীর্ঘ ২৩ বৎসর তেমন কোন কথাই বলেন নি, শুধুমাত্র ইশারা করতেন। গহীন জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতে বহু কারামতগুলো তাঁর জীবনীতে পরিলক্ষিত হয়। অতঃপর যখন শাহ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী ধরাধাম ত্যাগ করার সময় হলে খলিফা পাঠিয়ে তাঁকে গহীন জঙ্গল থেকে দরবার নিয়ে আসার জন্য পাঠান, আসার কিছুদিন পর আবার তিনি গহীনে হারিয়ে যান। হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর পর তিনি মাইজভাণ্ডার সিংহাসনে আরোহন করেন। তরিকার ব্যাপক প্রসার ঘটান, বার্মা, ভারতসহ নানা দেশ হতে আশেকগণ তার কাছে চুম্বকের ন্যায় ছুটে আসতে থাকে

 উল্লেখিত সূফি দরবেশগণ  ছিলেন জামানার শ্রেষ্ঠ ফকির। তবে তাঁদের কাজের ধরন, প্রেক্ষাপট, অবস্থা ছিলো ভিন্নতর

কেউ ছিলেন রহস্যে ঘেরা মহাপ্রতিম, কেউবা আপন প্রভুকে ক্বলবে ধারণ করেআমিই সত্যপ্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্ধান, অন্যজন পাখির মতো দ্রুত পরিব্রাজক হয়ে ইশকে এলাহিতে মগ্ন হয়ে নিজ শিষ্যের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ, বা নিজ মুর্শিদ কর্তৃক আপন হৃদয়ের সঠিক ঠিকানা পাওয়া কোন  মহামণ্ডিত নিজ কিতাব কালাম ছেড়ে দিয়ে মুর্শিদ প্রেমে বিভোর হয়ে পড়া, অন্যজন বহু গুরুর শিষ্যত্ব লাভের পর মইনুদ্দিন নাম ধারণ করে উপমহাদেশের ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ধরেন, অন্যজনতো নিজেকে ফানা করে ভাণ্ডারের চাবি নিয়ে ঘোষণা করেই দিলেন, “আমি স্রষ্টার গুণে গুণান্বিত, প্রকৃতির ন্যায় উদায়।

 এই সকল পীর-ফকির-দরবেশগণের প্রত্যেকের আত্মার মধ্যকার প্রভু-প্রেমের ঝংকার উপলদ্ধি করতে পারার অমৃত সুধা ভিন্ন, কিন্তু উদ্দেশ্যে একই। তাই তো, ইবনে আরাবির ওহদাতুল ওজুদের উদ্দেশ্যে হেলে-দুলে জিকির করা প্রত্যেক কিছুতে প্রভুকে খোঁজ করা, প্রভু জ্যোতিকে মনসুর হল্লাজের হৃদয়ে ধারণ করে আনাল হকে ফানাহ্ হওয়া, তাব্রিজের পরিব্রাজক হয়ে গভীর অরণ্যে প্রভুর ইয়াদগারী, রুমির ঘূর্ণায়মান নৃত্যের তালে তালে জিকির করে হৃদয়ে প্রভু প্রেমের প্রশান্তি লাভ করা, মঈনুদ্দীন চিশতির শিষ্যদের নিয়ে জিকিরে এলাহিতে মগ্ন হওয়া, সুকৌশলে অমুসলিমদের মুসলিমে পরিণত করে প্রভুর ইয়াদগারীর তৃপ্ত করা এবং বাবা ভাণ্ডারীর সেমার মাধ্যমে জিকরে ইলাহিতে মশগুল হয়ে আশেকদের হৃদয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করে প্রভুর সুধা পানের প্রাপ্তিই হলো প্রত্যেকজন সূফি দরবেশের ভিন্ন কিন্তু একই উদ্দেশ্য সাধনে আসা পরম পাওয়া। আর এই পরম পাওয়ার চিরতৃপ্ত হওয়ার মহুর্ত উদযাপনে প্রভু সমীপে অজ্দ, জিকির, সামা, নৃত্যে মশগুল থেকে যে উল্লাস করা হয় সেই উল্লাসই হলো; ফকির উল্লাস


