Logo
শিরোনাম

দুনিয়া যার কাছে খোলা আঙিনার মতো

প্রকাশিত:সোমবার ২১ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ |

Image

দুনিয়া যার কাছে খোলা আঙিনার মতো, তিনি কাজী আসমা আজমেরী। তার আছে জাদুর মতো শক্তি। আর আছে স্বপ্নের সাগর। স্বপ্ন ভাসিয়ে দুনিয়াকে বশ মানিয়েছেন এই নারী। এখন পর্যন্ত পা রেখেছেন ১১৫টি দেশে।

কিভাবে সম্ভব!

একে তো তিনি নারী! তার ওপর সবুজ পাসপোর্টধারী! দুটোই দুনিয়া ভ্রমণের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওই সব দেয়াল টপকাতে পেরেছেন বলেই কাজী আসমা আজমেরীকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।

সমাজ আর বাস্তবতার দেয়াল টপকানো খুব সহজ নয়। আবার হৃদয় থেকে চাইলে খুব কঠিনও নয়। আজমেরীর বেলায় কঠিন ছিল না। কারণ তার চোখ খুলে গিয়েছিল। খোলা চোখে দুনিয়াকে দেখেছেন। আর পায়ের ছাপও রেখে এসেছেন।

বাংলাদেশের বাস্তবতা বলছে, এমনটি অসম্ভব !

হ্যাঁ, আসমাকেও একই কথা জানিয়েছিলেন তার এক বন্ধুর মা।

সময়টা ছিল আজ থেকে ১২ বছর আগের। তখন আসমার চোখ অন্য আট-দশজনের মতোই ছিল। সবাই যা দেখতে পেত, তিনিও তাই দেখতেন। তবে সবাই যেমন করে ভাবতেন। তিনি ভাবতেন একটু অন্য রকম করে।

আসমার জেদ ছিল বাড়াবাড়ি রকমের। আর ছিল দারুণ চঞ্চলতা। তবে ও দুটোর কোনোটাই ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। বাবা কাজী গোলাম কিবরিয়া প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা কাজী শাহিদা আহমেদ বনেদি পরিবার থেকে এসেছেন। তাদের প্রথম সন্তান আসমা। আছে ছোট এক ভাই।

বাবা-মা আর দুই সন্তানের পরিপাটি পরিবার। আসমার জীবনের শুরুটা খুব রকম পরিপাটিই ছিল। খুলনায় পরিবারের সাথে থেকেই স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে চলে আসেন ঢাকায়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ, ইস্টওয়েস্ট থেকে এমবিএ শেষ করেন।

কেতাবি শিক্ষা আর পারিবারিক ইতিহাস দেখলে আসমার একজন ব্যবসায়ী হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি হলেন ট্র্যাভেলার।

কেন?

তার চোখ খুলে গিয়েছিল বলেই বিশ্বকে বাড়ির আঙিনার মতো করে দেখতে পেয়েছিলেন। অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন।

২০০৭ সালে থাইল্যান্ড যান আসমা। ওটা ছিল গতানুগতিক ভ্রমণ, অন্য আট-দশজন যেমন করে যান। তখনো মাথায় দুনিয়া চষে বেড়ানোর চিন্তা আসেনি তার।
এক দিন শুনলেন তার এক বন্ধু ২৭টি দেশ ঘুরে এসেছেন। সেই বন্ধুকে দেখতে অনেকেই ভিড় করল। আসমাও গেলেন। ভ্রমণফেরত বন্ধুর দেখা পেয়ে তিনিও ভাসলেন আবেগে। বললেন, ‘পৃথিবী দেখতে আমিও যাবো’। কথাটা শুনলেন ওই বন্ধুর মা। তিনি আসমাকে অনেকটা কটু ভাষায় জানিয়ে দিলেন, একজন নারীর পক্ষে এটা সম্ভব নয়।

জেদি মেয়ে আসমা। কথাটা সহজভাবে নিতে পারলেন না। জেদ চেপে রাখলেন, এক দিন পৃথিবী দেখতে যাবেন-ই। কিন্তু চেপে রাখা এসব জেদ বেশি দিন লালন করা যায় না। অন্য বাস্তবতার সাথে বাতাসেই মিলিয়ে যায়। আসমার বেলায়ও তাই হলো।

তা হলে তিনি কী করে ট্র্যাভেলার হয়ে উঠলেন?

