Logo
শিরোনাম

ঠেকানো যাচ্ছে না রিজার্ভের পতন

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৬ অক্টোবর ২০২৩ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ |

Image

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছেই। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে মাত্র তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরাও দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় ধার করে রিজার্ভ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তাদের মতে, যেসব দেশের রিজার্ভ অনেক বেশি তাদের কাছ থেকে কিছু অর্থ ধার করে দেশের সংকট উত্তরণ করা সম্ভব।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ পরিস্থিতির উত্তরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও তিনি একই অভিমত জানান।

তিনি বলেন, আপাতত রিজার্ভ ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু টাকা ধার করা যায়। ভারত, চীন ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো অর্থাৎ যাদের রিজার্ভ ভালো তাদের কাছ থেকে যদি এক বিলিয়ন বা দুই বিলিয়ন করে ধার নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সংকট আপাতত কেটে যাবে। পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাও এভাবে নিয়েছে। বাংলাদেশ কখনো নেয়নি। শ্রীলঙ্কা তো বাংলাদেশের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছে। পরে তা আবার

শোধও করে দিয়েছে। বাংলাদেশও আপাতত সেই পথে হাঁটতে পারে।

এদিকে, গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। রিজার্ভ নিয়ে যে স্বস্তি ছিল সেটা এখন আর নেই, কারণ প্রতিনিয়ত রিজার্ভ কমছে। প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করছে। এটা যদি চলতে থাকে, তাহলে তো এক জায়গায় গিয়ে রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে। তখন এটা আশঙ্কার জায়গায় চলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এখন যে রিজার্ভ আছে, তা বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলেও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে।

রিজার্ভ ধার করার পরামর্শ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। আশা করছি, শিগগিরই এ বিষয়ে সমস্যার সমাধান হবে।

অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ সম্পর্কে মতামত চাওয়া হলে এই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা প্রকাশ করা হয় না। সেটি শুধু আইএমএফের কাছে তুলে ধরা হয়। জানা গেছে, দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে মাত্র তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ রিজার্ভ মজুদের শেষ প্রান্তে রয়েছে।

বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল, গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখা। এ জন্য লিখিতভাবে বাংলাদেশকে প্রকৃত রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি জানিয়ে দেয় আইএমএফ। এই হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে জানানো শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তাদের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

আইএমএফের দেওয়া লিখিত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ ও স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ পড়বে। আর তাতেই পাওয়া যায় প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী রিজার্ভ নেই বাংলাদেশের।

বর্তমানে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে রয়েছে। এই দলের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে রিজার্ভের পতন ঠেকানোসহ শর্ত পূরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা। গত বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের কাছে শর্তানুযায়ী রিজার্ভ ধরে না রাখার ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি মিশনটির কাছে তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে।

জুনের মধ্যে রিজার্ভের মজুত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী শুরু করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। উদ্দেশ্য ছিল, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও রিপোর্টিংয়ের মান বাড়ানো। আইএমএফের ঋণের অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল রিজার্ভ থেকে গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ বাদ দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। এ ছাড়া প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ কেনার জন্য সোনালী ব্যাংককে এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচির জন্য দেওয়া অর্থ হিসাব থেকে বাদ রাখা।

এখন রিজার্ভের তিন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছেযেমন মোট রিজার্ভ, বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভ। দুই ধরনের হিসাব (মোট রিজার্ভ, বিপিএম-৬) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করলেও প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে না। তবে প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য নিয়মিত আইএমএফকে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


আরও খবর



বাইডেনের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিল জাপান

প্রকাশিত:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ |

Image

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারত ও জাপানকে জেনোফোবিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানায় বলে তাদের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। চীন, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয় বলেও দাবি করেন বাইডেন।

মূলত চীন, রাশিয়ার সঙ্গে একই আসনে বসিয়ে ভারত ও জাপানকে জেনোফোবিক আখ্যা দেন জো বাইডেন। জেনোফোবিক অর্থ হলো বিদেশি বা অভিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব। তবে বাইডেনের এই মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক ও ভুল বলে পাল্টা জবাব দিয়েছে জাপান।

