নদীর ছোট চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা। ছোট
বেলেও ৮০০ টাকার নিচে নেই। এছাড়া পাঙাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই ইত্যাদি সস্তার মাছও
১৮০ থেকে ২৫০ টাকার আশপাশে। আর কাঁচামরিচের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ
হয়েছে। গত সপ্তাহে ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ এ সপ্তাহে দাম বেড়ে
২৫০-২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি ৮০-৯০
টাকা। খুচরা বাজারেও দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনা
এই সপ্তাহে বাজারে কোনো সবজির দাম কমেনি। বরং অধিকাংশ সবজির দাম এ সপ্তাহে বেড়েছে।
বাজারে কম দামের সবজির মধ্যে আছে শুধু মিষ্টিকুমড়া, মিলছে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়।
সরেজমিন
রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট বাজার, মেরাদিয়া হাট, মালিবাগ বাজার এবং গোড়ানসহ কয়েকটি
খুচরা বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
এ
সময় দেখা যায়, গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে
অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়।
মরিচের
দামের বিষয়ে খিলগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা ফজলে রাব্বি বলেন, গত সপ্তাহে পাইকারি
বাজার থেকে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) কাঁচা মরিচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছি। কিন্তু
গত দুদিন পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে প্রতি পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার
৫০ টাকায়।
বাজারে
গাজরের দামও বাড়তি, প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৬০ টাকায়
বিক্রি হওয়া করলা এ সপ্তাহে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে তা বেড়ে ৮০-৯০ টাকায়
পৌঁছেছে। গত সপ্তাহের ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি বরবটি দাম বেড়ে এ সপ্তাহে
হয়েছে ৮০ টাকা। তবে কচুর লতি গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়
বিক্রি হচ্ছে।
খিলগাঁও
বাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সোলায়মান হোসেন। কাঁচামরিচের দাম
বাড়ায় একপ্রকার ক্ষুব্ধ তিনি। বলেন, ঈদে চলতে অনেক কষ্ট হবে, প্রতিটি পণ্যের দাম
বাড়তি। বাজারে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এখন কিছু নেই। আড়াইশ গ্রাম কাঁচামরিচ
৬০ টাকা কিনতে হলো, যা দুদিন আগেও ৩০ টাকায় কিনেছি। ব্যবসায়ীদের এভাবে সুযোগ বুঝে
দাম বাড়ানোটা ঠিক হচ্ছে না। সরকারের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
মেরাদিয়া
হাটের খুচরা সবজি বিক্রেতা মো জাহাঙ্গীর বলেন, এ সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম অতিরিক্ত
বেড়েছে। আর দাম বেড়েছে করলা, টমেটো এবং শসার। মোট কথা এই সপ্তাহে বাজারে সবকিছু
দাম ঊর্ধ্বমুখী, যদিও ঈদে সবজির দাম কমার কথা। উল্টো এবার সব ধরনের সবজির দামই
বাড়ছে, আপাতত দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। পশ্চিম আগারগাঁও ছাড়াও মিরপুর-১, উত্তরা
আজমপুর, মহাখালী, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, রামপুরা, শ্যামবাজার, সূত্রাপুর ও কারওয়ান
বাজার ঘুরে দেখেছেন। এসব বাজারে দেখা গেছে, নদী, খাল, বিল ও হাওরের মতো প্রাকৃতিক
জলাশয়ের মাছের দাম অত্যধিক। আর যেসব মাছ চাষ হয়, সেগুলোর দামও বছরখানেক আগের
তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি।
পশ্চিম
আগারগাঁও বাজারের মাছ বিক্রেতা আব্বাস উদ্দিন বলেন, এক বছর আগেও এক কেজি পাঙাশ ১১০
থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন কিনতেই হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজি। বিক্রি
করেন ১৮০ টাকায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে দাম কেজিতে আরও ২০ টাকা বেশি ছিল।
পশ্চিম
রামপুরার মাছ বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ওই বাজারে আগের দিনে ৫০০ কেজির মতো পাঙাশ
বিক্রি হতো। এখন সেটা দেড় থেকে দুই হাজার কেজিতে উঠেছে। এর কারণ অন্যান্য মাছ,
ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ
হয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, দাম বাড়লেও এখনো কম দামে পাঙাশই কেনা যায়।
আব্বাস
উদ্দিন যে কথাটি বলেছেন, গত মার্চে সেই বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছিল সাউথ এশিয়ান
নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপে। সংস্থাটি বলেছিল, মূল্যস্ফীতির
চাপে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। মাছ ও ডিম খাওয়া কমিয়েছে যথাক্রমে ৮৮ ও
৭৭ শতাংশ পরিবার। অনেকে খাদ্যাভ্যাস বদলেছেন।
মধ্যম
আয়ের পরিবার চাল, ডালের দাম বাড়লে যতটা বিপাকে পড়ে, তার চেয়ে বেশি চাপে পড়ে
মাছ-মাংসের দাম নিয়ে। বেসরকারি চাকরিজীবী শহীদুল্লাহ বলেন, তার চার সদস্যের বাসায়
মাসে ২৫ কেজির এক বস্তা চাল লাগে। চালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়লে তার মাসে খরচ
বাড়ে ১২৫ টাকা। কিন্তু এখন দুই কেজি মাছ কিনতেই এই পরিমাণ টাকা বাড়তি চলে যাচ্ছে।
আবার ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও গরুর মাংসের দামও আর আগের জায়গায় ফিরছে না। কৃষি বিপণন
অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২০ সালে ফার্মের মুরগির গড় দাম ছিল ১২৫ টাকা কেজি। কিন্তু এক
বছর ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম ব্যাপক চড়া, বেশির ভাগ সময় ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে
কেনাবেচা হয়েছে। গতকাল দর ছিল বাজারভেদে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি।
ডিমের
চিত্রও একই। সাধারণ বাজারে ডিমের ডজন ৯০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করতো। গত এক
বছরে বেশির ভাগ সময় তা ১৪০ টাকার আশপাশে ছিল। গতকাল দর ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
গরুর
মাংসের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২০ সালে গড় দাম ছিল ৫৩৬ টাকা।