রোকসানা মনোয়ার : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কার্যকলাপ নিয়ে যে সমালোচনা ও বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কমিটি বাণিজ্য, হল দখল, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, শিক্ষক লাঞ্ছনা, প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শাখা কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে। এর জন্য ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার অদক্ষতাকে দায়ী করছে খোদ সংগঠনেরই একাংশ।
ছাত্রলীগ নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত হচ্ছে ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। এজন্য অবিলম্বে সম্মেলন দাবি এবং বর্তমান কমিটির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য বিচারের দাবিও করছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ।
সংগঠনের সূত্র বলছে, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ কমিটির অনেক নেতা। অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ‘জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক’ লিখে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এতে ঠিকমতো মূল্যায়ন না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ।
সংগঠনের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেই গঠনতন্ত্র মেনে চলছেন না। তারা ছাত্রলীগকে নিজেদের বলয় কাজে ব্যবহার করছেন। যেটা সংগঠনের জন্য অশোভনীয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘সম্মেলন দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে বারবার অবহিত করার পরও তারা আমাদের কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না। নেতৃত্ব বিকাশের পথ যেভাবে নষ্ট হচ্ছে অবিলম্বে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন করা প্রয়োজন। এভাব একটা সংগঠন চলতে পারে না। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরলে আশা করি কার্যত পদক্ষেপ নেবেন।
শুধু বর্তমান কমিটির নেতারাই নন, সাবেক ছাত্রনেতারা জয়-লেখকের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এ থেকে সংগঠনের উত্তরণের কোনো পথ নেই। বিতর্কিত যেই হোক লাগাম টেনে ধরতে হবে।
সম্প্রতি ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের দুই গ্রুপের কর্মকাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ইডেনের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। এতে রিভার বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি, ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যাওয়া, সিট বাণিজ্য, ক্যান্টিন থেকে চাঁদা দাবি ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হলের ছাত্রীদের কটূক্তি ও অশালীন বক্তব্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুধু অশালীন বক্তব্যই নয়, নিজেদের মধ্যে চুলোচুলি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হন ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এনিয়ে ইডেনে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছ এবং ১৬ জন নেত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তারা বলছেন, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জয়-লেখকের নিজেদেরই মেয়াদ নেই। তারা বহিষ্কারের অধিকারও হারিয়েছেন।
শুধু ইডেন কলেজ নয়, দেশজুড়ে বেশ কিছু শাখা কমিটিতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বরাবরের মতোই নিজেদের পক্ষে সাফাইগান। তিনি বলেন, একটি পক্ষ বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে লেগেই থাকে। তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে থাকতে পারে।