Logo
শিরোনাম

ইসলাম ও সুফিবাদ

প্রকাশিত:বুধবার ০৯ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

ডা. এম এ হাসান , চিকিৎসক


স্যার মুহাম্মদ ইকবাল তার ‘Reconstruction of Islamic Thoughts’ বা ‘ইসলামী ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন’ শীর্ষক রচনায় ইসলাম ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা, গতিশীলতা- এর ইতিহাস এবং ধর্মীয় অভিজ্ঞতা তথা এর মর্মকথা ব্যক্ত করতে গিয়ে এই ধর্মতত্ত্বের সাথে আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শনের সংঘাত এবং ঐক্যকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। মনুষ্যজাতির সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের আলোকে, নানা তত্ত্ব। জিজ্ঞাসার মধ্যে ধর্মবোধ এবং এর প্রয়োগ কতটুকু সম্ভব এমন প্রশ্ন রেখেছেন। তিনি যেমন ইসলামের মরমীবাদকে অনুভবের চেষ্টা করেছেন, তেমনি নানা ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি জনৈক মুসলিম সুফির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘পবিত্র কুরআনকে সে-ই সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবে যে কিনা কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিত এবং তার আদিরূপ অনুভব করতে পারবে।’ মূলত নানামুখী লোভ ও স্বার্থচিন্তার সাথে ধর্মচিন্তার সংশ্লেষণটি কঠিন হওয়ার কারণেই নানা বিতর্কের সূচনা।

লেখক মনে করেন সামাজিক বিশৃঙ্খলার আবর্তে নানা ধর্মের মত ও সংঘাতের প্রেক্ষাপটে কোরআনের প্রয়োজনীয়তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওই গ্রন্থের অবতীর্ণ হওয়ার সময়টাতে। সকল শান্তি ও শৃঙ্খলার প্রেক্ষাপটে ভেদজ্ঞান নিরসন ও শান্তি স্থাপনের আলোকে এর মর্মকথার গুরুত্ব সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য। চূড়ান্ত গোঁড়ামি ও শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে নিমজ্জিত ইহুদি ও কর্তৃত্ববাদী রোমানদের আঘাতে যিশু ও উদীয়মান খৃস্টানগণ যখন ছিন্নভিন্ন হচ্ছে, যিশুর প্রেম ও করুণাধারায় সিক্ত মানবতাবাদী ধর্ম যখন বিত্তবানদের করায়ত্বে এসে পথহারা হচ্ছে, তখনই ইসলামের আবির্ভাব। কেবল পথভ্রষ্ট এবং উচ্ছৃঙ্খল আরবদের পথ দেখাবার জন্য নয়, বেপথু খৃস্টানদের পথের সন্ধান দিতে, দিকভ্রান্ত চিন্তা এবং অহং এ নিমজ্জিত ইহুদিগনকে একক বিশ্বাসে আনবার জন্য, একটি ধর্মীয় ইন্টিগ্রেশন (Integration) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামের আবির্ভাব হয়।

বিখ্যাত ধর্মবেত্তা ও লেখক এডুইন এ বার্ট খৃস্টধর্মকে Trinity ভিত্তিক Synthetic Faith বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন- Islam also displayed much of this synthetic power, but at the beginning it was in its essence a remarkably simple religious faith. Its message was the message of the great Hebrew prophets and the early teaching of the Synoptic Gospels in unelaborated form, with all adornments and excrescences removed. Its conception of religion was what we have called the legal conception through and through; to truly devout is to submit humbly to God’s will and conform faithfully in all one’s conduct to His revealed law.

হজরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁর স্বকীয়তা স্পষ্ট করে গেছেন একক ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করে, মানুষের দেবত্ব ও ঈশ্বরত্বকে নাকচ করে। Edwin A. Burtt এর ভাষায় তিনি প্রচার করেন- God is one God, and no human being is divine; at best he can be a humble mouthpiece of the divine among his fellows. তিনি ন্যায়, দয়া এবং মানুষের ভাতৃত্বের বাণী ব্যক্ত করেন। প্রাচীন গসপেলে জন মানবভাতৃত্বের কথা ব্যক্ত করেছিলেন। হজরত মোহাম্মদ (সা.) ওই আচরণটিকে অধিকতর মানবিক এবং প্রায়গিক করেছেন। তিনি বিজ্ঞান এবং সামাজিক শৃঙ্খলাকে ধর্মের অঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, “Speak thou, in the name of the Lord, who created man. He has created him from clots of blood.”|

অতিশুদ্ধ ধর্মাবতার চরিত্রের সাথে প্রকৃত জ্ঞানী সমাজসংস্কারক চরিত্রের অপূর্ব সমন্বিত রূপের প্রকাশ ছিল হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর চরিত্রে। ইনট্যুইটিভ (Intuitive) জ্ঞান, প্রফেটিক (Prophetic) বোধ এবং সামরিক জ্ঞানের এমন সমন্বয় হয়ত কারও মাঝে প্রকাশিত হয়নি। ধর্মীয় উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক স্বার্থ তথা সামগ্রিক মানবকল্যাণ ও শান্তিকে তিনি এক পাতায় আনতে পেরেছিলেন তার অসামান্য চরিত্র ও মেধাগুণে। তার অবর্তমানে ইসলাম তার বিজয়ধারা অক্ষুণ্ণ রাখলেও অহংবোধ ও স্বার্থচিন্তার আবর্তে পরে মূল ধর্মচিন্তা ও স্রোত থেকে অনেকটা সরে যায় এর প্রবক্তাগণ। ব্যাখ্যাগত দুর্বলতায় আক্রান্ত হলেও খ্রিস্টধর্মের মতো গুরুতররূপে শিকড়বিচ্যুত হয়নি ইসলাম।

এক্ষেত্রে, লেখক মনে করছেন, শুরু থেকে ইসলামে নানামুখী চিন্তা প্রাধান্য পেলেও এক পর্যায়ে তা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। একপক্ষে থাকেন কর্তৃত্ববাদী ধর্ম এবং এর স্থূল তথা কট্টর ব্যাখ্যার প্রবক্তা বলে পরিচিত ইমাম গাজ্জালি ও ইমাম হানিফা প্রমুখ, অন্যপক্ষে থাকেন ইবনে রুশদ এবং তার অনুসারীগণ। শাক্ত ও সুযোগসন্ধানীগণ এই কট্টরদের ওপর সওয়ার হয়ে ইসলামের সাম্যবাদে কুঠারাঘাত করে। শুরু হয় বিরুদ্ধ স্রোত ইসলাম যা সমর্থন করেনা সেই রাজার রাজত্ব।

একেবারে ইসলামের শুরুতে যখন ইসলামী চিন্তাবিদগণ গ্রিকদর্শনসহ অন্যান্য দর্শন ও বিজ্ঞান পরীক্ষা করছিলেন এবং ওইসব দর্শন ও বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করছিলেন, সে সময় ইমাম গাজ্জালি একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন যার নাম ছিল তাহফাতে ফালাসিফা যার অর্থ হলো Destruction of all philosophy ওই পর্যায়ে ইবনে রুশদের ধারণা স্পেন ও ইউরোপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিশেষ করে, ৬২২ খৃস্টাব্দে হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর, ৬৩৪ খৃস্টাব্দে একদিকে যেমন সিরিয়া বিজয় নিশ্চিত হয়, তেমনি ইসলামী চিন্তার আধিপত্য সিরিয়া অতিক্রম করে তুর্কিস্থান হয়ে ইউরোপমুখী হয়, অন্যদিকে, শিক্ষা, দীক্ষা, সংস্কৃতি, শক্তিতে বলবান পারস্য তা অতিক্রম করে ৬৩৭ খৃস্টাব্দে। পারস্য বিজয় সম্পূর্ণ হলে তা আফগানিস্তান ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা অতিক্রম করে ভারতের মাটিতে আসে ৬৬৪ খৃস্টাব্দে।