এবার জানুন কাজী আসমা আজমেরীর থেকেই, ‘নেপাল বেড়াতে গিয়ে আমার চিন্তাটা পাল্টে গেল। তখন ২০০৯ সাল। আমার শরীর ও মন খারাপ ছিল। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন হাওয়া বদল করার। হাওয়া বদলাতে অনেকে নেপালকেই বেছে নেয়। আমিও তা-ই নিলাম।’

তার পর?

আজমেরী বললেন, ‘হাওয়া বদলাতে গিয়ে নিজেই বদলে গেলাম। ঘটনাটা ঘটে যায় এক ঘণ্টার মধ্যে। কাঠমান্ডু থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে এভারেস্ট দেখতে গেলাম। হিমালয়ের মাথার ওপর যখন কপ্টার উড়ছিল, আমার মনে হলো কুয়ো থেকে বেরিয়ে এসেছি। এত দিন আটকে ছিলাম। বদ্ধ ছিলাম সামাজিক দেয়ালে। অথচ পৃথিবী বসে আছে আমার জন্য, খোলা আঙিনা নিয়ে। অনেক অনেক অজানা নিয়ে। তখন পৃথিবীকে দেখার প্রবল ইচ্ছা হলো। হিমালয়ের মাথার ওপর কপ্টারে চক্কর দিতে দিতেই সিদ্ধান্ত নিই আমি পৃথিবী দেখব।’নেপাল থেকে ফিরে এসে নিজের গয়না বিক্রি করে দিলেন কাজী আসমা আজমেরী। ওই টাকা দিয়ে বেরিয়ে যান খোলা আঙিনায়। সেই যে শুরু, এখনো চলছে।

এখন তিনি আছেন নিউজিল্যান্ডে। এক শ’ ছাড়িয়ে আরো ১৫টি দেশের মাটি ছুঁয়ে আসা এই নারী ওই দেশে খণ্ডকালীন কাজ করছেন। কাজের বিরতিতে বাংলাদেশেও আসেন। আবার কাজে ফিরে যান। এবং ছোট্ট কচ্ছপের মতো পিঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে যান দুনিয়ার আঙিনায়।

আজমেরীর এই কচ্ছপযাত্রা মোটেও প্রমোদ ভ্রমণ নয়। অনেকটাই দুঃসাহসিক। তিনি এক্সট্রিম ট্র্যাভেলার। কেবল প্রকৃতির সুন্দর নয়, তিনি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যান মানুষের সুন্দরকেও। ঢুকে যান মানুষের কৃষ্টির ভেতর। ডুব দিয়ে আসেন সংস্কৃতি আর ইতিহাস থেকে।

ওই সবের সাথে নীল রঙের সাগর আর একটু গরম হাওয়া। আসমার হৃদয়ে ঢেউ তুলতে এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না।

আর তিনি যেটা চান, দেশের মানুষের ভালোবাসা। কারণ তিনি দেশকে ভালোবাসেন। এত বছর নিউজিল্যান্ডে থেকেও ওই দেশের পাসপোর্ট নেননি। তিনি কেবল সবুজ পাসপোর্টের মালিক হয়েই থাকতে চান।

আসমার এই জেদের পেছনেও আছে আরেক গল্প। জানুন তার থেকেই, ‘তখন ২০১০ সাল। আমি গিয়েছিলাম ভিয়েতনামে। দিনটা মনে আছে ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ। ওই দিন সাড়ে ছয় ঘণ্টা আমাকে ইমিগ্রেশনে আটকে রাখা হয়েছিল কেবল বাংলাদেশী পাসপোর্টের কারণে।’

বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকলে সাড়ে ছয় ঘণ্টা আটকে থাকতে হবে কেন?

‘কারণ অনেক দেশ সবুজ পাসপোর্টকে বিশ্বাস করতে পারে না। অনেকেই বাংলাদেশী সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করতে গিয়ে ওই দেশে থেকে যায়। তাই কিছু কিছু দেশে সবুজ পাসপোর্ট দেখলেই সন্দেহ করা হয়।’

কাজী আসমা আজমেরী বললেন, ভিয়তেনামে তার সাথে যা ঘটেছিল, ‘ভিয়েতনাম ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে ২৩ ঘণ্টা কারাগারে আটকে রেখেছিল। তখন মনে অনেক ক্ষোভ জন্মেছিল। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম সেই রাতে। ওদের অজুহাত ছিল আমি রিটার্ন টিকিট করিনি। হোটেল বুক করিনি ইত্যাদি ইত্যাদি।’

সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে আরো কোনো বাধার মুখোমুখি হয়েছেন?

