
শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁয় ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলায় ৩ জন যুবক কে ফাঁসানোর অভিযোগে মাবিয়া বেগম (৪৮) নামে এক নারীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার বিকেলে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার এর আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে তা না মঞ্জুর করে ঐ নারীকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
মাবিয়া বেগম নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার চাপাডাল গ্রামের আসাদুল হাকিম এর স্ত্রী। তার পক্ষে জামিন শুনানী করেন এ্যাডভোকেট শুভ্র সাহা। জামিনের বিরোধিতা করেন, রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌসুলী এ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন।
একই দিন একই আদালতে যৌন পীড়নের আরেক মিথ্যা মামলায় ৪ জন যুবক কে ফাঁসানোর অভিযোগে নিগার সুলতানা ওরফে নাইচ (২৭) নামে অপর আরেক নারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন বিচারক মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার। নিগার সুলতানা নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শেরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ এর মেয়ে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার চাপাডাল গ্রামের গৃহবধূ মাবিয়া বেগম একই গ্রামের তহিদুল তুহিন সহ ৩ জন যুবক এর বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ মামলায় পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত। তদন্ত শেষে ঘটনাটির সত্যতা নেই বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
ঐ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দরখাস্ত দাখিল করেন মাবিয়া বেগম। এরপর ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। ঘটনাটির সত্যতা রয়েছে বলে অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে এ মামলায় ৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহন শেষে গত ১০ আগস্ট অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সকল আসামীকে খালাস প্রদান করে বিজ্ঞ আদালত।
এরপর ১ অক্টোবর মিথ্যা মামলায় শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১৭ ধারায় মাবিয়া বেগম সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগটি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে আদালত। আজ ঐ মামলায় জামিনের প্রার্থনা করে আদালতে উপস্থিত হলে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে মাবিয়া বেগমের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার।
অপরদিকে, ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শেরপুর গ্রামের নিগার সুলতানা একই গ্রামের সোহেল রানা সহ ৪ জন যুবকের বিরুদ্ধে যৌনপীড়নের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ মামলায় পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্ত শেষে ঘটনাটির সত্যতা নেই বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ঐ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দরখাস্ত দাখিল করেন নিগার সুলতানা। এরপর ঘটনাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করে আদালত। পরবর্তীতে সাক্ষ্যগ্রহন শেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সকল আসামীকে খালাস প্রদান করে আদালত। এরপর আজ মিথ্যা মামলায় শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১৭ ধারায় নিগার সুলতানা সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী শেরপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হক এর ছেলে সোহেল রানা।
এ অভিযোগটি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন বিজ্ঞ আদালত। আগামী ৩০ জানুয়ারীর মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার পূর্বক এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন বিচারক মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌসুলী এ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলা করায় মাবিয়া বেগম নামে এক নারীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। যৌন পীড়নের আরেক মিথ্যা মামলায় নিগার সুলতানা নামে আরেক নারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাধারন জনগন আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যেকোনো মামলা গ্রহণের আগে অবশ্যই আইনজীবী ও পুলিশদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সকলের যৌথ প্রচেষ্টা থাকলে সাধারণ মানুষদের মিথ্যা মামলায় আর হয়রানি হতে হবে না।