এক বিবৃতিতে টোকিও জানিয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক, কারণ মন্তব্যটি জাপানের নীতি যথাযথভাবে না জেনেই করা হয়েছে।

জাপান সরকার এরই মধ্যে হোয়াইট হাউজে এই বার্তা পাঠিয়েছে ও নীতি-অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসন নীতি একটি বড় ইস্যু। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে যেখানে অভিবাসনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সেখানে ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসনপন্থি।

বাইডেনের সমালোচনামূলক এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র-জাপান জোটকে অলঙ্ঘনীয় বলে অভিহিত করেছিলেন বাইডেন।


আরও খবর



যুক্তরাষ্ট্রের কথাও শুনছে না ইসরায়েল

প্রকাশিত:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ |

Image

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তি করতে ইসরায়েলকে চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই চাপকে উপেক্ষা করেছে দখলদার ইসরায়েল।

শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোয় হামাসের একটি প্রতিনিধিদল যায়। সেখানে তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করে। তবে হামাসের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, কোনো ফলাফল ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়েছে। কিন্তু এটি পুরোপুরি ভেস্তে যায়নি। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

আরববিশ্ব ও ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে নিশ্চয়তা দিয়েছেযদি তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে রাজি হয়, তাহলে গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটানো হবে।

এমন খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি নয়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হামাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য শনিবার মিসরের কায়রোয় ইসরায়েলকে প্রতিনিধিদল পাঠাতে চাপ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু তাদের কথা শোনেননি। তিনি কায়রোয় প্রতিনিধিদল পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান।

এদিন হামাসের এক কর্মকর্তা জানান, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকরে রাজি হয়েছিলেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা দেওয়ার পর তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন।

কিন্তু এরপর যখন ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তারা যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে রাজি না, তখন হামাস জানায়, যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া অন্য কোনো চুক্তিতে তারা রাজি হবে না।

ইসরায়েলের উগ্রপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির এবং অর্থমন্ত্রী বাজায়েল স্মোরিচ হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি না করতে হুমকি দিয়েছেন। তারা সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, রাফাহতে হামলা ছাড়া যদি যুদ্ধবিরতি করা হয়, তাহলে সরকার ভেঙে দেওয়া হবে।


আরও খবর



ফুটপাত দখলকারিদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ |

Image

রাজধানীর ফুটপাত অবৈধভাবে দখল ও বিক্রি করার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র বলছে, ফুটপাত বিক্রি ও অবৈধ দখলকারীদের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, তা আগামী ১৩ মে'র মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে জানানোর জন্য বলেছেন আদালত। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে আজ হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


আরও খবর



দেশের রাজনীতির বাঁক বদলের দিন আজ

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ |

Image

বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন।

এরপর থেকে শেখ হাসিনা গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ দিন বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তার কন্যা শেখ হাসিনাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৪৩ বছর সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহানমুক্তিযুদ্ধসহ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে পাঁচ বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তার নেতৃত্বেই বর্তমানে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করে ইতিহাস গড়েছে দলটি। আর এই চার বারসহ পাঁচ বারের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তখন তারা বেলজিয়ামে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে জার্মানি হয়ে তারা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় পান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তখন দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।

এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এই পেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালেই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ওই বছর ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন।

শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক বন্ধুর পথও পারি দিতে হয়েছে। জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি এবং বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সব ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ বার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে এবং তার মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষ নেতৃত্ব দিয়েই তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই সময়ের শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। তার হাত দিয়েই বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে এবং উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রেখে তার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে ফিরে এলে ঢাকায় লাখ লাখ জনতা তাকে স্বাগত জানায়। এ সময় শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখো জনতা তাকে সংবর্ধনা জানায়। শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।

