ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইনে করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (সাময়িক বহিষ্কৃত) তিথি
সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল
আদালতের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।
একই সঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। তবে এরই
মধ্যে এ মামলায় আসামি ২১ মাস কারাভোগ করেছেন। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেছেন, পাঁচ
বছরের সাজা থেকে আসামির ২১ মাসের কারাভোগের সময় বাদ যাবে। অর্থাৎ এই ২১ মাস সময়কে
পাঁচ বছরের সাজা আওতায় ধরা হবে।
এদিকে, রায়ের পর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিথিকে
সংশোধন হতে এবং তার বয়োবৃদ্ধ বাবার নিয়মিত দেখভাল ও সেবাযত্ন করাসহ আট শর্তে তাকে
এক বছরের প্রবেশনে মুক্তি দেন আদালত। এ সময়ে তিনি প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে
থাকবেন। আদালত জানিয়েছেন, আসামি তিথি প্রবেশনের শর্তগুলো যথাযথভাবে পূরণ করলে তাকে
আর সাজা নাও খাটতে হতে পারে।
আসামি তিথি সরকারকে অপরাধী প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ (১৯৬০
সালের ৪৫ নম্বর অধ্যাদেশ)-এর ৫ ধারা মোতাবেক, আদালত নির্ধারিত সময়ের জন্য প্রবেশন
আদেশের নিম্নোক্ত শর্তযুক্ত মুচলেকা স্বাক্ষর করার শর্তে প্রবেশনে মুক্তি দেওয়ার
আদেশ জারি করা হয়েছে। তিনি আট শর্তে মুচলেকায় স্বাক্ষর করে মুক্তি পান।
শর্তগুলো হলো—
১. আসামি-প্রবেশনার আগামী এক বছর সময়ের জন্য প্রবেশন
কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন এবং ওই কর্মকর্তার নিদের্শনা মেনে চলবেন।
২. ওই
সময়সহ আসামি-প্রবেশনার ভবিষ্যতে আর কোনো অপরাধে জড়াবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন ও
সদাচরণ করবেন।
৩.
বয়োবৃদ্ধ বাবার নিয়মিত দেখভাল ও সেবাযত্ন করতে হবে।
৪.
আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তলবমতে আসামি-প্রবেশনার
যথাসময়ে হাজির হবেন।
৫. শহর
এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ আইনবহির্ভূতভাবে রাস্তা পারাপার
করা যাবে না, সামাজিক নিয়ম-কানুন, প্রথা, রীতিনীতি প্রভৃতি মেনে চলবেন, পরিবেশের
জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ করবেন না; প্রবেশন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া নিজস্ব কর্মস্থল
বা বাসস্থান ত্যাগ করবেন না এবং প্রবেশন কর্মকর্তার যেকোনো সময় আসামির গৃহ
পরিদর্শন করতে আসামি-প্রবেশনার বা তার পরিবারের সদস্যদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
৬.
আসামি-প্রবেশনার অযথা রাতের বেলা ঘরের বাইরে অবস্থান করবেন না; মাদকদ্রব্য গ্রহণ,
বিশেষত মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সরবরাহ করা হয় এমন স্থানে যাতায়াত করবেন না; ধূমপান
থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন এবং জুয়া, অনলাইন জুয়া, তাস, ক্যাসিনো, বাজি ইত্যাদি থেকে
নিজেকে দূরে রাখবেন।
৭.
আসামি-প্রবেশনার প্রবেশনকালীন কোনো ধরনের স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না;
প্রয়োজন হলে নন-স্মার্ট মোবাইল ফোন বা বাটন ফোন ব্যবহার করবেন। তবে শিক্ষা
কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের আবশ্যকতা দেখা দিলে আসামি-প্রবেশনার
তার মা-বাবা অথবা অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক আত্মীয়, অথবা ক্ষেত্রমতে শিক্ষকের
উপস্থিতিতে শুধু স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
৮. উপর্যুক্ত যেকোনো শর্ত লঙ্ঘন
করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি-প্রবেশনার নিজেকে সংশোধন না করলে আসামির
প্রবেশন আদেশ বাতিল হবে এবং প্রমাণিত অপরাধের দায়ে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,
২০১৮-এর ২৮ (২) ধারায় পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হবে।