একইভাবে স্পেনের কনস্ট্যান্টিনোপল আক্রান্ত হয় ৬৬৯ খৃস্টাব্দে, মিশর পদানত হয় ৬৪২ খৃস্টাব্দে এবং প্রাচীন সভ্যনগরী কারথেজ পদানত হয় ৬৯৭ খৃস্টাব্দে। ৭১১ থেকে ৭১২ এর মধ্যে স্পেনের অধিকাংশ মুসলিমদের কব্জায় আসে, এরপর দক্ষিণ ইতালিসহ গ্রিসের সিসিলিও মুসলিমদের পদানত হয়। ৭৩২ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত এই অভিযাত্রা অপ্রতিরোধ্য থাকে। ১৪৫৩ পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপসহ পুরো এই অঞ্চলটি মুসলিমদের অধীনে থাকে।লেখক মনে করেন- এই আগ্রাসন ও রাজ্য বিজয়ের মধ্যে একদিকে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রাচীন উর ও মেসপটেমিয়ার সভ্যতার ছোঁয়া বিশেষ করে অংক, জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যামিতি শাস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটে, তেমনি গ্রিকদের ন্যায়শাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র ও দর্শনের অনুপ্রবেশ ঘটে। ধর্মবিস্তারের সাথে সাথে একদিকে রোমানদের রাজ্যশাসন এবং দিগ্বিজয়ের কৌশলটিও রপ্ত করে আরবগণ, অপরদিকে প্রাচীন সিরিয়া বা পারস্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে ইসলামের মাঝে।


এতে করে সুফি ও মরমীবাদের আসন স্থায়ীভাবে নিশ্চিত হয় ইসলামে। এই সুফিগণই প্রিয় মোহাম্মদ (সা.) এর অনুসারী হয়ে শুদ্ধ আত্মার অনুসন্ধানে ব্যাপ্ত হয়ে শুদ্ধতাচর্চায় নিমজ্জিত হয়। ঈশ্বরের সাথে একীভূত হয়ে শুদ্ধতার লক্ষ্যে পথচলা ও পথের আলোয় পথ দেখানোই সুফিবাদ। সুফিবাদে বিশ্বাসীগণকে সমষ্টিগত বলে আউলিয়া, যার অর্থ আল্লাহর কাছের মানুষ; ঈশ্বরাশ্রয়ী এক বন্ধু, যার আত্মার মাঝে দৃশ্যমান বিশ্ব এবং অলক্ষ্য, অজ্ঞাত, অনন্তের নিত্য খেলা।


এটি ইসলামী ঋষি সংস্কৃতিকেই প্রকাশ করে। সে অন্তরে যেমন ঈশ্বরের ছায়া ও শক্তি ধারণ করে, তেমনি ঈশ্বরের প্রতিভূর মনন ও শক্তি ধারণ করে। তিনি রাজা বা প্রভূ নন; তিনি শুদ্ধতার এক প্রেমময় প্রকাশ। তিনি যখন বলেন ‘আইনাল হক (Ainal – Haqq)’, তার মানে, “I am the Haqq - the truth; living and personal witness of God”| ইহুদীগণের বিশ্বাস -“God created Adam in his own images”- তা যেমন ভিন্নভাবে ব্যক্ত হয়েছে কোরআনে, তেমনি আদম ও হাওয়ার চিরন্তন উপাখ্যানটি ও ভিন্ন আলোকে পরিবেশিত হয়েছে।

ইউরোপীয় এবং ইহুদি সম্প্রদায়গুলো স্পেনে বসবাস করায় ওই অঞ্চলটি একটি সাংস্কৃতিক রন্ধনশালায় (Cultural Hot Pot) পরিণত হয়। অর্থাৎ একে অপর থেকে গ্রহণ ও বর্জন করছিল ওই স্থানে, অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ার মধ্যে। এভাবেই আরবদের নানা আবিষ্কার, জীবন ও দর্শন পাশ্চাত্যে শেকড় পায়। তবে, এটি ছিল সেই দর্শন যা ইবনে রুশদ প্রচার করেছিলেন। স্পেনে অবস্থানকারী সকল মুসলিম দার্শনিক ও পণ্ডিত যে ইবনে রুশদের সাথে একমত পোষণ করেছেন তা নয়।

ওই সময় রাজ্যবিজয় এবং রাজার রাজত্ব, রাজার স্বার্থ মুখ্য হয়ে ওঠে। এতে মূল ধর্মচিন্তা, ধর্মীয় স্বার্থ এবং মৌলিক দর্শন অনেক ক্ষেত্রে গৌণ হয়ে ওঠে। এ আলোকে মূলচিন্তার অনুসারীগণ আপন দর্শন বিস্তারে ভিন্ন পথ খোঁজেন। এরই ধারাবাহিকায় সুফি দার্শনিক মহীয়ুদ্দীন ইবনুল- আরাবি মন্তব্য করেন, ‘আল্লাহ অনুভূতিস্বরূপ এবং দৃশ্যমান জগৎ একটি প্রত্যয় মাত্র।’ আরেকজন সুফিসাধক ইরাকির মতে স্থান ও কালের মাঝে অবস্থান বহু এবং বিচিত্র; ‘ঐশীস্থান’ ও ‘ইন্দ্রকালের’ অস্তিত্ব আছে এর মাঝে। এক্ষেত্রে ইকবাল বলেন, ‘এমনও হতে পারে আমরা যাকে বাহ্যিক জগৎ বলি তা আমাদের বুদ্ধির সৃষ্টি, মানবিক বোধ ও অনুভূতির এমন আরও অনেক স্তর রয়েছে যা সম্পূর্ণ আলাদা স্থান ও কালের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলছে।’

এক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট যে, ধর্মীয় অনুভূতির মধ্যে যারা সত্য আবিষ্কারে আগ্রহী হবে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির ওপর নির্ভর করতে হয়। লেখক মনে করেন যে, এসব বিষয়ে অপরকে সম্পূর্ণ জানা ও জানানো কখনোই সম্ভব নয়। কেননা এখানে Perception কেবল Subjective নয়, এর ব্যাখ্যাটিও Subjective। এসব কারণে ইকবাল নিজেও এটি অনুভব করেন যে, মধ্যযুগীয় আধ্যাতিক সাধনা বা সনাতন সত্যজিজ্ঞাসা পদ্ধতি আদিম এবং মহাসত্য আবিষ্কারের পথে, এটি বিগ্ন বৈ কিছু নয়; তবে তিনি এটাও বলেন, ‘সন্ধান নিরর্থক নয়।’

লেখক নিজে মনে করেন, এ ধরনের চিন্তা চেতনার মধ্যে একটি তৃপ্তি ও শান্তি থাকলেও Illusion ও Disillusion এর ভ্রান্তির চোরাবালি প্রগতিমুখী চিন্তা বা বিজ্ঞাননির্ভর চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। গভীরতম জ্ঞান ও মৌলিক আবিষ্কারের পেছনে চর্চিত পাঠ ও কগনিটিভ জ্ঞানের মতো বিভূতির ভূমিকা কম নয়। আর Empirical Truth এবং Intuitive জ্ঞানের মূল্য কোনভাবেই নগণ্য নয়।


মহাবিশ্ব তথা সকল সৃষ্টির শুরু শূন্য থেকে, ব্যাখ্যাতীত উৎস বা আধার থেকে উৎসারিত শক্তি থেকে। আর সে শক্তির পেছনে যদি ঈশ্বর বা স্রষ্টাকে অনুভব করি তার অর্থ দাঁড়াবে- তার হতে শুরু এবং সেখানেই পরিসমাপ্তি। আমরা আছি সেই যাত্রাপথে- নদীর স্রোতে। তিনি সকল কার্যকারণের নিয়ন্ত্রক, সকল কিছুর স্রষ্টা এবং বিনাশকর্তা।


