রোকসানা মনোয়ার : রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় গরুর মাংসের নামে খাওয়ানো হচ্ছে ভারত থেকে আনা মানহীন ও পঁচা মহিষের মাংস। খাবার অযোগ্য এসব মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কম দামে তা পাওয়ায় ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন হোটেল- রেস্তোরাঁর মালিকরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউ মার্কেট, হাজারীবাগ, লালবাগ, নবাবগঞ্জ, জুরাইন, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব মাংস বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
রাজধানীর নিউ মার্কেট মাংসের বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানেও এসব মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়। এ বাজারের এক ব্যবসায়ী পরিচয় গোপন রেখে বলেন, সাধারণত জবাই করা গরুর মাংস পিস পিস করে কেটে দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কিন্তু ভারত থেকে আনা এসব মহিষের মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করা হয় না। প্যাকেট খুলে এরপর টুকরো করে কেটে বিভিন্ন হোটেলে-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হয়।
দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি ছিল। এখন তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। দেশের শতকরা ৭০ ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁয় এখন ভারতীয় মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে। ফ্রিজিং অবস্থায় মাংসগুলো আনা হয়।
রাজধানীর শনির আখড়ার সুর্য্যবানু রেস্তোরাঁয় শেফ বলেন, বাজারে গরু ও মহিষের তাজা মাংসের দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় ভারত থেকে আনা মহিষের মাংসের দাম বেশ কম। মাংস কম টাকা দিয়ে কিনতে পারলে লাভ বেশি। এজন্য আমদানি করা মহিষের মাংস কেনা হয়। মানহীন হলেও ভালোভাবে মসলা দিয়ে রান্না করলে বুঝা যায় না এটা গরু নাকি মহিষের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়েছে ফ্রিজিং করা ভারতীয় মহিষের মাংসের ডিপো। ডিপো থেকে ফ্রিজিং ভ্যানের মাধ্যমে মাংসগুলো চলে যায় জুরাইন, নিউ মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাদের এজেন্টদের কাছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৭.৪ মিলিয়ন টন মাংসের চাহিদার বিপরীতে ৮.৪৪ মিলিয়ন টন মাংস উৎপাদন হয়। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি। এজন্য বৈধ অথবা অবৈধভাবে মাংস আনার বিপক্ষে খাত-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিদেশ থেকে মাংস আসলে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদিত পশুর দাম পাবেন না। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে।
সরকারি হিসেবে দেশে চাহিদার চেয়ে গরু-ছাগল বেশি আছে। সেক্ষেত্রে মাংস আমদানি করা হলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এছাড়া অবৈধভাবে আমদানি করাও অপরাধ।