আরও খবর



রাতেও জ্বলবে সুন্দরবনে আগুন, ৩ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ |

Image

এম.পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

 পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার ড্রেনের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন এখনও জ্বলছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ওই এলাকায় পৌঁছালেও আগুনের কাছেই যেতে পারেনি। সন্ধ্যা হওয়ায় এবং কাছাকাছি কোনও পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা যায়নি। রবিবার সকাল ৬টা থেকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে। এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী নুরুল করিম রাত ১০টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নুরুল করিম বলেন, প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ও দুর্গম এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে দমকল বাহিনী নিয়ে ছুটে যাই। প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে পানির উৎস খুঁজি। কিন্তু কাছাকাছি কোনও পানি পাওয়া যায়নি। অনেক দূরে ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই আগুনের কাছে আর যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় এলাকাবাসী এবং বনরক্ষীদের চেষ্টায় অল্প পানি সরবরাহ করে প্রাথমিকভাবে আগুন যাতে ছড়াতে না পারে সেটি করা হয়েছে।

 রবিবার সকালে আমরবুনিয়া এলাকার ভোলা নদী থেকে পানির সংযোগ স্থাপন করে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগুন বেশি দূর ছড়াতে পারেনি। অল্প অল্প করে জ্বলছে, রাতের মধ্যেও ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই।

কী করে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে ডিএফও নুরুল করিম বলেন, এখনও সঠিক কারণ বের করা যায়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজন একেক তথ্য দিচ্ছে। সব তথ্যই আমলে নিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধার স্টেশন অফিসার ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন অফিসার রবিউল ইসলাম। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার সঠিক কারন উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেবে এই কমিটি।

মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার দুপুরে প্রথমে আগুন লাগে সুন্দরবনের ড্রেনের ছিলা এলাকায়। বিকাল সাড়ে ৪টায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় জানাজানি হয়। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী ও বনরক্ষীদের সমন্বয়ে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। পরে বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আসে। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে দমকল বাহিনীর সদস্যরা কাজ শুরু করতে পারেনি। রবিবার ভোর থেকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করবেন তারা।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক সাইদুল আলম চৌধুরী বলেন, বিকালে আগুনের খবর পেয়ে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও নানা প্রতিকূলতার কারণে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে আগুন লাগার ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। সকাল  থেকে কাজ শুরু করা হবে। 


আরও খবর



কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ

প্রকাশিত:সোমবার ১৩ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

প্রায় এক মাস আগে সোমালি জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ২৩ নাবিকসহ কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছায় জাহাজটি। এর আগে, বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় জাহাজটি নোঙর করবে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

দুই মাস আগে সোমালিয়া উপকূলে দস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মির পর মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা হয়। তারপর পণ্য খালাস ও নতুন পণ্য নিয়ে জাহাজটি রওনা হয় বাংলাদেশের পথে। দীর্ঘ দুই মাস পর অবশেষে জাহাজটির নাবিক ও তাদের স্বজনদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরের পর নাবিকরা কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম ফিরবেন। এরইমধ্যে এমভি আবদুল্লাহর দায়িত্ব নিতে ২৩ জন নাবিকের একটি টিম চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছেন। সোমবার বিকেলে নাবিকদের নিয়ে নগরের সদরঘাট কেএসআরএম জেটি ছেড়েছে লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩। ঐ জাহাজ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে এমভি আবদুল্লাহতে থাকা ২৩ নাবিক কুতুবদিয়া থেকে রওনা দেবেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর নাবিকদের নগরের সদরঘাট কেএসআরএম জেটিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেখানে মালিকপক্ষ এবং নাবিকদের স্বজনরা তাদের বরণ করে নেবেন।

জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিক হলেন- মাস্টার রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ তানভীর, ফায়ারম্যান শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড উদ্দিন মোহাম্মদ নূর, রহমান মো. আসিফুর, হোসাইন মো. সাজ্জাদ, ওয়েলার হক আইনুল, শামসুদ্দিন মোহাম্মদ। তাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামে।

এছাড়াও আরো আছেন- লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর ইঞ্জিন ক্যাডেট খান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান উল্লাহ ও ইব্রাহিম খলিল, নোয়াখালীর নাবিক হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ও ফাইটার আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ, খুলনার সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম মো. তৌফিকুল, ফরিদপুরের থার্ড অফিসার ইসলাম মো. তারেকুল, টাঙ্গাইলের ডেক ক্যাডেট হোসাইন মো. সাব্বির, নওগাঁর চিফ ইঞ্জিনিয়ার শাহিদুজ্জামান এ এস এম, নেত্রকোনার থার্ড ইঞ্জিনিয়ার উদ্দিন মো. রোকন, নাটোরের অর্ডিনারি সীম্যান মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল ও বরিশালের হোসাইন মো. আলী।

কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়ায় পৌঁছেছে। কুতুবদিয়ায় কিছু মালামাল খালাস শেষে বুধবার (১৫ মে) এমভি আবদুল্লাহ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছাবে। সেখানে বাকি মালামাল খালাস হবে।

এর আগে, ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই করে গত ২৯ এপ্রিল জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ দুপুরে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।

১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩ টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে, একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিডবোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।

২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

 


আরও খবর



এক শতাংশ ভোটার এলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য: ইসি হাবিব

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

 ডিজিটাল ডেস্ক:

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান।

তিনি বলেন, এই সময়ে ৩৬ শতাংশ ভোট কম না। নির্বাচনে এক শতাংশ ভোটার এলেও তা গ্রহণযোগ্য।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে যশোর, নড়াইল ও মাগুরার উপজেলার নির্বাচনের প্রার্থী, নির্বাচনি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।


তিনি আরও বলেন, উপজেলাওয়ারি ভোটার উপস্থিতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি আসন্ন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার আনতে কমিশন প্রচারণা চালাবে।

প্রার্থীদেরও প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে সব ব্যবস্থা করবে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, মূলত তিনটি কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। এর মধ্যে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি, দ্বিতীয়ত এখন ধান কাটার মৌসুম, তাছাড়া ভোটের আগের রাতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামীতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি প্রার্থীদের বলেছি, মানুষ হিসেবে যে আমরা শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণ করতে হবে। জনগণের সেবক হতে হবে। কারোর ওপর ভর না দিয়ে জনগণের ভালোবাসার ওপর ভর করতে হবে।

প্রার্থীরা আমাদের কথায় সম্মত। তাদের আমরা আশ্বস্ত করতে পেরেছি। সামনের নির্বাচনগুলো আগের থেকে আরও স্বচ্ছ ও ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন প্রয়োগে কঠোর হবে। কোনও ছাড় হবে না।

আহসান হাবিব খান বলেন, আমরা আস্তে আস্তে ভালো করছি। আগামীতে আমাদের নির্বাচন বিশ্ববাসীর জন্য রোল মডেল হবে।

বেলা ১১টায় যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে যশোর, নড়াইল ও মাগুরার উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী, নির্বাচনি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক বসেন নির্বাচন এই কমিশনার। দুপুর আড়াইটায় বৈঠক শেষ হয়।


আরও খবর



অবৈধ টিভি চ্যানেলের বিরু‌দ্ধে কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল প্রদর্শন ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে কার্যক্রম শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের চিঠি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। তারই পরিপ্রেক্ষি‌তে অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল প্রদর্শন ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে কার্যক্রম শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

সিদ্ধান্তগুলো হলো-

১। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর অধীনে অনুমোদিত সেবা প্রদানকারীগণই সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দেশি ও বিদেশি চ্যানেলসমূহ গ্রাহকের নিকট বিতরণ করতে পারবে।