‘হ্যাঁ, বরাবরই হতে হয়। কিন্তু আমার জেদের কাছে ওসব বাধা টিকতে পারে না। ভিয়েতনামের ঘটনার পর ওই বছরই আমি গিয়েছিলাম সাইপ্রাস। দেশটিতে বাংলাদেশীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা আছে। কিন্তু তার পরও ছাড় পাইনি। আগেরবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিতে ভুল করিনি। কিন্তু ওসব থাকার পরও সবুজ পাসপোর্ট দেখে আমাকে সন্দেহ করা হয়। সাইপ্রাসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে খাঁচায় ঢুকিয়ে দেয়। খাঁচার ভেতর ২৭ ঘণ্টার ওই লজ্জা কখনো ভুলতে পারব না। অপমানে আমি প্রতিজ্ঞা করি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়েই বিশ্ব ভ্রমণ করব। দেখিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশীরা কাজ করতে যেমন অন্য দেশে যায়। তেমনভাবে ভ্রমণ করতেও যায়।

সবুজ পাসপোর্টের এই জটিলতা কিভাবে দূর করা সম্ভব ?

এর জন্য আমি কাজ করছি। চেষ্টা করছি বাংলাদেশের সবুজ রঙের পাসপোর্টের মানোন্নয়নে সহায়তা করতে। যারা অবৈধভাবে বিদেশ যান, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করছি। সচেতন করছি। ভ্রমণ করতে গিয়ে থেকে যাওয়ার প্রবণতা দূর করতে বলছি। সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণে মানুষকে উৎসাহিত করছি।’

কাজী আসমা আজমেরী চান তার মতো করেই বাংলাদেশী আরো তরুণের সামনে খুলে যাক পৃথিবীর দরজা। এই দরজা সহজে খুলতে হলে চাই যুৎসই চাবি। আর এই চাবির কারিগরদের একজন তিনি নিজেকে মনে করেন। কেবল আসমাই নন, এই মনে করাটা গোটা দেশবাসীর। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বও এখন তাকে জানে।

কাজী আসমা আজমেরী, দুনিয়ার কাছে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন একজন ট্র্যাভেলার হিসেবে। ডাকসাইটে গণমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। প্রকাশ করেছে আজমেরীর কচ্ছপযাত্রার বিশদ।

যিনি এতগুলো দেশ ঘুরেছেন, তার ঝুলি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় ভরপুর থাকা স্বাভাবিক। আসমা জানালেন, সেসব তো আছেই। তবে একজন নারী হিসেবে যতটা বিপদের মুখে পড়ার কথা, ততটা তাকে পড়তে হয়নি। কারণ তিনি ছিলেন সদা সতর্ক।

সতর্ক থাকলেও কখনো কখনো পথিককে পথভোলা হতে হয়। আসমা জানালেন এমনই এক অভিজ্ঞতা, ‘একবার চেক রিপাবলিক থেকে পোল্যান্ড যাবো বলে ঠিক করেছি। যাচ্ছিলাম সড়কপথে। কিন্তু সড়কটা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকবে ঠাহর করতে পারছিলাম না। অনেক অনেক পথ যাওয়ার পর জানতে পারলাম, আমি চলে এসেছি মরক্কো।’

সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। আসমা আজমেরী সলো ট্র্যাভেল করেছেন। অর্থাৎ পৃথিবীর বেশির ভাগ এলাকা ঘুরেছেন একা একাই। খুব দরকারে কিছু এলাকায় অন্য ট্র্যাভেলারদের সাথে দল বেঁধেছেন। এ ছাড়া একলা চলো নীতিই তার।

খোলা পৃথিবীতে নাঙা আকাশের নিচে একা এক নারী!

