ইয়াশফি রহমান ঃ
দেওয়াললিখন স্পষ্ট। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।তাঁর জায়গায় নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট এখন রজার বিনি। আইসিসিতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সৌরভের সামনে সেই সুযোগ নেই। তাঁকে নিয়ে মোটের ওপর বিভক্ত ভারতীয় ক্রিকেট। অনেকেই দাবি রাজনীতির শিকার ভারতীয় ক্রিকেটের মহারাজ। বিজেপির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হওয়ার জন্যই তাঁর ওপর কোপ পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার ফল ভুগতে হচ্ছে সৌরভকে। কিন্ত যাকে নিয়ে এত কথা, সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সিংহাসনচ্যুত হয়ে চুপ থেকেছেন। বৃহস্পতিবার অবশেষে মুখ খুললেন অভিমানী সৌরভ । কলকাতায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি বলেন, "সারা জীবন কেউ প্রশাসক থাকতে পারে না। সবাইকেই জীবনের একটা সময় প্রত্যাখ্যাত হতে হয়"।
তিনি আরও বলেন প্রশাসক হিসেবে প্রথম তিন বছর তিনি উপভোগ করেছেন। তবে ক্রিকেট জীবন তাঁর কাছে আরও বেশি কঠিন ছিল। তিনি আরও বলেন গত তিন বছরে ভারতীয় ক্রিকেট অনেক কিছু পেয়েছে।”আমি সিএবি প্রেসিডেন্ট ছিলাম পাঁচ বছর। বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট ছিলাম তিন বছর। প্রতিটি সংস্থারই নিয়ম অনুযায়ী একটা সময়সীমা থাকে। তার পরে আর থাকা যায় না, সরে যেতে হয়। ক্রিকেটার হিসেবে চ্যালেঞ্জ বেশি। তবে একজন প্রশাসকের অবদান অনেক বেশি। দলের জন্য অনেক কিছু করতে হয়। দেশের হয়ে দীর্ঘ সময় খেলার পরে এটাই আমার অনুভূতি। প্রশাসক হিসেবে আমার কার্যকাল দারুণ উপভোগ করেছি। গোটা বিশ্বে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।” বোর্ড সভাপতি হয়ে নিজের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সেই তালিকায় সরাসরি বলেন, কোভিড মহামারির মত চরম দুঃসময় সফলভাবে আইপিএল আয়োজন করেছেন। কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় মহিলা দল রুপো পেয়েছে। ভারতের পুরুষ দলও বিদেশের মাটিতে তাঁরই সময় সাফল্য পেয়েছে।
খানিকটা দার্শনিক মত সৌরভ বলেন 'ক্রিকেটে একটা শতরান নিজেকে বিশ্বাস করায় যে পরের দিন খেলতে নেমে ভাল খেলব। নিজের কাছে সেই ক্ষমতাটা আছে ভাল খেলার। কারণ আমার জীবন একটি বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে। আত্মবিশ্বাস। কারণ সাবাইকেই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সবাইকে রিজেক্ট করা হয়। সবাইকে পুরস্কৃত করা হয়। এটাই জীবনচক্র। তবে সবকিছুতেই একটা জিনিস থাকে যা হল নিজের ওপর বিশ্বাস। যা তোমাকে জীবনচক্রে চলতে সাহায্য করবে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই সময়ে সৌরভের মুখে যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম। সৌরভ বলেন, ”প্রশাসক হিসেবে দারুণ সব মুহূর্ত রয়েছে। কেউ সারাজীবন খেলে না। আবার একই ভাবে কেউ সারাজীবন প্রশাসক হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে না। এর পরে আরও বড় মঞ্চে নিজেকে অন্য ভূূমিকায় দেখব বলেই বিশ্বাস রাখি।”
সৌরভ বলে জীবনে উন্নতি করতে গেলে ধৈর্য্য ধরে এগোতে হবে, সেই প্রসঙ্গেই মহারাজের মুখে উঠে আসে মোদির নাম। সৌরভ বলেন,”একদিনে কেউ শচীন তেণ্ডুলকর হয় না। মাত্র একবারের চেষ্টায় কেউ মুকেশ আম্বানি হয়ে যেতে পারে না। এমনকি, একদিন পরিশ্রম করলেই কেউ নরেন্দ্র মোদি হয়ে উঠতে পারে না।” সৌরভের মুখে মোদির নাম শুনেই নানা মহলে ফের নতুন করে রাজনৈতিক যোগদান নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা ।