মার্কিন
কংগ্রেসে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ভাষণে তিনি
সমগ্র বিশ্বের ঐক্যের কথা বলেন ও পরিবেশরক্ষার বার্তা দেন। একইসঙ্গে তিনি ভারতীয়
গণতন্ত্রের কথাও উল্লেখ করেন।
এবার
যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ইতিহাস গড়েছেন মোদি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি
একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। কারণ, তিনি ছাড়া আর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন
কংগ্রেসে দু’বার বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। সারা বিশ্বে এই নজির গড়েছেন
নেলসন ম্যান্ডেলা, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও উইনস্টন চার্চিল।
এ দিন
মোদি ক্যাপিটল হিলে (মার্কিন পার্লামেন্ট) প্রবেশ করতেই সবাই তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে
স্বাগত জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দাঁড়িয়ে সম্মান (স্ট্যান্ডিং ওভেশন) দেওয়া
হয়। এ দিনের অধিবেশনের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি
ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্ট্যান্ডিং ওভেশনের সময় উঠে দাঁড়ান
তারাও।
এ দিন
মোদির ভাষণে গণতন্ত্র থেকে করোনা টিকা, মঙ্গল অভিযান থেকে অর্থনীতি—
নানান বিষয়ই উঠে আসে। সরস ভঙ্গিতে এ দিন বক্তব্য রাখেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। শোনান
নিজের লেখা কবিতাও। ‘সামোসা ককাস’
বলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের সঙ্গে রসিকতাও করেন।
পাশাপাশি তুলে ধরেন ভারতের অগ্রগতির কথাও। তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি।
আমরা শিগগিরই তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছি।
বৈচিত্র্যের
মধ্যে ঐক্যের কথা বলতে গিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ভারতে ২২টি সরকারি ভাষা রয়েছে।
কিন্তু আমরা কথা বলি এক স্বরে। তিনি জানান, এ দেশে আড়াই হাজার রাজনৈতিক দল রয়েছে।
এর মধ্যে ২০টি দল বিভিন্ন রাজ্য শাসন করে। এটাই এ দেশের গণতন্ত্র। করোনা টিকার
কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ভারতের ৫০ কোটি মানুষের
বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার কথাও। মনে করিয়ে দেন, সংখ্যাটা দক্ষিণ আমেরিকার
জনসংখ্যার থেকেও বেশি।
কেবল
ভারত নয়, গোটা বিশ্বের ঐক্যের কথাও বলেন মোদি। মনে করিয়ে দেন, ‘বসুধৈব
কুটুম্বকমে’র কথা। যার অর্থ ‘এই বিশ্ব এক পরিবার।’
বলেন, এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ।’ পরিবেশরক্ষার বার্তাও দেন তিনি। দূষণরোধে
‘গ্রিন এনার্জি’র গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন।
এরই
পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন মোদি। জানিয়ে দেন, ওয়াশিংটন
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আমেরিকার সঙ্গে সামরিক
সহযোগিতার পাশাপাশি ভারতে লগ্নির আহ্বানও জানান মার্কিন ব্যবসায়ীদের। ভারত যে
আমেরিকার সঙ্গে মহাকাশ, বিজ্ঞান, সমুদ্র নানা বিষয়েই একসঙ্গে কাজ করে চলেছে সেকথাও
তুলে ধরেন।
নাম না
বলে চীনকেও আক্রমণ করেন মোদি। মনে করিয়ে দেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বেইজিংকে
বার্তা দেন তিনি। তার কথা থেকে স্পষ্ট করে দেন, আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে। কারও
অকারণ একাধিপত্য চলবে না। প্রধানমন্ত্রী খোঁচা দেন পাকিস্তানকেও। ৯/১১’র
দু’দশকের কথা বলতে গিয়ে মুম্বাই হামলার কথা উল্লেখ করে ইসলামাবাদকে কাঠগড়ায়
তোলেন তিনি। এরই পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের আহ্বানও জানান
তিনি।
চার দিনের ঐতিহাসিক মার্কিন সফরে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ডোনাল্ড ট্রাম্প জমানার ‘হাউডি মোদি’র পর এবার জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই নেতা। বিশ্বের কূটনীতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির এই সফরকে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস