উত্তম কুমার হেমন্ত :
সবুজের মাঝখানে সাদা হালকা বেগুনি ও গোলাপী রঙে বিভিন্ন খালবিল, ডোবার জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুটে উঠেছে অযত্নে বেড়ে উঠা কচুরি পানার ফুল। দেখলে মনে হবে যেন ফুলের চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে জলাশয় গুলো। প্রস্ফুটিত এইসব ফুলের অপরুপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুল প্রেমী সহ-নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের মাথা ধুল্ল্যার ছড়ার পাড় নামক এলাকায় ফুলবাড়ী সদর টু বালার হাট পাকা সড়কের পাশে মুক্ত জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরি পানার ফুল গুলো। সড়কের পাশে এই অসাধারণ কচুরি পানার ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নজর কাড়ছে সবার দু'চোখ দৃষ্টি পটে মনোমুগ্ধকর কচুরি পানার ফুল দেখে মানুষের হৃদয় জড়িয়ে যায়।
জানাগেছে কচুরি পানা মুক্তভাবে ভাসমান এক ধরনের বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস অ্যামেরিকায়, চকচকে সবুজ ডিম্বাকৃতির পাতা বিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিভাগে জন্মায় ও বংশবিস্তার করে। এর কান্ড থেকে দীর্ঘ তন্ত্রময় বহুধা বিভক্ত মুল বের হয় যার রং বেগুনি কালো। এক একটি কান্ড থেকে ছয়টি পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়ে থাকে এবং ফুলের পাপড়ি গুলো অত্যন্ত নরম হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদ দ্রুততম ভাবে বংশ বিস্তার করে থাকে, এদের সাতটি প্রজাতি রয়েছে। সৌন্দর্য্য বিলানোর পাশাপাশি এই উদ্ভিদ টি মানুষ ও প্রকৃতির নানা উপকারে আসে।এটি দেশীয় মাছের বংশবিস্তার ও জলাশয়ের পানি ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিছু কিছু মাছ এটাকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে,আবার এটি থেকে তৈরি জৈব সার কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পানির উপর কচুরি পানার স্তূপ করে এর উপর সবজি চাষ করা যায়, এছাড়াও এটি গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবমিলিয়ে এই কচুরি পানার বহুমাত্রিক গুণ রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে খাল বিল,ডোবা, নিচু জমি পুকুর ও জলাশয়ে ফুটে আছে কচুরি পানার ফুল। ফুটন্ত এইসব ফুলের সৌন্দর্যে আসা-যাওয়ার পথে বিমোহিত হচ্ছেন ফুল প্রেমী মানুষ সহ-পথচারীরাও বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের খেলনা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই ফুল। সৌন্দর্য প্রেমীরা এসব ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন আঙ্গিকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে আনন্দ পান, আবার কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে নিজেকে ও ক্যামেরা বন্দি করছেন পরম আনন্দে। কচুরি পানা ফুলের মুগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় স্থানীয়দের।ছড়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা সাজু কাজি, জোনাব আলী ও বাবুল মিয়া বলেন,বর্তমানে এলাকার প্রায় জলাশয়েই কচুরি পানার ফুল ফুটে রয়েছে,আমরা জলাশয় পরিস্কার করে এই সব কচুরি পানা উপরে তুলে রোদে শুকিয়ে রান্না বান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি।
উপজেলার বেড়াকুটি হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুল প্রেমী প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, মুক্ত জলাশয়ে এক সঙ্গে ফুল ফুটে থাকার যে সৌন্দর্য তা অন্যকোন ফুল থেকে পাওয়া যায় না।এই ফুলের পাপড়ি নকশা খচিত হত্তয়ায় এর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয় মানুষ। কচুরি পানা ফুল গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি ফুল।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, কচুরি পানা এক ধরনের বহুবর্ষজীবী ভাসমান উদ্ভিদ। কচুরি পানার মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুত করা যায় যা কৃষি কাজে আসে, বর্তমানে কোথাও কোথাও এই উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি জৈব সার বাণিজ্যিক ভাবে বেচাকেনা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ভাসোমান সবজি চাষেও কচুরি পানা ব্যবহার করা হয়, এছাড়াও এই উদ্ভিদ টি গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানো সহ-নানাবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের ফুল ও দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর,এর বংশবিস্তার খুব দ্রুততম ভাবে হয়ে থাকে। এজন্য নিচু ফসলি জমিতে বিশেষ করে ধানের জমিতে এর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি,তা নাহলে দ্রুত বংশবিস্তার করে ফসলের ফলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।