উচিংছা রাখাইন কায়েস,রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম তুইচুই মৌজার লংতিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হেলিকপ্টারে করে পাঠানো হয়েছে দুজন স্বাস্থ্য সহকারী। বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই দুজন স্বাস্থ্য সহকারী বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে পর্যাপ্ত ঐষধপত্র নিয়ে খাগড়াছড়ি হেলিপ্যাড থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এলাকায় পৌছান।
বুধবার (৭জুন) বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকাল পর্যন্ত দুর্গম লুংথিয়াম পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিজিবি মেডিকেল টিম ও বাঘাইহাট সেনা জোনের ২০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন। বাঘাইহাট জোনের মেজর রিয়াদ এর নেতৃত্বে মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন মুহাইমেন উর-রশিদসহ ২০ জনের মেডিকেল টিমটি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীসহ কিছু অংশ গাড়ীতে ও বেশীরভাগ অংশ পায়ে হেঁটে সাজেকের দুর্গম লুংথিয়াম পাড়ায় পৌঁছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবায় রোগীদের সুস্থ করে তুলছে।
এদিকে, লংথিয়াম পাড়ায় ২৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী হরিণজয় ত্রিপুরা। তিনি বলেন, লংতিয়ানপাড়ায় আসার পর তিনি ২৮ জনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাঁরা ঠিকমতো কথা বলতে পারতেন না। তবে তাঁদের স্যালাইন, পেটের ব্যথার ওষুধ দেওয়ার পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ওষুধ ফুরিয়ে আসছে। দ্রুত ওষুধ না পেলে চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবাই পেটের ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানায় নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। এক সপ্তাহ আগে থেকে দুর্গম লংতিয়ানপাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দুর্গম লংতিয়ানপাড়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হরিণজয় ত্রিপুরা নামে একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও দুজন স্বাস্থ্য সহকারীকে পর্যাপ্ত ওষুধসহ হেলিকপ্টারের করে পাঠানো হয়েছে।
লংতিয়ানপাড়ার প্রধান (কার্বারি) মিথুনজয় ত্রিপুরা বলেন, তাঁদের গ্রামে পানির তীব্র সংকট চলছিল। প্রচ- গরম ও বৃষ্টি না হওয়ায় ছড়ার পানি শুকিয়ে যায়। পানি না পেয়ে গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। বুধবার (৭ জুন) ভোর রাতে গবতি বালা ত্রিপুরা (৫০) ও দুপুরে দরুং ত্রিপুরা (৬০) ২ জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অরবিন্দ চাকমা বলেন, লংতিয়ানপাড়াটি খুবই দুর্গম। হেঁটে যেতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। খবর পেয়ে কাছাকাছি থাকা একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে পাঠানো হয়েছে। তারপরও সেখানে পৌঁছাতে তাঁর প্রায় একদিন সময় লেগেছে। আরও দুজন স্বাস্থ্য সহকারীকে হেলিকপ্টারে করে পর্যাপ্ত ওষুধসহ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।