মো. রাসেল হোসাইন : রাজধানীতে বেপরোয়া একটি পরিবহনের নাম ‘লেগুনা’ যা সরকারি খাতায় ‘হিউম্যান হলার’ নামে পরিচিত। রাজধানীতে গণপরিবহনের ২৫১টি রুটের ১৫৯টিতেই লেগুনা চলছে। এসব লেগুনা ‘যেমন খুশি তেমন’ চলছে। ভাড়া থেকে শুরু করে স্ট্যান্ড নির্ধারণ সবকিছুই লেগুনা মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো করেন। রাজধানীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেগুনা চালাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১০-১৫ বছরের কিশোররা। যাদের এখন স্কুলে যাওয়ার কথা অথচ তাদের দিয়ে কিছু অসাধু লেগুনা ব্যবসায়ী লেগুনার স্টিয়ারিং হাতে তুলে দিচ্ছেন।
লেগুনা মালিকদের মতে তারা এই ছোট শিশুদের দিয়ে কম টাকা লেগুনা পরিবহনটি চালিয়ে নিতে পারছেন। ফলে তাদের ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। লেগুনা চালিয়ে উপার্জনের টাকা দিয়ে অধিকাংশ কিশোররা মাদক ও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে শিক্ষার ছোঁয়া না থাকায় এদের দ্বারা রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। এসব কিশোর ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে কোনো প্রকার লাইন্সেস ছাড়াই তারা বসছে চালকের আসনে। অদক্ষ হাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য যাত্রী। তারা এতটাই বেপরোয়াভাবে লেগুনা চালায় একজন অসুস্থ ব্যক্তি বা স্কুল শিশুদের যাতায়াত সুবিধা না থাকায় রাখে না বাধ্য হয়ে এই লেগুনাতে চলাচল করতে হয়।
ওরা লেগুনা স্টিয়ারিং চালু করার পর আকাশে উড়ছে নাকি রাজধানীরে হাজারো মানুষের চলাচল করা ব্যস্ত রাস্তায় আছে তা যেন ওরা ভুলেই যায়। ছোট ছোট শিশু চালকদের কাছে রাজধানীর ব্যস্ত রোডগুলো প্রতিযোগিতার মাঠের মতো। পেছন থেকে একটা লেগুনা আসা দেখা মাত্রই ওরা অস্থির হেয়ে যায়, কোনোভাবেই তাকে সামনে আসতে দেওয়া যাবে না। একইভাবে পেছনে থাকা লেগুনা মরিয়া ওঠে যেকোনো মূল্যেই হোক সামনেরটাকে ওভারটেক করতেই হবে। এতে যাত্রী অথবা পথচারীদের দিকে তাকানোর কেনো কোনো তোয়াক্কা না করেই তাদের এগিয়ে যাওয়া।
অপ্রাপ্তবয়স্ক, অদক্ষ, অবৈধ চালক দিয়ে যখন গণপরিবহন চালানো হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই এরা যানজটের দিকে লক্ষ্য করে না, নিরাপত্তার ইস্যুটাও তাদের চিন্তায় থাকে না। তাদের চোখ কিন্তু রাস্তার দিকে থাকে না, চোখ থাকে যাত্রীর দিকে কখন মাঝ রাস্তায় কে ওঠার জন্য হাত জাগায়। এদের না আছে লাইসেন্স, না আছে কোনো সংকেত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। সীমাবদ্ধ হাতের স্টিয়ারিং আর পায়ের ব্রেকে উড়ছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন এ চালকরা রাজাধানীর হাইওয়ে রোডগুলোতে যাত্রী পরিবহন করে চলছে প্রসাশনের নাকের ডগায়। প্রশাসন যেন ওদের চোখেই দেখছে না। তথ্য মতে, প্রশাসনকে সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি দিয়ে প্রতিটি লেগুনা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশীন ব্যক্তি লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন লেগুনা বিভিন্ন রোডে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে।
হাইওয়ে ছাড়া রাজধানীর জিগাতলা-ফার্মগেট রুটে প্রায় সব লেগুনাই চলে। এ রুট ছাড়াও ফার্মগেট থেকে ৬০ ফিট, আজিমপুর ট্যানারি মোড় থেকে নিউমার্কেট, নিউমার্কেট থেকে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল, মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী, গুলিস্তান থেকে আজিমপুর ঠ্যানারি মোড়, মিরপুর এক নাম্বার থেকে মিরপুর ১২ নাম্বার ঢাকার ভেতরে এমন অনেক রুটেই লেগুনা চলে। এসব লেগুনার অল্প কিছু ডিজেলচালিত। বাকি সব চলে সিএনজিতে। বিএআরটি থেকে এদের নির্দিষ্ট কোনো ভাড়া ঠিক করা না থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করে। লেগুনা গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের হাল ধরার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই শিশু হেল্পাররাও। সব জেনেও বাধ্য হয়েই লেগুনায় উঠছেন সাধারণ যাত্রীরা। লেগুনার লাইসেন্স ও ফিটনেস ঠিক রেখে এবং প্রাপ্তবয়স্ক দক্ষ চালক দিয়ে চালানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ও সরকারের নিকট বিনীত আবেদন, লেগুনা পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতিবাচক উদ্যোগ এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে দৃষ্টি দিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
hossainmdrasel559@gmail