অনেকে হয়তো এতটা ভাবার সাহসই রাখেন না। কিন্তু আসমা সেটা করে দেখিয়েছেন। কেবল একা থাকার ঝুঁকি নয়, তিনি নিয়েছেন হিচহাইকিংয়ের ঝুঁকিও। ভ্রমণের পরিভাষায় এই শব্দটার অর্থ হলো, বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করা।বাংলাদেশে ‘হিচহাইকিং’ পরিচিত না হলেও ইউরোপ, আমেরিকায় শব্দটার সাথে পরিচয় আছে। ওখানকার ট্রাক ড্রাইভাররা ‘বুড়ো আঙুল’ দেখে অভ্যস্ত। কোনো ট্র্যাভেলার যদি সড়কের পাশে বুড়ো আঙুল তুলে দাঁড়ান। তখন ট্রাক অথবা অন্য কোনো গাড়ির চালক বুঝে যান এর অর্থ। গাড়ি যে দিকে যাচ্ছে, ট্র্যাভেলারের গন্তব্যও যদি সে দিকে হয়, তা হলে তাকে তুলে নেন চালক। হিচহাইকিংয়ে ট্র্যাভেলারদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয় না। বিনিময় হয় হাসি ও সংস্কৃতির।

কাজী আসমা হিচহাইক করেছেন জর্জিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়। অ্যাডভেঞ্চার বেশি হয়েছে জর্জিয়ায়। তবে হিচহাইক করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়তে হয়নি তাকে। আসমা বললেন, ‘নারীদের জন্য হিচহাইক-এ চ্যালেঞ্জ আছে। আমি অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তবে ভাগ্য ভালো ওরকম বিড়ম্বনা হয়নি। তা ছাড়া রাতে কারো সাথে হিচহাইক করিনি। ২০১০ সালের একটা ঘটনার কথা বলা যায়। তুরস্কে গিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত একটা গাড়িতে ছিলাম। চালক কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। ওর আচরণ দেখে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই।’

এক শ’ পেরিয়ে আরো ১৫টি দেশ, চাট্টিখানি কথা নয়। সবগুলোর তালিকা দিতে গেলে প্রতিবেদনের বড় একটি অংশ বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়াবে। আর সব দেশে আসমার অভিজ্ঞতা জানাতে গেলেও দরকার হতে পারে বড় এক কেতাব রচনা করা। তার চেয়ে ভালো ভূমির বৈশিষ্ট্য ধরে ধরে তার কয়েকটা অভিজ্ঞতা জেনে নেয়া।

আসমা জানালেন, মরুভূমি তার কাছে মোহময়। মরুর চিক চিক করা ক্যানভাস, বালিয়াড়ির ঢেউ জাদুর মতো। তিনি বললেন, ‘সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল সাহারা মরুতে। ওখানে পাঁচ দিনের একটা ট্রিপ ছিল। আমাদের সাথে ছিল ১১টি উটের বহর। মাথার ওপর গনগনে সূর্য, নিচে লাল রঙের তপ্ত বালু। অসাধারণ এক অনুভূতি। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা করে উটের পিঠে করে চলতাম। এক দিন বালুঝড় আমাদের তছনছ করে দিতে চাইল। শরীরে উড়না পেঁচিয়ে কোনোরকম বাঁচতে পেরেছিলাম। তবু চোখে মোটা মোটা বালু ঢুকে গিয়েছিল। এমন পরিপুষ্ট বালু চোখের ভেতর ব্যাপক যন্ত্রণা দেয়।’

আজমেরী জানালেন, সাহারা মরুতে নিজেকে ইবনে বতুতা মনে হয়েছিল তার।

মরুর পর আসা যাক বরফের কাছে। শুনুন তার থেকেই, ‘আমি বেশ কিছু দিন শিকাগোতে থাকতাম। প্রতি সকালে হাঁটতে বের হতাম। অক্টোবর-নভেম্বরে মাঝে মধ্যে হাঁটু পর্যন্ত তুষার জমে যেত। চলতে কষ্ট হতো। তবে অনুভূতি ছিল দারুণ। একবার লন্ডন থেকে প্যারিসে যাওয়ার সময় বরফ আমার পথ আগলেছিল। পরের সকালে প্যারিস পৌঁছতে পেরেছিলাম। তখন আমার পুরো শরীর তুষারঢাকা সাদা।