এর পর থেকেই দেশে শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন করে আরেক সংগ্রামের পথ চলা। তার নেতৃত্বে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগকে আজকের অব্স্থানে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। দেশে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও তার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরও তিনি নেতৃত্ব দেন। এই সময়ের মধ্যে বহু বার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তিনি তিন বার বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন। এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জনও বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু নিজ দেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনা স্থান করে নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে পিতা শেখ মুজিবের মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী। তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। রূপকল্প ২০২১ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


আরও খবর



হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে খামারের শত শত মুরগি

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

বছর ১৭ আগে মুরগির খামার শুরুর পর ভালোই চলছিল বরিশালের আমানতগঞ্জের সেলিনা হোসেনের। কিন্তু ব্যবসায় বিপত্তি শুরু হয় করোনা মহামারীকালে। এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ান। সম্প্রতি বয়ে চলা তাপপ্রবাহ ও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে তার প্রায় ৭০০ মুরগি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বামীহারা এ খামারি। 

সেলিনা হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস আমার এ মুরগির খামার। করোনার সময় একবার বড় লোকসান হয়। অনেক মুরগি মারা গিয়েছিল তখন। অনেক কষ্টে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। ৮০০ ব্রয়লার মুরগি তুলেছিলাম। কিন্তু এবার সব শেষ। বিদ্যুৎ যায় আসে। যে গরম পড়ছে তাতে ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। টিনে পানি দিতে হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে আরো বেশি স্ট্রোক বেড়েছে। ওষুধ খাইয়েছি, তবু মুরগিগুলোকে রক্ষা করা যায়নি। আবার মুরগি ওঠানোর ক্ষমতা আমার নেই।

সেলিনার মতো অন্য খামারিদের একই হাল। অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি খামারেই দেখা দিয়েছে মড়ক। প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শত শত মুরগি। অনেক খামারি লোকসান গুনে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাদের কাছে কেউ যাচ্ছে না বলে অভিযোগ খামারিদের। 

খামারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার পর থেকে পোলট্রি খাতে দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পোলট্রিখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার গুটিয়ে নেন বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রায় ৪০ শতাংশ খামারি। এছাড়া খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার অতিরিক্ত দামের পাশাপাশি এখন পোল্ট্রি খাতের অন্যতম নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে জলবায়ু পরিবর্তন। গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহে খামারগুলোয় ব্যাপক হারে ব্রয়লার মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ডিম উৎপাদনও। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারিরা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও ব্যাহত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পাঁচদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাড়াচ্ছে, আবহাওয়ার পরিভাষায় যাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকালও চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বাগেরহাট ও কুষ্টিয়ায়ও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। এ তাপপ্রবাহ আরো বেড়ে সামনে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো বেশি শঙ্কায় রয়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

বরিশালে গত কয়েক দিনে ৬১৭টি খামারে প্রায় পাঁচ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পোলট্রি মুরগির খামার মালিকদের সংগঠনের নেতা কালাম শিকদার। তিনি জানান, জেলায় ১ হাজার ৬০৮টি মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির ৬১৭টি, লেয়ার ৫৩৫টি ও সোনালি মুরগির ৪৫৬টি। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে পোলট্রি খামারে দেখা দিয়েছে হিটস্ট্রোক। তাপপ্রবাহ থেকে মুরগি বাঁচাতে অনেক খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও কাজে আসছে না। ফলে পোলট্রি খামারে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

তীব্র গরমে খামারে মড়ক লাগলেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু সুফিয়ান বলেন, গরমের সময় খামারে বারবার পানি স্প্রে ও টিনের চালে ছালার চট ভিজিয়ে রাখার পরামর্শসহ একাধিক গাইডলাইন দেয়া হয়েছে বিভাগের প্রত্যেক মাঠ কর্মকর্তাকে। তারা খামারিদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে গরমে মুরগির মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের অবহিত করা হয়নি এখনো। 

