ইয়াশফি রহমান : সাকিবের মা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। একই হাসপাতাল এভারকেয়ারে ভর্তি আছেন তার ছোট দুই সন্তান। হাসপাতালে ভর্তি করা না হলেও বড় মেয়েও ভুগছেন ঠাণ্ডা জ্বরে। আর শাশুড়ি ক্যান্সারে সংকটাপন্ন অবস্থায়। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার রাতেই দেশে ফেরার কথা ছিল সাকিব আল হাসানের। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্ত বদল করে দক্ষিণ আফ্রিকায় তৃতীয় ওয়ানডে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। আপাতত ওয়ানডে সিরিজ শেষ করেই দেশে ফেরার কথা বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের।
পরিবারের এই পরিস্থিতিতে সাকিব দেশে না ফিরে শেষ ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয়ায় অবাক হয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার এ সেক্রিফাইসকে বিরাট ব্যাপার মনে করে পাপন বলেন, ‘সাকিব আমাকে প্রথম ওয়ানডের পরেই বলেছিল ওর পরিবারের সবাই অসুস্থ। আমি তাকে বলেছি ও আসতে পারে। পরিবার সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য অবশ্যই যেকোনো সময়ই আসতে পারে। ও বলেছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলে আসবে। এর পরে বলল, আমি এখন আসছি। ওর টিকিটও বুক হয়ে গিয়েছিল। এরপরে কাল বলল, তৃতীয় ম্যাচ শেষে আসবো। আমাদের তরফ থেকে পুরো গ্রিন সিগন্যাল দেয়া আছে যেহেতু ফ্যামিলি ইমার্জেন্সি। সে যেকোনো সময় আসতে পারে। ও যে খেলছে অবশ্যই আমাদের জন্য বিরাট ব্যাপার। ও স্যাক্রিফাইস করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই জয় ছিল না বাংলাদেশের। কবে চলতি সেঞ্চুরিয়নে ১ম ওয়ানডেতে জিতে সেই রেকর্ডকে অতীত করে ফেলেছে তামিম ইকবালের দল। জোহানেসবার্গে ২য় ম্যাচে হারলেও ৩য় ম্যাচ জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার এই বিশ্বাসের কারণটাও তিনি তুলে ধরেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেত প্রথম তিন চারজন চলে গেলে রান করা কঠিন হতো। এখন দেখা যাচ্ছে লোয়ার অর্ডারেও কিছু রান করতে পারছি এবং কয়েকজন ভালো খেলছে। ওরা এখনি কিন্তু কেউ ভালো খেলোয়াড় হয়ে যায়নি কিন্তু পোটেনশিয়াল আছে। উপরের দিকে যারা খেলছে বেশির ভাগই সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, লিটন সবাই পরীক্ষিত।’
প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক, ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসান পরিবারের ৫ সদস্যের অসুস্থতা সত্ত্বেও দেশে ফেরেননি। তবে তার স্বাভাবিক খেলা কতটা দিতে পারবেন প্রশ্ন থাকছেই। দলের ওপর দারুণ বিশ্বাস বোর্ড সভাপতির। সেই আত্মবিশ্বাস থেকে বিসিবি সভাপতি মনে করেন সবাই তাদের যোগ্যতা ও প্রতিভা অনুসারে অবদান রাখলে জয় সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘সবার পোটেনশিয়াল আছে এবং প্রভেন সাকসেস। ওরা যদি রান করে তাহলে ভালো খেলা আশা করতেই পারি এখন কোনো কারণে ক্রিকেটে যেটা হয় ওরা যদি ফেইল করে ক্রিকেটে জেতার আশাটা থাকে না। আমরা জানি ওরা পারে। ওরা সবাই দেশের সেরা ব্যাটসম্যান ওরা যদি কিছুটা রেজাল্ট পাই অবশ্যই জেতার সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে তাসকিন আহমেদকে ভারতের আইপিএল খেলতে ছাড়পত্র দেয়নি বিসিবি। এতে অখুশি হননি তাসকিন। বরং আইপিএলের চেয়ে দেশের হয়ে খেলাকেই বড় করে দেখেছেন তিনি। তবে বিসিবি তাসকিনকে ছাড়তে রাজি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে। এমনকি মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট না খেললেও তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটির। এ বিষয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘তাসকিনের খেলার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে একটি সিরিজের মধ্যে নয়। ওর সঙ্গে যেটা কথা এই সিরিজের
পরে ও যেতে পারে। এমনকি এই সিরিজের পরে যে শ্রীলঙ্কা সিরিজটা আছে ওটাতেও আমরা ছাড় দিতে পারি। কিন্তু একটি চলমান সিরিজের মাঝপথে কাউকে ছাড়ার সুযোগই নেই।’ গতকাল হঠাৎ করেই মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে বিসিবি’র কার্যালয়ে হাজির হন নাজমুল হাসান পাপন। সভাপতি মূলত এসেছিলেন বঙ্গন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের খোঁজখবর নিতে। তারই এক ফাঁকে কথা বলেন সাকিব ও তাসকিন প্রসঙ্গে।