রোকসানা মনোয়ার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বারবার জাতীয় সংসদ ও সংবিধানের ওপর আঘাত এসেছে। গণতন্ত্রের যাত্রাপথে অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হতে হয়েছে। সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই সংসদের মাধ্যমেই গত দেড় দশকে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও নারীর ক্ষমতায়ন কার্যকর হয়েছে। সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে । তিনি বলেছেন, পঞ্চাশ বছরের পথচলায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র অগ্রায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।
জাতীয়
সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে সাধারণ প্রস্তাব উপস্থাপনকালে
তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অধিবেশনে এর আগে স্মারক বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি
আব্দুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব উপস্থাপন এবং তাঁর বক্তব্যের পর সাধারণ
আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ
ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সংসদ সদস্যদের আলোচনা শেষে রবিবার এই প্রস্তাব গ্রহণ করা
হবে।
সংসদে
প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির
এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এই যে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের
কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে
কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত
সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে,
সংবিধানের এ অঙ্গীকারসমূহ পূরণে আমরা সকলে একযোগে কাজ করবো, গড়ে তুলবো আগামীর
সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা- এই হোক আমাদের প্রত্যয়।’
প্রস্তাব
উত্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে এই দেশে গণতন্ত্র
অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক
চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। তারপরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আশাকরি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং
জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা ও
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য
ভূমিকা পালন করছে। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত
করতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীর পরিবর্তে সদস্যদের নির্বাচিত করা
হচ্ছে। বিরোধী দলের সদস্যদের থেকে স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সিপিএ ও
আইপিউ’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতিত্ব ছিলো বাংলাদেশের সংসদের প্রতি
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আস্থার প্রতীক। নারীর ক্ষমতায় বাংলাদেশের সংসদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত
বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ
হাসিনা বলেন, গত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদের ধারবাহিক অগ্রযাত্রা, সংসদীয় গণতন্ত্রের
স্থায়ীত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ক্ষেত্র রচনা করেছে।
জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ
মেকাবিলা, নারী ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে
বাংলাদেশ আজ রোল মডেল। তিনি আরো বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের মঞ্চ, মহান জাতীয় সংসদ
সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশীদার এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহ
সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়।
সরকার
প্রধান বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছরের পথ চলায় জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে
আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে
গণতন্ত্র অগ্রায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। ৫০ বছরের পথপরিক্রমা অনেক ক্ষেত্রেই মসৃণ
ছিলো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে
সপরিবারে হত্যার পর বারবার সামরিক ফরমান জারি করে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।
গণতন্ত্র ও জাতীয় সংসদের ওপর আঘাত হেনেছ।
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল সামরিক ও স্বৈরশাসনের পালাবদলের মধ্যদিয়ে সংবিধানের চার
মুলনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কালো আইনে পরিণত করা ছিলো সংসদীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক
অধ্যায়। পরবর্তীতে ৭ম সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের
নিকৃষ্টতম ও নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম করা হয়।
জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশের জন্য সবচেয়ে
বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি বিরল
দৃষ্টান্ত জাতির সামনে রেখে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। যে, ইচ্ছা থাকলে কত দ্রুত একটা
দেশকে পুর্নগঠন, পুর্নবাসন এবং উন্নয়ন করা যায়। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ
অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে উঠতো।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে পথ চলি।
তাই ধারবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা
স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়।
তারপরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা
পেয়েছে, আশাকরি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের
বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
আলোচনায়
অংশ নিয়ে প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্য
নিয়েই রাজনীতি করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি।
প্রথম
জাতীয় সংসদের আরেক সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ষড়যন্ত্র নানা দিকে বিস্তৃত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান
তিনি।