রাজধানীর শনির আখরা এলাকার এক বাসিন্দা ইমরান। ছেলে-মেয়ের জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে ফিরে আসেন। সেখানে তাকে বলা হয়, জন্মনিবন্ধন সেবা নিতে তাকে যেতে হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। সেখানে যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন সার্ভার ডাউন থাকায় এ মুহূর্তে তারা সেবাটি দিতে পারছেন না। এভাবে প্রায় এক মাস ধরে সেবাটি পাওয়ার জন্য তিনি বারবার আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু তাকে বলা হয়, তারা সার্ভার পাচ্ছেন না। যে কারণে সেবাটি আপাতত বন্ধ।
প্রায় মাসখানেক ঘুরেও জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারেননি তিনি। পরে যখন আবার যান তখন বলা হলো, সন্তানের জন্মনিবন্ধন নতুন করে করাতে হলে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে অনলাইনে। তবে তাদের জন্মনিবন্ধন ছিল ১৭ ডিজিটের। ওই সময় অনলাইন ছিল না।
ইমরান বলেন, আমাদের জন্মনিবন্ধন ঠিক করাতে চলে গেলাম নিজ জেলায়। কিন্তু অনেক আগের জন্মনিবন্ধন বলে সেখান থেকে ঠিক করানো সম্ভব হয়নি। ঢাকায় ফিরে এসে আবার সেই আঞ্চলিক কার্যালয়ে গেলাম। ততদিনে সার্ভার ঠিক হয়েছে। একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম কিছু টাকা খরচ করলে দালালরা জন্মনিবন্ধন করার ভোগান্তি কমিয়ে দিতে পারেন। সেই অনুযায়ী আঞ্চলিক কার্যালয়ের আশপাশে থাকা এক দালালের শরণাপন্ন হলাম। দুই হাজার টাকার বিনিময়ে খুব সহজে তিনি জন্মনিবন্ধন বের করে দিলেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মানুষের ভোগান্তি দূর করতে উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এবং যেকোনো সংশোধনীর জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়েছে সিটি করপোরেশনের কাছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই এ সেবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে শুরু হবে। পাশাপাশি যেকোনো সংশোধনীজনিত সেবা সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাওয়া যাবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের মেয়র যদি চান তার ক্ষমতাবলে নিবন্ধকের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের দিতে পারেন। এছাড়া সহকারী নিবন্ধক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ওয়ার্ড সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করেছে সিটি করপোরেশন। ১৫তম করপোরেশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মাসুম গণি বলেন, জন্মনিবন্ধন সেবায় ভোগান্তি দূর করতে পজিটিভ সম্মতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন এবং আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সার্বিক সংশোধনী সেবা দিতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। প্রাথমিকভাবে পুরাতন ৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে এ সেবা দেওয়া হবে। নতুন ১৮টি ওয়ার্ড কার্যালয়ে এ সেবা যেতে কিছুটা সময় লাগবে। পাশাপাশি ওয়ার্ড সচিব নিয়োগের কাজও শুরু হচ্ছে।