মইনুল ইসলাম মিতুল :ডলার, এলসি খোলা, পণ্য খালাস প্রভৃতি নিয়ে সংকট কাটছিল না ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় রমজানে পণ্যপ্রাপ্তি নিয়েও দেখা দেয় শঙ্কা। জানুয়ারিতে এলসি খোলার হার বাড়ায় স্বস্তি দেখছে সরকার। আরো কোনো সমস্যা হলে দেখবে বলেও জানাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ঠিক আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সামনে আনছেন এখনো থেকে যাওয়া কিছু সংকটের কথা।
মার্চের শেষ দিকে শুরু হতে যাওয়া রমজানে ভোগ্যপণ্য আমদানি সহজ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলা জরুরি। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে জানুয়ারি থেকে বেড়েছে এলসি খোলা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সবশেষ জানুয়ারি মাসে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ টন চিনির জন্য এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছর (২০২২-এর জানুয়ারি) ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯২ টন। এছাড়া জানুয়ারিতে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ টন তেলের জন্য এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৯ টন। একইভাবে বেশি খোলা হয়েছে ছোলা ও পেঁয়াজের এলসি। গত জানুয়ারিতে ২৯ হাজার ৪৮১ টন খেজুর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১৬ হাজার ৪৯৮ টন ছিল। এছাড়া ৮ হাজার টন বেড়ে ৪২ হাজার ৫৬২ টন পেঁয়াজের জন্য এলসি খোলা হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা এখনো শঙ্কা কাটার বিষয়ে ‘সায়’ দিচ্ছেন না। কিছুটা পরিস্থিতি উন্নতির কথা বললেও তারা সেটা পর্যাপ্ত মনে করেন না। তারা বলছেন, ভোগ্যপণ্য আমদানি সহজ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলার জন্য ডলার সংকট রয়েই গেছে। ডলার সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকে নির্দেশ দিলেও সেটা সমাধান হয়নি। আবার বন্দরে আটকা পণ্যের জন্য এখনো তাদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এগুলোর প্রভাব পড়বে রমজানের পণ্যমূল্যে।
ডলার সংকটের কারণে এলসি না খুলতে পারার বিভিন্ন অভিযোগ ভিত্তিহীন জানিয়ে কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। রমজান শুরুর আগে এসব এলসির পণ্য দেশে আসবে। সরবরাহ ও শৃঙ্খলা ঠিক থাকলে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে এলসি দায় পরিশোধে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৯২০ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এর আগে কখনোই এত পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হয়নি।
ডলার সংকটে বিল পরিশোধ না করতে পারায় চট্টগ্রাম বন্দরে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আমদানিকারকের পণ্য আটক করে গত মাসে। বিলম্বের জন্য তাদের পণ্য খালাসে বাড়তি জাহাজ ভাড়া ও জরিমানাও গুনতে হয়েছে।
বর্তমানে বন্দরে পণ্য খালাস পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, কয়েকটি কোম্পানির পণ্য খালাস হয়েছে। তবে সবগুলো খালাস হয়নি। কয়েকটি জাহাজ এখনো আউটারে রয়েছে। যেগুলো খালাস হচ্ছে, সেটা বিলম্বে। কিন্তু একটি জাহাজ ১০-১২ দিন বসে থাকলে সেটার খরচ বাড়ছে। এগুলোর প্রভাব কিন্তু পণ্যের দামের ওপর পড়বে, যা অবশেষে ভোক্তাকেই বহন করতে হবে।