২। ক্লিনফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল কিংবা অননুমোদিত কোনো চ্যানেল ডাউনলিংক, সম্প্রচার, সঞ্চালন বা বিতরণ করা যাবে না।

৩। সেট-টপ বক্স অবৈধভাবে আমদানি ও বাজারজাত করা যাবে না।

৪। টিভি চ্যানেল স্ট্রিমিং এর অ্যাপসসমূহ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে প্রচারণা করা কিংবা এ ধরনের অ্যাপস সেট-টপ-বক্সে ইনস্টল করে বিক্রি করা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এর বিরুদ্ধে বিটিআরসি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫। বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে, সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির স্বার্থে, বিদেশে অর্থ পাচার রোধে এবং দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যেকোনো অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

৬। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ৩(১) ধারা অনুযায়ী, কোনো ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী নির্ধারিত আবেদনপত্রের ভিত্তিতে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতিত অন্য কোনো চ্যানেল বাংলাদেশে ডাউনলিংক, বিপণন, সঞ্চালন বা সম্প্রচার করতে পারবে না। এছাড়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় হতে বিদেশি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ক্লিনফিড সম্প্রচারের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে বিধায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্লিনফিড ব্যতিত বিদেশি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা সঞ্চালন করতে পারবে না।

৭। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ৩(২) ধারা অনুযায়ী, কোন ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতিত নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠান যথা: ভিডিও, ভিসিডি, ডিভিডি এর মাধ্যমে অথবা অন্যকোনো উপায়ে কোনো চ্যানেল বাংলাদেশে বিপণন, সঞ্চালন ও সম্প্রচার করতে পারবে না। আইন অমান্য করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশি বা বিদেশি টিভি চ্যানেলের ফিড বা নিজস্ব কোনো চ্যানেল সম্প্রচার বা সঞ্চালন করতে পারবে না।

৮। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ৪(১) ধারা অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হয়ে কোনো ব্যক্তি, ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তাই লাইসেন্সধারী ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবাপ্রদানকারী ব্যতিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টিভি চ্যানেল বা অনুষ্ঠান সঞ্চালন বা সম্প্রচার করতে পারবে না।

৯। অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরগণ এই সিদ্ধান্তসমূহ তাদের বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারকারীদের লিখিতভাবে অবহিত করবে।

১০) আইন/নীতিমালা বহির্ভূত, অবৈধ বা অননুমোদিতভাবে সম্প্রচার কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, সরকার অনুমোদিত দেশি ও বিদেশি টিভি চ্যানেলের ফিড কেবলমাত্র বৈধ ক্যাবল ও ডিটিএইচ অপারেটররা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারবে। তাদের বাইরে অন্য কেউ এ কাজ করলে তা বেআইনি ও অবৈধ। এ বেআইনি কাজ বন্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এই বেআইনি কাজের কারণে সরকার রাজস্ব হারায় এবং বিভিন্নভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। একই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

তিনি আরো বলেন, বিদেশি চ্যানেলের অবৈধ সম্প্রচারের মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে যে ক্লিনফিডের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। দেশের জনগণের স্বার্থে এই সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়ন করা হবে।


আরও খবর



খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ১১ জুন

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

বিডি টুডে ডেস্ক:



নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১১ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।



মঙ্গলবার (১৪ মে) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত (অস্থায়ী) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। 


খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় এদিন তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। তার পক্ষে আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া হাজিরা দেন।


এদিন জব্দ তালিকার সাক্ষী আব্দুল বাকী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন তাকে। তবে আব্দুল বাকীর জেরা শেষ হয়নি। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১১ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।


খালেদা জিয়ার আইনজীবী হান্নান ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


এর আগে গত বছরের ১৯ মার্চ একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ২০০৭ সালে নাইকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিলেন। 


২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা হলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।


এর মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।


দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সরকারে থাকাকালে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতার অপব্যবহার করে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোকে অবৈধভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সুবিধা পাইয়ে দেন।


 অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা লোকসানের অভিযোগ আনা হয়।


আরও খবর