শেখ ফরিদ,সোনারগাঁও ঃ
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানোৎসব। লাখ লাখ তীর্থযাত্রী পাপ মুক্তি ও পুণ্য বাসনায় অংশ নিচ্ছে এ স্নানোৎসবে। করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকায় এবার পুণ্যার্থীর সংখ্যা বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন করতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা।
শুক্রবার রাত ৯টা ১৩ মিনিটে এই স্নানোৎসবের লগ্ন শুরু হয়েছে। শনিবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে শেষ হবে লগ্ন। এ স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী লোকজ মেলা শুরু হয়েছে তীর্থস্থানের আশপাশে।
সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলার সীমানা ভাগ করে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের তীরে অবস্থিত হিন্দুধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দ। হিন্দু দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে গোসল করে পাপমুক্ত হন। লাঙ্গল দিয়ে চষে হিমালয় থেকে এ পানিকে ব্রহ্মপুত্র নদরূপে নামিয়ে আনেন সমভূমিতে। পৌরাণিক এ কাহিনীকে স্মরণ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসে নির্ধারিত দিনে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ তীর্থযাত্রী পুণ্য লাভের আশায় জড়ো হন এখানে।
‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র হে লৌহিত্য তুমি আমার পাপ হরণ কর’ এ মন্ত্র উচ্চারণে মুুখোরিত করে প্রেমতলা, অন্নপূর্ণা, রাজঘাট, কালীঘাটসহ ১৮টি ঘাটে চলছে স্নান উৎসব।
পুণ্যলাভের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে এ স্নান উৎসবে দেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি ভারত, নেপাল ভুটানসহ কয়েকটি দেশের লোকজনও অংশ নেন এ উৎসবে। স্নানোৎসবে আসা পুণ্যার্থীরা জানান, প্রতি বছর এলগ্নে পাপমোচনের আশায় তারা এই ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসেন।
পুলিশ সুপার জায়েদ আলম জানান, স্নানোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ, র্যাব ও আনসারসহ প্রায় দুই হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছে। গোটা এলাকায় নজরদারী রাখতে ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।খোলা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম ।
প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে তীর্থস্থানের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প। এসব ক্যাম্পে পুণ্যার্থীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসহ তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিপুলসংখ্যক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিয়োজিত রয়েছে এখানে।
২০১৫ সালে সরু রাস্তা ও অতিরিক্ত মানুষের চাপে স্নান উৎসবে আসা ১০ পুণ্যার্থী পদদলিত হয়ে মারা যায়। ওই বছরই সরকার লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে ১২ শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। #