হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে চলতে থাকা
যুদ্ধের কারণে গাজা ভূখণ্ডের অর্থেক জনগোষ্ঠীই অনাহারে ভুগছে বলে সতর্ক করেছেন
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা। গাজার পরিস্থিতি কতটা ভয়বহ, সেটি বোঝাতে গিয়ে জাতিসংঘের
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক কার্ল স্কাউ বলেছেন, প্রয়োজনের
তুলনায় ত্রাণসহায়তার ক্ষুদ্র অংশ সেখানে ঢুকতে পারছে, ফলে সেখানকার প্রতি ১০ জন
বাসিন্দার ৯ জনই প্রতিদিন খাবার পাচ্ছেন না। চলমান পরিস্থিতিই গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ‘প্রায়
অসম্ভব‘ হয়ে পড়েছে, বলেন স্কাউ।
গাজা থেকে হামাস
সদস্যরা গত ৭ অক্টোবর কঠোর নিরাপত্তার সীমান্ত ভেদ করে ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা
চালিয়ে ১২০০ মানুষকে হত্যা ও ২৪০ জনের মতো মানুষকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এর পাল্টায়
ইসরায়েল গাজার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে সেখানে টানা বিমান হামলা শুরু করে।
কার্ল স্কাউ বলেছেন, চলতি সপ্তাহে তিনি এবং তার দল গাজায় ঢুকে যে ধরনের ‘আতঙ্ক,
বিশৃঙ্খলা আর হতাশাজনক‘ পরিস্থিতির মুখে পড়েন, তার জন্য তারা
মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না।
‘(পণ্যের) গুদামগুলোতে এলোমেলো অবস্থা, ত্রাণ বিতরণের জায়গাগুলোতে হাজারো
মানুষের গাদাগাদি, সুপার মার্কেটগুলোতে শূন্য তাক এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বাথরুম পর্যন্ত
উপচে পড়া মানুষ, এমন পরিস্থিতি দেখতে হয়েছে’, বিবিসিকে এমনটাই বলছিলেন স্কাউ।
গত মাসে এক সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত
যুদ্ধবিরতি এবং আন্তর্জাতিক চাপে গাজায় কিছু ত্রাণ সহায়তা ঢোকে। কিন্তু ডব্লিউএফপি
এখন গাজার বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণে আরেকটি সীমান্ত ক্রসিং খোলার কথা বলে আসছে।
ডব্লিউএফপি কর্মকর্তা স্কাউ বলেন, ‘সেখানে এখন প্রতি ১০টি পরিবারের
মধ্যে ৯টিই পুরো একটি দিন ও রাত না খেয়ে থাকছে।
বর্তমানে ইসরায়েলের
দুটি ট্যাংক বহর ঘিরে রেখেছে গাজার খান ইউনিস এলাকা। সেখানকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ।
সেখানে একমাত্র স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি ও
বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আহমেদ মোগরেব খাদ্যের হাহাকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে
ফেলেন। ‘আমার তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। সে সব সময় আমার কাছে মিষ্টি,
আপেল কিংবা কোনো ফল খেতে চায়, আমি দিতে পারি না। আমি অসহায়। এখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই।
শুধু চাল, শুধু চাল আছে। বিশ্বাস হয়? আমরা শুধু দিনে একবার খাই।
গত কয়েক দিন ধরেই ইসরায়েলের বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য এই খান ইউনিস। নাসের
হাসপাতালের প্রধান জানিয়েছেন, যেভাবে মৃত আর আহতদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে তারা কিছুই
আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
ইসরায়েলের দাবি, হামাস
সদস্যরা খান ইউনিসে, বিশেষ করে সেখানকার ভূগর্ভস্থ টানেলগুলোতে লুকিয়ে আছে। আর তাই
হামাসের সামরিক শক্তি ধ্বংসে সেখানে ঘরে ঘরে আর আনাচে-কানাচে যুদ্ধ চালাতে হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা
বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেক্ট বলেছেন, ‘একজন
বেসমারিক নাগরিকের মৃত্যু এবং কষ্ট দেখাটাও বেদনাদায়ক, কিন্তু আমাদের কোনো বিকল্প নেই।
গাজার স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত সেখানে ১৭ হাজার ৭০০ জন নিহত
হয়েছেন, যার মধ্যে ৭ হাজারই শিশু। এমন যখন পরিস্থিতি, ঠিক সে সময়ে জাতিসংঘের
নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির এক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকাকে যুদ্ধাপরাধ বলছেন ফিলিস্তিনের
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
(ইসরায়েলি) দখলদার বাহিনীর হাতে গাজায় ফিলিস্তিনি শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদের
রক্তপাতের জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করেন তিনি। অন্যদিকে, নিরাপত্তা পরিষদে
যুক্তরাষ্ট্র সঠিক অবস্থান নিয়েছে বলে প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
নেতানিয়াহু।