সৃষ্টি, বিনাশ, কর্ম এবং কর্মফল সবকিছুর পেছনে রয়েছে কার্যকারণ। এই কার্যকারণের কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন হজরত আব্দুল কাদের জিলানি, তাঁর ‘ফতুহুল গায়েব’ গ্রন্থে। এসব কথা স্পষ্ট হয়েছে মাওলানা রুমীর অনবদ্য রচনাতেও।


পবিত্র কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে- ‘ইয়া হাইয়্যু হিনা লা-হাইয়্যু ফীদাইমু মিয়্যাতি মুলকিহী ওয়া বাকাইহী ইয়া হাইয়্যু।’ অর্থাৎ- ‘হে চিরজীবী (আল্লাহ)! যে সময় তোমার রাজত্বের স্থায়িত্বে ও অস্তিত্বে কিছুই বর্তমান ছিল না, সে সময়ও তুমি বর্তমান ছিলে; হে চিরজীবী।’


এর মাঝে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, বিস্তার, বির্বতন ও সময়ের প্রসারণের কথা বলা রয়েছে এটা অসাধারণ ইনট্যুইটিভ জ্ঞান তথা সত্যের প্রকাশ।









আরও খবর



খরতাপে পুড়ছে দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

দিনভর বৈশাখ তথা ভরা গ্রীষ্মের প্রখর রোদে যেন সূর্য থেকে মাটিতে আগুন ঝলসে পড়ছে। রাতের বেলায়ও গরমে-ঘামে অস্বস্তি। গতকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রার আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণের জনপদ বাগেরহাট জেলার মোংলায় ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সে.। চলতি এপ্রিল মাসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পারদ ৪২ ডিগ্রি সে. অতিক্রমের পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ।

 বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাস উচ্চ তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ছিল দক্ষিণের জনপদ পটুয়াখালী উপজেলার খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। যা উক্ত এলাকায় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। গতকাল রাজধানী ঢাকায়ও তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে দিনের বেলায় ৩৮.৪ এবং রাতেও ২৮.৬ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। অবশ্য গতকাল রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জে হঠাৎ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির সাথে সাময়িক বৃষ্টি স্বস্তি এনে দেয়। এ সময় ঢাকায় ১২, ফরিদপুরে ২৩, চাঁদপুরে ১৪ ও কিশোরগঞ্জে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটাও বৃষ্টিপাত হয়নি। বৈশাখের শুরুতেই সমগ্র দেশে অসহ্য খরতাপের দহনে দুর্বিষহ পড়েছে জনজীবন। আবহাওয়া বিভাগ আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে তাপপ্রবাহ আরো বৃদ্ধি এবং বিস্তারের সতর্কবার্তা (হিট এলার্ট) জারি করেছে। টানা কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টি-খরা ও উচ্চ তাপমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকেই নামছে দ্রুত। নদ-নদী-খাল, পুকুর-জলাশয়-দীঘি, হাওড়-বাওড়সহ ভূ-উপরিভাগের পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে মাঠ-ঘাট-বিল ফেটে চৌচির। তীব্রতর গরম ও খরার কবলে ইরি-বোরো, আম-লিচুর ফলন ব্যাহত হওয়ারর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ফলে বিভিন্ন জায়গায় হিট স্ট্রোক, শরীরে পানিশূন্যতায় এবং সর্দি-কাশি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধিতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দিনের প্রখর রোদের তেজে জরুরি কাজ ছাড়া কেই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।

গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া বিভাগ আরেক দফায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা বা হিট এলার্ট জারি করেছে। এতে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, দেশের উপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৬ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায়ও (তিন দিনে) অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসে অত্যধিক হারে জলীয়বাষ্প থাকার কারণে গরমের তীব্রতায় অস্বস্তি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬, মোংলায় ৪০.৩ ডিগ্রি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়াও দেশের অন্যত্র উল্লেখযোগ্য দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও পাবনায় ৩৯.৮, খুলনায় ৩৯.৫, রাজশাহীতে ৩৯.৩, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ায় ৩৯.২, রাঙ্গামাটিতে ৩৯, বগুড়া, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালীতে ৩৮.৫ ডিগ্রি সে.।

সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। দিনের তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্থানভেদে এখন ২৭ থেকে ২৯ ডিগ্রির ঘরে। তাতে খরতাপ অসহ্য হয়ে উঠেছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্তসহ আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগামীকাল  সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ দেশের কিছু কিছু জায়গায় কমে আসতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এর পরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন গত সোমবার ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গত কিছুদিন ধরে রাজশাহীতে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়া। রাজশাহী অঞ্চলে মাঝারি তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রাও দুএক ডিগ্রি কমতে পারে। তবে এ কয়েক দিনের মধ্যে খুব একটা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আগে তাপপ্রবাহ বাড়ার কারণে রাজশাহী আরও তিন বিভাগে এসব অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এপ্রিল মাসে এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদফতর। তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঈদের পর তাপপ্রবাহের ফলে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষ তাদের কর্মে ফিরতে পারেনি। অনেকটা কর্মহীন দিন পার করছে তারা।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। এদিন দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৩ শতাংশ। তিনি আরো জানান, এপ্রিল মাসব্যাপী মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এ আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভবনা রয়েছে।

ভ্যাপসা গরম, আবহাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া সকাল থেকে কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেনা। রিকসা ও ভ্যান এবং ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালকদের যাত্রী হচ্ছে না। এছাড়া গরম আবহাওয়ায় কেউ কাজ না করায় দিন হাজিরায় কর্মজীবী বিপাকে পড়েছে। 


আরও খবর



নওগাঁয় ধর্ষণের শিকার শিশু,অভিযুক্ত আটক

প্রকাশিত:বুধবার ০৮ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোটার :

নওগাঁয় মাত্র ৫ বছর বয়সি এক শিশুকে খাওয়ানোর প্রলোভন (লোভ) দেখিয়ে বাড়ির ভেতর নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে স্থানিয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান শিশুর স্বজনরা। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হলেন, নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউপির গাড়ীক্ষেত্র গ্রাম এলাকার আতাউর রহমান ওরফে চেকু (৫৫)।  

ভিকটিম শিশুটির মা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যার আগে আমি বাড়িতে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় প্রতিবেশী সহপাঠি শিশুদের সাথে আমার মেয়েও খেলা করছিলো। খেলা করাকালে সেখান থেকে খাওয়ানোর লোভ (প্রলোভন) দিয়ে প্রতিবেশি আতাউর রহমান চেকু আমার অবুঝ মেয়ে শিশুকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

শিশুটির মা আরো জানান, ঘটনার সময় অভিযুক্ত আতাউর রহমান চেকু'র বাড়িতে কেউ ছিল না। এ সুযোগেই সে আমার শিশু মেয়েকে তার বাড়ির ভেতর নিয়ে (খারাপ কাজ) ধর্ষণ করার পর আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আমার শিশু মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এসে ঘটনাটি জানায় ও অসুস্থতা বোধ করায় মেয়েকে স্থানিয় মান্দা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে দেই। ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত আতাউর রহমান ওরফে চেকু সংবাদ কর্মীদের কাছে ঘটনায় সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার ভুল ও অন্যায় হয়েছে। আমাকে মাফ করে দেন। এঘটনায় ভিকটিম শিশুটির মা বাদী হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মান্দা থানায় মামলা দায়ের করার পরই থানা পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার এর সত্যতা নিশ্চিত করে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ

মোজাম্মেল হক কাজী জানান, ভিকটিম শিশুর মা মামলা করেছেন। মামলার পরই থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আতাউর রহমান কে গ্রেফতার করেন।


আরও খবর



আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তুমুল সংঘাত চলছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর। শিগগিরই দেশটিতে চলমান এ গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপার থেকে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলেও।

জাতীয় সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী মে মাসেই মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের অনুপ্রবেশের ঘটনাও বৃদ্ধি পেতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার কারণে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হয়েছে। ফলে সন্ত্রাসী দল বা গোষ্ঠী আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করতে পারে। মিয়ানমারের পাশাপাশি আরাকান আর্মি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলেও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে। সেইসঙ্গে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান পণ্যের সরবরাহ আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে আরও কয়েকটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোটের সঙ্গে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে পর্যুদস্ত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও বিজিপির পাঁচ শতাধিক সদস্য। এর মধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জন সেনা ও বিজিপি সদস্যকে জাহাজে করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর সবশেষ গত ২৫ এপ্রিল নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যকে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মোট ৯ লাখ ৯ হাজার ২০৭ জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালি বর্ধিত ক্যাম্পে রয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৬ জন। অন্যান্য ক্যাম্পে রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩৪ জন রোহিঙ্গা। এর বাইরে ৬ হাজার ৮২৭ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে হোস্ট কমিউনিটি তথা কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি সমাজের সঙ্গে।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি ও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনীকে আরও সচেতন ও সতর্ক থেকে কাজ করার সুপারিশ করেছে। এছাড়া মাদক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কঠোরভাবে কিশোর গ্যাং দমন করার সুপারিশ করেছে কমিটি।


আরও খবর



মে মাসের শুরুতেই টানা বৃষ্টি নামবে

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। একাধিকবার জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। গা ঝলসানো এমন গরম থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা জানার আগ্রহ মানুষের। গরমের এই তীব্রতার মধ্যেই আজ বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী মাসের শুরুতে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেও তার আগে আরও কয়েকদিন দাবদাহ ভোগান্তি পোহাতে হবে মানুষকে।

শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চলমান তাপদাহ এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতেও থাকবে। ঢাকাসহ চলমান এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তবে মে মাসের প্রথম দিন থেকেই দেশের আকাশে মেঘের উপস্থিত বাড়বে। ২ মে থেকে পরবর্তী কয়েকদিন সারাদেশেই বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় হবে। এতে গরমের তীব্রতা অনেকটাই কমে আসবে।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, ২ মের পর থেকে সারাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় কালবৈশাখী হতে পারে। টানা ২ থেকে ৩ দিন বা তার বেশিও বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির ফলে সারাদেশের তাপমাত্রা কমে আসবে।

চলমান তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে দেশের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ একটানা সবথেকে বেশিদিন স্থায়ী রয়েছে। গতবছর এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বজায় ছিল যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়।

তিনি জানান, চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বজায় ছিল। আজ তা রেকর্ড ভেঙেছে এবং আরও কিছুদিন তা বজায় থাকবে। তাছাড়া এবারের তাপমাত্রা বলতে গেলে সারাদেশেই বিরাজ করছে, যা এর আগে দেখা যায়নি।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) আবহাওয়া অফিসের সবশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।


আরও খবর



আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ |

Image

তাপদাহে পুড়ছে দেশ। দিনদিন তাপমাত্রার পারদ ওপরের দিকে উঠছে। প্রখর তাপে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় নতুন করে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুরর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে জনজীবনের অস্বস্তি বাড়তে পারে।

এর আগে, গত ১৯ এপ্রিল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রথমবার তিন দিনের হিট এলার্ট জারি করা হয়েছিল।

এদিকে সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া একই সময়ে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।


আরও খবর