মুন্সী মো: আল ইমরান : পবিত্র ঈদুল ফিতরে সরকারি ছুটি বাড়ানোর দাবি
জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির দাবি, আগামী ২০ এপ্রিল ১ দিনের সরকারি ছুটি বড়ানো হলে
ঈদ যাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য কমার
পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমবে।
রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী
এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পূর্ববর্তী বছর হওয়ায় এবারের ঈদে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি
যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত
করবে। এ ছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরো প্রায় ৫ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে।
এতে আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারনে দেশের
বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৯০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
১৬ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ১৮
এপ্রিল বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ হারে
মানুষ রাজধানী ছাড়বে। কিন্তু আমাদের গণপরিবহনে সড়কপথে ০৬ থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত
করতে পারে। কিন্তু ২০ এপ্রিল অফিস খোলা থাকায় এই ৫০ লাখ যাত্রীর একটি বড় অংশ আটকে
যাচ্ছে। এ কারণে ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে
পারে। অন্যথায়, ২১ এপ্রিল সড়ক-রেল-নৌ পথের পরিস্থিতি কোমায় চলে
যেতে পারে। এ জন্য ২০ এপ্রিল এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি যাত্রাপথে
বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত
করা জরুরি। কিন্তু যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার
নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
মো. মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে সড়ক পথে গণপরিবহনের ভয়াবহ সংকট চলছে। এহেন
পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে রাজধানীর ৫ থেকে ৬ লাখ বাইকার দেশের
বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে। এতে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা
ও প্রাণহানি বহুলাংশে বেড়ে যাবে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে
জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় দাবি করে ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও সকল
জাতীয় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার দাবি জানান।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকটকে পুঁজি
করে কিছু অসাধু পরিবহন মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে
বলে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার প্রতিবছর ঈদে কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এবারের ঈদে
সকল পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হতে পারে। তাই, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের
দাবি জানান তিনি।
অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে
প্রতিবছর সড়ক ও নৌ পথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, নৌ পথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী
সরঞ্জাম না থাকা, একজন চালককে বিশ্রামহীনভাবে ১০/১২ ঘণ্টা ১৫
ঘণ্টা বিরামহীনভাবে যানবাহন চালাতে বাধ্য করার কারণে এবং অদক্ষ চালক দিয়ে আনফিট
যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ঈদে কয়েক শ যাত্রীর প্রাণহানি
ঘটে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে
২০২২ সালে ঈদুল ফিতরে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ও ৮৪৪ জন আহত হয়। এবারও
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় সড়ক ও নৌ পথে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি আরো বাড়তে পারে।
এই প্রথমবারের মতো ঈদযাত্রার টিকিট শতভাগ
অনলাইনে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে রেলপথে যাত্রীদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হতে
পারে। এতে করে টিকিট কালোবাজারি ও কিছু অসাধু রেল কর্মচারীদের কালোবিড়াল সিন্ডিকেট
এখানে যেকোনো ধরনের এহেন শুভ উদ্যোগের বাধা হতে পারে। এ ছাড়াও দেশের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অনলাইন ব্যবহারে অভ্যস্ত নয় এমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে টিকিট তুলে দেওয়ার
জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানায়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের আসন্ন ঈদে আগে ও
পরে ১০ দিনের বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ার লাইন্সগুলোর টিকিট বিভিন্ন ট্রাভেল
এজেন্সিগুলো দখল করে নেওয়ায় এবারের ঈদেও যাত্রীসাধারণকে এসব ফ্লাইটে টিকিট কয়েকগুণ
বাড়তি দামে কিনতে হতে পারে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বেকার সংকটসহ নানা কারণে এবারের ঈদে
যাত্রীসাধারণ ব্যাপকভাবে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, টানা পার্টিসহ টার্মিনালে নানা প্রতারক চক্রের
খপ্পরে পরে সর্বস্ব খুইয়ে ঈদ আনন্দ মাটি হতে পারে। তাই প্রতিটি বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনে সিভিল পোশাকে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছী। এ ছাড়াও মহাসড়কে ডাকাতিরোধে
কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।