আসমা জানালেন, তার আরো একটি রোমাঞ্চকর সময়ের কথা। সেই সময়টা কেটেছিল মঙ্গোলিয়ায়। দেশটা যাযাবরদের। রাজধানী উলানবাটোর ছাড়া প্রায় সবটাজুড়েই যাযাবরদের মতোই বসতি। দেশের লোকেরা পশু চরায়। থাকে দুই রকম বাড়িতে। শীতে এক রকম। গ্রীষ্মে অন্য রকম। পশুর জন্য তৃণভূমি পেতে যাযাবরদের রকম পাল্টাতে হয়।

তিনি বললেন, ‘মঙ্গোলিয়ায় চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্যের গুপ্তধন দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানে যেতে হয় ঘোড়ায় করে। মঙ্গোলিয়ানরা কিন্তু ঘোড়ার মাংসও খায়।’
এমন করে নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শোনান কাজী আসমা আজমেরী। এসব মন দিয়ে শোনে স্কুল-কলেজের কিশোর-তরুণরা। এরা আসমার গল্প থেকে রসদ নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন তৈরি করে।

আসমা বিশ্বাস করেন, এক দিন এই স্বপ্নবাজরাই দুনিয়া জয় করবে।


আরও খবর



রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট

প্রকাশিত:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দেশ। ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। বৃষ্টি এসে তাপ কমাবে মানুষ সেই আশায় থাকলেও গত এক মাস ধরে বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। মাঝেমধ্যে দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হলেও তা গরম কমাতে খুব একটা সহায়ক ছিল না। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে অধিক আর্দ্রতায় শুকাচ্ছে না ঘাম, কাপড় ভিজে লেপ্টে যাচ্ছে শরীরে, আর দ্বিগুণ হচ্ছে অস্বস্তি। এই যখন পরিস্থিতি, এর মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহে। বাসা-বাড়িতে পানি না পেয়ে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।

গত কয়েক দিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাড্ডা, নতুন বাজার, রামপুরা, মেরুল, ডিআইটি, মালিবাগ, বাসাবো, মিরপুর, পুরান ঢাকা, মুগদা, মান্ডা, লালবাগ, রায়েরবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানি পাচ্ছেন না ঠিকঠাক মতো।

হঠাৎ রাজধানীর এতগুলো এলাকায় পানির এ সংকটের কারণ জানতে গেলে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েক দিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। মূলত যেখানকার ডিপ টিউবওয়েলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সেসব এলাকায় কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েকদিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। সেসব জায়গায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আবার কিছু এলাকায় ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপ কম থাকায় সেখানেও পানির সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে লাইনে পানি না পেয়ে যারা টাকার বিনিময়ে ওয়াসার গাড়ির পানি অর্ডার করছেন তারাও ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার আওতায় ১০টি মডস জোনে পানির চাহিদা জানানো হলে বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে পানি পৌঁছে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি ছয় হাজার লিটারের একটি বড় গাড়ির জন্য নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি থাকায় সিরিয়াল দিয়ে, ফোন করেও এসব পানির গাড়ি পাচ্ছেন না পানি সংকটে থাকা বাসিন্দারা। অভিযোগ এসেছে, ৬০০ টাকার গাড়ির জন্য হাজার-বারোশ টাকা দিয়েও সিরিয়াল পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাফায়েত ইসলাম। গত ৪-৫ দিন ধরে বাসায় পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে ওয়াসার লাইনে পানি পাই না আমরা। এত গরমে মানুষের জীবন যায় যায় অবস্থা, এর মধ্যে বাসায় পানি না থাকা যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো সম্ভব না। এই ৪-৫ দিন গোসল নেই ঠিকমতো, বাথরুমে যাওয়া যায় না। আমাদের সমস্যা নিরসনে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না ওয়াসাকে।

যাবির হাওলাদার নামে একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা ওয়াসার মডস জোনে বারবার যোগাযোগ করছি। বারবার অর্ডার দিয়েও আমরা পানি পাচ্ছি না। পানির গাড়ি পেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ৬০০ টাকার পানির গাড়ি দ্বিগুণ টাকা দিয়েও অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

