মুহাম্মদ মাসুম খান :
বৈশ্বিক জলবায়ু সমস্যায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক হারে দাবানল হইতেছে। আমরা অস্বাভাবিক প্রচন্ড তাপদাহে ভুগতেছি । ঠিক সেই মুহুর্তে ৫ জুন প্রতিবছরের ন্যায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস ফিরে এসেছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর দিবসটি অধিক গুরুত্বসহ পালন করা হইতেছে।
এক সময় ঢাকায় জালের মতো ছড়াইয়া ছিল আকঁবাঁকা খাল, বিল ও ঝিল।এই খালগুলি সংরক্ষন করিয়া যদি ঢাকা শহর সম্প্রসারন সম্ভব হইত তাহা হইলে পৃথিবীর অন্যতম দৃষ্ঠিনন্দন শহর হইত ঢাকা। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা হেলায় হারাইয়াছি। ঢাকা শহর খাল ও জলাধারশূন্য নাহলে এতো সহজে শহর উত্তপ্ত হইয়া যেতো না।
২০২০ সালে রিভার এন্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের ২০২০ জরিপ অনুসারে ঢাকা শহরে মোট খাল আছে ৭৩ টি যদিও ঢাকা জেলা প্রশাসনের জরিপে খাল আছে ৫৮ টি। উল্লেখিত খালের মধ্যে ৩৭ টিই দখল হইয়া আছে।
সম্প্রিতি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন দখলকৃত খাল উদ্ধারে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা মহানগর হতো পৃথিবীর সবচেয়ে নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর যদি ঢাকার খালগুলি ধ্বংস না হতো।
গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪ বর্গ কি:মি: আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এই সময় ১০ বর্গ কি:মি; সবুজের মৃত্য হয়েছে। ১৯৯৫ সালে রাজধানীর জলাধার এবং জলাভূমি ছিল ৩০.২৫ বর্গ কি:মি:। ২০২৩ সালে সেটা মাত্র ৪.২৮ কিলোমিটারের এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে মাত্র ২দশমিক ৯১ শতাংশ জলাধার ও ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ সবুজ রয়েছে। অথচ একটি আদর্শ শহরে ১২ শতাংশ জলাধার এবং ১৫ শতাংশ সবুজ থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স এবং নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়।প্রতিবেদনে আরো বলা হয় গত ২৮ বছরে উন্মুক্ত স্থান,খেলার মাঠ,পতিত জমি সবই ব্যাপক হারে কমিয়াছে।
বর্তমানে ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী শহরগুলির অন্যতম এক নগর। এখনো যদি আমরা ঢাকা শহরে খাল,জলাধার,উন্মুক্ত স্থান,খেলার মাঠ, সবুজকে রক্ষা করতে সবাই সচেস্ট না হই তাহলে ঢাকা শহরে বাস করা একেবারেই অস্বাস্থ্যকর, অস্বস্তিকর এবং বিপদজনক হয়ে যাবে। বিশেষকরে ঢাকা দক্ষিন এবং ঢাকা উত্তরের সাথে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ড গুলিতে এখনো অনেক খাল,জলাধার,উন্মুক্ত সবুজ স্থান রয়েছে। সেগুলিকে দ্রুত দখল এবং দূষনমুক্ত রাখতে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে নদী-খাল,জলাধার, খেলার মাঠ রক্ষায় জবাবদিহিতার আনতে হবে। বিরাজমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। মহল্লায় মহল্লায়,ওয়ার্ডে পরিবেশ রক্ষায় এক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারকে পরিবেশ রক্ষার আরো তৎপর হতে হবে।
মুহাম্মদ মাসুম খান,সাধারণ সম্পাদক
নদী -খাল ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি