দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের অন্তঃকলহ চরমে উঠেছে। এই দ্বন্দ্ব দলটিকে নতুন কোনো সংকটে ফেলে কি না তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দলটি আবার ভাঙবে কি না সে প্রশ্ন নতুন করে উঁকি দিলেও দলের বর্তমান সিনিয়র নেতারা চাচ্ছেন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। তাহলেই দল আগের চেয়েও আরো ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী হবে। জাপা নেতা আশা প্রকাশ করেছেন দলের বর্তমান বিরোধ সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে উভয় পক্ষের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার সভাপতিমণ্ডলীর সভা ডাকেন জি এম কাদের। সভায় অধিকাংশ নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দুপক্ষের উত্তাপে শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, জাপার আজকের বৈঠকে বেশকিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি থাকবে না। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। সম্প্রতি যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটি নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকবিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সেটি করার জন্য একটি কমিটি করে চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দুই শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি সংকট সমাধানে রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
পার্টির এক প্রেসিডিয়াম ও দলীয় সংসদ সদস্য তার বক্তব্যে বলেন, আমার কাছে মেসেজ আছে সাদ এরশাদ ম্যাডামকে জিম্মি করে রেখেছেন। ঢাকায় অবস্থানরত পার্টি থেকে বহিষ্কৃত কয়েকজনের সমন্বয়ে শাদ ম্যাডামের মোবাইল সিজ করে রেখেছেন। তাদের আস্থাভাজন ছাড়া কাউকে রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হঠাৎ করেই আগামী ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন ডেকে বসেন। সেটি আবার জানতেন না দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সেদিনই বিষয়টি স্পষ্ট করেন তার অনুসারী নেতারা। পরদিন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল বৈঠক করে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীকে চিঠি দেন।
রওশনপন্থি এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের বসলেই মীমাংসা হয়ে যাবে। হয়তো শেষ পর্যন্ত সেটাই হবে। রওশন চিকিৎসার জন্য এখন দেশের বাইরে। অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা আছে, যদিও তা পিছিয়ে যেতেও পারে। তিনি দেশে এলে দুই নেতাকে এক টেবিলে বসানোর একটি উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। দলের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, ‘আমার মনে হয় না রওশন এরশাদ দলের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবেন।
জাতীয় পার্টির জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সম্প্রতি বলেছেন, তারা বিএনপির সঙ্গে যাবেন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নাও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেওয়া হবে।