একই অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েও। এ ব্যাপারে মডস জোনের আওতায় বাড্ডার বৌবাজার এলাকার ওয়াসার পাম্পের অপারেটর মনিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে পানি সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মেশিন চালিয়ে ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে কিছু কিছু এলাকায়। গরমে পানির চাহিদাও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পানি সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে; মূলত সেই সব এলাকাতেই কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা বলছে, প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে তাদের। গরমকাল এলে রাজধানীতে পানির চাহিদা থাকে ২৬০ কোটি লিটার। সে হিসাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকার কথা না। তবে, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরশীলতাই পানির বর্তমান সংকটের কারণ।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনো পূরণ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করা পানি আসছে ভূগর্ভ থেকে।

প্রসঙ্গত, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসার সব মডস জোনের কার্যক্রম তদারকির জন্য ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীতে পানির সমস্যা সমাধানে এসব টিম আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিং করবে। গঠন করা এই ১০টি মনিটরিং টিম জোনভিত্তিক পাম্পগুলো নিয়মিত ও আকস্মিক পরিদর্শন করবে। পাম্প চালকরা যথানিয়মে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে টিমগুলো। পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করবে ঢাকা ওয়াসার এ কমিটি।

 


আরও খবর



জাপানে চালু হলো সিক্স-জি

প্রকাশিত:সোমবার ১৩ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ |

Image

বিশ্বের অনেক দেশই যখন ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের স্বপ্ন দেখছে সেখানে জাপানের প্রযুক্তিবিদরা চালু করে ফেলল সিক্স-জি নেটওয়ার্ক। যার গতি ফাইভ-জির চেয়ে ২০ গুণ বেশি।

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের প্রথম সিক্স-জি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছে জাপান। নতুন এ প্রটোটাইপ ডিভাইসটি তৈরি হয়েছে ডোকমো, এনটিটি করপোরেশন, এনইসি করপোরেশন এবং ফুজিটসুসহ দেশটির টেলিকম কোম্পানির যৌথ প্রচেষ্টায়।

গত মাসে নতুন ডিভাইসটির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে দাবি করা হয়, তাদের সিক্স-জি প্রোটোটাইপটি ফাইভ জির চেয়েও ২০ গুণ বেশি দ্রুত গতিসম্পন্ন। প্রোটোটাইপটি ১০০ হার্জ ব্যান্ড ব্যবহার করে ১০০ জিবিপিএস গতি অর্জন করতে পারে। আর বাইরে একই গতি অর্জন করতে এটি ব্যবহার করে ৩০০ হার্জ ব্যান্ড।

বর্তমান বিশ্বে মোবাইল নেটওয়ার্কিংয়ে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি বলে বিবেচিত ৫জি। এর তাত্ত্বিক গতি সর্বোচ্চ ১০ জিবিপিএস। তবে দেশভেদে ৫জি নেটওয়ার্কের গতি ভিন্ন ভিন্ন।

জাপান ছাড়াও সিক্স-জি নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, সিক্স-জির আগমনের সঙ্গে মানুষ রিয়েল-টাইম হলোগ্রাফিক যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে। ভার্চুয়াল এবং মিশ্র বাস্তবতার জগতেও মানুষ নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানের নতুন প্রোটোটাইপটি ৩২৮ ফুট এলাকায় পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় যে ফল এসেছে, তা অবশ্যই প্রেরণাদায়ক। তবে, একে এখনই চূড়ান্ত সাফল্যের মাপকাঠিতে বিচার করা যায় না বলে মত প্রযুক্তিবিদদের।

তাদের মতে, নতুন সিক্স-জি শুধুমাত্র একটি ডিভাইসে পরীক্ষা করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার রয়ে গেছে এখনও। তাছাড়া নতুন এ প্রযুক্তি কার্যকর করতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলোকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে এবং সিক্স-জি ইনবিল্ট অ্যান্টেনাসহ নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনতে হবে।


আরও খবর

হোয়াটসঅ্যাপ নতুন ফিচার আসছে

শনিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৪




গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ |

Image

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা চুক্তির চেয়ে গত দুই থেকে তিন বছর বেশি পানি পেলেও এবার চুক্তির চেয়ে অনেক কম পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। শুকনো মৌসুমে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর উজান ও ভাটিতে পদ্মার পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা পরিণত হয়েছে ছোট নদীতে। মৃত্যু ঘণ্টা বেজেছে এই অঞ্চলের সুতা নদী, কমলা নদী, ইছামতি নদী ছাড়াও আরও অন্তত ১৭টি নদীর।

ভারতের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল সেই ২৮ বছর আগে। এর মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে, পানির চাহিদা বেড়েছে, অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। তাই পদ্মাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং এ অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে গঙ্গা পানি চুক্তি রিভিউ করতে হবে। এবারের ফারাক্কা দিবসের প্রাক্কালে এমন দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে নদী গবেষক ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদীকে নদীর মত করে বাঁচতে না দিলে প্রাণ-প্রকৃতি ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাবে। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবী। গঙ্গা পানি চুক্তি রিভিউ করে তা বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন গবেষক ও পরিবেশবিদরা।

তাদের মতে, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পদ্মাসহ সকল শাখা নদী এখন মৃতপ্রায়। ফলে বছরের পর বছর ধরে হুমকির মুখে পড়ে আছে পদ্মার দুই পাড়ের পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হাইড্রোলজি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় প্রতিনিধি দল এ বছর খরা ও অনাবৃষ্টির ফলে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন। ঈশ্বরদীর পাকশী পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মায় পানির প্রবাহও কমেছে একই কারণে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুময়তার হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ বছরের পানি চুক্তি হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড় ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হায়দ্রাবাদ হাউজে ঐতিহাসিক ৩০ শালা পানি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ হাজার ১৬৯ কিউসেক। তার আগের দিন মঙ্গলবার এখানে পানি পাওয়া গেছে ২৬ হাজার ৬৫৬ কিউসেক।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন জানান, বুধবার ভারতীয় নদী কমিশনের সদস্য ও নির্বাহী প্রকৌশলী অপর্ভা রাজ ও সুদীপ্তা মাহান্তিসহ ভারতীয় প্রতিনিধি দল পদ্মা নদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সরেজমিনে পানি পরিমাপ করেছেন। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত প্রতিদিন তারা পনির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, পানির প্রবাহ প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে।

ভারতীয় নদী কমিশনের সদস্য ও নির্বাহী প্রকৌশলী অপর্ভা রাজ বলেন, পানি কমের কারণে এখন ফারাক্কা প্রান্তে যে পানি প্রবাহ হচ্ছে তা দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শাহনেওয়াজ সালাম বলেন, পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র এখনো হুমকির মুখে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমার মনে হয় নতুন করে গঙ্গার পানি চুক্তি হওয়া দরকার।

উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপ বিভাগ ও পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা। সে অনুযায়ী বর্তমানে আমরা কম পানি পাচ্ছি।


আরও খবর



খরতাপে পুড়ছে দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ |

Image

দিনভর বৈশাখ তথা ভরা গ্রীষ্মের প্রখর রোদে যেন সূর্য থেকে মাটিতে আগুন ঝলসে পড়ছে। রাতের বেলায়ও গরমে-ঘামে অস্বস্তি। গতকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রার আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণের জনপদ বাগেরহাট জেলার মোংলায় ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সে.। চলতি এপ্রিল মাসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পারদ ৪২ ডিগ্রি সে. অতিক্রমের পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ।

 বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাস উচ্চ তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ছিল দক্ষিণের জনপদ পটুয়াখালী উপজেলার খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। যা উক্ত এলাকায় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। গতকাল রাজধানী ঢাকায়ও তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে দিনের বেলায় ৩৮.৪ এবং রাতেও ২৮.৬ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। অবশ্য গতকাল রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জে হঠাৎ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির সাথে সাময়িক বৃষ্টি স্বস্তি এনে দেয়। এ সময় ঢাকায় ১২, ফরিদপুরে ২৩, চাঁদপুরে ১৪ ও কিশোরগঞ্জে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটাও বৃষ্টিপাত হয়নি। বৈশাখের শুরুতেই সমগ্র দেশে অসহ্য খরতাপের দহনে দুর্বিষহ পড়েছে জনজীবন। আবহাওয়া বিভাগ আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে তাপপ্রবাহ আরো বৃদ্ধি এবং বিস্তারের সতর্কবার্তা (হিট এলার্ট) জারি করেছে। টানা কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টি-খরা ও উচ্চ তাপমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকেই নামছে দ্রুত। নদ-নদী-খাল, পুকুর-জলাশয়-দীঘি, হাওড়-বাওড়সহ ভূ-উপরিভাগের পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে মাঠ-ঘাট-বিল ফেটে চৌচির। তীব্রতর গরম ও খরার কবলে ইরি-বোরো, আম-লিচুর ফলন ব্যাহত হওয়ারর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ফলে বিভিন্ন জায়গায় হিট স্ট্রোক, শরীরে পানিশূন্যতায় এবং সর্দি-কাশি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধিতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দিনের প্রখর রোদের তেজে জরুরি কাজ ছাড়া কেই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।

গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া বিভাগ আরেক দফায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা বা হিট এলার্ট জারি করেছে। এতে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, দেশের উপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৬ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায়ও (তিন দিনে) অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসে অত্যধিক হারে জলীয়বাষ্প থাকার কারণে গরমের তীব্রতায় অস্বস্তি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬, মোংলায় ৪০.৩ ডিগ্রি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়াও দেশের অন্যত্র উল্লেখযোগ্য দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও পাবনায় ৩৯.৮, খুলনায় ৩৯.৫, রাজশাহীতে ৩৯.৩, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ায় ৩৯.২, রাঙ্গামাটিতে ৩৯, বগুড়া, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালীতে ৩৮.৫ ডিগ্রি সে.।

সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। দিনের তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্থানভেদে এখন ২৭ থেকে ২৯ ডিগ্রির ঘরে। তাতে খরতাপ অসহ্য হয়ে উঠেছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্তসহ আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগামীকাল  সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ দেশের কিছু কিছু জায়গায় কমে আসতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এর পরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন গত সোমবার ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গত কিছুদিন ধরে রাজশাহীতে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়া। রাজশাহী অঞ্চলে মাঝারি তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রাও দুএক ডিগ্রি কমতে পারে। তবে এ কয়েক দিনের মধ্যে খুব একটা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আগে তাপপ্রবাহ বাড়ার কারণে রাজশাহী আরও তিন বিভাগে এসব অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এপ্রিল মাসে এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদফতর। তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঈদের পর তাপপ্রবাহের ফলে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষ তাদের কর্মে ফিরতে পারেনি। অনেকটা কর্মহীন দিন পার করছে তারা।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। এদিন দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৩ শতাংশ। তিনি আরো জানান, এপ্রিল মাসব্যাপী মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এ আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভবনা রয়েছে।

ভ্যাপসা গরম, আবহাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া সকাল থেকে কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেনা। রিকসা ও ভ্যান এবং ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালকদের যাত্রী হচ্ছে না। এছাড়া গরম আবহাওয়ায় কেউ কাজ না করায় দিন হাজিরায় কর্মজীবী বিপাকে পড়েছে। 


আরও খবর



চালের বস্তায় লিখতে হবে ধানের জাত

প্রকাশিত:বুধবার ০৮ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ |

Image

চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিলগেটের দাম লিখতে হবে। সেই সঙ্গে লিখতে হবে উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান (জেলা ও উপজেলা) উল্লেখ করতে হবে। থাকবে ওজনের তথ্যও। এমন নির্দেশনা আগামীকাল রবিবার থেকে কার্যকর কার হবে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। ইতোমধ্যে নির্দেশনার কপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের স্বাক্ষর করা এই নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দমতো জাতের ধানের চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজার মূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয়, তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে নির্দেশনায় কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, চালের উৎপাদনকারী মিলমালিকদের গুদাম থেকে বাণিজ্যিক কাজে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিলগেট মূল্য এবং ধান/চালের জাত উল্লেখ করতে হবে। বস্তার ওপর এসব তথ্য কালি দিয়ে লিখতে হবে।

চাল উৎপাদনকারী মিল মালিকের সরবরাহ করা সব চালের বস্তা ও প্যাকেটে ওজন (৫০/২৫/১০/৫/১) উল্লেখ থাকতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিলগেট দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করতে পারবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩-এর ধারা ৬ ও ধারা ৭ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনটির ধারা-৬-এর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ রয়েছে। আর ধারা-৭-এর শাস্তি হিসেবে রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান।

 


আরও খবর