চট্টগ্রামের খামারিরা জানিয়েছেন, ওষুধ ও পানি স্প্রের মাধ্যমে হিটস্ট্রোক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও প্রতিনিয়ত ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে। আবার লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটনের খামারে দেড় কেজির বেশি মুরগি ছিল প্রায় চার হাজার। কিন্তু গত দুদিনের গরমে প্রায় এক হাজার মুরগি মারা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট মুরগি মারা যায় কম। কিন্তু এক কেজি ওজনের বেশি মুরগি প্রচুর মারা যাচ্ছে। আমার বড় মুরগির খামারে গত দুদিনে ২৫ শতাংশই মারা গেছে। আশপাশের সবার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। যত ভালো খামার ব্যবস্থাপনাই থাকুক এ গরমে মুরগি মারা যাবেই। তবে এ বছর মৃত্যুটা বেশি। 

একই কথা জানান রাউজান উপজেলার অর্ণব পোলট্রি ফার্মের স্বাত্বাধিকারী দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে আমার খামারের বেশকিছু মুরগি মারা গেছে। আরো কিছু মুরগির অবস্থা সংকটাপন্ন। লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমে গেছে। স্যালইন, ভিটামিন সি খাওয়ানোর পাশাপাশি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্প্রে করে খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অন্যদিকে গরমের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিও তোলা যাচ্ছে না। এ কারণে পানিরও সংকট আছে। এভাবে গরম পড়তে থাকলে খামার রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে না। কম দামে তখন বিক্রি করে দিতে হতে পারে।

চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় চার হাজার ব্রয়লার ও পাঁচ শতাধিক লেয়ার মুরগির খামার আছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মুরগি খামারের উপপরিচালক মো. আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক বেসরকারি পর্যায়ের খামারে গরমের কারণে মুরগি মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে সরকারি খামারগুলোয় এখন কোনো মুরগি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। খামারগুলোয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

যশোরে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বোচ্চ। আগের দিন ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে ১০ হাজারের মতো মুরগি মারা গেছে। শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার খামারি সানজিদা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। আমার খামারে ৭০০ মুরগি ছিল। এখন আছে ২৫০টি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরে মুরগি খামার রয়েছে ১ হাজার ৫৩৪টি। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার জানান, তার অধীনে ২৪৯টি ব্রয়লার ও ২৫টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। কয়েক দিন ধরে যশোরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এতে মুরগির হিটস্ট্রোক বেড়ে গেছে। খাওয়া কমে গেছে। তবে কী পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার হিসাব নেই।

তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় রংপুরের খামারিরাও দুশ্চিন্তায় আছেন। লোডশেডিং তাদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলায় লেয়ার মুরগির খামার আছে দেড় শতাধিক এবং ব্রয়লার চার শতাধিক। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গরমে সাধারণত ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে সহনীয় ধরা হয়। এর ওপরে গেলে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বলা হয়, যা সব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। হিটস্ট্রোকসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ মুহূর্তে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো বেড়েছে খামারিদের। এ গরম চলতে থাকলে মুরগির মৃত্যু আরো যে কত বাড়বে তা নিয়েই আতঙ্কিত তারা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিছু স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমেনি। আগামী দুদিন তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোয় বেশি গরম পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। এর সঙ্গে নগরায়ন ও গাছপালা কেটে ফেলার কারণে খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া।

পোলট্রি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুরগির বাচ্চার তাপমাত্রা সহ্যক্ষমতা বেশি থাকে। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। এ কারণে বড় আকারের মুরগি হিটস্ট্রোকে বেশি মারা যায়। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, অতিরিক্ত গরমে তুলনামূলক ব্রয়লার মুরগি বেশি মারা যায়। কারণ তাদের সহ্যক্ষমতা কম। গরমে ব্রয়লার মুরগি খাবার কমিয়ে দেয়। সে কারণে তার খাবারে এনার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। টিনের চালে পানি বা ভেজা বস্তা দিতে হবে যেন শেড ঠাণ্ডা থাকে।


আরও খবর