
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা মঙ্গলবার রাত
থেকে শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামীকাল
বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারই প্রথম সিটির প্রায় ১২ লাখ ভোটার সকাল
৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএম মেশিনে ভোট দেবেন। এখন সব ভোটারের
অপেক্ষা ভোট উৎসবের জন্য।
নির্বাচনে আট মেয়র প্রার্থী, ২৪৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং
৭৯ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এদের মধ্য একজন মেয়র,
৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে
১৯ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। প্রায় ৪০ লাখ নগরবাসীর সেবার জন্য
কারা হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি, এটাই নির্ধারণ হবে ২৫ মের এ
নির্বাচনে। অবশ্য এরই মধ্যে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হয়েছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দিকে শুধু নগরবাসী নয়, সারা দেশ এমনকি বিশ্বের অনেক
রাষ্ট্রের মানুষ তাকিয়ে আছে। অবশ্য এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। প্রথমে
মানুষের ধারণা ছিল নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। কিন্তু বিএনপি পরিবারের
সন্তান এবং সাবেক মেয়রের মা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ নির্বাচন পেয়েছে নতুন মাত্রা।
অনেকের মতে, এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে তুমুল
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া
গেছে।
এদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে
নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমারা প্রস্তুত।
এরই মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস
সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার সদস্য
নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকবেন। নির্বাচনী এলাকার ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি
ভোট কক্ষ থাকবে। নির্বাচনে ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ
৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ এবং ১৮ জন
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার বা ভিডিপি
সদস্যসহ ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এপিবিএন ও
ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স সিটির প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি,
প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে স্ট্রাইকিং ফোর্স একটি এবং মহানগরের
আটটি থানায় একটি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এছাড়া প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে
একটি করে টিমসহ র্যাবের ৩০টি টিম, পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক
প্লাটুন হিসেবে বিজিবির ১৩ প্লাটুন সদস্য এবং ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট
নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোটগ্রহণের পূর্বের
দুই দিন (মঙ্গলবার থেকে) ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোটগ্রহণের পরের দুই দিন (২৭ মে)
পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা আসতে শুরু
করেছেন গাজীপুরে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায়
ভারী যানবাহনসহ ট্রাক,
পিকআপ, মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং
আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন, আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল ও বিস্ফোরক
দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। এ বিষয়ে
জিএমপির জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বুধবার (২৪ মে) রাত ১২টা থেকে ২৫ মে রাত
১২টা পর্যন্ত যে কোনো ধরনের ভারী যানবাহনসহ ট্রাক, পিকআপ
ইত্যাদি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। একই সঙ্গে মঙ্গলবার (২৩ মে) রাত ১২টা
থেকে ২৬ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া
নির্বাচনী এলাকায় ২৩ মে ভোর ৬টা থেকে ২৭ মে রাত ১২ পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন,
আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধের পাশাপাশি সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য
ব্যবহার এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।