কয়েক দিনের
তীব্র গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা। এরপর গত
দু-তিন দিন ধরে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় তাপপ্রবাহ কিছুটা কমেছে।
জ্যৈষ্ঠ মাসের একেবারে শেষভাগ আর আষাঢ় আসি আসি! সে কারণে প্রকৃতিতে বর্ষার আবহ
দেখা যাচ্ছে।
সোমবার সকাল
সাড়ে ১০টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সেই বৃষ্টি
বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলেও সামান্যতেই মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীর বেশ
কয়েকটি সড়ক ও অলি-গলিতে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধ সড়কে যানবাহনগুলো চলায়
সৃষ্টি হচ্ছে ঢেউয়ের,
আর সেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে ফুটপাতে।
দেখা যায়, পুরান ঢাকা,
বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের
কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়,
খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও
ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ,
মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়,
গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলগলিতে বৃষ্টির পর
জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টি থামার পর রাজধানীবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে
এ জলাবদ্ধতা। অল্পকিছু সময়ের বৃষ্টির ভারও সইতে পারেনি রাজধানীর নাজুক ড্রেনেজ
ব্যবস্থা! রাজধানীর কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষদের চিরচেনা জলাবদ্ধতা সঙ্গী হয়েছে।
মাথায় ছাতা, গায়ে বৃষ্টি আর পায়ে শহরের নোংরা জল নিয়েই ছুটে
চলছেন কাজ বের হওয়া মানুষগুলো। কোনো কোনো রাস্তায় জলাবদ্ধতার মধ্যে যানবাহন চলার
কারণে ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে, আর সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পথচারীর
শরীরেও।
জলাবদ্ধ সড়কে রিকশায় গুলশান দিয়ে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী খাদেমুল ইসলাম। তিনি বলেন, অফিসের কাজে বাইরে বের হয়ে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কবলে পড়লাম। যানবাহন যাওয়ার সময় জমে থাকা জল ঢেউয়ের মতো গায়ে এসে পড়ছে। আমার জামা কাপড় নষ্ট হয়ে গেল।
এই অল্প বৃষ্টিতেই যদি এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তাহলে আসন্ন বর্ষায় কেমন ভোগান্তি হতে পারে রাজধানীবাসীর, একবার চিন্তা করুন?’ এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হয়ে গেলেন খাদেমুল।
একই সড়কে
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় জলাবদ্ধতার কারণে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে
স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে এরশাদ আলীর সিএনজির। তিনি বলেন, সিএনজির জন্য
জলাবদ্ধতা খুব ভয়ের, কারণ যেকোনো সময় স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়।
আমার আজ তাই হয়েছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে ইঞ্জিন। পেছনে লেগে গেছে
যানজট। উপায় না দেখে ঠেলেই নিয়ে যেতে হচ্ছে গাড়ি। এমন বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা যেন
রাজধানীতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্টদের।
পুরান ঢাকার
বাসিন্দা এনামুল হক বলেন,
রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার
সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে বংশাল রোড, নাজিমুদ্দিন রোডে সবচেয়ে
বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে।
অন্যদিকে
মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি সড়ক, লিংক রোড সংলগ্ন আদর্শ নগরের সড়ক
জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ডিআইটি সড়ক পার হয়ে মূল
রাস্তায় আসতে হলো।
এছাড়াও
পান্থপথ, নিউ মার্কেট, শুক্রাবাদ, মিরপুর
সড়ক, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার কিছু কিছু সড়কে বৃষ্টির
কারণে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।