মির্জাগঞ্জ(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :
কর্মস্থলে আসেন না ৫ মাস। অথচ প্রতি মাসেই সরকারি কোষাগার থেকে গ্রহণ করেছেন বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা! কর্মস্থলে যোগদানের বিষয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন অনুপস্থিত রয়েছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রসার অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরী। অথচ ৫ মাসের মধ্যে তিন মাসের বেতন-ভাতা গোপনে উত্তোলন করে নিয়েছেন অধ্যক্ষ। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসা গভনিং বডি সহ-সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান। এসব অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা এবং অধ্যক্ষের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও গত ২০১৫ সালে অধ্যক্ষ গোপনে উৎকোচের বিনিময়ে মাদ্রাসায় ভূয়া একজন লাইব্রেরীয়ান নিয়োগের ঘটনা জানাজানি হলে ভূয়া নিয়োগ পাওয়া লাইব্রেরীয়ান মো. ছাইদুর রহমান বাদি হয়ে আদালতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪১৪/২০।
অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসাটি ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েই তিনি প্রায়ই মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকেন না। গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে পরিকল্পিত ভাবে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন এবং নভেম্বর পর্যন্ত বেতন-ভাতা প্রস্তুত ও পাশ করানোর দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ মাস যাবৎ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকায় গভনিং বডির সহ-সভাপতি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক,মাদ্রাসার সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ববাবরে অভিযোগ করেন মাদ্রাসা গভনিং বডি সহ-সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সরেজমিনে অভিযোগের তদন্ত করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদনসহ গত বছরের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ মাদরাসা মহাপরিচালক এবং ইসলামী ও আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবরে পুনঃরায় অভিযোগ দায়ের করেন। গভনিং বডির সভাপতির অনুমতি ব্যতিত মাসের পর মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন অধ্যক্ষ। কোন রেজুলেশন সংরক্ষন ও গভনিং বডির সকল সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে মাদ্রসা পরিচালনা করছেন। অভিযোগের ভিত্তিত্বে মাদ্রাসার জেষ্ঠ্যতম শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদানের জন্য ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রস্তুতের জন্য গত ১ জানুয়ারী মাদ্রাসার জেষ্ঠ্যতম সহকারি অধ্যাপক আবদুল মালেককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব প্রদান করেন কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিযুক্ত করায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরী ভারপ্রাপ্ত প্রধানের বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরীর মুঠোফোনে(০১৭১৮৪২২৯৪৫) একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল মালেক বলেন, মাদ্রসার অধ্যক্ষ গত ৫ মাস পর্যন্ত মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পেড়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার লক্ষে শিক্ষক মন্ডলী ও গভনিং বডির সভাপতি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রেজাউল কবীর বলেন,গভনিং বডির সহ-সভাপতির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গভনিং বডির সভাপতি সাইয়েমা হাসান বলেন, চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাস থেকে আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে কি হয়েছে আমি জানিনা। তবে যতটুকু শুনেছি মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বেতন ভাতা বন্ধ করা হয়েছে এবং সিনিয়র একজন সহকারী অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।