বুলবুল আহমেদ সোহেল ; নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে আগামী ২৩ অক্টোবর। এর দুদিন পরই ২৫ অক্টোবর হবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া এই দুই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন সরগরম। শামীম ওসমান আইভী দ্বন্দে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামীলীগের মধ্যে চলছে এখন নানা হিসাব নিকাশ। জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃত্বে আসছেন কারা। কোন নেতার অনুসারীদের দখলে থাকছে কমিটি চলছে এমনই হিসেব নিকেশ। সব মিলিয়ে সম্মেলনী হাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। তবে নারায়ণগঞ্জের হেভিওয়েট দুই নেতৃত্ব নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি কোন ভাইটাল পোস্টে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তবে জেলা ও মহানগর দুই কমিটিতেই ভাইটাল পোস্টসহ কমিটির অধিকাংশ সদস্য নিজ নিজ অনুসারী নেতাদের দখলে রাখতে লবিং-গ্রুপিং চালিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় একটি সূত্রে জানা গেছে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই,সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির আনিসুর রহমান দিপুর নাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহীদ বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল এর নাম আলোচনায় রয়েছে। মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামই আলোচনায় রয়েছে, সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত।
তবে পদ প্রত্যাশীরা অভ্যন্তরিণ ভাবে লবিং গ্রুপিং চালিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে প্রার্থীতা ঘোষনা করেন নি। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য একই রকমের,তারা বলেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হলে আরো গতিশীল হবে স্থানীয় আওঅমীলীগ। তাদের প্রত্যাশা ত্যাগী ও রাজপথের পরীক্ষীত নেতাদের নিয়েই গঠিত হবে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি। সম্মেলনে যাকেই নেতৃত্ব দেয়া হউক সেটা মেনে নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে আবারো আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে একযোগে কাজ করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পরপূর্ণ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহীদ বাদল বলেছেন, ২৩ অক্টোবর দীর্ঘ ২৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষনার পরপরই উৎসব মুখর ভাবে সম্মেলনকে সফল করতে ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সম্মনয়ে নয়টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকলে যার যার দায়িত্ব থেকে সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় সম্মেলন দেখার অপেক্ষায় আছে নারায়ণগঞ্জবাসী। সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে গত ১৩ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ কার্যালয়ে বিকেল পাঁচটায় থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সম্মেলন প্রস্তুতি সভা করছে। আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তুতি সভা চলমান থাকবে।
মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার সঙ্গে যোগাযোগ হলে তারা জানন, ৯ অক্টোবর মহানগর আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ছাড়াও ৭টি উপ কমিটি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ও জেলে আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আর এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন। এরই মধ্যে নির্ধারণ হয়েছে সম্মেলনের ভেন্যু। শহরের ইসদাইর এলাকার ওসমান পৌর স্টেডিয়ামে হবে সম্মেলন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি পূর্ণ হয়ে উঠবে এই মাঠ। সেই প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
সম্মেলন নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে, নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, নাসিম ওসমান সেতু উদ্ভোধন কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পরিবারকে নিয়ে যতটুকু বলেছেন, আসলে এরপর তার চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই। তিনি বলেন আমি পরিষ্কার ভাবে একটি কথা বলতে চাই, আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী না। আমি মনে করি এখানে যোগ্য নেতৃত্ব আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোহাম্মদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, তারা সকলেই অত্যন্ত ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব নেতা। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন যিনি রাজপথের নেতা ও ত্যাগী নেতা, মাথার ওপর মুরুব্বীর দরকার আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ভাই, তিনিও আওয়ামী লীগের জ্যাষ্ঠ নেতা। যারা আছেন, তাদের পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র ও কাউন্সিলরগন।
উল্লেখ্য, মহানগর আওয়ামীলীগে ১৯ বছর যাবৎ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আর ২৬ বছর যাবৎ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।